নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০১৮
যতদূর জানি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। স্নাতক শ্রেণিতে যে তিনি ইতিহাস পড়েছেন গভীর ভাবে, তা উনার কথা শুনেই অনুমান করা যায়। তা না হলে এত বড় কথা বলার সাহসতাঁর কী করে হয়েছে! অনলাইন পোর্টালের খবরে দেখলাম, “লন্ডনে বসেই যুক্তরাজ্যের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারেকের মত একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে কীভাবে যুক্তরাজ্য সরকার আশ্রয় দেয়?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তারেককে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে নেবো। আদালত যে সাজা দিয়েছে, তা তাঁকে ভোগ করতেই হবে’। ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার লন্ডনে একঅনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা বলেন।
এবার আসি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাস পড়া প্রসঙ্গে। ইউরোপ দেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ যে শুধু টাকার জন্য সব করতে পারে বা করেছে তার কিছু দালিলিক প্রমাণ হাজিরের চেষ্টা করি। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ তীর্থংকর রায়ের লেখা ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায় যে, প্রাচীন কালে ভারতের সঙ্গে ইউরোপের বানিজ্য হতো স্থল পথে। ১৪৯৮ সালেভাস্ক-দা-গামার নেতৃত্বে পর্তুগীজরা ইউরোপ থেকে ভারতে আসার সোজা পথ আবিস্কার করে। তার পর থেকে তারা সমুদ্র পথে ভারতে, চীন তথা এশিয়ার অন্যসব দেশের সাথে ব্যবসা শুরু করে। বাংলাদেশতখন ভারতের অংশ ছিল। এসময় ভারতে এসে তারা দেখে যে, একই ধরণের পন্য তারা ভারত থেকে ইউরপে নিয়ে যেতে পারলে লাভ ১০০০% (এক হাজার) এরও বেশী। লোভের জিহ্বা লম্বা হয়ে গেলো। তাই উন্নত ভারতীয় পণ্যের লোভে ১৬০০ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০২ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয়। ষোড়শ শতকে ভারত মহাসাগরে পর্তুগীজদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখে ব্রিটিশ ও ডাচরা মিলে পর্তুগীজদের হটিয়ে দিয়ে ভারতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নেয়। এতে মনে করারা যথেষ্ট কারণ আছে যে, এই বাণিজ্যের নেতৃত্বের সবাই টাকার লালসার আগুনে ঝলসানো মানসিকতায় জারিত মানুষ।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানিতে যারা চাকরী করতো তারা কোম্পানির বাইরেও নিজের ব্যবসা করতে গিয়ে রক্ত চোষা হয়ে ওঠে। ইতিহাস বলে, মোগল আমলে ভারত বিশ্বের তাবৎ শিল্প উৎপাদনের ২৫% একাই উৎপাদন করে বনে যায় বিশ্ব অর্থনীতির নেতা। এটা বহাল থাকে অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি পর্যন্ত যতদিন পর্যন্ত ব্রিটিশরা পুরো ভারতকে তারা তাদের কব্জায় নিতে না পারে। এর পরেই শুরু হয় সম্পদপাচারের কাহিনী, যা অন্য ফর্মে আজো অব্যহত আছে। সে কথায় পরে আসবো। তার আগে বলে নিই সে সময় অবিভক্ত ভারত থেকে ব্রিটিশরা নিজ দেশের জন্য সস্তায় পণ্য কিনতে আসতো। তারা কাঁচা রেশম, রেশমজাত পণ্য, মসলিন, ইত্যাদি খুব বেশি নিতো। কারণ এতে তাঁদের লাভ হতো শতকরা ১০০০ ভাগেরও বেশি। ১৬১২ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর পশ্চিম উপকূলের সুরাট বন্দরে কোম্পানিকে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। ১৬৪০ সালে বিজয়নগর সম্রাটের কাছ থেকে অনুরূপ একটি অনুমতি আদায় করে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে মাদ্রাজে কোম্পানি দ্বিতীয় বাণিজ্য কুঠিটি স্থাপন করে। সুরাটের অদূরে বোম্বাই দ্বীপটি পূর্বে পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। দ্বিতীয় চার্লসের সঙ্গে ক্যাথারিন অফ ব্র্যাগাঞ্জার বিবাহের যৌতুক স্বরূপ দ্বীপটি ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৬৬৮ সালে কোম্পানি দ্বীপটি ইজারা নেয়। দুই দশক পরে কোম্পানি পূর্ব উপকূলেও আধিপত্য বিস্তারে প্রয়াসী হয়। গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে কলকাতায় তারা একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। এই সময় পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসি ও ড্যানিশ বণিকেরা নিজ নিজ কোম্পানি স্থাপন করে এই অঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্য চালাচ্ছিল। বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের পরে ১৭১০ সালে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি যে তিনটি গণ্ডগ্রাম নিয়ে কলকাতা নগরীরপত্তন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১০০ বছরের লাভ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে ১৮৫৮ সালে কোম্পানি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসনের দায়িত্ব সরাসরি গ্রহণ করে। এর আগের সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ বেনিয়ারা ভারতের বাংলা আর বেনারস থেকে ভারতীয় পণ্য সস্তায় নিতো বিপুল পরিমাণে। ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমাদের কৃষকদের রেশম, তুলা আর নীল চাষে বাধ্য করতেশুরু করে। একই সাথে ব্রিটেনে ভারতীয় তৈরী পন্যের উপর অস্বাভাবিক করারোপ আর বিনা শুল্কে মেশিনে বোনা সস্তা কাপড় ভারতে এনে ভারতের বাজার সয়লাব করে দেয়। তাঁতিদের উৎপাদিত পণ্যেরমূল্য অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়। ভারতে তখনো মানুষ হাতে তাঁত বুনতো, গরুর লাঙ্গল দিয়েই জমি চাষ করতো। একদিকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের ফরমায়েশি চাষ আর অন্যদিকে পণ্যের বাজার হারাতে বাধ্যকরার ফলে ভারতের অর্থনীতিতে ভাটা পড়ে যা ১৯৪৭ সালের কাছাকাছি সময়ে ভারত বিশ্বের মোট শিল্প উৎপাদনের মাত্র ৪.২ ভাগ উৎপাদন করে অন্যতম দুর্বল অর্থনীতির তকমা পায়। এর পিছনে আরএকটা কারণ ছিল এই যে, ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থে এখানে তাদের তাবেদার দালাল শ্রেণি তৈরী করে অপকর্মের সহযোগিতার জন্য। দালালদের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি, আমোদ ফুর্তি, ছেলে মেয়েকে বিলেতেপড়া-লেখার ও চাকরির সুযোগ করে দেয়। ফলে দালালী করে সুবিধা নেওয়াটা একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পায় তদানীন্তন ভারতের এক শ্রেণীর দালালদের হৃদয়ে, যা আজও জাগরুক আছে বলে অবস্থা দৃষ্টেমনে হয়।
একটা উদাহরণ দিই। ইংরেজদের শোষণ এবং লুণ্ঠনের সহযোগী এবং গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর প্রিয়পাত্র দেবী সিংহের ভয়াবহ অত্যাচার এবং নির্যাতনে রংপুর এবং দিনাজপুর অঞ্চল ছিল মৃতপ্রায়। দেবী সিংহ ছিলেন ইংরেজ মনোনীত এই অঞ্চলের ইজারাদার। কিন্তু, তার সীমাহীন লোভ লণ্ড-ভণ্ড করে দিয়েছিলো এই জনপদকে। তার পটভূমিতেই তৈরী সৈয়দ শামসুল হকএর “নূরলদীনেরসারাজীবন” নাটক।
এছাড়া শোষণের আরেকটি হাতিয়ারের কথা বলে রাখি। রাজা দ্বিতীয় জর্জ ১৭৫৩ সালে নতুন সনদ ইস্যু করে। পরে রেগুলেশন এ্যাক্ট, ১৭৭৩ পাশ হয় ব্রিটেনে। যার অধীন রাজা কলকাতায় বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৭৭৪ সালে একটি পৃথক সনদ ইস্যু করে। পরবর্তী সময়ে ১৮০১ সালে মাদ্রাজে এবং ১৮২৪ সালে বোম্বেতে সুপ্রীমকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই আদালতের ১০০ভাগ বিচারক ছিল কোম্পানির নিজের লোক ছিল। তাদের আসল কাজ হলো নানা ওজুহাতে ভারতের মানুষকে দমন করে শোষণ করা আর ভারতীয় সম্পদ বিলেতে পাচার করা। খাজনা আদায়ে প্রজাদেরশারীরিক নির্যাতন, এমনকি প্রয়োজনে হত্যাকেও বৈধ করে দেওয়া হয় কোম্পানির লোকদের জন্য। এটাই ছিল ব্রিটিশ আইন।
প্রভাবশালীদের দমনের কৌশল ছিল ভিন্ন। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট মিথ্যা মামালায় দেশপ্রেমিক রাজা নন্দ কুমারকে বিচারিক হত্যা করা হয়, নাম দেওয়া হয় ফাঁসি। এটা নিয়ে সারা দুনিয়ার ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সচেতন মানুষদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিলে বিচারে নিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হয়। সেটাকে অনেকেই লোক দেখানো বলে মনে করেন।
ব্রিটিশরা এখানে এসেছিলো ব্যাবসা করতে, শুরুতে তারা ভারতে প্রায় শতভাগ আসতো একাকী। ফলে ১৭৯৫এর অনেক আগে থেকেই শুধু কলকাতা নয়, বাংলার সমৃদ্ধ শহরগুলি, যেখানে ইংরাজরা কোর্ট-কাছারি, দপ্তর খুলেছিলো, সেখানেই সন্নিহিত অঞ্চলে বারাঙ্গনা পল্লী গড়ে উঠেছিলো। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ গ্রন্থে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের আত্মচরিত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কৃষ্ণনগরের সমকালীন সামাজিক অবস্থার বর্ণনা করেছেন। দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র লিখেছেন, “...... পূর্বে কৃষ্ণনগরের কেবল আমিন বাজারে পতিতালয়ছিলো, গোয়াড়ীতে গোপ, মালো প্রভৃতি জাতির বাস ছিলো। পরে ইংরেজরা যখন এখানে বিচারালয় ইত্যাদি স্থাপন করেন, তখন গোয়াড়ীর পরিবর্তন হইতে থাকে।’’ কার্তিকেয়চন্দ্র আরো লিখেছেন, “...... বিদেশে পরিবার লইয়া যাইবার প্রথা অপ্রচলিত থাকাতে প্রায় সকল আমলা, উকিল বা মোক্তারের এক একটি উপপত্নী আবশ্যক হইত। সুতরাং তাহাদের বাসস্থানের সন্নিহিত স্থানে স্থানে গণিকালয় সংস্থাপিতহইতে লাগিল।” এই কারণেই আমরা দেখি উত্তর কলকাতায় প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত লোকবসতি কেন্দ্রের আশেপাশেই প্রাচীন গণিকাপল্লীগুলির অবস্থান।
লন্ডন থেকে কিছুদিন আগে প্রকাশিত ইসহাক কাজল এর এক লেখায় জানা যায় যে, ২০০৮ সালে লন্ডনে আসার পর পর তারেক রহমান ছিলেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য বিএনপির একচ্ছত্র নেতা কমর উদ্দিনের ছত্রছায়ায়। কমর উদ্দিনের আকস্মিক মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে তারেক রহমান থাকেন সারের কিংসটনে। বিশেষত এই এলাকায় আরও রাঘব বোয়ালরা থাকেন। এইএলাকাতেই থেকে গেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এখনো পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফ বসবাস করছেন কিংসটনে।
গত প্রায় ১০ বছর ধরে লন্ডন থাকলেও তারেক রহমান নেই কোনো বৈধ আয়ের উৎস, কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। এছাড়াও বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারতে দুর্নীতিবাজ আখ্যা পাওয়া অনেকেই এখানে থাকে, যাদের বৈধ আয়ের কোন উৎস নেই। নিজের দেশে খুন করে অনেকেই এখানে রাজনৈতিকআশ্রয় নেয়, বলে দেশে গেলে ফাঁসি হবে।
ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তার ইউকেএইড এর মাধ্যমে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা করে থাকে। মানবাধিকার, নারী অধিকার নিশ্চিত করাও ব্রিটিশাদের একটা বড় কাজ ইদানিং। আসুন ১৯৫৮ সালের ভারতের ব্রিটিশ সরকার আর বর্তমান ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু হয়েছে একটু পরখ করে দেখা যাক।
ব্রিটিশরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফের বা আমাদের তারেক জিয়ার মতো শত শত দুর্নীতিবাজকে আশ্রয় দেয় তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা খাওয়ার জন্য, যা আগেও ছিল। তারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, কিন্তু সারা দুনিয়ার খুনি, এমন কি বঙ্গবন্ধুর খুনিকেও তারা আগলে রাখে টাকার লোভে। মানে শেখ রেহানা বা শেখ হাসিনার কোনো মানবাধিকার নেই, আছে১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের। তাদের টাকা আছে তাই তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়, মুক্তির জন্য, ফাঁসি না দেওয়ার জন্য। নারী অধিকার নিয়ে কি আর বলার আছে। সারা দুনিয়ায় যত সুন্দরীমেয়ে অপহৃত হয় তাঁদের অধিকাংশই পরে ব্রটিশ পতিতালয়ে পতিতাবৃত্তির জন্য বেচা হয়ে থাকে বলে সাম্প্রতিক কালের পত্রিকায়ও খবর আছে। যেমনটি তারা করেছিল ভারতে।
নৈতিকতার চারটি ধাপের কথা জানি। এক-ব্যক্তিগত, দুই- পারিবারিক, তিন- সামাজিক, চার-রাষ্ট্রীয়। ব্রিটিশদের অধিকাংশের ব্যক্তিগত নৈতিকতা কী আছে জানি না, তবে এটা জানি যে, ব্যক্তিগত নৈতিকতারপ্রতিফলন হয়, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। কিছু ভালো মানুষ ব্রিটেনে নেই তা জোর দিয়ে বলি না। তবে তাদের অধিকাংশই নৈতিকতা বিবর্জিত। তাই তারা টাকার জন্য মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সাদ্দাম হোসেন,গাদ্দাফীর দেশকে ধ্বংস করেছে। যারা টাকার লোভে নারীদেহ মুনাফা অর্জনের করার কাজে লাগায়, দুর্নীতিবাজ ও খুনীদের আগলে রাখে তারা কী আসলে তারেক রহমানকে ফেরত দেবে? নাকি নানাঅজুহাতে রেখে দেবেন তারেক রহমানকে। কারণ তার অনেক টাকা, ভাঙ্গা বাক্সর যাদুতে! যাদুর বাক্সের কাছে কি আমাদের প্রধানমন্ত্রী হেরে যাবেন!
লেখক: সায়েদুল আরেফিন
উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
তথ্যঋণঃ উল্লেখিত বিভিন্ন বই, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, অনলাইন পোর্টাল, ইত্যাদি।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।