নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ এএম, ২৬ অগাস্ট, ২০১৮
বাংলাদেশের মোবাইল টেলিফোন গ্রাহকরা পৃথিবীর ২/৩টা দেশ বাদে সর্বনিম্ন কল রেট ভোগ করছিল আর টেলি ডেনসিটিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছিল বেশ খানিকটা। কিন্তু সারা দেশের ১৫ কোটি ৭ লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া বিটিআরসির’র সিদ্ধান্তে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী দেশের টেলিফোন গ্রাহদের মাঝে সফলভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ ফোনের ৬ লাখ ৯৬ হাজার বাংলাদেশি গ্রাহকের বিরাট অংশই মনে করছেন, তাঁদের ঠকানো হয়েছে, বিটিআরসির ঘোষিত এই নতুন কলরেটের ফলে। আসলেই কি তাই। একটু হিসাব নিকাশ করে, তত্ত্ব তালাশ করতে দোষের কী?
অনেকেই বলেছেন, গ্রামীণ ফোনের ৬ কোটি ৯৬ লাখ গ্রাহক আর বাকি অপারেটরদের আছে ৮ কোটি ২১ লাখ গ্রাহক। গ্রামীণের গ্রাহক বেশি হওয়ায় তাদের অন নেট মানে গ্রামীণ থেকে গ্রামীণ ফোনে কল করলে বিশেষ প্যাকেজের আওতায় ০.২৫ পয়সা কল চার্জ নিতো। আসলে কী তাই! আসলে কোনো সময়ই ০.২৫ পয়সা কল রেট ছিল না, ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে অপারেটর ভেদে তা ছিল ০.৩৫ থেকে ০.৩৯ পয়সা। ০.২৫ পয়সা অন নেট কল রেট ছিল ভ্যাট ট্যাক্স বাদে, এটা একটা আইওয়াশ বা মার্কেটিং প্রপাগান্ডা মাত্র। বাস্তবে অন নেটে কল রেট বেড়েছে ০.০৫ পয়সা মাত্র, কিন্তু অফ নেটে মানে অন্য অপারেটরের কাছে কলের ক্ষেত্রে কল রেট কমেছে ০.৪৫ থেকে ০.৫০ পয়সা। আর সেই সুবিধা পাবেন ৮ কোটি ২১ লাখ গ্রাহক, কিন্তু আপাতদৃষ্টে ৬ লাখ ৯৬ হাজার গ্রাহক ০.০৫ পয়সা করে অন নেটের কলে লুজার হবেন। এখান থেকেই বুঝা যায় যে সারা দেশের মোট মোবাইল টেলিফোন গ্রাহকের বেশির ভাগই লাভবান হবেন, এই কথা বুঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। কিন্তু কেন এই কথা হচ্ছে! বিটিআরসি ২ বছরের বেশি সময় ধরে আলাপ আলোচনা করে এই কল রেট নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে সব অপারেটরের সম্মতিতে। কারণ মোবাইল অপারেটরদের কল রেটের ডাইলুটেড প্রাইস ছিল ০.৫৭ পয়সা, অপারেটররা বলেছিল ০.৫০ পয়সা করতে, বিটিআরসি করেছে ০.৪৫ পয়সা অন নেট কলরেট। যদিও সারা দুনিয়ায় অফ নেট অন নেট প্রথা কোথাও চালু নেই, কিন্তু বাংলাদেশে আছে, যা ভালো সিস্টেম না।
সার বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও এমএনপি মানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পোর্টিবিলিটি চালু করা হয়েছে মোবাইল গ্রাহকের স্বার্থে। এর ফলে যে অপারেটর ভালো সার্ভিস দেবেন, মানে যাদের কম কল ড্রপ হবে আর নেটের সার্ভিস ভালো হবে, তাদের নেটওয়ার্ক মোবাইল গ্রাহকরা ব্যবহার করতে পারবেন তাদের বর্তমান টেলিফোন নাম্বার পরিবর্তন করা ছড়াই। আর এই কারণেই সব কল অপারেটরের কলের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আনাটা জরুরি ছিল। ঘোষিত বিভিন্ন প্যাকেজের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আর কল ড্রপের ঘাপলা দিয়ে দেশের গরীব টেলিফোন গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় টেলিফোন অপারেটররা। কারণ গ্রাহকদের বিরাট একটা অংশই উচ্চ শিক্ষিত নয়, তারা টেলিফোনে আসা ম্যাসেজ পড়ে বুঝতে পারেন না। তাই তারা টেলিফোন অপারেটরদের দারা প্রতারিত হন, প্রতিনিয়ত, কারণ এই ব্যাপারে সব অপারেটর একাট্টা। সেটা নিয়েই এবার আলোচনা করা যাক।
মনে করি, আমাকে ৯৯ টাকায় (আসলে ভ্যাট ট্যাক্স ধরলে অনেক বেশি) ৩০০ মিনিটের একটা প্যাকেজ দিয়েছে অপারেটর। মানে আমি ৩০০ মিনিট কথা বলতে পারবো মনে করি তথাকথিত ০.২৫ (আসলে প্রায় ০.৩৫ পয়সা) পয়সা রেটে। আমার মনে আছে আমি ৩০০ মিনিট কথা বলতে পারবো কম রেটে। তাই আমি কল করেই যাচ্ছি, খেয়াল নেই। যখন আমার ৩০০ মিনিট পার হয়ে যাবে তখন কলের জন্য প্রতি মিনিট ১.২০ পয়সা হারে কেটে নেওয়া হবে, যা ঘটে অধিকাংশ গ্রাহকের ক্ষেত্রেই তাই তো মোবাইল অপারেটরদের কল রেটের গড় ডাইলুটেড প্রাইস ছিল ০.৫৭ পয়সা প্রতি মিনিট। এটা ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের টাকা শোধ দেবার সময় পার হবার পরে যে উচ্চ মাত্রায় ইন্টারেস্ট রেট চার্জ করে তার মতো। এটাই হচ্ছে গ্রাহকদের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি, টেলিফোন অপারেটরদের। তাই এমএনপি আনা হয়েছে টেলিফোন গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায়। গ্রাহকদের এটা বুঝতে হবে, জানতে হবে।
এবার আসি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশনের ফাঁকিবাজি নিয়ে। আমরা সবাই নেট চালাতে এমবি (মেগাবাইট) কিনি (চালু কথায় বলে)। মনে করি ৭ দিনের জন্য আমরা কেউ ১৯৯ টাকা দিয়ে ৬ গিগাবাইট একটা ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনলাম। এটা অটো রিনিউয়ালের অপশন দেওয়া না থাকলেও আপনি যদি কোন কারণে আপনার ফোনের ডাটা অপশন বন্ধ করতে ভুলে যান (এমন ভুল হয়েই থাকে) তবে ফোনের ৬ গিগাবাইট ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ হবার পরেই আপনার মোবাইল থেকে ভ্যাট ট্যাক্সসহ প্রতি এমবি ১.২২ পয়সা হারে কেটে নেবে যতক্ষণ না আপনার মোবাইলের ব্যালান্স শেষ হয়। হঠাৎ দেখলেন আপনার মোবাইলে ব্যালান্স নাই, যতই চিৎকার করেন, কোনো কাজ হবে না। তারা আপনার টাকা ফেরত দেবে না, সে যে অপারেটরই হোক না কেন! বাংলাদেশের সব অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক চালাতে (ভয়েস কলসহ) এই ব্যান্ডউইথ কেনে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কোম্পানির কাছ থকে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডাররাও আইআইজি’র কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কেনেন। এই কেনা বেচায় সরকার ট্যাক্স পায়। বাংলাদেশে ৩২টি আইআইজি লাইসেন্স দেওয়া থাকলেও মাত্র ৮ টি কোম্পানি অপারেশনে আছে। এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে টেলিফোন অপারেটরগণ ভয়েস কলের পাশাপাশি গুগল আর ফেসবুক, ইত্যাদি থেকে পপুলার কন্টেন্টগুলো সরাসরি কিনে নিয়ে সেই কন্টেন্ট বা ডাটাগুলো তাদের ক্যাশ ইন সার্ভারে রেখে দেয়। ফলে আপনি গুগলে বা ফেসবুকে কিছু সার্চ দিলে প্রথমেই আপনার ফোনের নেট তার অপারেটরের ক্যাশ ইন সার্ভার যায়। সেখান থেকে যদি তা পেয়ে যায় তাহলে অপারেটরের ব্যান্ডউইথ বেঁচে যায়, সরকার মানে আপনার দেশ রেভিনিউ থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ অপারেটর অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথের জন্য আইআইজি’র কাছে আর যায় না। আপনি আপনার মোবাইল থেকে অডিও কোনো কিছু সার্চ দিলে দেখবেন, সেটা পেতে আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ মোবাইল অপারেটরেরা তাদের ক্যাশ ইন সার্ভারে এসব অডিও কন্টেন্ট কম রাখে, রাখে ভিডিও, ইউটিউবের কনটেন্টে যাতে অনেক এমবি খরচ হয়, মোবাইল অপারেটরদের লাভ বেশি হয়। শুনে অবাক হবার কিছু নেই যে, বাংলাদেশের এক মোবাইল অপারেটর একাই সরকারের পাওনা আর ভ্যাট দিয়ে মোট ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তসরুপ করেছে।
ভয়েস কল আর ডাটা সার্ভিস হচ্ছে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের মেইন সার্ভিস। এর বাইরে আছে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস)। নতুন সিম কার্ড কেনার সময় ভিএএস এর সব ফাঁদ পাতা হয়। যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আপনার ফোনের ওয়েকাম টিউন, রিং টোন, স্বাস্থ্য সেবা, বাস-ট্রেনের টিকেটিং, অনলাইনে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, মিউজিক শোনা, ব্রেকিং নিউজ পাওয়া, ইত্যাদি নানা ধরণের অনেক ভিএএস চালু আছে আমাদের দেশে, মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতায়। এগুলো যত না সার্ভিস তার চেয়ে বেশি হচ্ছে গরীব আর অল্প শিক্ষিত মোবাইল গ্রাহককে আর্থিক শোষণের ফাঁদ। বুঝে বা না বুঝে আপনি একবার তাদের ফাঁদে পা দিলেই, ভিএএস সার্ভিস প্রভাইডার ভেদে মাসে মাসে কম করে হলেও ৩০ টাকা করে কেটে নেবে আপনার মোবাইল অপারেটর। অনেক সময় এসএমএস বা ফেসবুকের কোন পেজ ওপেন করলেই আপনি তাদের গ্রাহক হয়ে গেলেন, মাসে মাসে আপনার টাকা কাটা শুরু। আপনি হয় তা জানেন না, কিন্তু টাকা কাটা যায়। যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক যত বড় তার এই ধরনের অনৈতিক ‘চুরি’ তত বেশি। এটা এসএমএস করে বন্ধ করতেও লাগবে ২ টাকা। অপারেটর আর ভিএএস সার্ভিস প্রভাইডারদের মধ্যে থাকা চুক্তিতে এটা করে মোবাইল অপারেটররা।
মনে করুন আপনি যে কোনো মোবাইল অপারেটরের কাস্টোমার কেয়ারে কথা বলতে গেলেন, কিংবা কোন ব্যাংকের ৫ ডিজিটের সর্ট কোড নাম্বারে কল করে কথা বলেছেন কি কখনো জরুরি প্রয়োজনে। সেখানে কল ড্রপের ফাঁদ পাতা আছে কি না বুঝতে পারবেন না। ওদের কাস্টোমার কেয়ারে কল ঢোকার প্রোগ্রামটা এমন করেই করে রাখেন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার কাছ থেকে ২/৩ মিনিট খেয়ে নেবে আর তার জন্য মিনিট প্রতি ভ্যাট, ট্যাক্স ছাড়াই দুই (২) টাকা করে কাটবে। বিদেশে কল করতে গেলে প্রায়শ: প্রথম কল ঢুকবে না, কিন্তু টাকা কাটবে। আবার কল ঢুকার আগেই টাকা কাটা শুরু হবে, কেউ পরীক্ষা করলে এর সত্যতা পাবেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের গানের প্রতিযোগিতায় আপনারা যে এসএমএস পাঠান তার রেট কত খোঁজ নিলে চমকে উঠবেন।
একটা সত্য ঘটনা দিয়ে এই লেখা শেষ করতে চাই। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী খুব অসুস্থ। তাঁদের ৪ ছেলেই থাকেন গ্রামের বাইরে, শহরে, তাঁরা থাকেন গ্রামে। উদ্বিগ্ন বাবা মা কোনো ম্যাসেজ এলেই তা খুলে দেখার চেষ্টা করেন, ছেলেরা কোন ম্যাসেজ দিলো কি না। গত রমজানের ঈদে তাঁদের ছোট ছেলে আইটি ইঞ্জিনিয়ার বাড়িতে গেলে তার মা তাকে বলেন যে, খুব তাড়াতাড়ি তাঁর মোবাইলের টাকা শেষ হয়ে যায়, কথা না বললেও। আইটি ইঞ্জিনিয়ার ফোন চেক করে দেখে তার বাবা মায়ের মোবাইলে ১৭ টি করে ভিএএস চালু আছে। সে তাড়াতাড়ি সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করে। এটাকে আমরা কি সেবা বলবো না কি অন্য কিছু, আপনার উপর বিবেচনার ভার রইলো।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
Email: arefinbhai59@gmail.com
তথ্যঋণ: বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইটি বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।