ইনসাইড থট

ঢাকা ও দেশের রাজনীতির বর্জ্য সমস্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন ঢাকা তথা দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বর্জ্য নিয়ে চলছে নানান ধরনের কর্মকাণ্ড। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নগরীর বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে গৃহকরের মাত্র ৩ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করলেও অথচ মহল্লাভিত্তিক স্থানীয় বাড়ি/ফ্লাট মালিক সমিতিগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার খরচ হিসেবে গড়ে খানা প্রতি ১০০ টাকার বেশি আদায় করেন, যা পরোক্ষভাবে খুচরা চাঁদাবাজি,মহল্লার সব খানার টাকা একত্রে করলে হয় একটা মোটা অংক।  যা হউক রাজনৈতিক বর্জ্যের কথা আলোচনার আগে ঢাকা মহানগরীর বর্জ্য সমস্যা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ফলে দেশে এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ইলেকট্রনিক্স পণ্য এখন আমাদের নিত্য-ব্যবহারের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের মত পণ্যগুলো জীবনকে যতটা সহজ করছে তেমনি এগুলো ব্যবহারের কয়েক বছর পর কর্মক্ষমতা শেষে, যথাযথ আইনের অভাবে যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার কারণে আমাদের দেশ এখন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের বর্জ্যের মারাত্মক  ঝুঁকিতে।

২০১৬ সালের এক তথ্যে বাংলাদেশে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলো বলছে দেশে প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। করোনায় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবহার এতোই বেড়ে গেছে যে, ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্যের পরিমাণ এখন অনেক বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে এবছর কোরবানি দেওয়া হয়েছে অনেক কম। তাই সারা বছর জুড়েই শহরের আনাচে কানাচে গরু জবেহ হচ্ছে অপেশাদার কসাইয়ের মাধ্যমে। কারণ করোনা কালে মানুষ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এনিম্যাল প্রোটিন খাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ থেকে তৈরি বর্জ্য পানি দিয়ে ধুয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, স্ট্রমওয়াটার ড্রেন বা ওয়াসার স্যুয়েরেজ লাইনে। সেখান থেকে যায় পাশের নদী খালে। এছাড়া করোনা কালে মেডিক্যাল ওয়েস্ট বেড়েছে বহুগুণ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মেডিক্যাল বর্জ্য আলাদা করা হয় না। এছাড়া রোগাক্রান্ত পশুর বর্জ্য থেকে ছড়িয়ে পড়ছে টাইফয়েড, ডিসেন্ট্রি, ডিপথেরিয়া, anthrax, colibacilosis, giardiasis, histoplasmosis, salmonellosis, toxoplasmosis, brucellosis, Leptospirosis, listeriosis, rabies। মানে আমরা এখন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছি। স্ট্যান্ডার্ড হলো, স্ট্রমওয়াটার ড্রেন বা স্যুয়েরেজ লাইনে যা যাবে তা হতে হয় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ তরল। তা না হলে তলানি পড়ে পড়ে স্ট্রমওয়াটার ড্রেন বা স্যুয়েরেজ লাইন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আবর্জনার শ্রেণিভেদ নিয়ে বিতর্ক আছে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন অনুসারে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আবর্জনাকে শ্রেণিভেদ করে নিতে পারি। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ময়লা সংগ্রহের সুবিধার্থে ময়লাকে মোটাদাগে তিনভাগে শ্রেণীবিভাগ করা হয়:

•           পৌর এলাকার আবর্জনা বা গৃহস্থালি আবর্জনা

•           বাণিজ্যিক এলাকার আবর্জনা

•           শিল্প এলাকার আবর্জনা

আবর্জনা যেখানে ফেলা হয় তাঁকে বলা হয় ল্যাণ্ডফিল, সেখানে ময়লাকে মূলত স্তরে স্তরে মাটিচাপা দেয়া হয় যার শ্রেণীবিভাগটা এরকম:  

•           পচনশীল

•           অপচনশীল বা পূণর্ব্যবহারযোগ্য

          প্লাস্টিক

          পুরাতন কাপড়

          খবরের কাগজ

          পেট-বোতল

          কাচের বোতল

          ধাতব বস্তু

•           অতিরিক্ত বড় ময়লা

•           ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল দ্রব্যাদি  

২০১৯ সাল শেষের দিকে ঢাকা মহানগরীতে পরিবেশ ও জলবায়ু ইস্যুতে কর্মরত সংগঠন নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসিবি) পরিচালিত এক জরিপের ফলাফলের কথা মিডিয়ায় এসেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় দৈনিক গড়ে ২০৬ দশমিক ২১৭ মেট্রিক টন করোনা বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যা মাস শেষে ৬ হাজার ১৮৬ দশমিক ৫১ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়।

বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও রি-সাইক্লিং সম্পদ কনজারভেশনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এটা টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে অসংগঠিতভাবে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও রি-সাইক্লিং হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে মূল্যবান দ্রব্যাদি বর্জ্য থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাদা করে বিক্রি করা হয়। ২০১৯ সালের এক হিসাবমতে ঢাকায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্জ্য সংগ্রহকারী বর্জ্য থেকে প্রতিজন দিনে প্রায় ১৫০ টাকা আয় করেন। 

এটি তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম ব্যয়বহুল। জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট তৈরি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রি-সাইক্লিং ও কম্পোস্টিং করলে সবটুকু বর্জ্যই ব্যবহার করা সম্ভব। এটি কৃষিকাজ বা ছাদবাগানে ব্যবহৃত হতে পারে। যদি সরকার শহর ও গ্রামের মাঝামাঝি এ ধরনের কোনো স্টেশন বসায়, তাহলে অনেক বর্জ্য যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

ঢাকা ওয়াসা দাবী, তাদের স্যুয়েরেজ লাইন দিয়ে মানব বর্জ্য আর অন্যান্য বর্জ্য, সারা বছর জুড়েই বর্জ্যের একটা বিরাট অংশ মিলে শতকরা ২০ ভাগ বর্জ্য নগরীর পাশের খালে বিলে গিয়ে তা তৈরি করে দূষণের তরল মহাআধার। এর পাশাপাশি গরীব মানুষেরা পলিথিন, কাগজ, প্লাস্টিক, ইত্যাদি রিসাইকেলেবল বর্জ্য নিয়ে গেলেও কিছু রাস্তায় পড়ে থাকে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের স্ট্রম ওয়াটার ড্রেন দিয়ে শতকরা কত ভাগ বর্জ্য নগরীর পাশের খালে বিলে গিয়ে পড়ছে তার হিসাব নেই। পলিথিন, কাগজ, প্লাস্টিক, নির্মাণ সামগ্রী থেকে তৈরি আবর্জনা, ইত্যাদি স্ট্রম ওয়াটার ড্রেনে ঢুকে একটু বৃষ্টি হলেই নগরীর রাস্তায় হাঁটু পানি হয়ে যায়। ক্ষতি হয় দেশের মানুষের কোটি কোটি টাকা। ময়লা ফেলেন অসচেতন মানুষ কিন্তু দোষ হয় সিটি কর্পোরেশনের, সরকারের। যে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় সেগুলো ফেলা হয় উত্তরের আমীন বাজার আর দক্ষিণের মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে। এই কাজে দুই সিটিতে জাইকার দেওয়া ১১২ টি নতুন আর বাকী পুরাতন মিলে প্রায় ৬০০ ট্রাকের মাধ্যমে এই বর্জ্য অপসারণের চেষ্টা করে সিটি কর্পোরেশন। এর আগে মহল্লা থেকে মহল্লাভিত্তিক ঠিকাদারগণ(!) সেকেন্ডারি ট্র্যান্সফার স্টেশনে নিয়ে আসেন। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে কয়েক বছরেই ল্যান্ডফিল দুটো প্রায় ভরে গেছে, নতুন দুটি জায়গা খুঁজতে হবে।

১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর ‘বিপ্লবে পরিপূর্ণতা প্রদান ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার স্লোগানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এর পরেই দেশ ছেড়ে পালাতে না পারা রাজাকার, আলবদর, আল শামস, স্বাধীনতা বিরোধী চৈনিক বামেরা গ্রেফতার এড়াতে দলে দলে প্রধানত জাসদে আর অন্যান্য বাম দলে যোগ দেয়। জাসদে মুজিব বাহিনী,  মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশ জাসদের কাতারে এসে শামিল হলেও জাসদে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ছিল ৫০ ভাগের অনেক বেশি।

গণবাহিনী গঠিত হয় ‘৭৪ সালে। ’৭৪-এর ১৭ মার্চ। থানা, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর ক্যাম্পসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলীর বাসভবন আক্রমণ। ফলে সারা দেশে গোলাম কিবরিয়া ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি বড় জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ছাড়াও ময়মনসিংহ সহ সারাদেশে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের এমপিকে হত্যা করা হয়। যার দায় গিয়ে পড়ে অনুপ্রবেশকারী জাসদের উপর।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পরে জাসদের সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা দল ত্যাগ করে নিজ নিজ প্রাক্তন দল আর সরকারী দলে যোগ দেয়। কারণ তারা নিজেদেরকে জাসদে আবর্জনা বা বর্জ্য মনে করতেন। জিয়া সরকারের পতনের পরে এরা অনেকেই জাতীয় পার্টিতেও যোগ দেন। আর ২০০৭-৮ এর পরে বহুগামী এসব ‘রাজনৈতিক বেশ্যা’দের একটা বিরাট অংশ এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের উপর ভর করে পালে পালে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ে নিজেদের নিরাপত্তা আর অপকর্মের মাধ্যমে টাকা আয়ের জন্য। এতে আওয়ামী লীগে থাকা খন্দকার মোস্তাক বা তাহের ঠাকুরেরা করেন সহযোগিতা। এর ফলে মাত্র ১ যুগের মধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাঁর সহযোগী সংগঠনগুলো একটি রাজনৈতিক বর্জ্যের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়ে পড়েছে। এসব বর্জ্যের মাঝে কিছু বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও রি-সাইক্লিং করার মত পাওয়া গেলেও তা সার্বিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হয়ে উঠেছে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।         

যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লিগ, যুব মহিলা লীগ সহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন মহল্লা কমিটিতে ব্যাপক পদ ও কিমিটি বাণিজ্যের ঢালাও অভিযোগ আসার পরে যুব মহিলা লীগ বাদে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। রাজনৈতিক বর্জ্যরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদ পদবী বা কমিটি অনুমোদন নেওয়ার পরে টাকা উসুল করতে নানা অপরাধ ও অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে সারা দেশ জুড়ে। এরা মুজিব কোর্ট ব্যবহার করে ক্যাসিনোর কেলেংকারীর হোতা বা পাপিয়া, সাহেদ বা হালের শিশু অপহরণকারীদের মত স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের অধিকাংশকে হয় টাকার বিনিময়ে অথবা ভয় ভীতি দেখিয়ে এসব অপকর্মের খবর প্রকাশ হতে দেয় না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কিছুই জানতে পারে না। ফলে সব দোষ এসে পড়ে সরকারী দল তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপর।      

পুনর্ব্যবহার ও রি-সাইক্লিং করার উপযোগী অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ক্ষতিকর রাজনৈতিক বর্জ্যকে এখনি বর্জ্যের ল্যাণ্ডফিলে মাটি চাপা দেওয়া দরকার। তা না হলে এরা পচবে, পচাবে, ছড়াবে নানা ধরণের দুর্গন্ধ সহ রাজনৈতিক অসুখ। দেশের উন্নয়ন হবে ব্যাহত, দেশের সাধারণ মানুষের জীবন হবে অতিষ্ঠ।  

লেখক: কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন