নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ১৪ অক্টোবর, ২০২০
কয়েক সপ্তাহ আগে নামিবিয়ার জাতীয় বেতার কেন্দ্র থেকে আমার কাছে একটি ফোনকল আসে। ওখানে আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজ করতাম। বলতে গেলে এ বছর সেখানে কারো কোনো মৌসুমী অসুখ-বিসুখই হয়নি। রেডিও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আমার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাইলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় শীতে প্রতি বছর ১০,০০০ এর বেশি মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিন্তু এ বছর রোগীর সংখ্যা ছিল খুব অল্প। অস্ট্রেলিয়ায় মার্চের মাঝামাঝি থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর সেখানে ৩ লাখ দশ হাজার রোগী শনাক্ত হয়, আর মারা যায় ৪৩০ জন।
ন্যাশনাল নটিফিয়েবল ডিজিস সারভেইল্যান্স সিস্টেম জানিয়েছে এ বছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে ৩৬ জন মারা গেছে। বিজ্ঞানীরা এটা দেখে হতবাক। তারা মৃত্যুহার এতটা কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, মাস্কের ব্যবহার বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, এবং ভ্যাক্সিনের ব্যবহার বাড়ানোর কারণে কি মৌসুমী ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে ? হতেও পারে।
বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ ও ডাক্তাররা আসন্ন শীতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে ভেবে চিন্তিত। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে বলেছেন। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। আমি সাক্ষাৎকারে নামিবিয়ার সরকারকে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে যেকোনো জরুরী অবস্থার মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছি।
ইউরোপ-আমেরিকায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সেখানকার হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। ফ্রান্সের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত। নতুন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রয়োগ এবং ঠিকমতো দেখভাল করায় মৃত্যুহার আগের চেয়ে কমেছে। যুক্তরাজ্য এখনও করোনা শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির দীর্ঘদিনের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় ?
অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কথা বলছেন। আমাদের এখানে কি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, না এখনও প্রথম ঢেউই চলছে, নাকি প্রথম ঢেউয়ের সাথেই দ্বিতীয় ঢেউ মিশে গেছে ? যা-ই ঘটুক, ১০-১২ শতাংশ আক্রান্তের হার সংক্রমণের ব্যাপকতাকে ইঙ্গিত করে। অতিরিক্ত জনসমাগম, অফিসে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অপর্যাপ্ততা, সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলা, এবং ঘরের বাইরে মাস্কে ব্যবহার না করায় সংক্রমণের হার কমছে না।
করোনায় সংক্রমণের ফলে তেমন জটিলতা না হওয়ায় এবং মৃত্যুহার কম থাকায় মানুষের করোনা নিয়ে উদ্বেগ কমেছে। এর চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হওয়ায় অনেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। আমি নিশ্চিত তরুণ এবং অল্পবয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উপসর্গবিহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত সংক্রমণের হার উচ্চ থাকায় তা ব্যাপক মাত্রায় কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।
র্যান্ডমাইজড এন্টিবডি টেস্টের ফলাফল থেকে জানা গেছে, ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ এবং ৭৫ ভাগ বস্তিবাসী ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৫ ভাগেরই কোনো উপসর্গ ছিল না। বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকাগুলো কি হার্ড ইমিউনিটির দিকে আগাচ্ছে, নাকি ইতোমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছে?
জনগণের দেশজুড়ে অবাধ যাতায়াতে গ্রামের মানুষও হার্ড ইমিউনিটির দিকে আগাতে পারে। এ খবরে খুশি হওয়ার কিছু নেই। সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা, এবং হাত ধোয়ার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও এনজিওগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে কোভিড-১৯ এবং আসন্ন শীতের মৌসুমী রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে কিছু বলি
১.
আমার এক বন্ধুর ছেলের স্ত্রী সন্তানসম্ভাবা। সে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস পার করছে। কিছুদিন আগে সে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় চিন্তিত ছিল। তার স্বামী পরামর্শের জন্য কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও কোনো চিকিৎসা পায়নি। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় কোনো হাসপাতালই তাকে ভর্তি করতে চায়নি। শেষমেশ তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ হয়। আল্ট্রাসনোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় সব টেস্টের রিপোর্ট স্বাভাবিক আসায় তারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হয়েছিল।
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মার্চে লকডাউনের শুরু থেকেই বাসা থেকে কাজ করতো এবং কেনাকাটাও করতো অনলাইনে। সে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেনি, আর তার কোনো উপসর্গও ছিল না। এরপরও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট ছাড়া তার স্ত্রীকে চেকআপ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় দুজনেই টাকা খরচ করে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য রাজি হয়। কাউকে সেবা দিতে অস্বীকৃতি না জানানোর ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
একবার ভাবুনতো যে মহিলার পয়সা খরচ করে করোনার টেস্ট করানোর সামর্থ্য নেই, ফ্রিতে টেস্ট করানোরও সুযোগ নেই, সে যদি গর্ভাবস্থায় কোনো মারাত্মক জটিলতায় পড়ে সেবা না পায় তার কি হবে। সে কিংবা তার অনাগত বাচ্চা চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে পারে। অনেক দেশেই দেখা যায় সন্তানসম্ভাবা মহিলারা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যান না। আবার হাসপাতালে গেলেও ডাক্তার, নার্সরা করোনার ভয়ে তাদের কাছে ঘেঁষে না। যুক্তরাজ্যে ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং হার্টের অসুখে আক্রান্ত অনেক রোগীই হাসপাতালে যায় না।
ধারণা করা হচ্ছে, এ কঠিন সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রসূতি এবং নবজাতকের মৃত্যু আগের চেয়ে বাড়তে পারে। মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে কেউ যেন মাতৃত্বকালীন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের এ সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা জানানোর দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। স্বাস্থকর্মীদের অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং অনিচ্ছার কারণে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেয়ার মাধ্যমে স্বাথ্যখাতে অর্জিত সফলতাগুলো আমরা ধূলায় মিলিয়ে যেতে দিতে পারি না। স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দেয়ার সময় যাতে করোনায় আক্রান্ত না হয় সে দিকটি নিশ্চিত করার জন্য স্বাথ্য মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে।
২.
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদরদপ্তরে নিরাপদ গর্ভধারণ (মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য) নিশ্চিতকরণ নামে একটি বিভাগের পরিচালক থাকাকালীন আমাকে সপ্তাহব্যাপি একটি মিডিয়া ট্রেনিং-এ যেতে হয়েছিল। ক্যামেরা অন করে শুরুতেই প্রশিক্ষক আমাকে বিশ্বজুড়ে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছিল। প্রসূতি ও নবজাতকের উচ্চ মৃত্যুহার, সাফল্য, ব্যর্থতা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার ব্যাপারে আমার বিভাগের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এরপর তারা আমাকে বাসায় গিয়ে ভিডিওটি দেখতে বলে যাতে আমি নিজের বক্তব্যের ভালো-মন্দ বিচার করে পরদিন আবার প্রস্তুত হয়ে আসতে পারি। নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে গণমাধ্যমের আধুনীকায়ন ঘটেছে এবং জনগণেরও বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞান আগের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের মন্ত্রী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলা দেখে আমি হতবাক। যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের সামনে কথা বলা বন্ধ করতেন তাহলে কতই না ভালো হত!
বাংলাদেশের জনগণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মত চিকিৎসা পাচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য পড়ে আমি হাসি থামাতে পারিনি। বাংলাদেশের কাছে রিজেনারন্সের মনোক্লোনাল এন্টিবডি ড্রাগআছে কিনা আমার জানা নেই। গবেষণার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১০ জনের ওপর এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আর ট্রাম্প তাদের মধ্যে একজন। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স পাওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট পদাধিকারবলে তিনি ওষুধটি নিয়েছেন। এছাড়াও মন্ত্রী হাসির খোরাক যোগানোর মত অনেক কথাই বলেছেন। তার অসংলগ্ন কথাবার্তা সরকারের অর্জন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বকে ম্লান করেছে। সব মন্ত্রী এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তারই কিভাবে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন। আর না হয় তারা কথা কম বলুক বা চুপ থাকুক।
৩.
এইচএসসি পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের সনদ দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ফেসবুক হাস্যরসাত্মক ভিডিও ও ট্রোলে সয়লাব। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হতে বলেছিল তারা। এর ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের হোস্টেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে শুরু করে। শুধু তাদের বাবা-মাকেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে গেটের সামনে রেখে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থীকে বড়দিন না আসা পর্যন্ত সেখানে থাকতে হতে পারে। যেখানে অনলাইন ক্লাসেই পাঠদান করানো হচ্ছে সেখানে কেন তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হলো এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। এটা কি সত্যিই ছাত্রছাত্রীদের ভালোর জন্যে করা হয়েছিল, না কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া টিউশন ফি এর ব্যাপারে আইনি জটিলতা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের নাগরিকরা তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশুনার জন্য বছরে প্রায় ১১ হাজার ইউরো খরচ করে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের এর দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করতে হয়। যুক্তরাজ্যের এক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরকে আমি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে অনলাইন ক্লাস করানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিকে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন, আর সেজন্যই তারা এটা করছে।
আমরা কি খেয়াল করেছি যুক্তরাজ্য সরকার পরীক্ষা নেয়া ছাড়াই শিক্ষকদের আগের মূল্যায়ণের ওপর ভিত্তি করে জিসিএসই এবং অন্য সনদগুলো শিক্ষার্থীদের প্রদান করেছে ? আমি মনে করি বাংলাদেশের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক। প্রায় ২৬ লক্ষ শিক্ষার্থীকে বদ্ধ ছোট ক্লাসরুমে বসিয়ে এ সংকটের সময় দিনের পর দিন পরীক্ষা নেয়ার কোনো মানেই হয় না। আমরা এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে পারি, তবে সেইসাথে আমাদের অবশ্যই এর বিকল্প একটি উপায় সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করার দরকার আছে।
৪.
ধর্ষণ সব সমাজেই ঘৃণিত একটি অপরাধ। আমাদের সবাইকেই এর নিন্দা করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দিনের পর দিন ধরে এমন হতে দেয়া যায় না। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সমাজকে ধর্ষণ বন্ধে আরো কঠোর হতে হবে। এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে এবং সরকার ও সমাজের টনক নড়াতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে এবং অনশন কর্মসূচি পালন করছে। এগুলো শুভ লক্ষণ। রাজনোইতিক উদ্দেশ্যে কিছু অসাধু রাজনীতিবিদের এ বিষয়টির অপব্যবহার আমাকে ব্যথিত করেছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরির মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ধর্ষণের ইস্যুর সাথে অন্য বিষয়গুলো মিলিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের সুযোগ খোঁজা সত্যিই দুঃখজনক।
কয়েকজন নারীর প্ল্যাকার্ডে ‘আমরা ধর্ষিতা হতে প্রস্তুত’ এমন অশালীন বাক্য লিখে সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দেয়া আমাকে ব্যথিত করেছে। কয়েকজন মন্ত্রী দেশের ধর্ষণের কারণ হিসেবে পর্নোগ্রাফিকে দায়ী করেছেন। তাদের এমন অসংবেদনশীল আচরণে আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি। আমি তাদের অনুদ্রোধ করছি, দয়া করে ধর্ষণের মত ঘৃণিত অপরাধ নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা না বলে এবার থামুন। আপনার পরিবারের নারী সদস্যদের কথা ভেবে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের ধর্ষণের মামলা নিতে অনীহা এবং ধর্ষককে গ্রপ্তার করার পরও ম্যাজিস্ট্রেটের জামিন দেয়ার প্রবণতা আমাকে খুব পীড়া দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় থাকাকালে আমরা বিভিন্ন দেশে যৌন হয়রানির কারণগুলো নিয়ে গবেষণা করতাম। আমরা দেখতাম বেশিরভাগ ঘটনায়ই মেয়েরা তাদের খুব কাছের আত্মীয় দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। সামাজিক ও সংস্কৃতিগত কারণে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও পরিবারের লজ্জার কথা ভেবে অনেক মেয়ে এবং তাদের পিতামাতা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বলে গোপন রাখেন। এ কারণে আমরা ঘটনার প্রকৃত মাত্রা জানতে পারি না। কোনো মেয়ে বা তার বাবা-মা এ বনিয়ে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসলে আমাদের অবশ্যই বিষয়টিকে সংবেদনশীলভাবে দেখতে হবে। এটা সহজ কোনো কাজ নয়। এর জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই তাদের পাশে থাকা উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী নারীর সম্মান রক্ষায় ও ক্ষমতায়নে কতটা সচেষ্ট তা আমি জানি। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কেউ যেন তা লুণ্ঠন করতে না পারে তা নিশ্চিতে এবং ধর্ষণ বন্ধে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. হকের লেখা একটি প্রবন্ধ আমি পড়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত থাকাকালীন আমি তাঁর সাথে কাজ করেছি এবং তাঁকে খুব ভালো করেই চিনি। তিনি খুব ভালো একজন মানুষ। তাঁর সাথে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। রুহুল হোক তাঁর প্রবন্ধটিতে বেশি বেশি করোনা টেস্টের কথা বলেছেন। বাংলাদেশে অধিক হারে করোনা টেস্ট করানোর প্রয়োজনীয়তার কথা আমি নানা জনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে শুনেছি। পিসিআর টেস্ট ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য এন্টিজেন টেস্ট পিসিআর টেস্টের মত নির্ভুল না হলেও বেশ নির্ভরযোগ্য। এ পরীক্ষা অল্প সময়ে যেকোনো জায়গায়ই করা যায়। খরচও খুব বেশি না। সম্প্রতি গ্রীসের নতুন শরণার্থী শিবিরগুলোতে অল্প কয়েকদিনে কয়েক হাজার করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর ফলাফলও পাওয়া গেছে মাত্র ৩০ মিনিটে।
এন্টিবডি টেস্ট সংক্রমণের মাত্রা বোঝার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। এ পদ্ধতিতে কোন শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত তা সহজেই বের করা যাবে। এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারকরা যথোপযূক্ত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমি আগেই বলেছিলাম কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং আইসোলেশন সুবিধা নিশ্চিত না করতে পারলে শুধু করোনা টেস্ট বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, দুর্ভোগ এবং মৃত্যুহার কমাতে পারবে না। ভারতেও প্রতিদিন হাজার হাজার পরীক্ষা করে একই কারণে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ কমানো যায়নি। এমন সুযোগ সুবিধা পর্যপ্ত পরিমাণে না থাকায় অথবা অধিকাংশ জনগণ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। কোভীড-১৯ এর সংক্রমণ হ্রাস ও মৃত্যুহার কমানো এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন ও ক্ষুধা দূরীকরণে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ন কৌশল প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ভালোভাবে অবগত আছেন এবং তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।