নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার। আমাদের মুখের ভাষা রক্ত দিয়ে কেনা। তাই এ দেশের মানুষ কথা বলে প্রাণভরে। চায়ের স্টলে, অফিসে, বাজারে, ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে। এ দেশের মানুষের অনেক বিরল গুণের একটি- অনর্গল কথা বলা। শুধু কথা বলার জন্যই আমরা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ি। বেশি কথা বলার জন্য কোনো পরিমাপক থাকলে বাঙালি জাতি যে প্রথম হতো এ নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। মানুষ যখন তার কথা বলার নিয়ন্ত্রিত মাত্রা হারায় তখন আমরা তাকে বাচাল বলি। সাধারণ মানুষের বাচাল হওয়া আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাচাল হওয়ার মধ্যে ব্যাপক ফারাক। গুরুত্বপূর্ণ বলতে আমরা বুঝি পাবলিক ফিগার, যেমন জনপ্রতিনিধি, সেলিব্রেটি বা সমাজে গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। বাংলাদেশে এখন বিশিষ্টজনদের মধ্যে বাচাল রোগ ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ‘বাক্যদূষণ’ প্রায় মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে। মনোবিজ্ঞান বলে, বাচালতা মানসিক ব্যাধি। দুই কারণে এ ব্যাধিতে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। প্রথমত আনন্দের আতিশয্যে। এত আনন্দিত যে তার মানসিক অবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তিনি ঝরনাধারার মতো কথা বলতে থাকেন।
দ্বিতীয়ত হতাশা এবং দুঃখ থেকে। প্রচন্ড হতাশা থেকেও মানুষ বাচাল হতে পারেন। এটা বন্যার মতো। ভিতরের সবকিছু শব্দস্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যে কারণেই হোক বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিশিষ্টজনের মধ্যে বাচাল হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তারা কথা বলছেন লাগামহীন, দায়িত্বহীন। তাদের কথায় সমাজ, রাষ্ট্রে কী পাশর্^প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা চিন্তা করছেন না। আওয়ামী লীগের কথাই যদি ধরি আগে আওয়ামী লীগে কথা বলতেন বড় নেতারা, জাতীয় নেতারা। তাদের বক্তব্য গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেত। ছোট নেতা, তৃণমূলের নেতারা তাদের কথা থেকে শিখতেন, নির্দেশনা পেতেন। সে অনুযায়ী তারা স্থানীয় পর্যায়ে বক্তব্য দিতেন। এখন দিন বদলে গেছে। দলে জাতীয়ভাবে পরিচিত, গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মৌনব্রত পালন করছেন। এ সুযোগে কথার মাঠ দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের নেতারাও ভারি চালাক। তারা বুঝে গেছেন তাদের গুরুগম্ভীর কথার কোনো বাজার নেই। এ জন্য তারা এমন সব কথাবার্তা নির্বাচন করলেন যেগুলো মানুষ খাবে। ফরিদপুর থেকে নোয়াখালী। ফেনী থেকে ঠাকুরগাঁও। সর্বত্র এখন আওয়ামী লীগের পাতিনেতাদের কথার ফুলঝুরি। গণমাধ্যমও তাদের কৌতুকময়, বিতর্কিত বক্তব্যগুলো ফলাও করে প্রকাশ করছে। আধা, সিকি নেতারা মনে করলেন এই তো সুযোগ। এভাবে শব্দবোমা ফাটিয়ে তো রাতারাতি বিখ্যাত হওয়া যায়। নেতা হতে আগে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতো, বইপত্র পড়তে হতো, জনগণের সামনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হতো। কিন্তু এখন বিখ্যাত হওয়ার সহজ তরিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। কিছু বিতর্কিত উল্টাপাল্টা কথা বললেই হলো। ব্যস। ঢাকার অদূরে এক জেলার এক তরুণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন। এরপর তিনি গত সাত বছর বিরামহীনভাবে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে গালমন্দ করলেন। এসব কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেল। ‘বিদ্রোহী’ হয়েও তিনি শাস্তি পাননি। সিনিয়র নেতাকে যা খুশি তাই বলে বরং পুরস্কৃত হলেন। এ চর্চা লুফে নিলেন নোয়াখালীর এক স্থানীয় নেতা। স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি ‘ফরিদপুর কৌশল’ চালু করলেন। তার এ কৌশল কাজে দিল। অনাদরে, অবহেলায়, আলোচনার বাইরে থাকা এই নেতার ছবি এবং কথা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার শুরু হলো। তার নির্বাচনী প্রচারণা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হতে লাগল। সারা জীবনের রাজনীতি যে পরিচিতি দিতে পারেনি, কিছু লাগামহীন কথাবার্তা তাকে সেই পরিচিতি এনে দিল। তাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বাচাল হয়ে গেলেন। ‘আমারও পরানও যাহা চায়’ বলে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে যা খুশি বলা শুরু করলেন। নোয়াখালী থেকে লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব বেশি নয়। নোয়াখালীতে যদি শুধু বেফাঁস কথা বলে একজন জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত হতে পারেন, তাহলে লক্ষ্মীপুরের নেতা পিছিয়ে পড়বেন কেন! লক্ষ্মীপুরের এক জেলা নেতা ইভিএম-তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন।
নির্বাচনী জনসভায় তিনি বললেন, ‘ইভিএম এমন এক মেশিন যেখানে নৌকার বাইরে ভোট দিলেই ধরি ফালা যায়।’ আর যায় কই, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে এলো। রথী-মহারথীরা টকশোয় তাকে কচলালেন। কথা যেন এক আশ্চর্য আলাদিনের চেরাগ। সারা জীবন যা পাননি তাই পেয়ে গেলেন। ফরিদপুর, নোয়াখালীর শিক্ষা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিল। যে যেমন ইচ্ছা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। এতক্ষণ বিষয়টি ছিল পুরুষতান্ত্রিক। রাজশাহী, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৃণমূল থেকে যে বিস্ফোরক মন্তব্যগুলো আসছিল তা সবই ছিল পুরুষদের। কিন্তু যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী সে দেশে বাচাল শুধু পুরুষ হবে তা কী করে হয়? তাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে এক নির্বাচনী সভায় বললেন, ‘নৌকা ছাড়া যারা অন্য কোথাও ভোট দিতে চান তারা এলাকা ছেড়ে চলে যান।’ পত্রিকার পাতায় তার এ মন্তব্য পড়ে আমার ১৯৯৪ সালে প্রথম ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণার কথা মনে পড়ল। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মির্জা আব্বাস। নির্বাচনী এক জনসভায় মির্জা আব্বাস ঘোষণা করলেন, ‘ভোটের পর হানিফকে (আওয়ামী লীগ প্রার্থী) ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঢাকা শহর থেকে বের করে দেওয়া হবে।’ মোহাম্মদ হানিফের সমাপনী নির্বাচনী জনসভা ছিল মানিক মিয়া এভিনিউতে। সেখানে তিনি এক আবেগমথিত ভাষণে ঢাকাবাসীর কাছে এর বিচার চাইলেন। ওই নির্বাচনের ফলাফল কী হয়েছিল তা সবাই জানে। সেটা ছিল ১৯৯৪, এখন ২০২১। ২৭ বছরে আমাদের অনেক কিছুই বদলে গেছে, চেতনাও ভোঁতা হয়ে গেছে। মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বক্তব্যে আমরা কিছুটা কাতুকুতু পেলাম মাত্র। এভাবেই কেন্দ্রীয় নেতা, জাতীয় নেতাদের হটিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন তৃণমূল নেতারা। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখি দেশের কোথাও না কোথাও তৃণমূলের কোনো নেতা শব্দবোমা ফাটিয়েছেন। আওয়ামী লীগে এখন ‘আমরা সবাই রাজা’ গোছের একটি ব্যবস্থা চলছে। তৃণমূলের এ বিপুল উত্থান মন্ত্রীদের কিছুটা তো উত্তেজিত করবেই। এমনিতেই তাদের কাজকর্ম সব আমলারা খেয়ে ফেলেছেন। এর মধ্যে তাদের টুকটাক ফিতা কাটা অনুষ্ঠানের খবরগুলো তৃণমূলের বাক্যবাণে পত্রিকার পাতা থেকে ছিটকে পড়ছে। কাজেই তারাও বাচাল হলেন। মনে রাখতে হবে, শুধু বাচাল হলেই হবে না। কথাবার্তা হতে হবে উত্তেজক, বিতর্কিত। ব্যস, শুরু হলো মন্ত্রীদের কথার মেলা। কেউ আলজাজিরার বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দিলেন। কেউ জিয়া গবেষক হয়ে উঠলেন। আবার কোনো মন্ত্রী তার সাফল্যের স্বীকৃতি কেউ দিচ্ছে না বলে প্রতিদিন কান্নাকাটি শুরু করলেন। এসব দেখে তো বিরোধী দলের নেতারা চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না।
হাঁচি, সর্দি, কান্না, হাসি ইত্যাদি দ্রুত সংক্রমিত হয়। বেসামাল, অসংলগ্ন কথাবার্তাও সম্ভবত সংক্রামক। এক নেতা ২০০ আসনে জয়ের ঘোষণা দিলেন (নির্বাচন কবে?) আরেক নেতা, অফিসকক্ষ থেকে বেরিয়ে রাজপথে প্রলাপ বকতে বকতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। কথাদূষণে চলছে এখন এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। এগুলো মানুষ খাচ্ছেও বেশ। অনিশ্চয়তা, দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষের এখন প্রধান বিনোদনে পরিণত হয়েছে, বাচাল মানুষের কথাবার্তা। দ্রুতই তারা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কথা হলো, একটি রাজনৈতিক দল চলে তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। বাচাল রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের যারা কথাবার্তা বলে এখন আলোচনায়, তাদের বেশির ভাগ কথাবার্তাই গঠনতন্ত্রবিরোধী। যেমন আওয়ামী লীগ বলে, ইভিএমে ভোট কারচুপি এবং জালভোটের কোনো সুযোগ নেই। আর বাচাল আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ইভিএমে অন্য মার্কায় ভোট দিলে ধরি ফালা যায়’। আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বলে, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। আর আওয়ামী নেত্রী নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ রকম উদাহরণ দিলে সে তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে। তাই সে তালিকায় আর গেলাম না। এখন যারা দলের নীতি, আদর্শ এবং অবস্থানের বাইরে গিয়ে এসব অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? না। যেমন আওয়ামী লীগ বারবার ঘোষণা দিয়েও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো। এখন সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চার ধাপে নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে না কারচুপিপূর্ণ, সে আলাদা বিতর্ক। কিন্তু এ নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ লড়াই ছিল জমজমাট। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে একচেটিয়া বিজয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অনেক ব্যবধানে বিএনপির অবস্থান তৃতীয়। খেলাধুলায় অনেক সময় একই দল থেকে দুটো দল করা হয়। যেমন একসময় বলা হতো ব্রাজিল ফুটবলে অবলীলায় দুটি জাতীয় দল গড়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এখন তো প্রায় দুটো দল। সে রকম আওয়ামী লীগ থেকেও অবলীলায় এখন দুটি আওয়ামী লীগ করা যায়।
আমার এ ধারণা আরও প্রবল হলো আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য থেকে। জাতীয় সংসদে এক অনুষ্ঠানে তিনি শক্তিশালী বিরোধী দলের ওপর গুরুত্ব দিলেন। গণতন্ত্রের জন্য কার্যকর বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথাও ওই অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর চারদিকে ফিরে তাকালাম। সত্যিই তো। সর্বত্রই তো আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, শুধু বিরোধী দল ছাড়া। প্রশাসনে আওয়ামী লীগ, পুলিশে আওয়ামী লীগ, সুশীলসমাজে আওয়ামী লীগ, শিক্ষকতায় আওয়ামী লীগ, গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ। সর্বত্র টইটুম্বর আওয়ামী লীগ। যেন বর্ষায় ঝিলে কিলবিল করা মাছ। এর মধ্যে বিরোধী দল পুষ্টিহীনতায় ভোগা কঙ্কালসার প্রাণ। তাই আওয়ামী লীগকেই দায়িত্ব নিতে হবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনে। তবে খেলার মতো আরেকটা আওয়ামী লীগ করে তো তাকে আর বিরোধী দলে বসানো যায় না। এক নামে একটি রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। তার একটি প্রতীক থাকবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে তাই আরেকটি রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’। এ প্রতীক তো দুটি দলকে একসঙ্গে দেওয়া যায় না। তাই আমার বিনীত প্রস্তাব, আওয়ামী লীগে থেকে যারা আবোল-তাবোল বকছেন, তাদের দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু বাচাল হওয়ার কারণেই তারা আলোচিত তাই এ দলের নাম রাখা যেতে পারে ‘বাচাল লীগ’। আওয়ামী লীগ চাইলেই এ দল গঠনে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। যেমন সারা দেশে আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে যেসব ব্যক্তি বেফাঁস কথা বলে আলোচিত তাদের একটি তালিকা তৈরি করবে। এ তালিকাভুক্ত সবাইকে ‘বাচাল লীগে’ আত্তীকরণ করা হবে। শুধু প্রান্তিক পর্যায়ে নয়, হঠাৎ হওয়া কয়েকজন মন্ত্রীকে এ দলের নেতৃত্বে জায়গা দেওয়া যেতে পারে। আমলাদের মধ্যে, অনেকের বাচাল রোগের উপসর্গ ধরা পড়েছে। এরা কেউ কথায় কথায় রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা দেন। নানা বাস্তবতায় অবসরের পর এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন না, কিংবা আওয়ামী লীগে জায়গা পান না। এদের জন্য ‘বাচাল লীগ’ হতে পারে চমৎকার ব্যবস্থা।
আমাদের সুশীলসমাজের কেউ কেউ নিজের মানসম্মান-বিবেক সবকিছু বিসর্জন দিয়ে অন্ধ আনুগত্য দেখাতে চান না। এদের জন্য বাচাল লীগ খুবই ভালো প্ল্যাটফরম হতে পারে। স্থানীয় নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন তাদের অবলীলায় বাচাল লীগে স্থানান্তর করা যেতে পারে। ঠিক যেভাবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দুষ্ট লোকেরা বলে, প্রায় প্রতিটি জেলায় নাকি এখন দুটো আওয়ামী লীগ। কাজেই একটি অংশকে অবলীলায় বাচাল লীগে নেওয়া যেতে পারে। নির্বাচনের মনোনয়ন দিতেও প্রস্তাবিত বাচাল লীগের তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ যে কোনো নির্বাচন এলেই দেখা যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। মনোনয়নপত্র কেনার হিড়িক। কাজেই যারা প্রার্থী হতে না পেরে এখন বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন, তারা অবলীলায় বাচাল লীগের টিকিট পেতে পারেন। এভাবে দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বাচাল লীগ। কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, বাচাল লীগের প্রতীক কী হবে? বাচাল লীগের প্রতীক হিসেবে মাইক্রোফোন অথবা ‘গলা’ যে কোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। বাচাল লীগের প্রধান কর্মসূচি হলো ‘কথা বলা’। বাচাল লীগের নেতা-কর্মীরা অবিরত কথা বলবেন। সব বিষয়ে কথা বলবেন। মনে যা চায় তা-ই বলবেন। ‘কথাই শক্তি, কথাই বল’ এটাই হবে বাচাল লীগের স্রোগান।
তবে এত চমৎকার পরিকল্পনায় সমস্যা একটাই। রক্তে কেনা আমাদের মুখের ভাষা। এ ভাষা বাচালদের কণ্ঠে গিয়ে যেভাবে অপমানিত হচ্ছে, তাতে একদিন না আবার ২১ ফেব্রুয়ারির মতো মানুষ রাজপথে নামে। এবার ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য নয়, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কারণ অনেক দামে কেনা আমাদের মাতৃভাষা কিছু বাচালের জন্য মানুষের বিরক্তির কারণ হবে, তা তো হতে পারে না।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত। (বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে)
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।