নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০১ পিএম, ০৬ মার্চ, ২০২১
বাংলাদেশের অর্থনীতির এক অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। ২০১৮ অর্থবছরে জিডিপির প্রায় ১৪.২৩% অংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস কৃষি। দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করেই। কৃষিবান্ধব নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, জীবনযাত্রায় মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর মনোযোগ দিয়েছেন। ফলে গত এক যুগ ধরে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা বর্তমান সরকারের কৃষি ভাবনার এক বাস্তব প্রতিফলন।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষক। কৃষির ওপর নির্ভরশীল মানুষ এই খাতের প্রসারে প্রচুর শ্রম ব্যয় করছেন। কৃষিকে গুরুত্বহীন করে শুধু শিল্পখাতের উন্নয়নে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ দেখাবে না। কৃষির যথাযথ বিকাশ সাধনের পাশাপাশি শিল্পের ও সেবাখাতের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলে তা মজবুত অর্থনীতির ভিত গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পের অবস্থা তেমন সমৃদ্ধ নয়। কৃষিভিত্তিক পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চামড়াশিল্প, চিনিশিল্প, চা শিল্প-এই কয়েকটা বাদ দিলে বাকিগুলোর তথ্য-উপাত্ত তেমন নেই। আজ শুরু তো কাল শেষ। শুরুটা যেমন সুপরিকল্পিত নয়, তেমনি কিভাবে শেষ হয় তারও কোন হদিস খুঁজে পাওয়া যায় না।
কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় তেমন পরিকল্পনা বা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কৃষি উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইইএফ ফান্ডের নামে যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, তাতে কৃষিভিত্তিক শিল্পের কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, খোঁজ নেওয়া দরকার। অথচ কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে কৃষিশিল্প যে কোন শিল্পের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেত।
আমদানী নির্ভর কাঁচামাল দিয়ে গড়া শিল্প কারখানা সাধারণত লাভজনক হয় না। কারন এতে মূল্য সংযোজন হয় না। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি কাঁচামাল সহজলভ্য। কৃষিপণ্যকে যদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে গন্য করে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাবনা যাচাই করে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা হয় তাহলে বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে, বর্তমান থেকে আরও অনেক উন্নতিতে।
চীন, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের নানাবিধ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে সারা বিশ্বে বাজারজাত করছে। তদ্রূপ কৃষিপণ্য ব্যবহার করে শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।
বরিশাল ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিপুল পরিমাণ সুস্বাদু পেয়ারা উৎপাদিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের মিষ্টি ও সুস্বাদু আনারস দেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আমাদের দেশের উর্বর মাটিতে বিপুল পরিমাণ তরমুজ, বাংড়িসহ বিভিন্ন প্রকার রসালো মৌসুমী ফল উৎপাদিত হয়। মৌসুমের সময় কৃষকরা নামেমাত্র মূল্যে এই সকল ফল বিক্রয় করতে বাধ্য হয়। অথচ কৃষিশিল্প প্রতিষ্ঠা করে এই সকল পেয়ারা, আনারসসহ অন্যান্য মৌসুমী ফল ব্যবহার করে জেলি, জুস, স্কোয়াস ও অন্যান্য নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা যায়।
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল সারাদেশে উৎপাদিত হলেও জয়দেবপুরের লাল মাটিতে কাঁঠালের উৎপাদন খুবই বেশি হয়। কাঁঠালের মৌসুমে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা একেবারেই মূল্য পায় না। যা কিছু উপার্জন করে তা মধ্যস্বত্বভোগীরা এবং খুচরা বিক্রেতারা। অথচ থাইল্যান্ডে কাঁঠালের কোষ এর ‘চিপস’ তৈরি করে সুন্দর মোড়কে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বাজারজাত করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত স্থানীয় জাতের কলা অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। স্থানীয় বাজারের চাহিদার তুলনায় উৎপাদিত কলার পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে ঐ কলা বিক্রি করার জন্য সাধারণত চট্টগ্রাম শহরের বাজারে সরবরাহ করা হয়। এই সুস্বাদু কলার ‘চিপস‘ তৈরি করে দেশে ও বিদেশে বাজারজাত করা যায়। আমেরিকা, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে কলা, কাঁঠালের চিপসসহ বিভিন্ন প্রকার ফলের তৈরী রকমারী খাবারের বাজার রয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের উৎপাদিত আম, আনারস, কলা, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রকার ফল ও কৃষিপন্য দিয়ে তৈরী উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয় সম্প্রতি জাপানে বাংলাদেশে উৎপাদিত মিষ্টিআলুর চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশে কয়েক ধরনের মিষ্টি আলুর চাষ হয়। সাম্প্রতিক চাহিদার কারণে জাপানীদের পছন্দনীয় জাতের মিষ্টি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানে মিষ্টি আলু রপ্তানী করার জন্য কৃষি মন্ত্রনালয় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মিষ্টিআলু বিদেশে রপ্তানীযোগ্য হওয়ায় মিষ্টি আলুর মূল্যও বেড়েছে। মিষ্টি আলু দিয়ে জাপানীদের পছন্দনীয় রকমারী খাবার তৈরি করেও রপ্তানী করার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। ফলে মিষ্টি আলুর তৈরী খাবারে মূল্য সংযোজিত হবে। কৃষক অধিক মূল্য পাবে, মিষ্টি আলুভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। এমনিভাবে অন্যান্য ফল উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষায়িত কৃষিপণ্য রপ্তানী অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে চাহিদা মোতাবেক চাষাবাদ, ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে রপ্তানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত দুধের ৮১ ভাগ মিষ্টির দোকানে ও চায়ের দোকানে ব্যবহার করা হয়। তৃণমূল খামারীরা মিষ্টির দোকানদার ও চা দোকানদার এর মর্জির উপর নির্ভরশীল হয়। যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে তবে দুধ বিক্রি হয় না। প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদিত দুধ ক্রয়কারী ছোট ছোট ব্যবসায়ীদেরও উৎসাহিত করার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করছেন। কিন্তু এরপর কি?
এই ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ক্রয় করা দুধ সমন্বয় করে বৃহৎ দুগ্ধশিল্প স্থাপন করে চাহিদা অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দুধ পাস্তরিত করে প্যাকেটজাত করা যেতে পারে এবং অধিক সংখ্যক গুড়াদুধ উৎপাদনের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরন করা যায়। এই গুড়াদুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরীর মুল উপাদান ‘দুধের ছানা’ তৈরী করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদিত দুধ উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সামাজিক অস্থিরতার কারণে বা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বা যে কোন কারনে দুগ্ধ খামারীদের ব্যবসা, বিনিয়োগ, বিপনন মিষ্টির দোকানদারদের মর্জির উপর নির্ভরশীল হবে না। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দুধের ‘মূল্য সংযোজন’ (Value Add) হবে, দুধের অতিরিক্ত মূল্য পেয়ে খামারীরা গাভী পালনে আরও উৎসাহিত হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নিজের দেশে উৎপাদিত মানসম্মত গুড়াদুধ দিয়ে চাহিদা মিটাতে পারলে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদ উল আযহা’বা কোরবানীর ঈদ। এ সময় তারা সমর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানী করে। সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী গত বছর প্রয়োজনীয় সংখ্যক (১ কোটি ৮০ লক্ষ) পশু বাংলাদেশেই উৎপাদিত হয়েছে। বিদেশ থেকে পশু আমদানী করতে হয় নাই। ফলে বিগত দিনে কোরবানির পশু আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো, তা সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে Beef Fattening পদ্ধতির মাধ্যমে মাংস উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছে এবং বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছে।
সাধারতঃ কোন পণ্য যখন রাসায়নিক ক্রিয়া বা যে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুনরূপে আবির্ভূত হয় বা নতুন পণ্য হিসেবে তৈরী হয় যাতে নতুন বা বেশী মূল্য সংযোজিত হয় বা value add হয় সেটাই শিল্পজাত দ্রব্য। কৃষি পণ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত করে মূল্য সংযোজন করে বাজারজাত করাই কৃষি ভিত্তিক শিল্প। কৃষিশিল্প বলতে শস্যবীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে শুরু করে জৈব সার উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করে রকমারি খাবার প্রস্তুতকরণ, বাজারজাতকরণ, রপ্তানীকরণ, মৎস্য হ্যাচারি, মৎস্য খাবার, মৎস্য খামার, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, গোখাদ্য-পোল্ট্রী খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, পোল্ট্রি হ্যাচারী, Beef Fattening, ডিম-দুধ-মাছ-মাংস উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরন, বাজারজাতকরণ, ইত্যাদি।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষিশিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি ভিত্তিক শিল্পে সহজলভ্যে প্রাপ্ত কৃষি পণ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করলে উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন হয়, ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পেয়ে অধিক পরিমাণ কৃষি পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত হয়। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। উৎপাদিত পন্য স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করার পর অতিরিক্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। ফলে দেশের অর্থনীতি মজবুত ও টেকসই হবে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।