ইনসাইড থট

ভ্যাকসিন জটিলতায় কেন এখনও চলমান ভ্যাকসিনের প্রতি সবার আস্থা রাখা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:১৩ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২১


Thumbnail

গতরাতে আমি বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ দেখছিলাম এমন এক ব্রাজিলের যুবতী মায়ের অত্যন্ত দুঃখের গল্প যার এক বছরের বাচ্চা কোভিড-১৯ এ মারা গেল। তিনি বলেছিলেন, ছেলেটির নাক দিয়ে পানি এবং উচ্চ তাপমাত্রা শুরু হবার কারণে তিনি তার ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং তাদেরকে কোভিড -১৯ পরীক্ষা করার জন্য বার বার অনুরোধ করেছিলেন। কোভিড-১৯ এর কোনও পরীক্ষা না করেই চিকিৎসক তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন আর কিছু লক্ষণ প্রতিকারমূলক ঔষধ দিয়ে বাসায় পাঠান। বাসায় ছেলেটি যখন শ্বাসকষ্টে তীব্র অসুবিধাগুলি বোধ করতে শুরু করেছিল, তখন সে আবার ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এবার, ডাক্তাররা তাঁর অনুরোধ শুনেছিল এবং একটি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে এবং তা ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়। তবে অনেক দেরি হয়ে যাবার কারণে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাবার কারণে ছেলেটি মারা যায়। এখন ব্রাজিলে প্রতিদিন আনেক শিশু কোভিড-১৯ এ মারা যাচ্ছে।

যখন ভারতে প্রতিদিনের নতুন করোনা ভাইরাস রোগীর সংবাদ বিশ্বে সর্বোচ্চ, ঠিক সে সময় আমরা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তদের দেখছি, নদীতে পবিত্র ডুব বা অনুষ্টানিক স্নানের জন্য গঙ্গায় গাদাগাদী করে জড়ো হয়েছে। ১০ কোটি (একশ মিলিয়ন) উদযাপনকারীদের জন্য - শুধু মাএ এপ্রিল ১২, ১৪ এবং ২১শের সবচেয়ে শুভ দিনগুলিতে প্রতিদিন ৫০ লাখেরও বেশি লোকের সমাবেশ প্রত্যাশিত করা হচ্ছে। কারো কোনও সামাজিক দূরত্ব বা কোনও মুখোশ নেই। কর্তৃপক্ষরা মানুষকে ক্রমাগত কোভিড-১৯ রোধে যথাযথ আচরণ অনুসরণ করার জন্য আবেদন করছে। তবে প্রচুর ভিড়ের কারণে এটি ব্যবহারিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। ঐ সমাবেশের মধ্যে অনেকের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং কয়েক হাজার ইতিবাচক বলে পাওয়া যায়। তারাও কোন যথাযত আচরণ পালন করছে না। আজ ভারত সারাদেশে দিনে ১২ লাখেরও বেশি পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং আশ্চর্যের কিছু নেই কেন গতকাল সারাদেশ ২১৬,০০০ এরও বেশি লোককে (১৮% ইতিবাচকতা) ইতিবাচক পাওয়া গেছে। সাথে সাথে প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বাড়ছে।

থাইল্যান্ডে প্রতিদিন রিপোর্ট অনুযায়ে নতুন কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যাটি দেখায় যে এপ্রিলের ১ লা এপ্রিলের মাত্র ২৬ জন আক্রান্ত লোক ছিল যা খুব দ্রুত বেড়ে ১৫ই এপ্রিলে এসে দাঁড়ায় ১৫৩৩ জনে। তাদের বেশিরভাগ যুক্তরাজ্য রূপের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত যা সেখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। শনাক্ত করা এই রুপটি থাইল্যান্ডে পূর্বের তুলনায় আরও সহজেই সংক্রামিত হওয়ায় কারণেই অনেক লোক সংক্রামিত হচ্ছে। বর্তমান প্রকোপটি তরুণ বয়সের লোকদেরও প্রভাবিত করছে যাদের কিছু লক্ষণ থাকতে পারে বা তেমন কোনও লক্ষণও নেই, যারা সবচেয়ে গতিশীল, সেই কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন করে তুলেছে। এমন কিছু প্রমাণও রয়েছে যে এই রুপটি আরও মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। সুতরাং কর্তৃপক্ষ তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে যেন জনগন অপরিহার্য ভাবে প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি প্রয়োগ করার জন্য সর্বদা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় যেমন প্রত্যেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এবং মুখ স্পর্শ করা এড়ানো, বাহিরে এবং জনাকীর্ণ স্থানে মুখোশ পরা এবং শুধুমাত্র একটি ভাঁজ করা কনুইতে কাশি করে শ্বাস-প্রশ্বাসের শিষ্টাচার মেনে চলা।

৮ই মার্চ থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিনের কোভিড-১৯ এর ইতিবাচকের সংখ্যা ৮৪৫ জন ছিল। তারপর লাফিয়ে সংক্রমণের হারের ফলন ২.৬% থেকে ২ এপ্রিল ২৩% এরও বেশি বেড়েছে। এপ্রিলে দৈনিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬২৬ জনে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রতিদিনের সংখ্যক ইতিবাচক কোভিড রোগীর সংখ্যা। আরও বেশি লোক পরীক্ষার জন্য আসতে শুরু করায় পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়ে যায়। গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১০০,০০০ নতুন কোভিড রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তবে, যারা পুনরুদ্ধার করেছেন তাদের প্রতিদিনের সংখ্যা আজ সংক্রামিত সংখ্যার চেয়ে বেশি। আজ ১৬ এপ্রিল ৪৪১৭ নতুন রোগীর শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৫১৯৮ জন সংক্রামিত মানুষ পুনরুদ্ধার করেছেন এবং ১১১ জন মৃত্যু বরণ করেছেন, যা এখন পর্যন্ত একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যার মৃত্যু। সার্বিক মৃত্যুর হার এখনও ১.৪-১.৫% এর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। মোট রোগীর সংখ্যা (কতজন ইতিবাচক বিয়োগ নম্বর পুনরুদ্ধার করেছে এবং মারা গেছে) ২০ই আগস্ট ছিল ১১৫,৭৭৯ জন আর তা ১৭ই মার্চে ছিল ৩৮১৫৫জন এবং বেড়ে ১৫ই এপ্রিলে হয়েছে ১০০,০৬৫ জনে। তবে আইইডিসিআর অনুসারে বাংলাদেশের পক্ষে আরও বেশি বেদনা হচ্ছে, এখন বুধবার অবধি এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বেশি ২১-৪০ বয়সের লোক ছিলেন। রোগীদের ২৭.৬ শতাংশ ২১-৩০ বছর বয়সী এবং ২৭.১ শতাংশ ৩১-৪০ বছর বয়সী। এরা আমাদের তরুণ সক্রিয় জন গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশের এই জনসংখ্যার গোষ্ঠী অতি প্রয়োজন। এটি দেখা গেছে যে যুক্তরাজ্যের বৈকল্পিকতা ছড়িয়ে পড়ার পরে বেশিরভাগ দক্ষিণ আফ্রিকার রূপের আরও সংক্রামক এবং মারাত্মক কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।

একদিকে আমরা বিশ্বজুড়ে যে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি যে লোকেরা মাসের পর মাসে লকডাউন, সীমাবদ্ধ চলাচলের এবং সামাজিকীকরণের অনুমতি না পাওয়ার কারনে বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা আনেকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণে, কোন সীমাবদ্ধতা আর মানতে পারছে না বা অনুসরন করছে না। লোকেরা স্বাস্থ্য পরামর্শ অনুসরণ করেছে না। অনেক সংখ্যক লোক মুখোশ না পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখে ঘোরাফিরা করছে। ভারত ও বাংলাদেশে আমরা দেখলাম যে কীভাবে হাজার হাজার মানুষ ধর্মীয় উত্সব পালন করতে জড়ো হয়, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় জনসমাবেশে যোগ দেয়। ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া বাড়ছেই। মুখোশ, কোনও সামাজিক দূরত্ব নেই বললেই চলে। সংক্রমণ আরও প্রসারিত হলে তা ভ্যারাস রূপান্তরকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, নতুন এবং মারাত্মক রূপগুলি উদ্ভূত হবে এবং যদি আমরা সংক্রমণ বন্ধ না করতে পারি তবে তার উত্থান অবিরত থাকবে। এই অবস্তা চলতে থাকলে আমরা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে পারব না। এই অবস্তা বিবেচনা করে আমাদের ভাবতে হবে কোন কৌশলটি সবচেয়ে কার্যকর ভাবে এই মহামারী মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

অন্যদিকে আমরা কোভিড-১৯ বিরুদ্ধে ইস্রায়েল, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় দেশগুলির প্রচুর এবং সফল টিকা দেওয়ার কারণে দেখতে পাচ্ছি, সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক আচ্ছাদন শিথিল করছে। সোমবার থেকে সুইজারল্যান্ডও জিম খুলবে। এই বছর কঠোর ভাবে কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে দোকানগুলিও সবসময় খোলা ছিল।

তাহলে শুধু দ্রুত টিকা দেওয়া কি একমাএ সঠিক উত্তর? অথবা যেহেতু ভ্যাকসিন সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করবে না তাই আমাদের একটি একত্রিত (ভবিষ্যতে কিছু সময়ের জন্য টিকাদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণকে বজায় রাখা) কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন হবে? আগামী বছরগুলিতে আমাদের জীবনযাত্রাকে অন্যরকমভাবে পরিবর্তন করে চলতে হবে। এটাই হয়ত জীবনের নতুন বাস্তবতা।

ভ্যাকসিন জাতীয়তার কারণে, বেশিরভাগ ভ্যাকসিনগুলি ধনী দেশগুলি অধিগ্রহণ করে ধরে রেখেছে। কেউ ভাবছে না যে আমরা একটি গ্লোবাল গ্রামে থাকি, তাই বিশ্বের সবাই যদি নিরাপদে না থাকে তবে কেউই নিরাপদ নয়। ভ্যাকসিন ছাড়াই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকবে এবং নতুন মারাত্মক রূপগুলি বর্তমান ভ্যাকসিনগুলিকে কম কার্যকর করে তুলবে এবং আমাদের পুনরায় বার বার টিকা দেওয়ার দরকার পড়তে পারে।

আমি মনে করি জনগণকে এখনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলি অনুসরণ করতে উত্সাহিত করার পাশাপাশি, কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, যেমন কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই বাইরে না যাওয়া, বাইরে বেরোনোর সময় মাস্কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘন ঘন হাত ধোয়া ইত্যাদি। একই সাথে আমাদের অবশ্যই দ্রুত মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সমস্ত দরজার কড়া নাড়াতে হবে।

এটি কোনও অলৌকিক ঘটনার কম ছিল না যখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে বিজ্ঞানীরা কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে এক বছরেরও কম সময়ে বেশ কয়েকটি কার্যকর টিকা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু দ:খের বিযয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র কাছ থেকে গত সপ্তাহে ঘোষণা করা হল অ্যাস্ট্রাজেনেকার আর জনসন ও জনসন এবং বিরল রক্তের জমাটগুলির মধ্যে সংযোগ হতে পারে বলে তারা সন্ধান করছে। এটি অনেকের মধ্যে সন্দেহ এবং ভ্যাকসিন দ্বিধা তৈরি করছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ যারা বেশিরভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় দেশগুলি বা ভারত বা রাশিয়া বা চীন থেকে ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরশীল তাদের জন্য কী বিকল্প রয়েছে?

যেখানে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জাতীয় পরিকল্পনাকারি নেতাদের যাতে লোকেরা নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য কী করতে পারে সে সম্পর্কে শওিশালী বার্তার দেওয়া উচিত ছিল, তার বিপরিতে আপেক্ষিক অনুপস্থিতি বা শূন্যতায় কিছু রাজনীতিবিদ এবং পন্ডিত বিদ্যমান ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। কিছু "শক্তিশালী ব্যক্তিবাদী" মতাদর্শের লোকেরা নিজেদেরকে ভুল করে ভাবছে যে তাদের এই নুতন কর্ণাভাইরাসকে মোকাবেলায় অতিরিক্ত অনাক্রম্যতা রয়েছে এবং তার কারনে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক গর্বের বিষয় বলে মনে করছে।

বাংলাদেশ সহ অনেক উন্নয়নশীল দেশগুলোর তাদের জন্য কী বিকল্প রয়েছে, তা বলার আগে আসুন প্রথমে বিজ্ঞানের দিকে নজর দেই।

১. অস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন কমপক্ষে ১১৫ টি দেশে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার জন মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকটি মাস ধরে ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে। তবে এটি গত মাসে বা তার মধ্যেই যখন দেখা গেল যে, এক বিরল রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার, কয়েকটি ক্ষেত্রে - কিছু মারাত্মক - এমন ঘটনা ঘটেছিল যে অনেক ইউরোপীয় জাতি সকল বয়সের মধ্যে এর ব্যবহার সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা শুরু করে।

২. এপ্রিল ৪ অবধি, ইউরোপীয় নিয়ামকরা ব্রিটেন এবং ৩০ দেশীয় ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিরল রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যার ২২২টির খবর পেয়েছিলেন। তারা বলেছিল যে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন (তিন কোটি ৪০ লাখ) মানুষ সেই দেশগুলিতে অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন পেয়েছিল এবং রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাগুলি ১০০০০০ জন প্রাপকদের মধ্যে এক জনের হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল।

৩. ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের গবেষণায় (এখনও পিয়ার রিভিউয়ের অপেক্ষায়) পরামর্শ দেয় যে মস্তিষ্কে বিপজ্জনক, বিরল রক্তের জমাট বাঁধার অভিজ্ঞতা হওয়ার ঝুঁকিগুলি যারা অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফাইজার এবং মোদার্নার দ্বারা তৈরি ভ্যাকসিন পান তাদের তুলনায় করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্তের লোকদের রক্তের জমাট বাঁধা মধ্যে অনেক গুনে বেশি। করোনার সংক্রমণ অনেক বেশি বিপজ্জনক।

৪. সেই একই তথ্য থেকে দেখা গেছে যে আমেরিকান তৈরি ভ্যাকসিনগুলি প্রাপ্ত প্রতি ১০ লাখ লোকের মধ্যে প্রায় ৪ জনের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল ভেনাস থ্রোমোসিস (সিভিটি), বা রক্ত জমাট বাঁধার অভিজ্ঞতা হতে পারে। যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন এবং অনুরূপ জনসন অ্যান্ড জনসন (যে ভ্যাকসিন গুলো ভিন্ন উপায়ে কাজ করে) নিয়েছে তাদের প্রতি ১০ লাখের মধ্যে প্রায় ৫ জনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

৫. করোনাভাইরাস সংক্রামিত লোকদের রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা ফাইজার বা মোদার্নার ভ্যাকসিন পাওয়া লোকদের তুলনায় ১০ গুন বেশি ঝুঁকির সমান এবং কোভিড-১৯ রোগ অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন দেওয়া লোকদের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ঝুঁকির সমান।

৬.সর্ব মোট ৬০ লাখ ৯০ হাজার লোকের মধ্যে যারা জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন পেয়েছিল তাদের মধ্যে ৬ জনের রক্ত জমাট বেঁধেছিল। ১৮ থেকে ৪৮ বছর বয়সী সাদা বর্নের মহিলাদের মধ্যে ছয়টি ঘটনা ঘটেছিল। ঐ লক্ষণগুলি দেখা দেয় ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে।

৭.যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক বছর ৩০০,০০০ থেকে ৬০০০০০ লোক তাদের ফুসফুসে বা পায়ে বা দেহের অন্যান্য অংশে রক্ত জমাট বাঁধে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যায় প্রতিদিন প্রায় ১০০০ থেকে ২০০০ রক্ত জমাট বাঁধা হয়। একদিনে কয়েক মিলিয়ন লোককে এখন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, এই পটভূমি বিবেচনার করে বলা যেতে পারে যে পরিমান রক্ত জমাট বাঁধা ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘটবে কেবলমাত্র উপরের পটভূমিতে সাধারণত ঘটা রক্ত জমাট বাঁধার হারের অংশ হিসাবেই সম্ভবত হবে, হয়ত তা ভ্যাকসিনের সাথে সম্পর্কিত নয়।

রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাব্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলো

ইউরোপীয় নিয়ামকরা পরামর্শ দিয়েছেন, যে লক্ষণ ও উপসর্গগুলো ভ্যাকসিন দেওয়ার ১৩দিনের মধ্যে হতে পারে যা লোকদের সচেতন হওয়া উচিত। উপসর্গ গুলো হতে পারে: ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা পায়ে ফোলাভাব, অবিচ্ছিন্ন পেটে ব্যথা, তীব্র ও অবিচ্ছিন্ন মাথাব্যথা বা ঝাপসা দৃষ্টি, এবং ইনজেকশনের জায়গা ছাড়িয়ে অন্য জায়গায় ত্বকের নীচে ক্ষুদ্র রক্তের দাগগুলি। তারা এমন অনেকগুলি লক্ষণগুলির দেখা দিলে চিকিত্সার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে লক্ষণগুলি এতই অস্পষ্ট যে প্রায় অবিলম্বে, ব্রিটিশ জরুরী কক্ষগুলিতে ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য রোগীদের ভিড় তীব্র বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেকেই তাদের লক্ষনগুলো উপরের বিবরণটির সাথে মেলে ভেবে চিন্তিত ছিলেন। ফলস্বরূপ, কিছু জরুরি কক্ষের চিকিত্সকরা অপ্রয়োজনীয় হাসপাতালের পরিদর্শন কি ভাবে কমানো যায় সেজন্য লক্ষনগুলোর আরো সংবেদনশীল করার সম্পর্কে আরও স্পষ্ট কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা চেয়েছেন।

সম্ভাব্য চিকিৎসা

জার্মান গবেষকরা বিশেষায়িত রক্ত পরীক্ষাগুলি বর্ণনা করেছেন যা এই ব্যাধিটি নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ইনট্র্যাভেনাস ইমিউন গ্লোবুলিন নামক একটি রক্ত পণ্য, যা বিভিন্ন প্রতিরোধ ক্ষতির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়, দেয়ার জন্য চিকিত্সার পরামর্শ দিয়েছেন। অ্যান্টি-কোগুল্যান্ট বা রক্ত পাতলা হিসাবে পরিচিত ড্রাগগুলিও দেওয়া যেতে পারে তবে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হওয়া - হেপারিন না দেওয়ার সুপারিস করেছেন। কেননা, (যদিও খুব কম) ভ্যাকসিন সম্পর্কিত রক্ত জমাট অবস্থা হ্যাপারিন প্রদত্ত লোকদের মধ্যে দেখা যায়।

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ, যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিকল্প ভ্যাকসিন রয়েছে সেই দেশগুলো এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন শুধু মাএ বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে ব্যবহার সীমিত করেছে এবং কয়েকটি দেশ একেবারে এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও এই জমাট বাঁধার প্রকোপগুলি অত্যন্ত কম, নিয়মকারিক এবং গবেষকরা মাথাব্যথা, পা ফোলা এবং পেটের ব্যথা সহ - নির্দিষ্ট লক্ষণগুলির সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছেন - বিশেষত কম বয়সীদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে তাদের ভ্যাকসিন নিয়েছে।

বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলি কয়েকটি দেশে উত্পাদিত ভ্যাকসিনগুলির উপর নির্ভরশীল। তাদের জন্য অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জেএন্ডজে, স্পুটনিক ভি এবং সোনোভাক ভ্যাকসিনগুলি অর্থনৈতিকভাবে এবং অপারেশনগতভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ এই দেশগুলি ঐ ভ্যাকসিনের কয়েক মিলিয়ন ডোজ অর্ডার করেছে। করোনার ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর তুলনায় বিরল ভ্যাকসিন দেওয়ার পরের রক্ত ​​জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বিবেচনা করে (বেশিরভাগ ইউরোপীয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাদা মহিলাদের মধ্যে, এশিয়া বা আফ্রিকান দেশগুলিতে এখনও এমন কোনও গবেষণা হয়নি) বলা যায় উপরের ভ্যাকসিনগুলি দিয়ে টিকা দেওয়ার ব্যতীত অন্য কোনও বিকল্প নেই। কিছু হালকা লক্ষণ ব্যতীত লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারত এবং বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন গ্রহন করেছে। রক্ত জমাট বাঁধার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে, আমাদের যা আছে তা দিয়ে আমরাদের টিকা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এবং ভাইরাস থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর সাথে সাথে অর্থনীতি উন্মুক্ত করতে এবং অর্থনৈতিক কষ্ট ও ক্ষুধা থেকে জীবন বাঁচানোর বিকল্প নেই।

অনেক মিডিয়া এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলি অনিবার্যভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জনস্বাস্থ্যের সেবায় যা কিছু করা হয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন। এমনকি তারা এটি ইঙ্গিত দেয় যে জোর করে কোনও দ্রুতগতিতে চলমান সংক্রামক ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসাই আসলে তাদের খুব উপকার করে। তবে আমরা বিধিনিযেদ নিয়মত পালন করে নিশ্চিত ভাবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য করতে পারি যেন তারা তাদের কাজগুলি সঠিক ভাবে করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন তথ্যের প্রতিক্রিয়াতে তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করা এবং ভ্যাকসিনগুলির ব্যয় এবং সুবিধাগুলিকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে রাখা।

রক্ত জমাট বাঁধা বিশেষত মহিলাদের বেশীর ভাগে আক্রান্ত হওয়া তাদের জীবনের একটি বড় ট্র্যাজেডি। তবে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন বিরোধী বিশ্বাসে কাজ করা লোকেরা আত্মবিশ্বাস ও নিয়ন্ত্রক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় একটি প্রচেষ্টা না করে, রক্ত জমাট বাঁধা এবং ভ্যাকসিন সংযোগটিকে কলঙ্ক হিসাবে চিত্রিত করবে এবং ভ্যাকসিন বিতরণকে /টিকার বিরুদ্ধে কাজ করবে। টিকা দেয়ার পরে ভ্যাকসিনের জটিলতার প্রভাবগুলি আরও গবেষণার জন্য বার্তা বিতরণ এবং প্রোটোকল বিকাশের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উত্পাদনকারী দেশগুলোর ড্রাগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ একটি স্বচ্ছতা প্রদর্শন করছে। এই স্বচ্ছতা প্রদর্শন যারা ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়েছে এমন অনেকের মতো এবং যারা এখনও এটির জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের আশ্বাস দেবে যে এই নতুন চিকিত্সাগুলির সুরক্ষা যতটা সম্ভব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে। আসুন জনগনের ভ্যাকসিন পেতে এবং জীবন বাঁচানোর জন্য একত্র হয়ে কাজ করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন