এইতো গতকালকের ঘটনা। বর্তমানে দেশের আলোচিত এবং দুর্নীতির শীর্ষে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় স্যার সাংবাদিকদের এক তথ্য দিলেন। তথ্যটি হচ্ছে তার মন্ত্রণালয়ে এমন এমন সব রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি আছে যা বাইরে প্রকাশ পেলে রাশিয়া, চীন সহ শক্তিধর পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের সাথে মন কালাকালি হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
চলুন টাইম মেশিনের ছোট্ট সিটে বসিয়ে আপনাকে একটু পিছনে ঘুরিয়ে আনি। দেশে তখন পদ্মা সেতুর নির্মানের প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু যখন মোটামুটি ঠিক তখন বিশ্বব্যাংক একটি তথ্য নিয়ে আসলো, জনৈক এক মন্ত্রণালয় নাকি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। এই কারন দেখিয়ে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালো বিশ্বব্যাংক। যদিও ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীর পদ থেকে হারিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মান গোটা বিশ্ববাসী দেখেছে অবাক বিস্ময়ে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় সম্ভবত তার সচিবের একান্ত সচিবের রুমটি সহ গোটা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কেই সংরক্ষিত এলাকা মনে করেন, যেখানে কারো প্রবেশ নিষেধ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান মিয়ার একান্ত সচিবের কক্ষে সম্ভবত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্লু প্রিন্ট লুকিয়ে রেখেছিলেন, এটা ফাঁস হয়ে গেলে দেশের সমস্যা ছিলো অথবা লুকানো ছিলো কোভিড ভ্যাকসিন দুর্নীতির এমন সব নথি যা ফাঁস হয়ে গেলে বাংলাদেশের সাথে সম্ভবত দুর্নীতির দায়ে সম্পর্ক ছিন্ন হতো ওই দেশগুলোর। প্রথমটা হতেই পারে না, কিন্তু দ্বিতীয় সন্দেহের মিথ্যার গ্যারান্টি খোদ মাননীয় নিজেই দিতে পারবেন না (কারন তিনি আসলেই জানেন না)।
এবার বর্তমানে আসা যাক। করোনা মহামারী চলমান থাকার এই সময়টিতে দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার আশ্রয়স্থল ছিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে এ দেশের মানুষ আশা করতেই পারে যে এই মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় তাদের ট্যাক্সের টাকা যেহেতু কাজে লাগাচ্ছে তাই নির্ভার হওয়াই যায়। কিন্তু এ দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপরে নিজেদের জীবন বর্গা রাখা যেন শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেবার মতোন।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আমলাদের নেতৃত্বে শুরু হলো লুটপাট আর দুর্নীতির মহোৎসব। মহামারী কি আর বছর বছর আসে? এই তো সুযোগ! মাস্ক কেলেঙ্কারি, ভেন্টিলেটর স্থাপনে কেলেঙ্কারি, পিপিপি (এটা পিপিই হবে) সমস্যা, হাসপাতালের পর্দা ক্রয়, জরুরী কেনাকাটায় দুর্নীতি, ড্রাইভারের হাজার কোটি টাকা, সচিবের দুর্নীতি সহ এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে এই মন্ত্রণালয়ের মাননীয়গন টাকা সরাননি। সিন্ডিকেটের সাহেদ, সাবরিনা সহ আরো কয়েকজন বেরিয়ে আসতে শুরু করলে দায়িত্বে থাকা মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় স্যার জানালের তিনি কিছু জানেন না। যদিও পরে সেই সাহেদ সাহেবের সাথেই এই ভাইরাল যুগে মাননীয়ের ছবি ভাইরাল হতে দেখেছে দেশবাসী। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই বিশার অংকের দুর্নীতিগুলো তারা তাদের অর্জন হিসাবে ধরবেন কিনা সেটি একান্তই মহামান্য মাননীয়দের ব্যাপার।
এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় এক আজব ……(শব্দ সংকটে ভুগছি)। গতবছর করোনা চলাকালীন সময়ে অনেকবারই তিনি তাকে রেখে, তাকে না জানিয়ে, তিনি বোঝেন না এমন ধরণের কথা বলেছেন। আচ্ছা মন্ত্রী মহোদয় হয়তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী শব্দের ভুল ব্যাখ্যা জানেন অথবা তাকে কেউ ভুলভাল বুঝিয়েছেন অথবা এটাও হতে পারে যে “ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না”। একটি বিষয় বলুন তো, গণতান্ত্রিক একটি দেশের একটি গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রণালয় যেখানে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য নিয়ে সকল আয়োজন, সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় এতোটাই ……… ( শব্দ লাইনচ্যুত, যা ইচ্ছা পাঠক বসিয়ে নিতে পারেন)। আর তিনি যদি তার দায়িত্ব ঠিকঠাক না চালাতেই পারেন অথবা তার দ্বারা যদি সম্ভব না হয় তাহলে প্লিজ মাননীয়! আপনি যথেষ্ট করেছেন। এই বঙ্গদেশ আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে। কিন্তু এমন যদি হয় কারো ভয়ে, কারো হুমকিতে, কোনো সিন্ডিকেটের চক্করে পড়ে এভাবে গোটা দেশের মানুষের এবং স্বাস্থ্যখাত হাতের তালুতে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন! এখানে কথা অবশ্যই আছে মাননীয়। একটি স্বাধীন দেশের জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চাইতে ক্ষমতাবান কেউ হবার কথা না, সেই নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি আবার মন্ত্রী হন তবে তো সুপার পাওয়ার হাতে পাবার কথা। এরই সাথে যুক্ত করছি প্রধানমন্ত্রী যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, তার মন্ত্রীপরিষদের এতো পাওয়ারফুল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর তো এমন হাল হবার কথা না। যদি সমস্যা খুঁজে না পান মহোদয় তবে এখানে আপনার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
১০০ সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার যে শতভাগ সেরা কোচ হবেন এমন তো কথা নেই। মানলাম আপনি শতভাগ ধোয়া তুলসীপাতা, আপনি দুর্নীতি করেন না, দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা আপনি ওড়ান না। তাহলে আপনার মন্ত্রণালয়ে এতো এতো দুর্নীতি কিভাবে। তাহলে কি সবাই আপনার শত্রু? যারা শত্রুতা করে আপনাকে আর আপনার মন্ত্রণালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছে! এরা কারা? দয়া করে বলবেন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দেশবাসী জানতে চায়। যদি উত্তর না থাকে তাহলে দয়া করে থামুন (সরাসরি পদত্যাগ চাই একথা লিখতে পারলাম না, তাই থামুন বলেই থামলাম)।
মাননীয়! আপনার অধীনস্থ প্রজাতন্ত্রের চাকর আমলারা কি আপনার কথা শোনেন না, নাকি তাদের কথা শুনতেই আপনার সমস্যা। আপনি কাল বললেন আপনার অচিরিক্ত সচিব এক আমলাকে নাকি সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম খামচি মেরেছেন (একটু হেসে নিন পাঠক)!!!
তাহলে খামচি শব্দের সাথে আপনি বেশ পরিচিত ধরে নিচ্ছি। তবে দেশবাসী হয়তো খামচাখামচির ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছেন। আপনার মন্ত্রণালয়ে প্রজাতন্ত্রের এক কর্মচারী আমলা একজন স্বনামধন্য সাংবাদিকের উপরে শারীরিকভাবে কিভাবে চড়াও হয়েছেন সেই ফুটেজ ভাইরাল মাননীয়। হ্যা খামচাখামচি সম্ভবত হয় আপনার মন্ত্রণালয়ে কিন্তু সেটা অবশ্যই টাকার বাণ্ডিলের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আপনার আমলাদের মধ্যকার খামচাখামচি। আর এই খবর প্রকাশ করলেই একজন প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিক আপনাদের কাছে হয়ে যান জনৈক রোজিনা ইসলাম। বাহ মাননীয় বাহ।
মাননীয় আপনাকে দেখলে বাংলা সিনেমারে আনোয়ার হোসেনের কথা খুব মনে পড়ে। আপনার প্রতিটা কথা ইমোশনাল, সাংবাদিকদের দেওয়া আপনার প্রতিটি উত্তর চোখের কোনে জল জমায়, আপনার প্রতিটা সংবাদসম্মেলন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উত্তরের মতো মুখস্ত করা। ট্রাস্ট মি মাননীয় আপনাকে দেখলে এতোটাই অসহায় মনে হয়। মাঝে মাঝে আপনার কথাগুলো শুনে মনে হয় অফিস আপনি করেননা ঠিক কিন্তু মাঝে মাঝে অফিসে গেলে শুধু আমলাদের কাছে ক্লাস করতেই যান, যারা আপনাকে বসিয়ে বসিয়ে কিছু কথা মুখস্ত করিয়ে দেন আর আপনি যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে সেগুলোই বলেন। আর সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন আসলেই আপনার উত্তর হয়ে যায় আমি কিছু জানি না, আমি কিছু বুঝিনা, আমাকে জানায়নি। আপনার জন্য সার্কাস রিংয়ের বাইরে বসা হাজারো মানুষের পক্ষ থেকে করতালি রইলো। আপনি পারেন ভাই। মনোবলের দিক থেকে আপনি সেরা, কারন দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ আপনার পদত্যাগ চাইলেও আপনি পদ্মা সেতুর পিলারের মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর আপনার মতো আপনি দুর্নীতি চালিয়ে যাবেন। তাই এখানে আবারো পদত্যাগ করুন লিখার সাহস না দেখিয়ে লিখলাম প্লিজ এবার থামুন মাননীয়।
মাননীয় আপনি নাহয় আইনমন্ত্রীকে ধরে একটু অনুরোধ করে নতুন এক আইন করিয়ে নিতে পারেন। আইনটা এমন হতে পারে যে আপনার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় একশো বার হাজারবার দুর্নীতি করবে, আপনার আমলারা বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে, আপনার আমলারা কাজ না করিয়েই ভূতুরে বিল উঠিয়ে নিবে কিন্তু এসব কিছুই আপনাদের গায়ে লাগবে না। কাক যেমন চোখ বুজলে ভাবে কেউ কিছুই দেখছে না, এই আইনের ফলে জনগণ বা অন্য কেউ কিছুই দেখতে পাবে না অথবা না দেখার ভান করে থাকতে হবে। কিন্তু এই আইনের বাইরে গিয়ে আপনাদের দুর্নীতি দেখে ফেললে, বলে ফেললে, প্রকাশ করে ফেললেই তার জেলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সেইসাথে প্রাণনাশের হুমকি আর খামচি ফ্রিতে দিয়ে দেবেন আপনার আমলারা। যদিও এটি আপনাকে একটি সাইন্স ফিকশন ড্রীমের কন্সেপ্ট ফ্রি তে দিয়ে দিলাম। কোনো এক টেনশনবিহীন রাতে হালকা ……(ছি, মাননীয়কে কি এখব লিখা যায়) শুয়ে পড়লেই এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও হতে পারে। ঠিক ওই সময়টাতে আপনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপরে ভরসা করে থাকা করোনায় কাতর কোনো এক রোগী হয়তো আপনার মান নিয়ে ভাববেন। মনে মনে তিনিও হয়তো কষ্ট আর আক্ষেপের সাথে স্বপ্ন দেখবেন একদিন কোনো এক ভয়ডরহীন সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রথম কলামে বড় বড় করে ছাপা হয়েছে “অবশেষে মানহীন মাননীয়র পদত্যাগ”।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।