প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ০৫ নভেম্বর, ২০২১
ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বলতে এখানে আমি ব্যবসায়ী এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট সকলকেই বুঝচ্ছি। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে শুরু করে আইন দিয়ে যেভাবে সহায়তা করে চলেছেন এবং এখনো করছেন কোন সরকারি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করে তা করেনি। এখন পর্যন্ত করোনা অতিমারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সহায়তার হাত বাড়িয়ে চলেছেন। আমি বিশ্বাস করি এই সহায়তার হাত বাড়ানোর প্রদান কারণ ছিলো ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ধারা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে এবং আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। এই কারণের জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে এবং তারা বিশ্বাস করে তাদের সত্যিকারের যদি কোন নিকটজন থাকেন তবে তিনি হচ্ছেন নেত্রী শেখ হাসিনা।
তবে একি কথা আওয়ামী লীগের সাথে বলা চলে না। একথা শোনার পর অনেকের কাছে লাইনটি বিরোধপূর্ণ লাগতে পারে কারণ আওয়ামী লীগ প্রধানত শেখ হাসিনা। তাহলে আওয়ামী লীগ আবার আলাদা করা হল কেন। আলাদা করা হল অন্য কারণে আর সেটা হল নেত্রী যে কাজ করছেন তার একটি ফলো আপ করতে হবে, ফলটা পেতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে আওয়ামী লীগের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর এটা সব সময়ই সাধারণত ব্যক্তি পর্যায়ে হয়ে থাকে। যারা মন্ত্রী পর্যায়ে থাকেন তাদের এটা করা সম্ভব নয় কারণ করতে গেলে ভাববে তারা বোধহয় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন আর না করলেও অনেকভাবে বিভিন্ন কথা বার্তা হয়। তবে তাদের সাথে নিশ্চয়ই সব ব্যবসায়ীদেরই ব্যবসার কারণে যোগাযোগ হয় সেটাকে আমি এখানে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা যারা সরকারের সাথে সংযুক্ত নন তাদের সাথে এই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার। তাদের ব্যবসার বাহিরে আরো অনেক বিষয় থাকে যে বিষয়ে তারা রাজনীতিবিদদের কাছেই মুখ খোলেন। অনেক সময় দেখা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক আমলারা এদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে এমন ব্যবহার করেন যাতে তারা সরকার বিরোধী একটা মনোভাব মনের ভিতর পোষণ করেন এটা আমি বুঝে এবং জেনেই বলছি। এই ধরণের বেশ কিছু উদাহরণ আছে যেটি পাবলিকলি প্রকাশ করা দেশের এবং দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আমি সেজন্য সেভাবে বলতে চাই না কিন্তু এরকম ঘটনা যে দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে সেটা আমরা সকলেই জানি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, একদিকে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক জায়গায় ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছেন এবং মন্ত্রীরা সেটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক থাকে। পার্লামেন্টে অনেক হিসাব করে দেখেছেন যে, মোটামুটিভাবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রধান শক্তি এবং নির্বাচনেও তারাই শুধু আমেরিকায় না, এখন বাংলাদেশেও তারা একটা বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু এই ফ্যাক্টরটা কে কতটুকু রাখতে পারেন তার উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে রাজনীতি মোটামুটিভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পক্ষ আর সকলেই হচ্ছে তার বিপক্ষ। যখন প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে যত ডিফারেন্স থাকুক না কেন তারা নেত্রীকে যেকোনোভাবে দাবিয়ে রাখার জন্য তারা এক হয়ে কাজ করবে এবং যে নির্বাচন সামনে আসছে তখনও করবে।
অনেকে হয়তো দু`বছর আগে ভাবছেন যে, আমাদের একজন শেখ হাসিনা। যেরকম ভাবে একটি ডায়নামো দিয়ে আমরা আলো জ্বালাতে পারি কিন্তু ডায়নামোতে ফুয়েল দিতে হয়। তাই এখন নেত্রীকে তার কাজ করার জন্য যে মনের জোর এবং তিনি যাতে উৎফুল্ল ভাবে আরো কাজ করে যেতে পারেন তার জন্য যে ফুয়েল এর প্রয়োজন সেই ফুয়েল তো দিতে হবে আমাদেরকে, জনগণকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদেরকে। জনগণ তাদের কাজ ঠিকই করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, এমনকি ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে অনেকেই সেই ভাবে করেনা। আমি একটি জায়গায় আমি দায়িত্ব পালন করি, যেখানে প্রাক্তন ছাত্রলীগারদের নিয়ে আমার কাজ করতে হয়। আমার খুব অবাক লাগে যে, এদের অনেকের ভিতরই ন্যূনতম নৈতিক বোধ নাই। তারা একসময় ছাত্রলীগ করেছেন। সুতরাং তাদের জন্য সব প্রাপ্য। আমার কাছে ওই সুবিধা পায় না দেখে যে এসএমএস এবং লিখিত আকারে জানায় সেগুলো আমি ঠিক করেছি যে কমিটির কাছে প্রিন্ট আউট করে তাদেরকে দিয়ে কমিটি করে দেবো যেগুলোকে ঠিক করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মোদাচ্ছের ভাই বলেন এবং তাকে আমি মৃত্যু পর্যন্ত শ্রদ্ধা করব এবং শেষ নিঃশ্বাসও আল্লাহর নামের সাথে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের কথা, বিশেষ করে নেত্রী শেখ হাসিনার নাম বলে যাব। এটার কোন পরিবর্তন হবে না। এর জন্য আমাকে আলাদা কোন মূল্যায়ন করা লাগবে না এবং আল্লাহর মর্জি মূল্যায়ন করা হয়ও না। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ আমরা যখন মুখে বলি শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার পিছে, তখন আসলে মিন করে যে তুমি এগিয়ে চলো, বিপদ দেখলে আমরা পিছন থেকে চলে যেতে পারবো। আমি সেটা বলিনা। আমি বলি, নেত্রী তুমি এগিয়ে চলো, আমি আছি তোমার সাথে। অর্থাৎ বিপদ আপদে সাথেই থাকব। আমার ৬০ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে আমি তাই করেছি। কিন্তু উনি কি দিয়েছেন না দিয়েছেন সেটা আমি বলছিনা। কারণ একটাই, বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত স্নেহ করতেন, যেটা আমার বিরাট সৌভাগ্য। তখন কাউকে পাঠায় নাই আমাকে নিজ খরচে এফআরসিএস করতে বঙ্গবন্ধুই পাঠিয়েছিলেন এবং করে এসেছি। সেটা একটা এক্সেপশন এবং লেখা ছিল, ইহাকে কোন উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এ জীবনে আর কি লাগে! বঙ্গবন্ধু আরো অনেক স্নেহ করেছেন সেটা আলাদা ইতিহাস। নেত্রী সবসময় মোদাচ্ছের ভাই বলেন, আলাদাভাবে এর চেয়ে বড় মূল্যায়ন আর কিভাবে করবে সেটা একটা প্রশ্ন?
তবে স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ হিসাবে অনেক কিছুই মানুষের ইচ্ছা থাকে, সবটা যে হয় তা তো না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কি পেলাম সেই হিসাব করে যখন মুখের কথা বলি যে, না নেত্রীর ব্যাপারে তো কোন দেনা-পাওনার ব্যাপার নাই। দেনা-পাওনার ব্যাপারই যদি না থাকে তাহলে মূল্যায়ন হলো না ওইটা আশা করলাম তাহলে পরিবর্তন হবে কেন। সেই পরিবর্তন আমার জীবনে হবে না। আমি একটি জিনিস গর্ব করে বলতে পারি, তার পরিবারের বাইরে জীবিত আছে আমি ছাড়া এরকম ভাবে তার সর্ব অবস্থায় সাথে আছি এরকম আরেকটি উদাহরণ সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার কাছে মনে হয়না। অনেকে আছেন তারা অভিমান করেই হোক বা যেকোনো কারণে হোক হয়তো দূরে রয়ে গেছেন। যারা হয়তো আমার চেয়েও অনেক বেশি করেছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার খাতিরে যখনই যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের সাথেই তারা সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে। এই সরকারের আমলেও টেলিভিশন থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা মোটামুটি একটা আগে ছিল একসময় এনজিওরা। এনজিওরা এখন বুদ্ধিজীবী সেজে তারা এখন ভালো ভালো এনজিও যারা জনগণের জন্য সত্যি সত্যি করে তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকি যারা তারা ওই ওয়ান-ইলেভেন যারা করেছে তাদের সাথে যোগ দিয়ে তারা আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন অন্যভাবে করবে সেই প্রচেষ্টা তারা কন্টিনিউয়াসলি করে যাচ্ছে। আমি যখন জানি তখন আমাদের সরকার নিশ্চয়ই জানে যে, নেত্রীর বিরোধীরা ভারত থেকে শুরু করে প্রতিটি বিদেশি শক্তির সাথে তাদের খুব ভালো যোগাযোগ সম্প্রতিকালে স্থাপিত হয়েছে। আমি জেনে বলছি। তো আমি যদি জানতে পারি উনারা জানবেন না এটা তো হতে পারেনা, নিশ্চয়ই জানবেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা জেনেই করছেন। যেমন- এই মুহূর্তে বাংলাদেশে উনি ফেরার আগ পর্যন্ত কোন আন্দোলন হবেও না, আওয়ামী লীগের কেউ বড় বড় কথাও বলবে না। কেন বলবে না? কারণ, নেত্রীই যদি না শুনলো তাহলে বিরোধী দল ভাবে আন্দোলন করে লাভ হলো কি। তারাও নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যে নেত্রী আন্দোলন আন্দোলন ভাব করবে, নেত্রী শুনবে, জানবে, তাদের একটু দাম বাড়বে। অন্তত চিকিৎসার একটা খরচ দিবে। সুতরাং যতদিন নেত্রী দেশে না থাকবেন ততদিন আন্দোলনের কোন সম্ভাবনা নেই তবে হ্যাঁ যারা ষড়যন্ত্র করবে তাদের কথা আলাদা। এবার তারা স্তর অনুযায়ী ষড়যন্ত্র করছে, এমনকি তারা ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছে এবং তাদেরকে দুই নৌকায় পা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। তবে সবচেয়ে শংকার বিষয় হলো আমলাদের নিয়ে, আমলাদের মাঝেও সিন্ডিকেটের মত হয়ে গেছে। যারা সেই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত নয় তারা কিন্তু উপরে উঠতে পারছে না কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তো সবার পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবে আমি বিশ্বাস করি সত্যিকারের, সঠিক অবস্থা জানার যে পরিবেশ তা জানার জন্য হলেও তাকে তার বিশ্বাসী যেকোনো বেশ কয়েকজন আমলার উপর তাকে কিছুটা হলেও ভরসা করতে ইবে, না হলে ইন্টারমেশন আরও গ্যাপ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে তারা অনেকেই উনাকে সত্যি কথাও বলছে না এবং উনার পক্ষে কাজ করছে এ রকম বাস্তবভিত্তিক প্রমাণ নেই। উপরে দেখানো যায়, কিন্তু সত্যিকারে যে টুকু কাজ হচ্ছে এটা রাজনীতিবিদদের দ্বারাই হচ্ছে। অনেক আমলারা একদম বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ছাত্রলীগ থেকে এসেছে আগের রাজনৈতিক, তারা কিন্তু জান-প্রাণ দিয়ে নেত্রীর জন্য কাজ করছে যেই পজিশনেই থাকুক না কেনো তাদের অনেকেরই সামান্য কোন পরিবর্তন নেই। কিন্তু অল্প কয়েকজন যারা নেত্রীকে নেত্রীর কাছের লোক সেজে কাজ করছে তাদের বিষয়ে আমার গভীর সন্দেহ হয় যে তারাই কি এই যে যারা ব্যবসায়ী কমিউনিটি, সাংবাদিক কমিউনিটি থেকে শুরু করে প্রফেশনাল বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে কিন্তু নেত্রীর ধীরে ধীরে গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। এইটা বুঝার জন্য কোন পিএইচডি করার দরকার নেই। যেহেতু দুই বছর পরেই নির্বাচন এবং নেত্রীকে যারা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না তারা যেহেতু খুবই সচেতনভাবে সাথে রোড ম্যাপ করে কাজ করছে এই কারণের জন্য যারা নেত্রীর সত্যিকারে মঙ্গল কামনা করেন তাদেরও রোডঃ ম্যাপ করে এবং বিভিন্ন ভাবে কাজ করতে হবে। একটি গ্রুপের দেখতে হবে যে এই যে প্রফেশনাল বিভিন্ন গ্রুপ। যেমন- ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গণ্ডগোল হলো তার জন্য বন্ধ করে দিতে হলো আমাদের সরকার পুলিশ সবকিছু একটি মেডিকেল কলেজ আমরা কন্ট্রোল করতে পারলাম না। লোক তো আর চোখ বন্ধ করে থাকে না। এতে কি আমাদের পজিশন খারাপ হয় নাই? এটা বুঝতে কি বিরাট বিজ্ঞ হওয়া লাগে? তার মানে হচ্ছে যে ইনহেরেন্ট ওয়েতে আমরা এখানে ফেইল করছি। যেমন এই যে মন্দিরে অ্যাটাক হলো এই সময় এবং তার আগে থেকে বারবার হোম মিনিস্ট্রি থেকে বলা হলো পূজা নির্বিঘ্নে করার জন্য অথচ যেতে যদি ৫ মিনিটও লেইট হয় সেই দুর্বলতা তো আমাদের, সরকারের। এই যে দুর্বলতাটা হলো এবং আমাদের কর্মীরা যে দেরি করলো এই দুর্বলতাটা হতেই পারে। হঠাত করে এস্টিমেট করা যায় না। এটা সবকিছু তো হয়ে যাওয়ার পরে যত বুদ্ধি বাড়ে হওয়ার আগে আমাদের নিজেদের বিষয়েও এত চিন্তা করা যায় না ফ্যাক্ট। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে আর কিছু না হয় তার জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত হচ্ছি সে বিষয়েও কিন্তু আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ব্যবসায়ী কমিউনিটির সাথে যারা রাজনীতিবিদ আছে আওয়ামী লীগের তাদের কি সুবিধা অসুবিধা আছে তাদেরকে কি করে নেত্রীর থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে বিষয়গুলো তাদের দেখার দায়িত্ব। এবং দেখে যেভাবেই হউক যেহেতু নেত্রী এত কিছু করেছেন তার কারণে ফলটা আমাদের ঘরে আসার দরকার।
আমরা এই কমিনিটির সাথে কেনো যেনো ঠিক মত সম্পর্ক ধরে রাখতে পারছি না। দুই বছর আগেও যাদের সাথে আমার দেখা হত তাদের সাথে এখনো যখন দেখা হয় তখন তাদের আচরণে আমি কিছু পরিবর্তন দেখতে পাই। তারা আমার সাথে তেমন কিছু না বললেও তাদের আচরণ দেখে আমি বুঝতে পারি যে তারা আগে যেভাবে আওয়ামী লীগকে শতভাগ সমর্থন করতো কিন্তু এখন তাতে নড়চড় দেখা দিয়েছে এবং এটা আমি যেনে বলছি। এসব কাজগুলো দলীয় লোকদের দেখতে হবে এবং নেত্রীর সাথে আলাপ করে করতে হবে। এখন এসব কাজগুলো করতেছে আমলারা আর আমলারা যা করতেছে তাতে পরবর্তী নির্বাচন কঠিন হবে। যদি প্রেসিডেন্টশীয়াল নির্বাচন হত তবে কেউ ক্যান্ডিডেটই দাড়াতে চাইতো না এটা পার্লামেন্টারি নির্বাচন, এখানে অনেক ফ্যাক্টর যোগ হবে। যারা নেত্রীর বিরুদ্ধে তাদের কিন্তু দেশ-বিদেশ বিভিন্ন জায়গা থেকে কত অর্থ যে জোগাড় হচ্ছে তার কোন হিসাব করা যায় না। তবে যতই বলা হক না কেনো এই বড় বড় কথা, ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়েছে আরো অনেকে পেয়েছে অনেক রাজনীতিবিদরাও পেয়েছে এটা একটা ফ্যাক্ট কিন্তু বাস্তবতা হল নির্বাচনের সময় এই টাকা নেত্রীর হাতে আসবে না। কিন্তু বিরোধীদের টাকা অর্গানাইজ, এখানে নেত্রীকে প্রতিটা সিদ্ধান্ত একা নিতে হয় অনেক কিছু দেখতে হয় এবং আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি নির্ভুলভাবে দেখতে পারছেন। কিন্তু এখন থেকে আমরা যদি তাকে তার কাজটি সহজ করে না দেই তাহলে সোজা কাজটি বিনা কারণে কঠিন করা হবে কারণ এখনো মেজরিটি জনগণ আওয়ামী লীগেরই পক্ষে এমনকি ব্যবসায়ীরাও পক্ষে। কিন্তু কিছু আমলারা ধীরে ধীরে এদেরকে নেত্রীর সমর্থন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছেন এবং এই প্রচেষ্টা যদি তারা দুই বছর চালাতে পারে তবে নেত্রীর জন্য নির্বাচন কঠিন হবে। তাই এখন থেকে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই সচেষ্ট হতে হবে এবং এই সচেষ্ট হওয়ার জন্য প্রথম কাজটিই হক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা দিয়ে। এরপর প্রফেশনাল বডি এবং একের পর এক কাজ করে গেলেই আগামী নির্বাচন খুব সহজ হবে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।