ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এবার কি বিদায় নেবে রাজপক্ষে পরিবার?

প্রকাশ: ০২:১২ পিএম, ০৪ এপ্রিল, ২০২২


Thumbnail এবার কি বিদায় নেবে রাজপক্ষে পরিবার?

রাবণের লঙ্কা যেমন হনুমানের লেজে পুড়ে ছারখার হয়েছিলো ঠিক তেমনি আবারও আগুন লেগেছে লঙ্কায়। গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে একক অর্ধ রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। একের পর এক কারফিউ এবং কারফিউ ভেঙে রাস্তায় মানুষের বিক্ষোভ এখন দেশটিতে নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির কাছে আমদানিকৃত জ্বালানির দাম পরিশোধ করার মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই। জ্বালানি সংকটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না, পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যাওয়ায় সেখানেও উৎপাদন সংকট দেখা দিয়েছে; ফলে দেশেজুড়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

এসব কিছু হয়েছে একটি পরিবারকে ঘিরে। যে পরিবার একাই নিয়ন্ত্রণ করছে সমগ্র লঙ্কাবাসির ভাগ্য। আর আধুনিক যুগে লঙ্কার এই রাবণ হলো রাজপক্ষে পরিবার। সমুদ্রে ঘেরা অপার সুন্দর এই দেশকে যেনো একাই ভোগ দখল করছে রাজপক্ষে পরিবারের সদস্যরা। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনের বড় বড় কর্তা ব্যক্তি সবাই এই পরিবারের অনুগত। আর তাই তো ২০০৪ সালে পরিবারটির নাটের গুরু মাহেন্দ্র রাজপক্ষে দেশটির ক্ষমতায় বসার পর থেকেই গত প্রায় দেড় যুগ ধরে যেনো শ্রীলঙ্কাবাসীর ভাগ্যর বিধায়কই বনে গেছে এই একটি পরিবারটি। সীমাহীন দুর্নীতিতে আজ শ্রীলঙ্কার অবস্থা এখন খাদের কিনারায়। আর এই দুর্নীতির পেছনের সবচেয়ে বড় কারিগর শুধু একাই এই রাজপক্ষে পরিবার। এসব কারণে এখন দেশটির সবাই আঙ্গুল তুলছে রাজপক্ষে পরিবারের দিকেই। প্রশ্নও উঠছে লঙ্কাবাসির ভাগ্য নির্ধারনী এই রাজপক্ষে পরিবার কি এবার বিদায় নেবে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা থেকে?

চীনের কাছ থেকে বিলাসী এবং অপ্রয়োজনীয় ঋণ গ্রহণ থেকে শুরু করে দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেনো নিছকই খেলায় খেলায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এই পরিবার। বিশেষ করে চীনের ঋণ দেশটির জন্য বড় একটি গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে হাম্বান্টোটা সমুদ্র বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লীজ দিতে বাধ্য হয়েছে লঙ্কান সরকার। ঠিক তেমনিভাবে করোনা মহামারি ও শিল্পখাতে বিনিয়োগের অভাব দেশটির রাজস্ব একেবারে শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে। আর এসবের ফলে দেশটিতে দেখা দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব। ফলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি একেবারেই শূন্যর কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। দেখা দিয়েছে চাল, তেল, গ্যাস, ওষুধ, কাগজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর ব্যাপক ঘাটতি। কাগজের অভাবে দেশটিতে বদ্ধ হয়ে গেছে স্কুল-কলেজ ও ছাপাখান, তেল ও গ্যাসের অভাবে বন্ধ বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থার ঘাটতিতে দেশিটতে দেখা দিয়েছে দিনে ১৩ ঘণ্টার লোড শেডিং। বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে বন্ধ রাখা হয়েছে অপারেশন ও জরুরি সেবা। আর তাই রাজপক্ষের রাবণের রাজ্য জ্বালিয়ে দিতে রাস্তায় নেমে এসেছে হনুমানের দল। 

রাজপক্ষে পরিবারের নাটের গুরু বলা হয় মাহেন্দ্র রাজাপক্ষেকে । ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ক্ষমতায় আরোহণ করেন মাহেন্দ্র। দেড় বছর পর ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্টের পদ দখলে নেন মাহেন্দ্র। সেই থেকে টানা ১০ বছর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন মাহেন্দ্র। ক্ষমতা দখলের পর মাহেন্দ্র রাজপক্ষের সবচেয়ে বড় সফলতা আসে তামিল বিদ্রোহীদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে। সারা বিশ্বে তখন মাহেন্দ্রর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বললেও এই সব কিছু থেকে এড়িয়ে যান চতুর মাহেন্দ্র। সেই সময় লঙ্কার প্রধান জনগোষ্ঠী সিংহলীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন মাহেন্দ্র। তবে সেই সাথে সাধারণ জনগণ খুব অল্প সময়ের মাঝেই বুঝতে পারেন এ যেনো খাল কেটে কুমির নয় আস্ত হাঙ্গরকেই ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন তার। 

মাহেন্দ্রর শাসনামলে চীনের সাথে ব্যাপক সম্পর্কর উন্নয়ন ঘটে শ্রীলঙ্কার। তামিলদের সাথে গৃহযুদ্ধে সারা বিশ্ব যখন লঙ্কার বিরুদ্ধে তখন একাই চীন সরকার লঙ্কান সরকারকে অর্থ এবং সামরিক দিক থেকে সহযোগিতা করে গেছে। যুদ্ধ শেষ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার ঋণও নিয়েছেন মাহেন্দ্রা, তবে তার প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ঘটেছে। মাহেন্দ্রর শাসনামলে তামিলদের সাথে যুদ্ধ জয় হলেও তামিলদের এখনো কোণঠাসা করে রেখেছেন তিনি। যুদ্ধ শেষে তামিলদের সাথে সিংহলিদের সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো প্রকার উদ্যোগই গ্রহণ করেননি তিনি। গৃহযুদ্ধে সংগঠিত ব্যাপক প্রাণহানির ফলে বিশ্বে অনেকেই তাকে কসাই বলেও সম্বোধন করে থাকেন। 

রাজপক্ষে পরিবারের সবচেয়ে ভয়ংকর সদস্য হলেন দেশটির প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকা গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তার নিজ পরিবারের সদস্যরাই তাকে ‘দ্য টার্মিনেটর’ বা ‘বিধ্বংসী’ নামে সম্বোধন করে থাকেন। এর সবচেয়ে বড় কারণ প্রতিপক্ষকে বিনষ্ট করায় তার জুড়ি মেলা ভার। অল্পতেই মেজাজ হারান যেকোনো কাজে আর তাই তাকে ভয় পায় প্রতিপক্ষর লোকেরাও। 

গোতাবায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিপক্ষের লোকজনকে গুম করে ফেলার জন্য ‘ডেথ স্কোয়াড’ গঠন করেছিলেন তিনি। তবে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ‘দ্য টার্মিনেটর’ গোতাবায়া। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও তার অধীনে। মাহেন্দ্র রাজপক্ষে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার প্রধান সহচর বা লেফটেন্যান্ট ছিলেন গোতাবায়া রাজপক্ষে। একসময় দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন গোতাবায়া। সেই সময় থেকেই দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী এই মন্ত্রণালয়ে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন গোতাবায়া। 

যদিও ২০১৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত কাজ শুরু করেন গোতাবায়া। যদিও তার কাজগুলো হিতে বিপরীত হওয়ার যোগাড়। ২০১৬ সালে ইস্টারে বোমা হামলায় এমনিতেই বিপর্যস্ত লঙ্কার পর্যটন শিল্প করোনায় ধাক্কায় আরো কোমর ভেঙ্গে পড়ে। সেই সাথে অর্থনৈতিক দুর্যোগ রুখতে বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে নগদ অর্থ ছাড় দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি আরো বৃদ্ধি করে। কমে আসে কর আদায়। ফলে, বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যায় অপরিকল্পিত বাজেট প্রণয়ন, কর ছাড় এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থতায় রাজপক্ষে পরিবারের দেশটিকে আরো বিপদেই ফেলে গেছে প্রতি নিয়ত। 

শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজপক্ষের ছোটভাই বাসিল রাজপক্ষে। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে তিনি এখন পরিচিত কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে। সরকারি বিভিন্ন কাজে তার বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আর এই কারণের তিনি এখন সমগ্র শ্রীলঙ্কা জুড়ে মি. টেন পার্সেন্ট নামেও পরিচিত। ঘুষ নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে বাসিলের বিরুদ্ধে। দেশের বাইরে বিভিন্ন ব্যাংকে লাখ লাখ ডলার পাচারের করেছেন বাসিল এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কবার তদন্ত হলেও কোন অদৃশ্য কারণে কোনবারই অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। বড় ভাই গোতাবায়া রাজপক্ষে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়।

পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য চামাল রাজপক্ষে। পরিবারের সকল সমস্যা তিনি সামলে যাচ্ছেন সামনে থেকেই। পরিবারের গুরু মাহেন্দ্র চেয়েও তিন বছরের বয়সে বড় চামাল ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সামলেছেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকারের দায়িত্ব। বলা চলে সংসদে ছোট ভাইকে সব ধরণের বিরোধী আক্রমণ থেকে রক্ষার রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি। স্পিকারের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তার রয়েছে শ্রীলঙ্কার জাহাজ পরিচালনা ও বিমান পরিবহন পরিষেবা মন্ত্রণালয় সামলানর অভিজ্ঞতাও। বর্তমানে যদিও সরকারের সেচ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তিনি, কিন্তু তার মূল প্রভাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। গোতাবায়ার পর ওই মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয় চামালকে।

পুরনো একটা প্রবাদের প্রচলন আছে আমাদের দেশে। রাজার ছেলে রাজাই হয়। ঠিক সেই মতোই নিজের দায়িত্ব সামলে যাচ্ছেন মাহেন্দ্রর বড় ছেলে নামাল রাজপক্ষে। সবাই তাকে পরবর্তী দেশ শাসক হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন। রাজপক্ষে পরিবারও ঠিক তেমনিভাবে গড়েও তুলছে নামালকে। পেশায় আইনজীবী নামাল ২০১০ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পার্লামেন্টের সদস্য হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে নামালকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হলেও বুদ্ধিমান নামাল বাবার প্রেসিডেন্টের পদের প্রভাব খাটিয়ে দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিজের শক্তির জানান দিয়েছেন ঠিকই। 

বর্তমানে তিনি শ্রীলঙ্কার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধেও ব্যাপক আকারের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের অভিযোগ করে আসছে বিরোধী শিবির। যদিও বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন নামাল রাজপক্ষে। শ্রীলঙ্কায় জোর গুঞ্জন বাবা মাহেন্দ্র রাজপক্ষে ছেলে নামালকে দেশটির ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৈরি করছেন। নামালও নিজেও ভালো বা খারাপ যাই হোক না কেনো নিজ কাজের যোগ্যতা দিয়ে ইতিমধ্যে ভবিষ্যতের পরিবারের স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কায় রাজাপাক্ষে পরিবারের বিভিন্ন দুর্নীতি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ফেলেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। মূলত পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দেশটি একে করোনার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন, এর মধ্যে সীমাহীন দুর্নীতি দেশটিকে শেষ করে দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তও তাদের পতনের মুখে দাঁড় করারো ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এখন এই দেশটি দেউলিয়া হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজপক্ষে পরিবারের পতন দেখছেন বিশ্লেষকরা।

শ্রীলঙ্কা   কারফিউ   অর্থনীতি   সংকট   পদত্যাগ  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ কি সমাপ্তির পথে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।

ইরানি বিপ্লবের পঁয়তাল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে নানারকম ঘটনা ইরানে ঘটেছে। এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইরানকে ধর্মান্ধ মৌলবাদী কট্টর অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ঘরের ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু ইরান কট্টর মৌলবাদী অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি। 

ইসলামী বিপ্লবের পর কেবল সেখানে শরিয়া আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়নি, পর্দাপ্রথা সহ নারী স্বাধীনতা খর্ব করা, নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসলামকে কঠোরভাবে প্রতিপালনের কিছু রেওয়াজ চালু হয়েছিল এই দেশটিতে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ইরানের ভেতর ভিন্নমতালম্বীদের সংখ্যা বাড়ছিল। বিশেষ করে ইরানের বুদ্ধিজীবী এবং তরুণ সম্প্রদায় কট্টর ইসলামপন্থি অবস্থা থেকে বেরিয়ে উদার এবং একটি গণতান্ত্রিক আবহ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে চলছিল। ইরানের ভেতর হিজাব বাধ্যতামূলক করা নিয়ে যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সে দেশের নারীরা সোচ্চার হয়েছিল। ইরানে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী ব্যক্তিরা শিক্ষিত স্বজন এবং তরুণরা বদ্ধ দুয়ার খুলে দেওয়ার দাবি করছিল। আর এ ক্ষেত্রে ইরানে ‘ইসলামি বিপ্লবী’ সরকার একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। আর গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ কতটুকু স্থায়ী হবে এবং আদৌ শেষ পর্যন্ত টিকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৯৭৯ সালে ইরানের জনগণের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছিল এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির যে জনপ্রিয়তা ছিল এখন সেটা অনেকটাই কেটে গেছে। অনেকে বলে ‘মোহমুক্তি ঘটেছে।’ বিশেষ করে তরুণ সমাজ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতায় ইরান নানাভাবে এগিয়ে। কিন্তু ইসলামি অনুশাসনের কারণে সেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা যেমন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে ঠিক তেমনি যারা মুক্তবুদ্ধির চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজীর সেদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনেকটাই বিপ্লবী সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এরকম একটি বাস্তবতায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তাহলে কি ইরানে ইসলামি বিপ্লবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা কি নতুন বাক তৈরি করবে, যেখান থেকে ইরান আবার একটি গণতান্ত্রিক পন্থায় ফিরে আসবে?

অনেকেই বলতে পারেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভেতর কাজ করছে এবং যে সমস্ত বিক্ষোভের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত। কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, ইরানের তরুণ সমাজ এখন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে চায়, দুয়ার খুলে দিতে চায়। তাই রাইসির মৃত্যু ইরানের কট্টরপন্থিদের বিদায় ঘণ্টা বাজাল কি না সেটি নিয়েও জল্পনা কল্পনা চলছে।

ইরান   ইসলামি বিপ্লব   ইব্রাহিম রাইসি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির মৃত্যু কি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অশান্ত করবে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। 

গত কিছুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর ইরান যে ভাবে ইসরায়েলে ড্রোন আক্রমণ করেছে, তারপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে ইসরায়ল এর পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। সে সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইসরায়েলকে এ প্রতিশোধের ব্যাপারে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। সেই সময় ইসরায়েল কিছু করেনি বটে, তবে ইরানের গতকালকের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে যে ইসরায়েলের হাত আছে এটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবাই বিশ্বাস করে। যদিও এর পক্ষে তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউই হাজির করতে পারেনি। তবে ইরান এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে। এটির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

প্রথমত, এই ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যে সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপ গুলো আছে তারা জঙ্গি হতে পারে। কারণ এই সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। ফলে ইসরায়েল সহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে। 

দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে ইরান নিয়ন্ত্রিত বা ইরানের পৃষ্ঠপোষক থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলো অন্যান্য দেশেও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এবং আক্রমণ করতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

তৃতীয়ত, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে। এমনকি ঘোষণা দিয়েও প্রতিশোধ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারে। এই সবগুলো ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করবে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। 

তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের রাইসির মৃত্যু একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইরান জুড়ে একটা শোকের ছায়া। এই শোক কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লাগবে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর হয়ত তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আবার অনেকে মনে করছেন ইরান হয়ত আপাতত আত্ম অনুসন্ধান করবে। ভেতরের শত্রুদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে এবং ভেতর থেকে ইরানকে যারা দুর্বল করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আগে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করবে। তারপর তারা ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করবে। তবে স্বল্প মেয়াদী হোক, দীর্ঘ মেয়াদী হোক ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে তুলবেই।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরানের প্রেসিডেন্ট  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানে মোসাদের সফল প্রতিবিপ্লব?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।

ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।

আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।

এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।

এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরান   হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা   মোসাদ   সিআইএ   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   ইসরায়েল  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের খুটিনাটি শুনলেন পুতিন

প্রকাশ: ০৮:৫১ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।

কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'

কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।  


ইরান   রাষ্ট্রদূত   হেলিকপ্টার   বিধ্বস্ত   রাশিয়া   প্রেসিডেন্ট   ভ্লাদিমির পুতিন  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির দাফন কোথায়, কবে

প্রকাশ: ০৮:৪২ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।

এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি। 

স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।


ইরান   প্রেসিডেন্ট   ইব্রাহিম রাইসি   দাফন   মৃত্যু  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন