সরকারের পতন ছাড়া ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ লক্ষ্যে সরকার পতনের আন্দোলন ধীরে ধীরে আরও বেশ জোরদার করছে দলটি। ইতোমধ্যে পাঁচটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করেছে। আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেটেও গণসমাবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। তবে শুধুমাত্র আন্দোলন নিয়েই রাজপথে থাকতে চায় না দলটি। কৌশলগত অবস্থান নেয়ার কথাও বলছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। আর এই কৌশলগত অবস্থান হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির তৎপরতা বাড়ানো। যাতে করে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা যায়। রাজপথে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন আর আন্তর্জাতিক ভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেই সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি। আর সে লক্ষেই দলটি বাংলাদেশ নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসগুলো বিএনপির তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত রএসপেন রিকটার ভেন্ডসেনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। শুধু এটিই নয়। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে এর আগেও বিএনপি কানাডিয়ান পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ব্রেডলি কোর্সের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক করেছে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের সঙ্গে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে। তার আগে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক জিন লুইস এর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। দূতাবাসগুলোকে বিএনপির নেতাদের এ ধরনের আনাগোনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। রাজনীতি সচেতন মানুষ বিএনপির এই তৎপরতা নিয়ে রীতি মতো চুলছেরা বিশ্লেষণ করছে। আর কূটনৈতিক পাড়ায় বিএনপির তৎপরতার কারণে দলটির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে কূটনীতিক পাড়ায় মাঝে মাঝেই বিএনপির এ ধরনের তৎপরতা নিয়ে কিছু হলেও উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিছুদিন আগেও যেখানে রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে তা পালন করার সক্ষমতা ছিল না সেখানে দলটি এখন গণসমাবেশ করেছে এবং সমাবেশগুলোতে জনসমাগম হচ্ছে। শুধু তাই নয় এর বাইরে পশ্চিমা দেশগুলো এখন নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। বিশেষ করে এ ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অনেকে এগিয়ে আছেন। এছাড়া দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় বলেও জানান তিনি। গতকাল সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত রএসপেন রিকটার ভেন্ডসেনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকেও নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যখন পশ্চিমারা প্রায় নিয়মিত কথা বলছে তখন এটা পরিষ্কার হচ্ছে যে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে, সামনে এই চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আর বিএনপি এখন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে। যে কারণে তাদের তৎপরতাও দিন দিন বাড়ছে। যা সরকারকে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলছে বলে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছে।
বিএনপি সরকার পতন কূটনীতিক তৎপরতা আন্দোলন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
রাজনীতিতে প্রায় পরিত্যক্ত আবর্জনার ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্না নিজের ওজন বাড়াতে এবং রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য নতুন স্টান্টবাজি গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, নির্বাচনের আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন? গতকাল তিনি ওমরা পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পরেও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তাঁর কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিরক্ত এবং অনুৎসাহী। বারবার সাংবাদিকদের তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি বাড়িতে গিয়েছেন এবং সেখানে রীতিমতো নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। আজ সারাদিন দলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি ফোন করা হলেও তিনি ঘুমিয়ে আছেন, বিশ্রামে আছেন কিংবা পরে ফোন করুন- এরকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই নীরবতা বিএনপির মধ্যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
একের পর এক ভুল কৌশল বিএনপির রাজনীতির অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। এবার উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি যে কৌশল গ্রহণ করেছিল, প্রথম দফা ভোটগ্রহণের পর সেই কৌশল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির ভোট বর্জন যেমন সাধারণ মানুষ সাড়া দেয়নি ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নির্বাচনে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যাননি। সাত জন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর ফলে আগামী ধাপগুলোতে যারা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তারা আবার নতুন করে উৎসাহ পাবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন। এর ফলে বিএনপির বহিষ্কার কৌশল ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।