৮ জানুয়ারি ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হবার
পর ১৯৭২ সালের ১০
জানুয়ারি পৃথিবীর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে
এলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান।তাঁর ফিরে আসার মধ্য
দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ী বাঙালি জাতির বিজয় পূর্ণতা পেলো।
বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে নয় মাস
পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখা
হয়েছিল। লায়ালপুর (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) জেলের অপরিসর একটি কুঠুরি ছিল
সেই বন্দির বাসস্থান। তাঁর জগৎ বলতে
সেখানে ছিল চার দেওয়াল,
একটি জানালা ও একটি উঁচু
বিছানা। ১৯৭১ সালের ১৬
ডিসেম্বরের পর তাঁকে সরিয়ে
নেয়া হয় কারাগার থেকে
দূরে আরো দুর্গম জায়গায়।
২৪ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে বঙ্গবন্ধুকে
রাওয়ালপিন্ডির অদূরে শিহালা পুলিশ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
পর্যায়ক্রমে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়
পাকিস্তানি শাসক।
একাত্তরে
পাকিস্তানের কারাভ্যন্তরে বন্দি ছিলেন ঠিকই; কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন
জানতেন না তিনি কোন
শহরে আছেন। কেবল জানতেন পাকিস্তানি
সামরিক বাহিনী তাঁকে বন্দি করে তৎকালীন পশ্চিম
পাকিস্তানের জেলে রেখেছে। কারাজগৎ
সম্পর্কে তাঁর ভালোভাবেই ধারণা
ছিল, কেননা আগেও তিনি কারাবন্দি
ছিলেন। তিনি কারাবাস সম্পর্কে
প্রায়শই বলতেন যে, প্রথম দফার
স্বল্পকালের কারাবাস ছাড়া তাঁকে কারাগারে
বরাবর নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে আটক রাখা হয়েছিল।
দৈহিকভাবে নির্যাতন করা না হলেও
নানাভাবে মানসিকভাবে হয়রানি করা হয় তাঁকে।কারা-কর্তৃপক্ষ প্রতি সপ্তাহে বন্দির আচার-আচরণ সম্পর্কে
ইসলামাবাদে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতো। এই রিপোর্টে উল্লেখ
থাকতো তিনি কি খাবার
খেয়েছেন, তিনি কেমন ঘুমিয়েছেন,
সেলের মধ্যে এক দেয়াল থেকে
অন্য দেয়াল অবধি পায়চারি করেছেন,
কি করেননি। বন্দির কথাবার্তা সম্পর্কে জানতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খুব উৎসুক ছিলেন।
অবশ্য বঙ্গবন্ধু সেলে প্রবেশকারী গার্ডদের
সালামের প্রতি-উত্তর দেওয়া ছাড়া সবসময় নীরবই
থাকতেন।
পাকিস্তানের
কারাগারে দীর্ঘকাল নিঃসঙ্গ এবং বাইরের দুনিয়ার
সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কোনো যোগাযোগ না
থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ
ছিল- ‘জনগণের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক
কখনো ছিন্ন হয়নি, এক মুহূর্তের জন্যও
নয়।... যখন বিপদ আমাকে
আচ্ছন্ন করতো, আমি বুঝতে পারতাম
আমার জনগণ তীব্র যন্ত্রণা
ভোগ করছে। যখন আমার মনের
দিগন্তে দেখা দিতো চকিত
আশার ঝলকানি, আমি জানতাম তারা
সেই দুর্ভোগ অতিক্রম করছে। ... একে বলতে পারেন
প্রজ্ঞা, টেলিপ্যাথি, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিংবা
অন্য যা খুশি তাই।
কিংবা সম্ভবত এটা এক ধরনের
ঐশী প্রেরণা; আমি যেটা জানি
তা হলো আমার মন
বলছিল বিজয় আমাদের হবেই।
এত বিপুল রক্তদান বৃথা যেতে পারে
না। রক্ত সেই অতীব
জরুরি তরল, বাঁচিয়ে রাখে
জীবনকে এবং এমনি রক্তদান
যে আদর্শের জন্য, সেই আদর্শকেও তা
বাঁচিয়ে রাখবে।’ বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবার
সম্পর্কে নানা পরস্পরবিরোধী খবর
ছড়ানো হতো। বন্দি থাকাকালে
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ নিম্নরূপ-
‘সেই
সময়ে আমার সেলে যাঁরাই
এসেছিলেন তাঁদেরই দেখাতো অনেক কম আস্থাবান
ও সুস্থির। আটককারীর ঔদ্ধত্য তাঁদের মধ্যে তেমন প্রকাশ পেতো
না। বরং কোনো অজানা
দুশ্চিন্তা যেন তাঁদের পীড়িত
করতো।...
...এটা
আমার কাছে বেশ তাৎপর্যময়
মনে হয়েছিল। তাঁদের নিরাপত্তা বিধানে কাজে লাগতে পারে
এমন কোনো বিবৃতি আমার
কাছ থেকে আদায়ের জন্য
উপর্যুপরি প্রয়াস থেকে এর সমর্থন
মিলেছিলো। আমি অনুভব করেছিলাম,
তাদের নৈরাশ্যজনক অবস্থা সম্পর্কে ক্রমোপলব্ধির এটা একটা ইঙ্গিত।
এর ফলে আমার মধ্যে
প্রত্যয়ী মনোভাব জেগেছিল যে, আমার দেশে
তাদের দিন ভালো যাচ্ছে
না। আমি তাদের কথা
মান্য করতে অস্বীকার করি।
আমি কোনো কিছু বলতে,
লিখতে বা সই করতে
অস্বীকার করি।...’
বঙ্গবন্ধুকে
গ্রেফতার ও বন্দি অবস্থায়
করাচী নিয়ে যাবার প্রসঙ্গে
গবেষক এস. এ. করিম
উল্লেখ করেছেন- ‘করাচী পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধুকে লায়ালপুর
বর্তমানে পাঞ্জাবের ফয়সালাবাদ কারাগারে নেওয়া হয়। তাঁকে একটি
অতি ক্ষুদ্র সেলে রাখা হয়-
যেখান থেকে লোহার শিক
দ্বারা বেষ্টিত ছোট্ট ফাঁকা জায়গা থেকে এই বিশ্বজগৎ
প্রায় আবছা। প্রচণ্ড গরম অথচ কোনো
বৈদ্যুতিক পাখা ছিলো না-
পরবর্তী সময়ে একটি পুরোনো
বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হলো-
যা মূলত ঘরের গরমকে
আরও ছড়িয়ে দেবার জন্যই। এছাড়াও আরও নানা রকমের
অত্যাচার ছিলো সেখানে। বঙ্গবন্ধু
এসব তোয়াক্কা করেননি, তবে বেদনাবোধ করেছেন
বাংলাদেশের জন্য- যে বাংলাদেশটি তখন
জন্ম নেবার জন্যে লড়ছে।’
এই যন্ত্রণাদায়ক বন্দিজীবন থেকে ১৯৭২ সালের
৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে
পৌঁছান।লল্ডন থেকে ৯ জানুয়ারি
রাতে রওনা হয়ে ১০
জানুয়ারি দুপুরে দিল্লিতে উপস্থিত হন বিকাল চারটায়
দেশে ফেরার ঠিক আগে।দিল্লি বিমানবন্দরে
স্বাধীন বাংলাদেশের এই মহানায়ককে স্বাগত
জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিমানবন্দরে এ উপলক্ষে আয়োজিত
অভ্যর্থনা সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
রাখেন বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী।তিনি
সেদিন বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ইন্দিরা গান্ধী
ও ভারতের জনগণের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
করেন। অন্যদিকে ইন্দিরা গান্ধী হিন্দিতে দেওয়া তাঁর ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে
উদ্দেশ করে বলেন- ‘তাঁর
শরীরকে জেলখানায় বন্দি করে রাখা হলেও
তাঁর আত্মাকে কেউ বন্দি করে
রাখতে পারেনি। তাঁর প্রেরণায় বাংলাদেশের
মানুষ সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে
স্বাধীন করেছে। তিনি প্রেরণা দিতে
এখন ভারতে আমাদের কাছে এসেছেন। এই
যুদ্ধের সময় আমরা ভারতের
পক্ষ থেকে তাদের জন্য
তিনটি কাজ করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলাম। এক. যে শরণার্থীরা
ভারতে আছে তারা সময়
হলে ফিরে যাবে। দুই.
আমরা মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করবো ও বাংলাদেশের
জনগণের পাশে দাঁড়াবো তিন.
শেখ সাহেবকে (শেখ মুজিবুর রহমান)
আমরা দ্রুত জেল থেকে মুক্তির
ব্যবস্থা করবো। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি
রেখেছি।’
এরপর
বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ ইংরেজিতে
শুরু করলে উপস্থিত হাজার
হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাঁকে বাংলায়
ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের
দাবির মুখে খানিকটা বিব্রত
হয়ে পাশে দাঁড়ানো ভারতের
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দিকে তাকালে তিনিও
স্মিত হেসে বলেন, ‘দে
নিড বেঙ্গলি’। তিনি বঙ্গবন্ধুকে
বাংলায় বক্তৃতা করার আহ্বান জানান।বঙ্গবন্ধু
তাঁর দরাজ কণ্ঠে বাংলায়
বক্তৃতা শুরু করেন। ‘ভাই
ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের
অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত। এই
ভাষণে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান
ভারতের সকল সহায়তার জন্য।একইদিন
ঢাকার ভাষণেও তা পুনরায় উচ্চারিত
হয়।দিল্লিতে তিনি বলেন-
‘আপনাদের
প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার, আপনাদের সৈন্যবাহিনী, আপনাদের জনসাধারণ যে সাহায্য ও
সহানুভূতি আমার দুখী মানুষকে
দেখিয়েছে চিরদিন বাংলার মানুষ তা ভুলতে পারবে
না। ব্যক্তিগতভাবে আপনারা জানেন, আমি পশ্চিম পাকিস্তানের
অন্ধকার সেলের (কারাকক্ষ) মধ্যে বন্দি ছিলাম কিছুদিন আগেও। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আমার জন্য দুনিয়ার
এমন জায়গা নাই যেখানে তিনি
চেষ্টা করেন নাই আমাকে
রক্ষা করার জন্য। আমি
ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে কৃতজ্ঞ।
আমার সাড়ে সাত কোটি
মানুষ তার কাছে এবং
তার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার
জনসাধারণ ভারতবর্ষের জনসাধারণের কাছে কৃতজ্ঞ। আর
যেভাবে এক কোটি লোকের
খাওয়ার বন্দোবস্ত এবং থাকার বন্দোবস্ত
আপনারা করেছেন...আমি জানি ভারতবর্ষের
মানুষ খুব দুখী আছে
সেখানে, তারাও কষ্ট পাচ্ছে, তাদেরও
অভাব অভিযোগ আছে—তা থাকতেও
তারা সর্বস্ব দিয়েছে আমার লোকরে সাহায্য
করার জন্য, চিরদিন আমরা তা ভুলতে
পারবো না।...আপনারা জানেন বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে,
আমি সকল প্রকার সাহায্য
সহানুভূতি আশা করি এবং
এও আশা করি দুনিয়ার
শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক যে মানুষ আছে
তারা এগিয়ে আসবে আমার মানুষকে
সাহায্য করার জন্য।...আমি
বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি
বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি
বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে।...আমাকে
প্রশ্ন করা হয়, শ্রীমতি
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আপনার আদর্শে এত মিল কেন?
আমি বলি, এটা আদর্শের
মিল, এটা নীতির মিল,
এটা মনুষ্যত্বের মিল, এটা বিশ্ব
শান্তির মিল।...’
বঙ্গবন্ধু
এই ভাষণে তাঁর ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র
পরিচালনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় তুলে ধরেন। পরে
যা বাংলাদেশের সংবিধানেও সংযুক্ত করা হয়। তার
মধ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা অন্যতম।
অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতিতেও যুক্ত হয় সবার সঙ্গে
বন্ধুত্বের নীতি।উপরন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তিও করেন তিনি।
১৯৭২
সালের ১০ জানুয়ারিতে ঢাকার
মাটি স্পর্শ করার পর উপস্থিত
জনতার ঢল দেখে নিজের
অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু।
বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে জাতিকে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ
দেন, ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি জানান-‘আমি
আজ বক্তৃতা করতে পারবো না।’
কিন্তু জানিয়েছেন- ‘আজ আমি যখন
এখানে নামছি আমি আমার চোখের
পানি ধরে রাখতে পারি
নাই।
যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি,
যে মানুষ কে আমি এত
ভালোবাসি, যে জাত কে
আমি এত ভালোবাসি, আমি
জানতাম না সে বাংলায়
আমি যেতে পারবো কিনা।
আজ আমি বাংলায় ফিরে
এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ
আজ স্বাধীন।’
তিনি
এই ঐতিহাসিক ভাষণে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাঁদের
প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে মুক্ত
মানুষের দিকে চেয়ে বলেন-
‘আমি আজ বাংলার মানুষ
কে দেখলাম, বাংলার মাটি কে দেখলাম,
বাংলার আকাশ কে দেখলাম
বাংলার আবহাওয়া কে অনুভব করলাম।
বাংলাকে আমি সালাম জানাই
আমার সোনার বাংলা তোমায় আমি বড় ভালোবাসি
বোধহয় তার জন্যই আমায়
ডেকে নিয়ে এসেছে। আমি
আশা করি দুনিয়ার সব
রাষ্ট্রের কাছে আমার আবেদন
আমার রাস্তা নাই আমার ঘাট
নাই আমার খাবার নাই
আমার জনগণ গৃহহারা সর্বহারা,আমার মানুষ পথের
ভিখারী। তোমরা আমার মানুষ কে
সাহায্য করো মানবতার খাতিরে
তোমাদের কাছে আমি সাহায্য
চাই। দুনিয়ার সকল রাষ্ট্র এর
কাছে আমি সাহায্য চাই।
তোমরা আমার বাংলাদেশকে তোমরা
রিকোগনাইজ করো। জাতিসংঘের ত্রাণ
দাও দিতে হবে, উপায়
নাই দিতে হবে। আমি
আমরা হার মানবো না
আমরা হার মানতে জানি
না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘‘সাত কোটি বাঙ্গালির
হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙালি
করে মানুষ করো নাই।’’ কবিগুরু
আজ মিথ্যা কথা প্রমাণ হয়ে
গিয়েছে। আমার বাঙালি আজ
মানুষ। আমার বাঙালি আজ
দেখিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার ইতিহাসে এত লোক আত্মাহুতি,
এত লোক জান দেয়
নাই। তাই আমি বলি
আমায় দাবায় রাখতে পারবা না।… এ স্বাধীনতা
আমার পূর্ণ হবে না যদি
বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত
না পায়, এ স্বাধীনতা
আমার পূর্ণ হবে না যদি
বাংলার মা-বোনেরা কাপড়
না পায়, এ স্বাধীনতা
আমার পূর্ণ হবে না যদি
এদেশের যুবক যারা আছে
তারা চাকরি না পায়।...’
ভাষণে
মুক্ত স্বদেশে মানুষের অধিকারের কথা তিনি শুনিয়ে
দিলেন, তিনি জানিয়ে দিলেন
দালালদের বিচার করার কথা, তিনি
সরকারি কর্মচারীদের সাবধান করে দিলেন, ঘুষ
গ্রহণের বিরুদ্ধে বললেন, তিনি আমেরিকার জনসাধারণকে
ধন্যবাদ জানালেন এবং বারবার স্মরণ
করলেন ১ কোটি উদ্বাস্তু
মানুষকে ভারতের আশ্রয় দেওয়ার কথা।রক্ত আর যন্ত্রণার সিঁড়ে
বেয়ে যে স্বাধীনতা এসেছে
তা যে ষড়যন্ত্র মুক্ত
নয় তাও স্মরণ করিয়ে
দিয়েছিলেন সেদিন।অন্যদিকে নিজের আত্মপরিচয়, দেশপ্রেম আর নিজের বাঙালিত্বকে
দেশবাসীর কাছে পুনরায় স্পষ্ট
করলেন পাকিস্তানের কারাগারের স্মৃতিচারণ করার সময়-‘আমায়
আপনারা পেয়েছেন আমি আসছি। জানতাম
না আমার ফাঁসির হুকুম
হয়ে গেছে আমার সেলের
পাশে আমার জন্য কবর
খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম,
বলেছিলাম আমি বাঙালি আমি
মানুষ, আমি মুসলমান একবার
মরে ২ বার মরে
না। আমি বলেছিলাম আমার
মৃত্যু আসে যদি আমি
হাসতে হাসতে যাবো আমার বাঙালি
জাত কে অপমান করে
যাবো না তোমাদের কাছে
ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার
সময় বলে যাবো জয়
বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙ্গালি আমার জাতি, বাংলা
আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।…আমি কারাগারে ছিলাম
৯ মাস আমাকে কাগজ
দেয়া হয় নাই। এ
কথা সত্য আসার সময়
ভুট্টো আমায় বললেন শেখ
সাব দেখেন ২ অংশের কোন
একটা বাঁধন রাখা যায় নাকি
আমি বললাম আমি বলতে পারি
না আমি বলতে পারবো
না আমি কোথায় আছি
বলতে পারি না আমি
বাংলায় গিয়ে বলবো। আজ
বলছি ভুট্টো সাহেব সুখে থাকো বাঁধন
ছিঁড়ে গেছে আর না।
তুমি যদি কোন বিশেষ
শক্তির সাথে গোপন করে
আমার বাংলার স্বাধীনতা হরণ করতে চাও
মনে রেখ দলের নেতৃত্ব
দিবে শেখ মুজিবুর রহমান
মরে যাব স্বাধীনতা হারাতে
দিবো না।’
১০ জানুয়ারির ভাষণেই তিনি দেশগঠনের আহ্বান
জানান জনগণকে।মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদাররা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল
তাতে পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত
হয়। এজন্য সকলকে নিয়ে দেশগঠনের প্রত্যাশা
ব্যক্ত করেন তিনি।একতাবদ্ধ থাকতে
বলেন সকলকে। ‘স্বাধীন যখন হয়েছি স্বাধীন
থাকবো আজীবন’- এই প্রত্যয়ও ঘোষণা
করেন তিনি।১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা যেমন
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ণতাপ্রাপ্তি তেমনি দেশের মুক্ত মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার
স্বপ্ন বুননেরও দিন।এজন্যই তিনি বলেছেন-‘নতুন
করে গড়ে উঠবে এই
বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে বাংলার মানুষ খেলবে বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে
বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত
খাবে এই আমার সাধনা
এই আমার জীবনের কাম্য
আমি যেন এই কথা
চিন্তা করেই মরতে পারি
এই আশীর্বাদ এই দোয়া আপনার
আমাকে করবেন।’
বঙ্গবন্ধু
স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে জনগণকে উদ্দেশ্য
করে ১০ জানুয়ারি যে
বক্তব্য দিয়ে গেছেন তাতে
পরিষ্কারভাবে দেশ পরিচালনার নির্দেশনা
ছিল। কিন্তু তিনি যে ষড়যন্ত্রের
কথা সেদিন বলেছিলেন তাও সত্য হয়েছিল।১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্ট সেই
ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয় এবং
দেশের স্বাধীনতা অপহৃত হয়ে চলে যায়
পাকিস্তানবাদী রাজনীতির কাছে।এভাবেই বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী ও নির্ভীক নেতার
আসনে থেকেও নির্মমতার শিকার হয়েছেন।কিন্তু তিনি ইতিহাসে অমর
এক দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বিজয়ী বীরের
মতো ভালোবাসা নিয়ে স্বদেশে ফিরে
এসেছিলেন। তাঁর চলার পথ
ছিল জনগণের আশীর্বাদে স্নিগ্ধ। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্ন
সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। ছয় বছরের নির্বাসিত
জীবন ছেড়ে তিনিও ১৯৮১
সালের ১৭ মে ভারত
থেকে দেশে ফিরে হাল
ধরেন গণতন্ত্রের।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন আর শেখ হাসিনার
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আজ
বিশ্বজুড়ে অভিনন্দিত রাষ্ট্র।
মন্তব্য করুন
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।
গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।
প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।
আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।
আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।
আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।
আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।
ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?
উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।
প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।
আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।
অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম
উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?