ইনসাইড ইকোনমি

দীঘিপাড়া খনিতে আড়াই লাখ কোটি টাকার কয়লা

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ১৮ মে, ২০২৩


Thumbnail দীঘিপাড়া খনিতে আড়াই লাখ কোটি টাকার কয়লা।

দিনাজপুরের দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে বিভিন্ন স্তরে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে তা থেকে ৩০ বছরে ৯ কোটি মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে এর চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ। এখন কেবল প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির অপেক্ষা। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই শুরু হবে এ কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ।  

২০১৬ সালে দেশের অভ্যন্তরে ৫টি কয়লা খনির মধ্যে মজুতের হিসাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুর দীঘিপাড়ার খনি থেকে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দেশের কয়লা উত্তোলন সক্ষমতা ৪০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালেই শুরু হয় এর সম্ভাব্যতা যাচাই। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানিকে (বিসিএমসিএল)। পরে শেষ হয় এর চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ। 

সম্ভাব্যতা যাচাই তথ্য অনুযায়ী, এই কয়লা ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে তা থেকে ৩০ বছরে ৯ কোটি মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। এখানে সর্বোচ্চ ৪৩৪.৪৯ মিটার ও সর্বনিম্ন ৩২৩ মিটার গভীরে ৭২.৩৬ মিটার পুরুত্বের কয়লা আছে। এছাড়াও খনিতে রয়েছে সাদা মাটি, বালু মিশ্রিত সিলিকা যা গ্লাস ফ্যাক্টরিতে এবং সিরামিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পেলেই এখানে কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

জানা গেছে, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার দীঘিপাড়ায় এই কয়লা খনিটি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। এর উন্নয়নে ২০০৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ পেট্রোবাংলাকে লাইসেন্স প্রদান করে। পরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ফুগরো, জার্মানির প্রতিষ্ঠান মিবরাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাঞ্জ পিনকক মিনারকো এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম গঠনের পর তাদের সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের চুক্তি হয়।

চুক্তিতে জরিপ সম্পাদন কাজে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৬৭ কোটি টাকা। চুক্তির মেয়াদ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ সময় তারা সকল তথ্য সংগ্রহ করে তৃতীয় মাত্রার ভূ-কম্পন (থ্রি-ডি সিসমিক), অধিকতর জরিপ, টপোগ্রাফিক সমীক্ষা, অনুসন্ধান কূপ খনন, খনির নক্সা এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। যা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমরা শুরু থেকেই দেশীয় কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে কাজ করছিলাম। আর এ জন্যই দীঘিপাড়া কয়লা খনি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শেষ। বড়পুকুরিয়ার মতোই দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে ভূ-গর্ভের সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করা হবে। কারণ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করলে অনেক বড় এলাকা অধিগ্রহণ করতে হবে। যা আপাতত সম্ভব নয়। তাই সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতেই এখানে কয়লা উত্তোলন করা হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতির ওপর। দেশের ইতিহাসে এমন একটি বড় কাজের অনুমতি নিশ্চয়ই তিনি দেবেন। এর পরই আমরা কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। 

দীঘিপাড়া কয়লা খনি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি। খনি বাস্তবায়ন এখন নির্ভর করছে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের ওপর। সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ, আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করে খনি উন্নয়ন ও কয়লা উৎপাদনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। 

দেশে বর্তমানে পাঁচ খনিতে ৭ হাজার ৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লার মজুত রয়েছে বলে তথ্য জ্বালানি বিভাগের। যে ক’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে বা নির্মাণাধীন রয়েছে সেগুলোর দীর্ঘ সময়ের জ্বালানি হিসেবে এই মজুত কয়লা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু বিশাল মজুত সত্ত্বেও এ পর্যন্ত দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোনো খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করেনি সরকার। এ খনিটি ১৯৮৫ সালে আবিষ্কার হয়। এখানে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত রয়েছে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। খনির পাশেই স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা পূরণ করছে এ কয়লা।

দীঘিপাড়ায় প্রাথমিক জরিপে ভূগর্ভের ৩২০-৫০৬ মিটার গভীরতায় উন্নত মানের বিটুমিনাস কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। এই কোল বেসিনে ১১.০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মোট ৭০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার মজুত রয়েছে। মোট ১১টি কোল সিম, তার মধ্যে ৩টি সিম উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের (সিম সি, বিস্তৃতি ১০.৫০ বর্গকিলোমিটার, পুরুত্ব ৩১.৬৯ মিটার, ভূতাত্ত্বিক মজুত ৪২৮ মিলি. মেট্রিক টন, সিম সি, বিস্তৃতি ১১.০০ বর্গকিলোমিটার, পুরুত্ব ৯.৯৫ মিটার, ভূ-তাত্ত্বিক মজুত ১৩৯ মিলি, মেট্রিক টন)।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাল্টিস্লাইস লংওয়াল টপ কোল কেভিং মেথড পদ্ধতিতে মাইনিং করার সুপারিশ করেছে। মাল্টিস্লাইস এলটিসিসি পদ্ধতিতে মাইনিংয়ের জন্য ৬টি স্লাইস  নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রতিটি গড় পুরুত্ব ৭.২০। খনির নির্মাণ কাল ১২ বছর তবে নির্মাণ শুরুর ৮ বছর পর হতে আংশিক উৎপাদন শুরু হবে। খনি নির্মাণকালের ৪ বছর আংশিক উৎপাদনকালসহ মোট উৎপাদনকাল ৩৫ বছর। খনির পূর্র্ণাঙ্গ নির্মাণ শেষে  পরবর্তী ৩১ বছর বার্ষিক ২.৮ মিলিয়ন মে. টন (সর্বনিম্ন ১.৭০ মিলিয়ন, মে. টন থেকে সর্বোচ্চ ৩.৪৯ মি. মে. টন গড় উৎপাদন সম্ভব বলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মত প্রকাশ করেছে।

আর্থিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী খনি নির্মাণে ১,৬৪৪.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধনী (ক্যাপিটাল) ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজন হবে। কয়লার টনপ্রতি বিক্রয় মূল্য ১৭৬ মার্কিন ডলার, রেট অব রিটার্ন ৯.৭% এবং ডিসকাউন্ট রেট ৮% ধরে এনপিভি ১৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে দেশে নির্মিত ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি বছর ২১-২২ মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন। দীঘিপাড়া কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রতি বছর তিন মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।     

দীঘিপাড়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে পাশাপাশি দুটি জেলার শিল্প-কারখানাগুলোও চালু রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


দীঘিপাড়া   কয়লা খনি   আড়াই লাখ   কোটি   টাকা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ডলার স্বল্পতায় তিন সংকট বাড়ছে

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ডলার সংকটের কারণে অনেকগুলো বিষয় সংকট আসছে। ডলার যে বাড়বে সে দিকেও কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরে এ কারণ ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ছে আমদানি ব্যয় মেটানোর। আর অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পথগুলোতেও এখন স্বস্তির খবর দেখা যাচ্ছে না। 

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে। একটি হল অভিবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স পাঠানো। আর দ্বিতীয়টি হল রপ্তানি আয়। রপ্তানি আয়েও তেমন স্বস্তি নেই। তার চেয়েও বড় কথা হল রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবতার সাথে প্রকৃত আয়ের মিল নেই। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রেও যে পরিমাণ শ্রমিক বিদেশে গেছেন সেই হারে বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স আসছে না। ফলে বাংলাদেশে ডলারের স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। আর এই স্বল্পতার কারণে এখন কিছু কিছু সংকট দানা বেঁধে উঠেছে, প্রবল আকার ধারণ করেছে। 

যে সমস্ত সংকটগুলো বৈদেশিক মুদ্রা বা রিজার্ভ স্বল্পতার কারণে দেখা দিচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও বড় আকারে দেখা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি: বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান খাত হলো গার্মেন্টস। আর গার্মেন্টস উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। বেশীরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ডলার সংকটের কারণে এই আমদানির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমদানির জন্য এলসি খুলতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা নানা রকম জটিলতার মধ্যে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। 

২. জ্বালানি সংকট: রপ্তানি আয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন হল পর্যাপ্ত জ্বালানি। কিন্তু এই জ্বালানির সংকট এখন বেশ বড় ভাবেই দেখা দিচ্ছে এবং জ্বালানি সংকটের কারণে কেবল রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে এমনটি নয়, জ্বালানি সংকটের কারণে এখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং জনজীবনে এক দূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের সংকট আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

৩. বাজার অস্থিতিশীলতা: ডলার স্বল্পতার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় আমদানি পণ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং এর ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা রাখা দুরূহ হয়ে পড়ছে। বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা চেষ্টা করে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ যেভাবে পণ্য আমদানি হওয়া উচিত ছিল সেভাবে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এ সমস্ত বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশে এখন অর্থনীতিতে একটি সংকট কাল চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট নিরসনের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছিল কিন্তু সে সমস্ত পদক্ষেপ গুলো কোনটাই এখন পর্যন্ত বাস্তবে আলোর মুখ দেখে নি বা কার্যকর হয়নি।


ডলার সংকট   রপ্তানি আয়   প্রবাসী আয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় শুরুতেই বড় ধাক্কা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই বড় ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় যে পাঁচটি ব্যাংকের নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে এর মধ্যে দুটি ব্যাংক আপত্তি জানিয়েছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়া সিদ্ধান্ত হলেও একীভূত হতে নারাজ  ন্যাশনাল ব্যাংক। এর পরিবর্তে খেলাপি ঋণ ও সাধারণ ঋণ আদায় জোরদারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে চায় ব্যাংকটি। গতকাল শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। 

অন্যদিকে বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না। তারা কোনো সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায়। এ কথা জানিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। 

উল্লেখ্য, ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরীকে ডেকে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের এই পরামর্শ দেন। অপরদিকে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার জানান, কোনো ব্যাংক আমাদের একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একীভূত হতে বলেনি। ফলে কারও সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। একীভূত হতে হলে দুই পক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন। না হলে সেটা অধিগ্রহণ হয়ে যায়। আমাদের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে দেখি ব্যাংকটিকে ভালো করা যায় কি না।

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালক বলেন, অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা কখনও তারা নেননি। একীভূত হওয়ার ইস্যুতে পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ জানেনও না। 

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪১ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গঠন করে দিয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে এই ব্যাংক আবার দেশের এক নম্বর ব্যাংকে পরিণত হবে।

এদিকে ৯ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তারা বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চান না। বেসিক ব্যাংক শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। সরকারি এই ব্যাংককে বেসরকারি একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার খবরে তারা ‘আতঙ্কগ্রস্ত’। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্তে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছেন বেসিক ব্যাংকের আমানতকারীরা। তাদের কেউ কেউ বেসিক ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আমানত বেশি সরিয়ে নিচ্ছে। 

এছাড়া বিডিবিএলকে একীভূত না করতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে বিডিবিএল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এই দাবি না মানা হলে উত্তরাঞ্চল অচল করে দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক একীভূত করার যে প্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্বল সূচকের অধিকারী ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ভালো তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোও অস্বস্তিতে পড়েছে। তাছাড়া একীভূত হওয়ার প্রস্তাবে থাকার ব্যাংকগুলোর নেতিবাচক অবস্থানের কারণে অস্তস্তিবোধ করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া আশা আলো দেখবে কিনা তা নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় এক্ষত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়।

ব্যাংক একীভূত   বাংলাদেশ ব্যাংক   ন্যাশনাল ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

টানা ৬ দফা কমলো স্বর্ণের দাম

প্রকাশ: ০৫:০৯ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

চরম অস্থিতিশীল দেশের স্বর্ণের বাজার। চলতি মাসে তিন দফা বাড়ানোর পর বিগত ৭ দিনে ৬ বারের মতো মূল্যবান এ বস্তুটির দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সর্বশেষ ভরিতে এক হাজার ১৫৫ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

সোমবার (২৯ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে এক লাখ ১১ হাজার ৪৬১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ছয় হাজার ৩৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯১ হাজার ২০১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ৮৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৩১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ১২ হাজার ৬১৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ সাত হাজার ৪৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯২ হাজার ১৪৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা।

এ নিয়ে গত ১২ দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। যার মধ্যে ৭ বার দাম কমানো হয়েছে, আর বাড়ানো হয়েছে ২ বার। আর সবশেষ ৬ দফা সমন্বয়েই কমেছে স্বর্ণের দাম।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে দেশের বাজারে ১৬ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে সাতবার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ৯ বার। এছাড়া ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন   বাজুস   স্বর্ণ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

একীভূত হতে নারাজ ন্যাশনাল ব্যাংক

প্রকাশ: ০৭:৫৬ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখনই একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। 

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগে থেকে কোনো ধরনের আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। তবে চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়নি। ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঋণ আদায় জোরদার করবে। বিশেষ করে শীর্ষ খেলাপিদের থেকে আদায়ে ক্রাশ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্থরে ঋণ আদায়ের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পারভীন হক সিকদার এমপি বলেন,  অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা কখনও তারা নেননি। একীভূত হওয়ার ইস্যুতে পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ জানেনও না। 

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪১ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গঠন করে দিয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে এই ব্যাংক আবার দেশের এক নম্বর ব্যাংকে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ব্যাংক একীভূত   ন্যাশনাল ব্যাংক   বাংলাদেশ ব্যাংক   ইউসিবি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ছয় দিনে ৫ বার স্বর্ণের দাম কমলো

প্রকাশ: ০৬:১৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দেশের বাজারে গত ছয় দিনে টানা পাঁচ বার কমলো স্বর্ণের দাম। পঞ্চম দফায় স্বর্ণের দাম কমেছে ৩১৫ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম কমার প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ ব্যবধানে পাঁচ দফায় ভালো মানের স্বর্ণের দাম কমেছে। এ সময়ে ভালো মানের স্বর্ণ ভরিতে ৬ হাজার ৮১২ টাকা কমেছে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। একইদিন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের বৈঠকে নতুন এ দাম নির্ধারণ হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩০৪ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২৫৬ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ১৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ২১০ টাকা কমিয়ে ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল ২৭ এপ্রিল এবং তার আগে ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৩ এপ্রিল চার দফা স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ২৭ এপ্রিল ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৬৩০ টাকা, ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২ হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়।

স্বর্ণ   বাজুস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন