ইনসাইড থট

কতটুকু নির্লজ্জ ও নির্মম হলে আমরা খুনিদের সঙ্গে সংলাপের কথা বলি


Thumbnail

১৬ জুলাই ২০০৭।দিনটি স্মরণীয় এজন্য যে গণতন্ত্রে নেত্রী তৎকালীন সংসদের  বিরোধীদলীয় নেতা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে  গ্রেফতার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় শুরু হয় রাজনৈতিক নির্বাসন। আজকের লেখাটি ২০০১-২০০৯ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু মাঝ পথে আমার লেখায় বাধা পড়ে গেলো "সংলাপ পরামর্শ বিষয়টি "  যা আমাদের উন্নয়নের বন্ধুদের মুখে শুনতে হলো। 

উন্নয়ন গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের বন্ধুদের পরামর্শ আমাকে আজকের শিরোনাম নির্ধারণে  প্রভাবিত করেছে সেটা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই। এর সঙ্গে ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একটি উক্তি আমাকে আরও উদ্দীপ্ত করলো এই কথা বলতে - উনি কি কোনো একটি জনসভাতে গিয়েছিলেন যে, বলে ফেললেন বিএনপির জনসভাতে লোক বেশি হয়েছিল।  আমি বিএনপির জনসভা দেখিনি, তবে আওয়ামী লীগের শান্তি সভা দেখেছি।  সুতরাং , তুলনাটি করতে আমার সামান্য অধিকার আছে বোধ হয়। আমি আওয়ামী লীগের শান্তিসভাকে জনসুমুদ্র হিসেবে তুলনা করতে দ্বিধান্বিত নই।   

যাই হোক , ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই দিনটিতে প্রতিদিনের মতো উদ্বেগের সঙ্গে কম্পিউটারের সামনে বসেছি  পত্রিকা পড়বার জন্য। আমি তখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পিএইচডি করছি। মেলবোর্ন ও ঢাকার সময় পার্থক্য ঘন্টা। অনেক দিন ধরেই আভাস পাচ্ছি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।কিছু দুর্নীতির মামলা সাজানো হয়েছে।সাবেক শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলাউদ্দিন আহমেদ স্যার এর সঙ্গে কথা বলে এরকম তথ্যের সত্যতা জানবার চেষ্টা করতাম।সেনা শাসিত সরকার আওয়ামী লীগকে টার্গেট করবে ধারণার বাইরে ছিল।এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ঢাকা থেকে এক অতিথি এলেন।উনার কাছে জানলাম বিএনপি নেতাদের ধরা শেষ, এবার আওয়ামী লীগ ধরা হবে।  কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। 

সন্দেহ অবশ্য ছিল যখন দুই নেত্রীর এসএসএফ নিরাপত্তা তুলে নেয়া হলো।তবুও বিশ্বাস ছিল নেত্রীর কিছু হবে না।কিন্তু সব  বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে সুধা সদনে পুলিশ গিয়ে নেত্রীকে গ্রেফতার করলো! কোনো কিছু মেলাতে পারছিলাম না। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত নৌবাহিনীর ফ্রিগেডের নাম পরিবর্তন করা হলো।বুঝলাম - মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়ন চলছে। আর বসে থাকার সময় নয়।দ্রুত কান্না বুকে চাপা দিলাম, ভাবতে শুরু করলাম কিভাবে এই নিষ্ঠুরতাকে জবাব দেয়া যায়। 

২০০১ সালে আমি তখন সিডনিতে। ২০০০ সালে বন্ধু চুন্নু ( প্রায়ত সাধারণ সম্পাদক , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া ) ১৫ অগাস্ট উপলক্ষে সোনার বাংলা পত্রিকা বের করবার সিদ্ধান্ত নিলো।  আমার একটা দুর্বলতা ছিল সাংবাদিকতার উপর।আমি বন্ধুর পত্রিকার অবৈতনিক সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব নিলাম।আমাদের এই টীমে মরহুম . আব্দুর রাজ্জাক, সভাপতি বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া ( শহীদ . জোহা জামাতা ) এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য জনাব শেখ শামীমুল হক  সাহেব আমাদের উপদেষ্টা/সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দিলেন।  পাতার পত্রিকা বাড়তে বাড়তে ৩২ পাতায় গিয়ে উপনীত হলো বছর না ঘুরতেই ।  শুধু তাই নয় ২০০৪ সালে অনলাইনে "সোনার বাংলা " যুক্ত হল। মাননীয় সাংসদ জনাব মহিউদ্দিন খান আলমগীর আমাদেরকে নেত্রীর একটি বাণী সংগ্রহে সহযোগিতা করলেন।      

দেশে আমার স্ত্রী।তাকেও এই পথে নামালাম।ঢাকা থেকে আমার বোন (করোনা যাকে আমাদের মাঝ থেকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেছে)  এবং কখনো কখনো আমার দুই মুক্তিযোদ্ধা ভগ্নিপতি সেই পথে হাঁটেন।পত্রিকা পাঠান DHL ।সেখান থেকে কেটে কেটে সংবাদ জোড়া দিয়ে পত্রিকার ডামি বানিয়ে তবে ছাপা।তার সঙ্গে আমার টাইপ করা কিছু নতুন নিউজ।এরই মধ্যে বৌ এলেন আমাকে দেখতে।তিনি যখন দেখলেন আমি বিনা পয়সায় পত্রিকার কাজ করি রাত জেগে তাতে তিনি সহযোগিতা শুরু করলেন তার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করলো।

আসলে নামমাত্র বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পড়তে গিয়েছি।কাজ করে টিউশন ফি জোগাড় করবার কথা।সেটা না করে পত্রিকা বের করি! কিন্তু কাজ নেই।দুটি কারণ! অলিম্পিক শেষ এবং নিউজিলান্ড থেকে ৩০ হাজার নাগরিকের প্রবেশ।ফলে বেড়ে যায় বাসাভাড়া-বাড়ির দাম।বিদেশে নাকি কাজ আর কাজ।কিন্তু কাজ নেই আমাদের।এরই মাঝে ৯/১১।মোহাম্মদ -আহমেদ নামের সঙ্গে থাকলে কাজ নেই।আঞ্চলিকতা-ধর্মীয় বলয় অতিক্রম করে আমরা চেষ্টা করেছি বিশ্বমানব হতে।কিন্তু ৯/১১ আমাদের আঘাত করে প্ৰচণ্ড ভাবে।তখন হতভাগা মনে হয়।আমার মাঝে সাদা -কালো , মুসলিম -অমুসলিম , দৈত্যরা লড়াই করতে থাকে। 

/১১ বাংলার রাজনীতি বদলে দেয়।  শত ভালো কাজ করবার পরেও ধর্মীয় উন্মাদনা জয়ী হয়।  ফিরে আসে জামাত বিএনপি।  জামাত -বিএনপির ঐক্য গড়াতে নাকি সেদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী।  এবং সিডনিতে শ্রুতি আছে সেই ঐক্য নাকি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে যে পাড়ায় আমরা থাকতাম সেখানে হয়েছিল।

২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহ আওয়ামী পরিবারগুলোতে নেমে আসে অমানবিক নির্যাতনের ঢল।  এমনভাবে তারা নিপীড়ন শুরু করেছিল যে আওয়ামী লীগ দাঁড়াতেই পারছিলো না।  খালেদা জিয়ার সরকার শিক্ষা গ্রহণে বিদেশে থাকা সকল সরকারি কর্মকর্তা /বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে দেশে ফিরে আসতে বলে।  আমি ও আমার পরিবার চিন্তায় পড়ে  যায় আমাদের কি তবে আর উচ্চ শিক্ষা নেয়া হবে না ? সেদিন অনেকেই দেশে ফিরে আসেন তাদের ডিগ্রী শেষ না করে।  এমন একটি অবস্থায় আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি দেশে ফিরবোনা তাতে আমার চাকরি না থাকুক।  আমাদের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শামীম ভায়ের স্ত্রী মিসেস চন্দনা যাকে  আমার চন্দনা ভাবি বলে ডাকি তিনি নাকি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়ার পর অঝোরে কেঁদেছিলেন। 

আমার তখন মনে পড়ে গেলো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের কথা।  আমাদের আশংকা  সত্যি হয়ে গেলো।  খালেদা জিয়া সরকার খুনিদের বিচার বন্ধ করে দিলেন।  আর এভাবে বিএনপি জামাত প্রমাণ করলো তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসর। আমি প্ৰতিজ্ঞা করলাম আমরা আর কাঁদবো না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা খালেদা জিয়া সরকার হটিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করতে পারবো ততক্ষন আমাদের আন্দোলন চলবে।  আর এভাবে "সোনার বাংলা " প্রকাশ হয়ে গেলো আমাদের প্রথম কাজ- প্রবাসে মুক্তির বারতা নিয়ে সোনার বাংলা একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় রুপান্তিরিত হলো।  অস্ট্রেলিয়া ছাড়া কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে কপি পাঠানো হতো। ২০০১ সালে যেমন আমি সোনার বাংলা পত্রিকার মাধ্যমে গণতন্ত্র মুক্তির শপথ নিয়েছিলাম তেমনি,  ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সকাল বেলাতেই  আমি সিদ্ধান্ত নয় ফেলি " নেত্রীর মুক্তি আদায় আমার একমাত্র কাজ।"

সিডনির "সোনার বাংলা"র গল্পটা এবং নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে আজ আর লেখা  হলো না।  কারণ আজ সংলাপের কথা আবার এসেছে সেই দলের সঙ্গে-যারা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা  দখল করেছিল। ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডের  পরে থামেনি বরং চার নেতা ও হাজার হাজার সৈনিক - অফিসারকে জীবন দিয়ে হয়েছে তাদের হাতে। ২০১৪-২০১৫তে পেট্রল বোমা মেরে নিরীহ জনগণকে হত্যা করেছিল। 

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ কিভাবে বাংলার জনগণ গ্রহণ করবে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি। কি নিষ্ঠুর রাজনৈতিক পরিবেশের ভেতর দিয়ে আমরা অতিক্রম করছি! ২০০১  সালের নির্বাচনের আগে ওই দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছিলেন। নানা উপদেশ দিয়েছিলেন। আমরা গরীব, সুতরাং, আমাদের উপদেষ্টাদের কথা শুনতে হয়। পর্দার অন্তরালের আন্তর্জাতিক রাজনীতি আমি মনে করতাম প্রপাগান্ডা - ভালো কাজকে সন্দেহের চোখে দেখা।  কিন্তু সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে দিয়েছেন ওই আমেরিকান গবেষক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক যার সঙ্গে খুব কাছ থেকে জানবার সুযোগ হয়েছিল।

যারা ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলো।  বিদেশ থেকে লেখা পড়া বন্ধ করে দেশে ফিরতে নির্দেশ জারি করেছিল , এবং গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিলো,  তারা সংখ্যা লঘুদের উপর সহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারগুলোর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে ছিল। আজ আবার তাদের সঙ্গে সংলাপ?  কিন্তু কেন ? এজন্য আসলে কারা দায়ী ? অর্থ পাচারকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘন কারী, শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী কে ? তাদের অনুসন্ধান না করে কেন রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে ? নির্বাচনের আগে এই সব অন্যায়ের বিষয়ের ফয়সালা না করে যদি আমরা অগ্রসর হই তবে সংসদ যে তাদের দখলে যেতে পারে সেটা কি আমরা ভেবে দেখেছি ?

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করে যারা ক্ষমতা বসেছিল আজ তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে জাতি পিতার কন্যাকে!  কি নির্মম রাজনীতি নিজের পিতার হত্যাকারীদের মুক্ত করে দেয়া দলটির সঙ্গে সংলাপ ! এতো এক কঠিন শাস্তি ছাড়া আর কিছু নয় ! ! এই রাজনীতির অবসান কবে হবে জানিনা, তবে যে অশনি সংকেত তা থেকে যেন বাংলাদেশ উত্তরণ লাভ করতে পারে। 

কি নিষ্ঠুরতা - আমার আজ বারবার মনে পড়ে ৫৭ জন সামরিক অফিসারের কথা।  কি নিষ্ঠুর ভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবার জন্য। এবং সেদিনও সেই খুনিদের সঙ্গে বসতে হয়েছিল আটক সৈনিক , অফিসার ও তাদের পরিবার পরিজনদের মুক্তির জন্য।   

আমার  এ মুহুর্তে মনে পড়ছে কথা, সুর,শিল্পীঃ হায়দার হোসেন এর ওই গানটি "কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত,কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত,কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য,নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ, আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া,করিতে পারিনি চিৎকার, আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া,করিতে পারিনি চিৎকার, বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।" কতটুকু নির্লজ্জ ও নির্মম হলে আমরা খুনিদের সঙ্গে সংলাপের কথা বলি। এই নিষ্ঠুরতা শেষ কবে ? কবে আমরা মুক্ত হবো ?



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বেচ্ছা পদাবনতি, এত ট্রল কেন?


Thumbnail

স্বেচ্ছায় ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে দেয়ার অনেক নজির রয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছায় পদাবনতি। স্বেচ্ছায় ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে নন ক্যাডার চাকুরী গ্রহণ। এসব খবর সচরাচর শোনা যায় না। সম্প্রতি বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সাব রেজিস্ট্রার হয়েছেন। সাব রেজিস্ট্রার পদটি নন ক্যাডার ভুক্ত। পদোন্নতির সম্ভাবনা সীমিত। কিন্তু এখানে নিজের অর্থনৈতিক উন্নতির অপার সম্ভাবনা। বিয়ের বাজারেও খুব দাম। অফিস কক্ষটিতে একটা আদালত ভাব রয়েছে। সভা কক্ষটি যেন একটি এজলাস। শান শওকত মন্দ নয়। আশে পাশে শুধু টাকা আর টাকা। বোধ করি সেজন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরাট হৈচৈ। সবাই তাকে নিয়ে ট্রল করছে। অনেকেই বলছেন, তিনি বুদ্ধিমান, তিনি স্মার্ট। টাকার খনির মালিক হবার জন্য তার এ স্বেচ্ছায় পদাবনতি।

স্বেচ্ছায় ক্যাডার চাকুরী অনেকেই ছাড়েন। তিনিও ছেড়েছেন। তাতে অবাক হবার কিছু নেই। তিনি ক্যাডার হবেন নাকি নন ক্যাডার হবেন, সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে না জেনে শুনে ট্রল করার কোন যৌক্তিকতা দেখি না। ট্রলকারীদের বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে, তিনি দুর্নীতি করার জন্য সাব রেজিস্ট্রার হচ্ছেন। কারণ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি সর্বজন বিদিত। বছর দুয়েক আগে টিআইবি'র এক জরিপে দেখা গেছে, ভূমি খাতের দুর্নীতি দেশে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। প্রথম স্থানে রয়েছে পুলিশ বিভাগ। ভূমি খাতে সেবা নিতে এসে দুর্নীতির শিকার হয়েছে ৪৬.৩ শতাংশ খানা। ঘুষ দিয়েছে এমন খানার সংখ্যা ৩১.৫ শতাংশ। গড় ঘুষের পরিমাণ ৭ হাজার ২৭১ টাকা।

এমন তো হতে পারে, ভূমি খাতের এ সব দুর্নীতির কথা শুনে তার বিবেক দংশিত হয়েছে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দিচ্ছেন! জাতিসংঘের সংজ্ঞায় যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে, তাদেরই তরুণ বলা হয়। সেই হিসাবে তিনি বয়সে তরুণ। ‘দুর্জয় তারুণ্য দুর্নীতি রুখবেই’- তিনি হয়ত এ স্লোগানে বিশ্বাস করেন! তিনি হয়ত নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে চান! নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নাকি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি স্বেচ্ছায় পদাবনতি বেছে নিয়েছেন, সেটি এখন একটি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। আমরা ভালটাই বিশ্বাস করতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই যে, এই তরুণ দুর্নীতির জন্য নয়, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য স্বেচ্ছায় পদাবনতি বেছে নিয়েছেন।

বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। দুদক এ ব্যাপারে খুবই সজাগ। আয়কর বিভাগও পিছিয়ে নেই। সবার প্রত্যাশা, দুদক ও আয়কর বিভাগ স্বেচ্ছায় পদাবনতি গ্রহনকারী কর্মকর্তাকে শুরু থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখুক। তাহলে ভবিষ্যতে বোঝা যাবে তিনি কি দুর্নীতির করার মোহে আকৃষ্ট হয়ে স্বেচ্ছা পদাবনতি নিলেন, নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ করতে সাব রেজিস্ট্রার হলেন।

আবার কেউ কেউ বলছেন, তথ্য ক্যাডারে নাকি ১০ বছরেও পদোন্নতি হয় না। তাতে আর্থিক সংকটে ভুগতে হয়। মর্যাদা সংকটও হয়। শুধু তিনি এক নন, আরো অনেকেই নাকি তথ্য ক্যাডারের চাকুরী ছাড়ার কথা ভাবছেন। বিষয়টি সত্য হলে সেটি ভাবনার বিষয়, দুঃখজনকও বটে। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত ক্যাডার বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেয়া। উক্ত কর্মকর্তার স্বেচ্ছায় পদাবনতিকে একটি কেস হিস্ট্রি হিসাবে গ্রহণ করে সরকারের উচিত এটির ময়না তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এখুনি না বলি, সাবাস মায়ের দোয়ার দল!


Thumbnail

টি-২০ ফরম্যাটে যে কোন দল অন্য দলকে হারাতে পারে। তাই বলে র‌্যাংকিং এর ৮৮ নম্বরের একেবারে তলানির দল ক্রোয়েশিয়া, এক নম্বর দল ভারতকে হারাবে সেটি নিশ্চয়ই কেউ বিশ্বাস করবে না। ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। যেমন ৭ নম্বর দল পাকিস্তান সেদিন ১৭ নম্বর দল আমেরিকার কাছে হেরেছে। সেসব ব্যতিক্রম সব সময় হয় না, কালে ভদ্রে হয়।  

র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ নম্বরে (রেটিং ২২৬)। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ আসরে তারা খেলছে ৫ নম্বর দল সাউথ আফ্রিকা (রেটিং ২৪৯), ৮ নম্বর দল শ্রীলংকা (রেটিং ২৩০), ১৫ নম্বর দল নেদারল্যান্ড (রেটিং ১৮৫) ও ১৮ নম্বর দল নেপালের সাথে (রেটিং  ১৭০)। বাংলাদেশ সাউথ আফ্রিকার সাথে  হারবে, নেদারল্যান্ড ও নেপালের সাথে  জিতবে, সেটা স্বাভাবিক। এটির ব্যতিক্রম হলে সেটা অস্বাভাবিক, সেটা কারো জন্য চমক, কারো জন্য দুর্ভাগ্য। র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা সমানে সমান, ৮ আর ৯। রেটিং ব্যবধান মাত্র ৪। শ্রীলংকার সাথে জিতেছে, প্ৰশংসা করা যায়। তবে তাতে মাথায় তোলার মত কিছু হয়নি।

গত রাতে ৯ নম্বর বাংলাদেশ দল যখন ১৫ নম্বর দল নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছিল, তখন ভয় আতংকে গা হাত পা কাঁপছিল। এক পর্যায়ে উইন প্রিডিক্টর বলছিল, নেদারল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনা ৫৭ শতাংশ। সেটি হলে, তা হতো নেদারল্যান্ডের জন্য চমক, বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য।  

গা হাত পা কাঁপাকাপি শেষে ঘুমের পর সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি আমরা প্রায় বিশ্বকাপ পেয়ে গেছি। দেশীয় মিডিয়াতে দেখি বাংলাদেশ কি সব অর্জন করেছে। ক্রিকেটে অর্জনের যেন কিছু আর বাকি নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নেপালের সাথে জেতার পর জাতির পা আর মাটিতে পড়বে না, এভারেস্টের চূড়ায় উঠে যাবে। 

জাতি হিসাবে আমরা আসলে অল্পতে তুষ্ট। যে দুটি খেলায় জেতার কথা, সে দুটোতে জিতলে আমরা আবার শান্তদের মাথায় তুলবো।  তাসকিনদের বেতন বাড়াবো। হাতুরীদের সুযোগ সুবিধা বাড়াবো, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করব। ছাদখোলা বাসে সম্বর্ধনা দিব। সাকিবরা দেশে ফিরে এমপি মন্ত্রী হবে। খেলা বাদে সব কিছুই করবে। তাই আমাদের ক্রিকেটে উন্নতি হয় না। বিশ বছর আগে যা ছিল, এখনো তাই। এখনো তাদের খেলা দেখতে বসলে সমস্ত শরীর কাঁপে। প্রেসারের ওষুধ খেতে হয়। নিজেরা দোয়া পড়ি।  মায়েদের দোয়া করতে অনুরোধ করি। মায়েদের দোয়ায় কাজ যে হয় না, তা নয়। হয়। দোয়ায় দোয়ায় র্যাংকিং এর নিচের দলকে মায়ের দোয়ার দলটি হারিয়েছে সৌম্য শান্তর উপর্যুপুরি একক ব্যর্থতার পরও।  

মায়ের দোয়ার দলটির উন্নতি চাইলে র‌্যাংকিং এর নিচের দলকে হারালে অতি তুষ্টতা পরিহার করা উচিত। অভিনন্দনের মধ্যেই থাকি, মাথায় না তুলি। পার্শবর্তী সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো থেকে আমার অনেক সহকর্মী রয়েছে। স্বাভাবিক জয়ের পর তাদের মধ্যে কখনোই উচ্ছাস দেখি না। উদ্বেলিত হয় বিশ্বকাপ জিতলে। তবে হাঁ, আমরা যদি র্যাংকিং এর উপরের কোন দলকে হারাই, তবেই বলি, সাবাস বাংলাদেশ। সাবাস মায়ের দোয়ার দল। 

লেখক: প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দূর-নিরীক্ষণ স্বাস্থ্য সেবা


Thumbnail

আজ থেকে চার বছর আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবেলায় প্রায় সব দেশেই জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল যার জের আজও চলছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা এতোই তীব্র যে, কে কখন আক্রান্ত হয়েছে বা কে নীরব আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে আছে তা তাৎক্ষণিক যাচাই করাও কঠিন ছিল। পরীক্ষার সীমিত ব্যবস্থাদি বা সুযোগের সীমাবদ্ধতার প্রধান কারণ সবগুলো দেশ প্রায় একই সাথে আক্রান্ত হয়েছে ও পরীক্ষার কীট ও যন্ত্রপাতি সব দেশে সমান্তরাল রীতিতে বিতরণ নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যে এই সঙ্কট আরও জটিল কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে আয়ত্তাধীন রাখতে সক্ষম হয়েছে।  

কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়মগুলো সঠিকভাবে বজায় রাখা। কোভিড ও নন-কোভিডের পার্থক্য নিরূপণ প্রথম শর্ত না কি মানুষের স্বাস্থ্য জটিলতার আপাত নিরসণ কাম্য – এই নিয়ে সরব তর্ক চলেছে দেশ জুড়ে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক সমাজকে সংখ্যানুপাতে বেশী মানুষের সেবা দিতে হয় ও তাঁদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কোন অংশে কম নয়। শুধু চিকিৎসকই নয়, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অন্যান্য জনশক্তির সংখ্যা সামর্থ্যও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত একটি বিপুল জনগোষ্ঠী ও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যগণও আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী মারাও গেছেন যা বাংলাদেশের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের এ-ও বিবেচনায় রাখতে হবে পরিবারের কোন সদস্য আক্রান্ত হলে বা দুর্ভাগ্যবশত মারা গেলে সমগ্র পরিবারেই তার প্রভাব পড়ে ফলে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মীদের পারিবারিক দুর্গতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। 

ফলে আমরা চিকিৎসা কেন্দ্রে তখন রোগী কম দেখে বা চিকিৎসকদের একটি নিয়মের মধ্যে সেবা দিতে দেখে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে যে হইচই করেছি তা বাস্তবসম্মত ছিল না। যেমন ধরুন, করোনা পরিস্থিতির আগে আমাদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যে উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র আমরা দেখেছি শেষের দিকে তা ছিল না। এর অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে ও বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গ অনুযায়ী বাড়ি বসে চিকিৎসা নিয়েছে ও যথাসম্ভব ভালো থেকেছে। সামান্য উপসর্গে মানুষের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার যে সাধারণ প্রবণতা তা অনেক কমে এসেছে ও তাতে চিকিৎসকদের উপর চাপও কমেছে। আমার বন্ধু চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন তখন শান্তিতে অন্তত মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি, আগে এতো ভিড়ের চাপে রোগী সামলানো কঠিন ছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা, চিকিৎসকগণ সানন্দে এগিয়ে এসেছেন যাতে সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে তাঁদের পরামর্শ সেবা পেয়ে ভালো থাকেন। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক বিনামূল্যে এই সেবা দিয়েছেন এমন কি মোবাইল ফোনের ভিডিওতেও রোগীর সাথে কথা বলে, লক্ষণের সামগ্রিক বিবরণ শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন ও ফলো-আপ করছেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবার পরামর্শও দিয়েছেন।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশী মানুষের উপস্থিতি চিকিৎসার মান মোটেও নিশ্চিত করে না বা ব্যবস্থাপনার সাফল্য নির্দেশ করে না। অসুস্থ বা রোগপ্রায় মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে ও যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পেরে যুগপৎ জনসাধারণ ও চিকিৎসক সমাজ  কতখানি নিশ্চিত বোধ করছেন সেখানেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। ফলে আমাদের সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন নিশ্চিত করতে হবে যেখানে দেশের সব মানুষ সেবার আওতায় আসবে। আমার বিশ্বাস গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে দূর-নিরীক্ষণ পরামর্শ সেবা তা নিশ্চিত করতে পারে যা মোবাইল ফোন, ভিডিও কথোপকথন ওই ইন্টারনেটের অন্যান্য সুবিধা দিয়ে নিশ্চিত করা যায়।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরামর্শ সেবার বহির্বিভাগের চাপ কমাতে আরও বিনিয়োগ না বাড়িয়েও আমরা খুব সহজে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ করতে পারি কারণ সরকারের উদ্যোগে এখন প্রায় সব গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে। একটি গ্রামের প্রশিক্ষিত ও সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকর্মী ইন্টারনেট পরিষেবায় শারীরিক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ তৈরি করিয়ে দিতে পারে (শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে সেসব চিকিৎসক যেন সরকার স্বীকৃত নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয় নতুবা এই সেবায় এক শ্রেণীর ফড়িয়া চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণাও করতে পারে)। একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ থেকে চিকিৎসকের তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে প্রাথমিক পরামর্শ সেবা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর এই সেবার বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং-এর দায়িত্ব দেয়া যাবে নানা স্তরে- কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে। 

ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় এরকম একটি দূর-নিরীক্ষা চিকিৎসা পরামর্শ সেবা ২০০৯ সাল থেকে চালু আছে খুলনা ও বাগেরহাটের গ্রামাঞ্চলে। ‘আমাদের গ্রাম’ পরিচালিত এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। পরামর্শের জন্যে আগত সকল রোগীর বিস্তারিত তথ্য একটি নির্ধারিত ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকে। এরকম ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে সন্দেহভাজন বা সম্ভাব্য রোগীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের এরকম আরও অনেক অভিজ্ঞতা দেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে যেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ও আধুনিক ভাবনার সাথে মিলিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এখানে একটি বিষয় হয়তো সামনে আসবে সে হলো চিকিৎসার নৈতিক শর্ত যা হলো রোগীকে উপস্থিত স্পর্শ করে পরীক্ষা করা যাকে আমরা ‘ইন্টারমেডিয়ারী’ বলি তা কেমন করে নিশ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির হাতে তাপমাত্রা নিরীক্ষণ বা নাড়ী নিরীক্ষণ-সহ অনেক চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা অনেক আগেই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সে ক্ষেত্রে একজন প্রশিক্ষিত ও নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কর্মী শর্ত অনুযায়ী যেটুকু নিরীক্ষা করা সঙ্গত তার একটি প্রাথমিক নীতিমালা/গাইডলাইন নিশ্চয়ই আমরা তৈরি করে নিতে পারি।

দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্যে একটি উপযুক্ত দূর-নিরীক্ষণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রক্রিয়া গঠন ও তা মানসম্মত উপায়ে সমুন্নত রাখা এখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সদাশয় সরকার ও আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিকল্পনার সাথে যুক্ত সকলে মিলে এই ভাবনার বাস্তব ও নীতিসঙ্গত উপায় তৈরি করে নেয়া এখন জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।    


--রেজা সেলিম

পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প



দূর-নিরীক্ষণ   স্বাস্থ্য সেবা   রেজা সেলিম   মতামত   মাটির টানে  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের আম্পায়ারিং


Thumbnail

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টটি চলছে আমেরিকায়। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি ২০টি দল খেলছে এ টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুটি খেলেছে। একটিতে জয়। আরেকটিতে হার। জয়টি নিয়ে যতটা না আলোচনা, হারটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তার চেয়ে ঢের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের খেলাটির আম্পায়ারিং নিয়ে তুমুল সমালোচনা। আম্পায়ার কেন মাহমুদউল্লাহকে আউট দিল। ভুল আউট টি না দিলে বাংলাদেশ চার রান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় না। চার রান পেলে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে যেত। আম্পায়ার কেন কয়েকটি ওয়াইডও দেয়নি যা ওয়াইড ছিল। এসবের মধ্যে আরেকটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখলাম ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাঝে দলিলসহ জমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে। অন্যান্য ক্রিকেট ম্যাচের মত এ অনুষ্ঠানটিও টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। সেখানেও ছিল বিতর্কিত আম্পায়ারিং ।

জমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানটিতে গণভবন থেকে সরাসরি অনলাইন কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একপ্রান্তে গণভবন। আরেক প্রান্তে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প। ম্যাচটিতে আম্পায়ার ছিলেন স্থানীয় টিএনও। আশ্রয়ণ প্রকল্পের খেলোয়াড় (বক্তা) টিএনও ঠিক করে রেখেছিলেন কি না জানিনা। তবে এসব অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন সাধারণত আগে থেকে বক্তা ঠিক করে রাখেন।

ক্রিকেট খেলার কিছু মহান ঐতিহ্য রয়েছে। এমনই একটি ঐতিহ্য হল একজন খেলোয়াড়ের আবেদন করার পদ্ধতি। প্রায়ই খেলোয়াড়দের "হাউজাট" বলে চিৎকার করতে দেখা যায়। কখনও কখনও যতটা জোরে পারেন, ডাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এর মানে কি? হাউজাট (Howzat) শব্দটি হাউ ইজ দ্যাট (How's that) এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যা একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে কি না তা একজন আম্পায়ারকে জিজ্ঞাসা করার একটি উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়। আপিল ছাড়া একজন আম্পায়ার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজন ব্যাটসম্যানকে আউট দিতে পারে না। ক্রিকেটের আপীল সংক্রান্ত প্রবিধান ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে এমনটা উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ফিল্ডিং দলকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেজন্য বোলার, কিপার এবং ফিল্ডিং দলের অন্যান্য সদস্যরা 'হাউজাট' বলে চিৎকার করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রান্তিক জনগণের কথা শুনতে পছন্দ করেন। সেদিন তিনি খুব মনযোগের সাথে শুনছিলেন মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিধবা বৃদ্ধা শাহেরুন এর কথা। বৃদ্ধা খুবই আবেগের সাথে নিজের দুঃখ দুর্দশার কথা বলছিলেন। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধার মর্মস্পর্শী বক্তব্য হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করছিলেন। বক্তব্য শেষে বৃদ্ধা মোনাজাত ধরলেন। এরই মধ্যে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলেন। বৃদ্ধা তো আর 'হাউজাট' জানেন না। তিনি আপীল করেন। ডান হাতের মাইক্রোফোন বা হাতে নিয়ে আপীলের জানান দেন। আম্পায়ার নাছোড়বান্দা। তিনি বৃদ্ধার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আবার আউট দিলেন।

এ ঘটনায় অনলাইনে সরাসরি যুক্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলে ওঠেন ‘এটা কী, একজন মানুষ মোনাজাত করছেন, আর হাত থেকে সেটা (মাইক্রোফোন) কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হোয়াট ইজ দিস। এটা কী?’ প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, 'এই এই এটা কী করো, এটা কেমন কথা হলো। মোনাজাত করছে আর তার হাত থেকে মাইক্রোফোনটি কেড়ে নিল। হোয়াট ইজ দিস?' এ সময় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তা ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বললে দাঁড়ায়, হাউজাট বা হাউ ইজ দ্যাট। প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেট খেলা দেখেন। সময় পেলে দেশের ক্রিকেট সরাসরি দেখেন। এমনকি মাঝে মাঝে তাঁকে স্টেডিয়ামে যেয়েও খেলা দেখতে দেখা যায়। তিনি ক্রিকেটীয় পরিভাষার 'হাউ ইজ দ্যাট' বোঝেন। কিন্তু তিনি সেদিন দাপ্তরিক পরিভাষায় 'হোয়াট ইজ দিস’ বলেন। বারবার আপিল করাতে আম্পায়ার আউটটি বাতিল করেন। বৃদ্ধা শাহেরুন মাইক্রোফোন ফিরে পেয়ে মোনাজাত সম্পন্ন করে তার ইনিংস শেষ করেন।

ক্রিকেটের সৌন্দর্য আম্পায়ারিং এ। আম্পায়ারিং ভাল না হলে খেলাটি তার সৌন্দর্য হারায়। খেলায় ছন্দপতন হয়। জয় পরাজয় নির্ধারণে স্বাভাবিকতা থাকে না। তেমনি আম্পায়ারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের লাইভ অনুষ্ঠানটি দৃষ্টিকটু লেগেছে। এসব আম্পায়ারদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন 'আম্পায়ারিং' এর উপর আরো বেশি বেশি প্রশিক্ষণ। 

লেখক: প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট

আশ্রয়ণ প্রকল্প   বিতর্ক   আম্পায়ারিং  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১১ জুন আমাদের দেশ গড়ার শিক্ষা দেয়


Thumbnail

আজ ১১ জুন। এদিন দীর্ঘ ১১ মাস জেল খাটার পর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেল থেকে মুক্তি পান। এই মুক্তিটি অনেক অর্থ বহন করে। এই ১১ মাসে তাকে মূলত যে মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছে তা চিন্তার বাইরে। সেসময় তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলার সমস্ত রকমের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন তিনি কোন অন্যায় করেননি এবং করেন না। জনগণের মঙ্গলের জন্যই তিনি কাজ করেছেন এবং কাজ করে চলেছেন।

আমরা যখন জেলাখানায় তাকে দেখতে যেতাম সেসময় তিনি আমাদের মুখ কালো দেখলেই বলতেন, ‘আপনাদের মুখ কালো কেন?’ এরকমভাবেই তিনি আমাদের উজ্জীবিত করতেন। আমি অবাক হয়ে তখন ভাবতাম, তিনি জেলে থাকার কারণে আমাদের মন খারাপ আর উল্টো তিনি আমাদের সৎ সাহস দিচ্ছেন যে তিনি সৎ পথে আছেন তার কিছুই হবে না এবং তিনি কারামুক্ত হবেন। এজন্য কারামুক্তি দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি জেলে থাকতেই তার দার্শনিক চিন্তাকে কিভাবে বাস্তবে রূপান্তরিত করবেন সেই সব বিষয়গুলো ঠিক করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর কারামুক্তির পরই নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে কাদের মনোনয়ন দিবেন সেটির চিন্তাও তিনি সেসময় করে রেখেছিলেন। তাছাড়া ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ থেকে শুরু করে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গুলোর মতো জনবান্ধব কর্মসূচির  চিন্তা তিনি জেলে থাকতেই ঠিক করে রেখেছিলেন।

২০০৮ সালের ১১ জুন থেকে ২০২৪ সালের ১১ জুন পর্যন্ত যদি চিন্তা করি তাহলে একটি জিনিস খুবই পরিষ্কার হয়ে যায়। তাহলো আজকের বাংলাদেশের অপর নাম শেখ হাসিনা। এটি তিনি রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন। একারণেই ১১ জুন বারবার মনে করা দরকার। এবং এটি মনে করে আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতিটি কাজে অত্যন্ত আন্তরিক এবং সততার সাথে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে হবে। না হয় আমরা আমাদের বিবেকের কাছে অপরাধী হবো। অপরাধী হবো বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং  বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে। কেননা আমরা দাবি করি, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি এবং আমাদের চলার পথে পাথেয় হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এই যদি বলি তাহলে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শনকে এড়িয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে চলি তাহলে আমরা আমাদের বিবেকের কাছে দায়ী।

জিল্লুর রহমান, মতিয়া চৌধুরী, আতাউর রহমান খান কায়সার, সৈয়দ আশরাফ, হাছান মাহমুদ থেকে শুরু করে অনেকেই সেসময় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য চেষ্টা করে গেছেন। আর অনেকেই ভেবেছিল, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে অন্ধকার টানেলের ভেতরে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে যেখান থেকে তিনি আর বেরোতে পারবেন না। তারা যে সংস্কারবাদী হয়েছিল সেটি ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা হয়তো ভেবেছিল কোন দিন শেখ হাসিনা আর আলোর মুখ দেখবে না।

সেই সকল ভেতরের ষড়যন্ত্র, বাইরের ষড়যন্ত্র, ভবিষ্যতের দেশ গড়ার যে পরিকল্পনা সমস্ত কিছুই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একা সামলেছেন। আমি বিশ্বাস করি ১১ জুন আমাদের শিক্ষা দেয় দেশ গড়ার যদি মানসিকতা থাকে এবং মনের দৃঢ়তা থাকে তাহলে কোন বাধায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। দেশ গড়ার জন্য শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক যে চাহিদা তার প্রত্যেকটির ব্যবস্থা করেছেন। এটিই হচ্ছে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বড় প্রাপ্তি। যদিও তিনি বলেন, এগুলো জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি উৎসর্গ করেন। সেজন্য আমি বলবো, আজকের বাংলাদেশের অপর নাম শেখ হাসিনা।


কারামুক্তি দিবস   শেখ হাসিনা   এক এগারো   ওয়ান ইলাভেন   দেশ গড়ার শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন