বিএনপি তারেক জিয়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এক.
তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে সপ্তাহজুড়ে তোলপাড় দেশ। একজন জনপ্রতিনিধি। একজন সাবেক সেনাপ্রধান। তৃতীয় ব্যক্তি সাবেক পুলিশপ্রধান। ভিন্ন ভিন্ন কারণে এবং ঘটনায় তারা আলোচনায়। তিন ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু তিন ঘটনায় এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়ম। একজন জীবন দিয়ে তার অন্ধকার জগতের দরজা খুলে দিয়েছেন। একজন ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। তৃতীয়জনের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। এ তিনটি ঘটনার পর একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে—জনগণের সেবার দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন? দুর্নীতিবাজরা, চোরাকারবারি, ক্ষমতা অপব্যবহারকারীরা কীভাবে জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন? এ ধরনের ব্যক্তিদের হাতে জনগণ কতটা নিরাপদ?
দুই.
প্রথমেই জনপ্রতিনিধি প্রসঙ্গে খানিকটা আলোকপাত করা যাক। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার এ খবরটি নিশ্চিত করে কলকাতা পুলিশ। গত ১২ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ১৮ মে থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আনার হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে এখন পর্যন্ত যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা লোমহর্ষক। হিন্দি সিনেমার মতো। এ হত্যাকাণ্ডের পর চোরাচালানের ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’র চাঞ্চল্যকর সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ২৪ মে ‘কালবেলা’র খবরে বলা হয়েছে, ‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এ ছাড়া সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণও খুনের আরেক কারণ হিসেবে কাজ করেছে...।’ আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। বাংলাদেশে ও ভারতে সন্দেহজনক ব্যক্তিরা আটক হয়েছেন। নিশ্চয়ই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হবে শিগগির। তিনবারের সংসদ সদস্য আনারের মৃত্যুর পর তার জীবনের অন্ধকার অধ্যায় সামনে এসেছে। সন্দেহ নেই, প্রয়াত এ সংসদ সদস্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুর পর এলাকার জনগণের মধ্যে যে আবেগ এবং শোক দেখা গেছে, তা অভূতপূর্ব। কিন্তু মৃত্যুর পর জানা গেল তিনি চোরাচালান চক্রের একজন ‘গডফাদার’ ছিলেন। ওই এলাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতেন এই সংসদ সদস্য। এটি যে কোনো গোপন বিষয়, তা নয়। ওপেন সিক্রেট। সবাই জানতেন। আওয়ামী লীগেও নিশ্চয়ই বিষয়টি অজানা নয়। সবকিছু জেনেশুনে একজন চোরাকারবারিকে কীভাবে তিন-তিনবার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিল? ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ এর মধ্যে ২০১৪ এবং এ বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণই করেনি। তাই এমনটি বলার কোনো সুযোগ নেই যে, জেতার জন্য ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কৌশলগত কারণে আপস করতে হয়েছে। এসব নির্বাচনে সৎ, পরিচ্ছন্ন মানুষকে সামনে আনার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতদের মনোনয়ন দিয়ে রাজনীতিকে শুদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি। বিভিন্ন স্থানে এরকম করাও হয়েছে। তাহলে কেন সর্বহারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন চোরাকারবারিকে বারবার মনোনয়ন দেওয়া হলো? কার স্বার্থে এ ধরনের বিতর্কিত, অন্ধকার জগতের লোকজনকে জনপ্রতিনিধি বানানো হয়? আনারের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পর একটি বিষয় সামনে এসেছে, আমাদের জনপ্রতিনিধি কারা হচ্ছেন? কারা আমাদের ‘ভাগ্যবিধাতা’ হয়ে সংসদে যাচ্ছেন। এর আগেও একজন আদম ব্যবসায়ীকে সংসদে আনা হয়েছিল। বিদেশে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রয়াত এক নেতাকে বিপুল অর্থ দিয়ে তিনি ‘স্বতন্ত্র’ভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্ত্রীকেও টাকার দাপটে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন। আমরা প্রায়ই বলি, জাতীয় সংসদ ব্যবসায়ীদের দখলে। রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই। কিন্তু রাজনীতি এখন কি ক্রমশ কালো টাকার মালিক, অন্ধকার জগতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে? ভবিষ্যতের রাজনীতি কি মাফিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করবে?
তিন.
জেনারেল আজিজ আহমেদ সাবেক সেনাপ্রধান। তিন বছর সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের জুনে তিনি অবসরে যান। ২০ মে সোমবার মধ্যরাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্ষমতার অপব্যবহার, তিন ভাইয়ের অপরাধ ধামাচাপা দিতে প্রভাব খাটানো এবং ভাইদের সেনা কেনাকাটায় অবৈধ সুযোগ দেওয়ার অভিযোগে জেনারেল আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছে, তা নতুন নয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরায় এ নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনের ভেতর ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ আবিষ্কার করা হয়েছিল। এ কথা সত্য, আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত ওই প্রামাণ্যচিত্রে অযৌক্তিক এবং অন্যায়ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানোর একটি কুৎসিত চেষ্টা ছিল। এ কারণেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে সেনাপ্রধান এবং তার ভাইদের বিভিন্ন অপকর্মগুলোর নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত করা ছিল সরকারের দায়িত্ব। সরকার অভিযোগগুলো আমলেই নেয়নি। বিশেষ করে নাম, ঠিকানা, পিতৃপরিচয় পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নেওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রমাণিত। এসব জালিয়াতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইদের অপরাধ তাদের ব্যক্তিগত। রাষ্ট্র বা সরকার কেন তার দায় নেবে? চাকরি জীবনে জেনারেল আজিজ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাপ্রধান হওয়ার আগে তিনি বিজিবির মহাপরিচালক ছিলেন। দুই জায়গাতেই তার ব্যাপারে নানা মুখরোচক আলোচনা শোনা যায়। সরকারের ঘনিষ্ঠ এরকম একটি ধারণা দিয়ে তিনি দাপট দেখিয়েছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে বিস্তর অভিযোগ আছে। কিন্তু এসব অভিযোগ তদন্ত তো দূরের কথা, আমলেই নেওয়া হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আমাদের গৌরবের সশস্ত্র বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের অহংকার, দেশের গর্ব। এখনো এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে জনগণের আস্থা আশাতীত। হত্যা ও রাজনীতির উচ্চাভিলাষ থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি চৌকস, পেশাদার বাহিনী হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ২০০৯ সাল থেকে সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক মানের একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেনাপ্রধানরা অবসরের পর নিভৃত জীবনযাপন করেন। দায়িত্ব পালন করে তাদের পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠা তরুণদের জন্য অনুকরণীয় হয়। কিন্তু জেনারেল আজিজদের সময়ে ব্যাপারটি তেমন ছিল না। বিজিবির প্রধান বা সেনাপ্রধান হিসেবে তার অনেক কর্মকাণ্ডেই পেশাদার অফিসাররা অস্বস্তিতে পড়েছেন। বিব্রত হয়েছেন। সেনাপ্রধানের চেয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ—এ পরিচয়টি তার ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে উঠেছিল। আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার যোগ্য ছিলেন কি না, সেটা ভিন্ন বিতর্ক। আমি সে বিতর্কে যাব না। তবে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পদের সঙ্গে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা ও সম্মান জড়িত। আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ড অনেক আগেই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগগুলোকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। আমার প্রশ্ন, শীর্ষ পদে যাওয়ার পর একজন ব্যক্তি কেন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার দাপটে নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন? কেন তার লাগাম টেনে ধরা হয় না? এ ধরনের স্পর্শকাতর পদে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কি যথেষ্ট সতর্ক? কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত কি না, আজিজ আহমেদের ঘটনার পর সেই বিতর্ক সামনে এসেছে।
চার.
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকার একটি বিশেষ আদালত সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী, কন্যার সব স্থাবর সম্পদ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের এই আদেশ। গত কিছুদিন ধরেই সাবেক এই পুলিশপ্রধানের বিপুল অবৈধ সম্পদ নিয়ে তোলপাড় চলছিল। একটি জাতীয় দৈনিকে তার দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন একজন আলোচিত সংসদ সদস্য। হাইকোর্টে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে। দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত নির্দেশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে। তদন্তের স্বার্থেই দুদক বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ ক্রোক করার আবেদন করে। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের যখন ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, তখন আমি আশা করেছিলাম তিনি এর কড়া প্রতিবাদ জানাবেন। কিন্তু তা না করে সাবেক এই পুলিশপ্রধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক বক্তৃতা দেন, যা ছিল অনেকটাই আত্মরক্ষামূলক। তার ওই বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর জুতসই জবাবও ছিল না। তাই এখন দেখার বিষয়, দুদক তদন্ত করে কী পায়। বেনজীর আহমেদ দুর্নীতি করেছেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তার বেপরোয়া হয়ে ওঠার নানা কেচ্ছা-কাহিনি অলিগলিতে আলোচনা হয়। পুলিশের প্রায় কর্মকর্তাই তার পরিবর্তনের বিস্মিত। এক সময় চৌকস, দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার বদলে যাওয়া নিয়ে রীতিমতো সিনেমা হতে পারে। হলি আর্টিসানের ঘটনায় তিনি যে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, তা সত্যি অতুলনীয়। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরাই হতাশার সুরে বলেন, পুলিশপ্রধান হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানা রকম বিতর্ক এবং অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। প্রচণ্ড ক্ষমতার দাপটে তিনি যা খুশি তা-ই করেছেন বলেও অনেক মন্তব্য করেন। পুলিশপ্রধান থাকা অবস্থায় তার লাগামহীন দুর্নীতি সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচিত হয়েছিল। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষপদে থাকা একজন ব্যক্তির এসব কাণ্ড সরকারের জন্যও বিব্রতকর। এখন দেখার বিষয়, বেনজীর আহমেদের পরিণতি কী হয়।
পাঁচ.
আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায়। এ সময় দেশ পরিচালনায় সরকার অনেক শীর্ষ পদে বহুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেকের সততা ও নিষ্ঠা এখনো অনুকরণীয় উদহারণ। আবার কেউ কেউ শীর্ষ পদে গিয়ে এমনসব কাণ্ড করেছেন যে, সরকারই তাদের কাজে বিব্রত হয়েছেন। দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা বিভিন্ন শীর্ষ পদে গেছেন তারাই বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। এর ফলে সরকারও ইমেজ সংকটে পড়েছে।
এই তিনটি ঘটনার একটি সহজ সমীকরণ আমার কাছে স্পষ্ট। পক্ষপাত করে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বা প্রভাবিত হয়ে যোগ্যতার বাইরে কাউকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। হোক না তা জনপ্রতিনিধি কিংবা পুলিশপ্রধান। ইদানীং অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন পাওয়ার কথা বেশ চালু হয়েছে। অযোগ্যরা তদবির করে, চাটুকারিতার মাধ্যমে অথবা সরকারকে নানাভাবে প্রভাবিত করে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন। এরাই বিতর্কিত হচ্ছেন, সরকারকেও করছেন বিব্রত। এদের লোভ, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে আস্থার সংকট। এই তিন ঘটনা আমাদের একটি সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাই তা হলো গুরুত্বপূর্ণ পদে বা দায়িত্বে লোক বাছাই করতে হবে নির্মোহভাবে, শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে। না হলে ক্ষতি হবে সরকারের, দেশের।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
আনার আজিজ বেনজির দুর্নীতি নিষেধাজ্ঞা হত্যা
মন্তব্য করুন
ওয়ার্কার্স পার্টি রাশেদ খান মেনন চীন ভারত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বুধবার (২৯ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দুইজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছাটাই হয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২, অন্যজন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব। টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের চুক্তি নবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু চার মাসের মাথায় তাদের চুক্তি বাতিল হলো। সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক পুলিশ প্রধানের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন দেশজুড়ে তোলপাড় তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই দুই কর্মকর্তার ছাটাই নানা প্রশ্ন সামনে এনেছে। এটি কী সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের একটি অংশ নাকি অস্থিরতার প্রকাশ? হঠাৎ করেই দুর্নীতির ইস্যু জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে এসেছে। এটি কী সরকারের জন্য চাপ না কৌশলের অংশ? একের পর এক ঘটনার পর আকাশে বাতাসে না প্রশ্ন। সরকারের ভেতর কী হচ্ছে?
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে কোটালীপাড়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখন একটাই কাজ তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনা। এই কথাটি তিনি খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কিছু বলেন তখন নিশ্চয়ই তার কার্যকারণ থাকে এবং ভেবে চিন্তে তিনি কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে সপ্তাহজুড়ে তোলপাড় দেশ। একজন জনপ্রতিনিধি। একজন সাবেক সেনাপ্রধান। তৃতীয় ব্যক্তি সাবেক পুলিশপ্রধান। ভিন্ন ভিন্ন কারণে এবং ঘটনায় তারা আলোচনায়। তিন ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু তিন ঘটনায় এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়ম। একজন জীবন দিয়ে তার অন্ধকার জগতের দরজা খুলে দিয়েছেন। একজন ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। তৃতীয়জনের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। এ তিনটি ঘটনার পর একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে—জনগণের সেবার দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন? দুর্নীতিবাজরা, চোরাকারবারি, ক্ষমতা অপব্যবহারকারীরা কীভাবে জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন? এ ধরনের ব্যক্তিদের হাতে জনগণ কতটা নিরাপদ?
চীন থেকেই ফিরে ভারতের সমালোচনায় মুখর হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। সাম্প্রতিক সময়ে ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি চীন নিয়ে যান। এ সফরের উদ্দেশ্য কি ছিল বা কেনই বা চীন তাদেরকে জামাই আদর দিয়ে নিয়ে গেছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানায়নি ইদানিং সুবিধাভোগী নেতারা। তবে চীন থেকে ফিরে আসার পর যেন রাশেদ খান মেননের মগজ ধোলাই হয়েছে তা দিব্যি বোঝা গেল। চীন থেকে ফেরার পরেই তিনি এখন ভারত বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন।
সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক পুলিশ প্রধানকে নিয়ে এখন সারা দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে। সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি আদালত ক্রোক পরোয়ানা জারি করেছে। বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী এবং কন্যার নামে থাকা ৮৩ টি বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি দলিল জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া তাদের ব্যাংক একাউন্টও জব্দ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেনজীর আহমেদ অত্যন্ত দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ চাউর হয়েছিল। এখন বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে।