লিভিং ইনসাইড

আপনার সন্তান কি স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৩০ এএম, ১৬ জুলাই, ২০১৯


Thumbnail

বিশ্বজুড়ে চলছে স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার জয়জয়কার। গ্রীক ও রোমান রূপকথায় হাইড্রা (Hydra) নামক একপ্রকার পা-বিহীন জলজ অথবা উভচর প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। এই প্রাণী গ্রীসের উপকূলীয় অঞ্চলে পানির নিচে এবং এবং উপকূলীয় ঝোপঝাড়ে বাস করতো। অক্টোপাসের মতো হাইড্রার অনেকগুলো বাহু ছিল এবং প্রত্যেক বাহুর শেষে একটি করে মাথা ছিল। তাই কেউই জানতো না হাইড্রার ঠিক কয়টি মাথা। তবে সবাই জানতো, হাইড্রার একটি মাথা কাটলে সেখান থেকে দুইটি মাথা গজাতো। সেই দুটি কাটলে আবার মাথা গজাতো চারটি। এভাবে ক্রমেই বাড়তো হাইড্রার মাথা, যা একসময় সবার মাথাব্যথার কারণে পরিণত হয়।

স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার হাইড্রার মাথার মতো ক্রমেই বাড়ছে বলে সব তথ্যউপাত্তে জানা যায়। আর বাড়ন্ত শিশুদের অনুসন্ধিৎসু মনের সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া শতবাহু বাড়িয়ে অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরছে তাদের। ফলে বাড়ন্ত শিশুদের হাতে স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া তাদের উপকার করছে নাকি ঝুঁকিতে ফেলছে তা নিয়ে ভাবতে হবে অভিভাবকদের।

কোন বয়স থেকে শুরু

কোন বয়সে বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন দিতে হবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমার শিক্ষকতা জীবনে স্কুলের প্রাইমারি সেকশনের সবচেয়ে নিচের ক্লাসের বাচ্চাদের ক্লাসরুম পরিদর্শনকালে বেশ তৃপ্তি নিয়ে পরিদর্শক দলের দলনেতাকে বলেছিলাম- আমরা স্কুলে প্রথমদিন থেকে কম্পিউটার শিখাই। ভিআইপি দলনেতা হেসে বললেন ওরা তো ক্লাসে আসার আগে থেকেই কম্পিউটার চালানো শিখে যায়। হাতে বা চোখের সামনে মোবাইল না থাকলে শিশুরা আজকাল খেতেও চায় না। দাদী, নানী, বোন বা মায়ের মুখের ছড়া, কবিতা, রূপকথার গল্প, ঘুমপাড়ানি গানের বদলে স্থান নিয়েছে মোবাইল সোশ্যাল মিডিয়া। তাই ১৮ বছরের নিচে যারা সাংবিধানিক স্বীকৃতিতে শিশু- তাদের মোবাইলের অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সোশ্যাল মিডিয়া কি প্রয়োজনীয়?

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকারের উপায় নেই। উঠতি বয়সীরা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিবারের সবার খোঁজ রাখতে এটা ব্যবহার করে। এখানে তারা মনের মতো কারো সন্ধান পায়, যার সঙ্গে মনের সুখ-দুঃখ, অনুভূতি, অর্জন, বিসর্জন, প্রয়োজন সবই শেয়ার করতে পারে। অনুভূতি প্রকাশের এই উপকারিতার কথা সর্বজনবিদিত। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা গ্রুপের মাধ্যমে পড়াশোনার কাজেই ব্যবহার করছে সোশ্যাল মিডিয়া। তবে এই স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা আগে যাচাই করা দরকার।

ডিলিটে ডেঞ্জার

মেইল, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপগুলো থেকে উঠতি শিশুরা কখন কোথায় যোগাযোগ করছে তা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আবার কিছু অ্যাপস আছে যেখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি পাঠানোর পরপরই মুছে যায়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য এই অ্যাপসের ব্যবহার বিপদের কারণও হতে পারে। এমন একটি অ্যাপ ব্যবহার করে অভিভাবকের সচেতনতার পরেও ১৩ বছরের মার্কিন কিশোরী নিকোলী লোভেল তার ২১ বছরের প্রতারক বন্ধু ডেভিডের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে। পরে এই অ্যাপটি কিলার অ্যাপ নামে স্বীকৃত হয়। যেখানে ডিলিট, সেখানে ডেঞ্জার থাকতে পারে, অতএব সাবধান।

নিজেকে আড়াল করছে না তো

অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে সোশ্যাল মিডিয়া নিজেকে আড়াল করার একটা অবলম্বন হতে পারে বাড়ন্ত কিশোরকিশোরীদের কাছে। যে কথা বা প্রশ্ন সামনাসামনি করা যায় না, যে ছবি দেখা বা দেখানো যায় না তা অনায়াসে সোশ্যাল মিডিয়ার আড়ালে বলা বা দেখানো যায়। এক্ষেত্রে ছদ্মনামের ব্যবহারও বিচিত্র নয়। ফ্রান্সে একজন ভুক্তভোগী পিতা যখন তার কিশোরী কন্যাকে হারিয়ে ফেলেন, তখন জানা যায় তার স্কুলের এক সিনিয়র ছাত্রী নারী পাচারচক্রের সদস্য হিসেবে গোপনে যোগাযোগ রাখতো তার সঙ্গে। এই হতভাগ্য পিতার উপদেশ তাদেরকে অহেতুক সন্দেহ বা অতিরিক্ত খেয়াল রাখার কথা বললেও অভিভাবকদের হাল ছাড়া চলবে না।

যা নয়, তাও হয়

সোশ্যাল মিডিয়া নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন এবং নিজেকে অন্যের চোখে মূল্যায়নের দরজা খুলে দেয়। আর এমন বহু অ্যাপ রয়েছে, যা ব্যবহার করে ছবিতে নিজের প্রকৃত চেহারাকে বহুগুণে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়। সেখানে অনেক লাইক, কমেন্ট পড়ে। ছবির মতো সুন্দর হতে গিয়ে খাওয়া ছেড়ে দেয় কখনো, কখনো বেশি খায়, কতো প্রসাধনীর ব্যবহার করে। বাস্তবে তেমন সুন্দর না হলে হতাশায় ভোগা, পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া, এমনকি আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। আমার শিক্ষকতা জীবনে পৃথক দুটি ঘটনায় একজন কিশোরী আত্মহত্যার প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছি, যার নেপথ্যে ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব। এখানের সব সত্যি নয়, তা বুঝাতে হবে।

মিথ্যা বলার প্রবণতা

বাড়ন্ত ছেলেমেয়েদের পক্ষে মিথ্যা বলাটা নতুন কিছু নয়। ওয়াশিংটন পোস্ট ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক ফিচারে প্রকাশ করে যে, কোনো ঝামেলা এড়াতে, নিষিদ্ধ কিছু করতে, নিজেকে বা নিজের ভাইবোন বা বন্ধুদের বাঁচাতে বা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে সন্তানেরা মিথ্যা বলে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হলো নিজের গোপনীয়তা বজায় রাখতে মিথ্যা বলা। অভিভাবকরা হয়ত মনে করে শাস্তির ভয়ে তার একান্ত বাধ্য সন্তান হয়ত মিথ্যা বলছে। বাস্তবে তা নাও ঘটতে পারে। যারা সন্তানের সঙ্গে একান্ত বন্ধুবৎসল, সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার বিপক্ষে তাদের সন্তানও মিথ্যা বলতে পারে। কারণ এর পিছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও সোশ্যাল লাইফ। এই মিডিয়া বিভিন্ন চিন্তার জন্ম দেয়, যা মিথ্যাকে উৎসাহিত করে। আমার সামাজিক জীবন একান্তই আমার, সময় কাটানো আর বিনোদনের কৌশল আমিই ঠিক করবো- এই চিন্তাগুলো কিশোরদের মিথ্যা বলতে বাধ্য করে। কারণ সচেতন বাবা-মা তাদের এই চেতনার সঙ্গে একমত হতে পারেনা।

আসক্তি বোঝার উপায়

আজকাল ১৮ বছর হওয়ার আগেই সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব অভিভাবকরাই তুলে দেন। কিছুক্ষেত্রে টাকা জমিয়ে বা নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে স্মার্টফোন হাতে পায় বাড়ন্ত বাচ্চারা। যাইহোক, নিচের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখলে অভিভাবক হিসেবে বিষয়টিকে যুগের হাওয়া বলে অবহেলা করা চলবে না-

* মাত্রাতিরিক্ত সময় ফোন, অ্যাপস, ডিভাইস নিয়ে কাটানো।

* ফোন নিয়ে মেতে থেকে সময়ের কাজ সময়মতো করতে না পারা।

* চেহারা বা আচরণে ভয়, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা প্রকাশ করা।

* বন্ধু বা নিকটাত্মীয়দের এড়িয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকা।

* মোবাইলের চার্জ বা নেটওয়ার্ক না থাকলে উৎকণ্ঠা বা বিরক্তি প্রকাশ করা।

* নতুন মোবাইল বা ডিভাইস কিনে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি বা জিদ করা।

* সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে না চাওয়া।

* ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অবহেলা।

* বইপড়া, টিভি দেখা, খেলাধুলা করার মতো বয়সোচিত বিনোদন কর্মকাণ্ডে অংশ না নেওয়া।

* ঘুম, নামাজ ইত্যাদির প্রতি অবহেলা।

অভিভাবক চাইলে তালিকাটা আরও বড় করতে পারবেন। কারণ পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তরা যে ঠিক কি আচরণ করবে তা আগে থেকে ধারণা করা কঠিন। বাড়ন্ত শিশুরা খুব আবেগী, অভিমানী, জেদী, কল্পনাপ্রবণ, ভাবুক, নির্জিব, লাজুক, আত্মকেন্দ্রিক বা মিথ্যাবাদী হওয়াটা বিচিত্র কিছু না।

হতাশ হবেন না

সন্তানকে এইসব আসক্তি থেকে বাঁচানোর প্রথম শর্ত হলো হতাশ না হওয়া, যুগের হাওয়া বলে অবহেলা না করা। মনে রাখতে হবে এই সমস্যা শুধু আপনার ঘরেই নয়, মোটামুটি প্রতিটি ঘরেই। ইউরোপের তুলনায় আমরা স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক থেকে একেবারে পিছিয়েও নেই। ইউরোপে এই সমস্যার একটা চিত্র তুলে ধরেছে শিশুদের জন্য নিরাপদ প্রযুক্তি ও নিরাপদ মিডিয়া নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও কমনসেন্স মিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়-

স্মার্টফোন ও আসক্তি বিষয়ক ভাবনা

শিশু

অভিভাবক

সন্তানের আসক্তি আছে ভাবেন

 

৫৯%

শিশুদের হাতে বিভিন্ন কারণে স্মার্টফোন থাকা জরুরি মনে করেন

৭২%

৪৮%

প্রতিঘণ্টায় স্মার্টফোন চেক করেন

৭৯%

৬৯%

সন্তানের ক্ষতি করছে বলে ভাবেন

 

৭৭%

নিজেকে আসক্ত ভাবেন

৫০%

 

মোবাইলকে কেন্দ্র করে সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়া হয় বলে ভাবেন

৩২%

৩৬%

গাড়ি চালানোর সময়ে স্মার্টফোন চেক করেন বলে স্বীকার করেন

 

৫৬%

অভিভাবককে গাড়ি চালানোর সময়ে চেক করতে দেখেন

৫১%

 

প্রথমেই সমঝোতা

অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, ‘প্রতিরোধ প্রতিষেধকের চেয়ে উত্তম’ (Prevention is better than cure)। সুতরাং শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিন। কখন বা কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে, রাতে ও স্কুলের সময়ে ফোনটি কোথায় থাকবে, লক সিস্টেম বাবা-মা জানবে কিনা, কোন কোন অ্যাপ ব্যবহার করবে, অনিয়মের কি প্রতিফলন হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ শেষে মোবাইল দেওয়াই ভালো। আর শিশুদের বয়সবৃদ্ধি, পড়ালেখার কাজে প্রয়োজনীয়তা, বাজারে নতুন অ্যাপের আগমন- এসব বিষয় বিবেচনা করে নিয়মনীতি পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে শর্ত না দিলে পরবর্তীতে শর্তারোপ বেশি কঠিন।

নিজে না পারলে অন্যের সাহায্য

নজর দিন শিশুদের ফোন ব্যবহারের ওপর। কখন, কোথায়, কতক্ষণ তারা ফোনে সময় কাটাচ্ছে তা খেয়াল রাখুন। এতে গোপনীয়তা ভঙ্গের প্রসঙ্গ আনাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে সবকিছু। তারা সর্বদা বাবামায়ের কথা নাও শুনতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাদের গোপনীয়তা বজায় রাখবে এমন কারো সাহায্য নিন। প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে যান।

রাতে সাবধান

ব্রডব্র্যান্ড বা রাউটারের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পর বিশেষত রাতে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে ঘুমাতে যান। তারপরও খেয়াল রাখুন অন্যভাবে মোবাইলটি ব্যবহার করছে কিনা। রাতে কখন ঘুমাতে হবে, সকালে কখন উঠতে হবে, পড়া, হোমওয়ার্ক, খাওয়া, অন্যকিছু শেখা- এসবের সময় ঠিক করে নিন সমঝোতার মাধ্যমে। জোর করে চাপিয়ে দেবেন না কোনোকিছু। মনোবিজ্ঞানী লেরি রোজেন এক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে শিশুদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

নিজেই হোন রোল মডেল

শিশুদের এই আসক্তি থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সন্তানের সামনে অনুকরণীয় রোল মডেল হতে হবে। অভিভাবক নিজেই যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত থাকেন, বাচ্চারা তো সুযোগ পাবেই। আসক্ত সন্তানদের সামনে অন্য আত্মীয়স্বজন ও পারিবারিক বন্ধুদেরও মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকতে নিষেধ করুন।

বিকল্প তৈরি করুন

এই আসক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে তার পছন্দের কিছু দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, সাতার, জুডো, কারাত অনুশীলন, শরীরচর্চা, বইপড়া, বাগান করা, সেলাই বা রান্না- এমন অনেককিছু নিয়ে ভাবতে হবে যা আপনার সন্তান ভালোবাসে।

আপনিও স্মার্ট হোন

প্রযুক্তির এই যুগে আপনাকেও হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। তার একাধিক আইডি আছে কিনা খোঁজ নিন। বন্ধুসুলভ আচরণ করে সবকিছু আপনার সঙ্গে আলোচনায় উৎসাহিত করুন। ফোনের পাসওয়ার্ড ও সেফটি লক সম্পর্কে জানুন। নিত্যনতুন উপকারী অ্যাপস সম্পর্কে জানুন যা নির্দিষ্ট সময়ের পর নেট বন্ধ করে দিতে পারে। আপত্তিকর ভিডিওক্লিপ ব্লক করে রাখার পদ্ধতিও রয়েছে। এগুলো শিখে নিন।

পুরস্কৃত করুন

আপনার উপদেশ ও রুটিন মেনে চললে এবং স্মার্টফোন, ডিভাইস ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকলে সন্তানকে পুরস্কৃত করুন। তাকে সময় দিন, বিনোদনের সুযোগ দিন। বিকল্প ছাড়া এই আসক্তি থেকে সন্তানকে দূরে রাখা অসম্ভবই বটে। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা যে স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি তা আজকের পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া যদি আমাদের ব্যবহার করে তবে তা সবার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক। সেনাবাহিনী ও কর্পোরেট জগতে চাকরি করেছেন দীর্ঘদিন। বিদেশে স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এক দশক।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



মন্তব্য করুন


লিভিং ইনসাইড

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে মোবাইল অ্যাপস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১২ মে, ২০২৪


Thumbnail

মানুষের মন যেমন আনন্দিত হয়, তেমনি মন খারাপও  হয়। কিন্তু মন খারাপ বা বিষণ্নতাভাব যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর দিতে হবে। এবার হাতের স্মার্টফোনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মন থাকবে চাঙা ও সুস্থ।

জাতিসংঘের ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদনে হয়, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১শ কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের অর্ধেক মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছে। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্য সংকটকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া যেমন জরুরি, তেমনি হাতের স্মার্টফোনের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নও নেয়া সম্ভব।

গুগল প্লে কিংবা অ্যাপ স্টোরে মানসিক স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক কিছু অ্যাপ রয়েছে। যেমন: সিজোফ্রেনিয়া, উদ্বেগ, বিষণ্নতা প্রভৃতি। এসব মেন্টাল হেলথ অ্যাপের মাধ্যমে মানসিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও তা দূর করার বিভিন্ন পদ্ধতি অনুশীলন করা যায়।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবচাইতে জনপ্রিয় অ্যাপ হলো ‘ডেলিও’ নামের অ্যাপটি। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর কাছ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক তথ্য গ্রহণ করে থাকে। সেখান থেকে কারো প্রতিদিনের মন-মানসিকতার অবস্থা, ‘মুড সুইং’, মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের কারণ খুঁজে বের করাসহ বিভিন্ন রকম তথ্য-উপাত্ত তৈরি করে। এসব বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে, পরবর্তীতে এই অ্যাপগুলোর পরামর্শে নির্দিষ্ট জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুসরণ করলে মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়।

অন্যদিকে, হেডস্পেস অ্যাপ মূলত বেশি ব্যবহার করা হয় তাৎক্ষণিক মানসিক সংকট দূর করার জন্য। যদি কেউ তার চিন্তা-ভাবনা কিংবা আচরণের অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, তাহলে এই অ্যাপটি তার অসাধারণ সঙ্গী হিসেবে সহায়তা করবে। অনেক বেশি বিষাদ, দুশ্চিন্তা কিংবা সম্পর্কের টানা-পোড়েনের মধ্যে থাকলেও অনেকে এই অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে পেশাদার মনোবিদের বিকল্প হিসেবে এই অ্যাপগুলোকে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক সমস্যায় এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কারও অবস্থা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে অ্যাপের ওপর নির্ভর না করে, অবশ্যই নিবন্ধিত মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।


মানসিক   স্বাস্থ্য   অ্যাপস  


মন্তব্য করুন


লিভিং ইনসাইড

অতিরিক্ত চিন্তা বন্ধের কৌশল

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১০ মে, ২০২৪


Thumbnail

মানুষের মন ভালো থাকলে যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা আসে, ঠিক তেমনই মন খারাপের প্রভাব পড়ে নিত্যকাজের ওপর। মন খারাপ থেকে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ যা পৌঁছাতে পারে ডিপ্রেশনেও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা আমাদের মানসিক চাপ তৈরি করে। অল্পকিছু চিন্তা দিয়ে তা শুরু হয়, এক পর্যায়ে চলে যায় বহুদূর। তবে এসব অতিরিক্ত চিন্তা দূর করে মনকে শান্ত করার কিছু প্রাচীন জাপানি কৌশল রয়েছে। সেগুলো মানলে পাবেন অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তি।

শিরিন-ইয়োকু
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক জগতের শান্ত পরিবেশে নিজেকে নিয়ে যান। ‘শিরিন-ইয়োকু’ বা ‘ফরেস্ট বাথিং’ হল আমাদের ডিজিটাল জটিল অংক থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সতেজ শ্বাস গ্রহণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজের মধ্যে সময় কাটালে স্ট্রেস হরমোন কমে যায়। ফলে মন শান্ত হয় এবং শান্ত চিন্তার পরিবেশ তৈরি করে। তাই অতিরিক্ত চিন্তা আসলে পার্কে হাঁটাহাঁটি করুন বা তাজা বাতাসে শ্বাস নিন। দেখবেন ঝরঝরে পাতাগুলো আপনার মনে প্রশান্তি এনে দেবে।

শোগানাই
‘শোগানাই’ ধারণাটি বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘এটি সাহায্য করবে না’। যার সহজ অর্থ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যা রয়েছে, তার একটি সচেতন গ্রহণযোগ্যতা। যখন আমরা মেনে নিতে পারি, অতিরিক্ত চিন্তা অতীতের ঘটনাগুলোকে পরিবর্তন করবে না বা ভবিষ্যতের ফলাফলগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করবে না, তখন মানসিক দৃঢ়তা শিথিল হয়ে যায়। ‘যদি এমন হতো’ বাদ দিয়ে আমরা যখন ভাববো যা হয়ে গেছে তা আর ফিরবে না, তখন অতিরিক্ত চিন্তাও আর আসবে না।

গামন
‘গামন’ হল, ‘সহনশীলতা’ বা ‘অধ্যবসায়’। এটি অতিরিক্ত চিন্তাভাবনাকে দূর করে দেয়। সহনশীলতা মানুষকে পরিস্থিতির আলোকে মানিয়ে নিয়ে সহায়তা করে। তাই নিজের মধ্যে সহনশীলতা কম থাকলে তা বাড়িয়ে ফেলুন খুব দ্রুত। তখন অল্পতেই অতিরিক্ত চিন্তা থেকে পাবেন মুক্তি। আর চিন্তামুক্ত হয়ে কাজে মন দিলে সফলতা আসবে অতি দ্রুত।


অতিরিক্ত চিন্তা   কৌশল  


মন্তব্য করুন


লিভিং ইনসাইড

অতিরিক্ত ঘুমে স্বাস্থ্যের উপরে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মে, ২০২৪


Thumbnail

সাধারণত ঘুমের ক্ষেত্রে অনেকেরই আলাদা চাহিদা থাকে, তবে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানো মাঝে মাঝে শরীরের ভেতরের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। নিয়মিত চেয়ে অনেক বেশি ঘুমানোর সময় দেখে অতিরিক্ত ঘুমানোকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আপনি কীভাবে বুঝবেন যে আপনি যথেষ্ট বেশি ঘুমাচ্ছেন?

২০১৪ সমীক্ষা অনুসারে, ঘুম অসংখ্য শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসম্পন্ন ঘুমকে সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। অতিরিক্ত ঘুমকে সাধারণত প্রতি রাতে নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমানো হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবে ব্যক্তিভেদে ঘুমের চাহিদা পরিবর্তিত হতে পারে, তাই আপনার সাধারণ ঘুমের ধরণ এবং ঘুম থেকে ওঠার পরে আপনি কেমন অনুভব করেন তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের ধরন ব্যক্তিভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং বয়স, জেনেটিক্স, জীবনধারা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মতো কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঘুমের প্রস্তাবিত পরিমাণ সাধারণত প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কম বা বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, প্রতি রাতে প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ বিভিন্ন কারণের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়, যেমন দিনের অভ্যাস, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং ঘুমের ধরন। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেকেরই ছয় ঘণ্টা ঘুমালেই পর্যাপ্ত হতে পারে তবে অন্যরা, যেমন ক্রীড়াবিদদের অতিরিক্ত সময় ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে। মাঝে মাঝে, কঠোর কার্যকলাপ বা ভ্রমণের মতো পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে।

অত্যধিক ঘুম বা হাইপারসোমনিয়া হলো মানুষের জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুমানো। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে কিছু লক্ষণ শরীরে ফুটে ওঠে। তার মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং সকালে ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা। হাইপারসোমনিয়া, নারকোলেপসি বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো অবস্থার কারণে ঘুমের সময় বর্ধিত হতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমের ফলে মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আবার মাঝে মাঝে দীর্ঘ সময় ঘুমানো উদ্বেগের কারণ নাও হতে পারে, তবে ক্রমাগত অতিরিক্ত ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যার মধ্যে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তি ও ইমিউন ফাংশনের ঝুঁকি রয়েছে।

এমনকি ঘুমের সময়কে প্রভাবিত করতে পারে বয়স, জীবনযাত্রার অভ্যাস, ভেতরগত স্বাস্থ্যের অবস্থা, ওষুধ, স্ট্রেস লেভেল এবং শব্দ ও আলোর এক্সপোজারের মতো পরিবেশগত কারণে। ঘুমের গুণমান উন্নত করতে নিয়মিত ঘুম থেকে ওঠার সময়সূচী সেট করুন, ঘুমানোর সময় আরামদায়ক রুটিন তৈরি করুন এবং ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন। বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এড়ানোর চেষ্টা করুন।


অতিরিক্ত ঘুম   স্বাস্থ   স্লিপ ফাউন্ডেশন  


মন্তব্য করুন


লিভিং ইনসাইড

বৃষ্টির দিনে ঘরের যত্ন

প্রকাশ: ০৮:০৫ এএম, ০৭ মে, ২০২৪


Thumbnail

রিমঝিম বৃষ্টি কমবেশি সবার ভালো লাগলেও কাজ বাড়িয়ে দেয় গৃহিণীর। কেননা বৃষ্টির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ঘরের পরিবেশ হয়ে ওঠে স্যাঁতসেঁতে। তাই বৃষ্টির দিনে ঘরের জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি যতে্নর। কয়েকদিন একটানা তাপদাহের পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি। তবে বৃষ্টিতে আনন্দের পাশাপাশি ভোগান্তিও কম নয়। অতি আর্দ্রতায় ঘরের ইন্টেরিয়র-এক্সটেরিয়রের ক্ষতি, মশা, ঘরে মোল্ড পড়া, পোকামাকড়সহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। তাই এ সময়ে ঘরের জন্য দরকার বাড়টি যত্ন। বর্ষায় অন্দরের পরিবেশ ঠিক রাখার টিপস চলুন জেনে নেয়া যাক……………….

 

১. বর্ষা শুরুর আগে অথবা একেবারে দরজা, জানালা বা গ্রিল তৈরির শুরুতেই টিনের দরজা বা জানালায় কোটিং রং ব্যবহার করা উচিত।

২. কোনো কারণে দেয়ালে ফাটল ধরলে দেয়াল ড্যাম হয়ে যেতে পারে। তাই এগুলো পরীক্ষা করে ফাটল ঠিক করতে হবে। ভালো হয় দেয়ালে ওয়েদার প্রুফ পেইন্ট ব্যবহার করলে।

৩. বর্ষায় অনেক সময় কাঠের আলমারিতে ফাঙ্গাস পড়ে। আবার দেখা যায় আলমারি পেছনের বোর্ড ফুলে গিয়ে কাঠ বেঁকে যায়। তাই বৃষ্টির দিনে আসবাবপত্র দেয়াল থেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া সব ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা ভালো।

৪. বারান্দায় রাখা ফুলের টবগুলো সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। অনেক সময় বারান্দায় বৃষ্টির ছাটে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। তাই ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে। টবে পানি জমে মশা এবং পোকার আক্রমণ হতে পারে। আবার প্রচণ্ড বাতাসে বারান্দায় ঝুলে থাকা বা ছাদের রেলিংয়ে রাখা টবগুলো ভেঙে কিংবা ওপর থেকে পড়ে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই টবগুলোকে এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে আলো-বাতাস নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

৫.বর্ষায় কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো বরং এগুলো প্লাস্টিকে মুড়িয়ে তুলে রাখুন শুষ্ক কোনো জায়গায়।

৬. প্রতিদিন মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে লেদারের সোফা। একইভাবে মাঝে মাঝে পরিষ্কার করতে হবে লেদারের অন্যসব আসবাবও।


বৃষ্টি   ঘর   যত্ন  


মন্তব্য করুন


লিভিং ইনসাইড

বিবাহবিচ্ছেদে উৎসব করে যে দেশের নারীরা

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৬ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিচ্ছেদ মানেই অসহনীয় এক পৃথিবী, বিচ্ছেদ মানেই ‘জীবনের শেষ’ এ রকম মনে করে না মৌরিতানিয়ার নারীরা। বিচ্ছেদের পর ওই নারীর সৌজন্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তার পরিবার। স্বামীর ‘যন্ত্রণা’ পেরিয়ে মেয়েরা নিজের ঘরে আরেকবার ফিরে আসার সুযোগ পাওয়ায় দেশটিতে বিচ্ছেদ উদ্যাপন করা হয়।

পরিবারের সব সদস্যরাই বিষয়টি স্বাভাবিক চোখেই দেখেন। তারা মনে করেন, ভালোর জন্যই মেয়ে আবার পরিবারে ফিরে এসেছে। এই ফিরে আসাকে তারা ‘কলঙ্কমুক্ত’ জীবনের সুযোগ হিসেবেও দেখেন। তাই একটি ব্যর্থ সম্পর্কের ইতি ঘটায় আনন্দে। সব আয়োজন শেষ হলে বিচ্ছেদী নারী অবিবাহিতদের কাতারে চলে যান।

আরও পড়ুন: নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

মরুভূমির তরুণী মেহেদি শিল্পী একাগ্রচিত্তে আলপনা আঁকছেন তার আজকের খদ্দের ইসেলেখে জেইলানির হাতে। তিনি খুবই সতর্ক, কোনোভাবেই যেন ভেজা মেহেদিতে দাগ না পড়ে! ঠিক যেমনটি ছিলেন বিয়ের আগের দিন। এবার কিন্তু তার বিয়ে হচ্ছে না। হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ!

বিবাহ বিচ্ছেদ উপলক্ষে পরদিন হবে উৎসব। জেইলানির মা এই আনন্দে নিমন্ত্রণ করেছেন শহরবাসীকে। উল্লসিত কণ্ঠে বলছেন, তার মেয়ে এবং মেয়ের প্রাক্তন দুজনেই ভালোভাবে বেঁচে আছে।

মায়ের কথা শুনে হাসলেন জেইলানি। তিনি তখন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম স্ন্যাপচ্যাটে মেহেদির ছবি পোস্ট করতে ব্যস্ত। মেহেদির ছবি পোস্ট করা বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণার আধুনিক সংস্করণ হয়ে উঠেছে। যদিও মৌরিতানিয়ায় এটি বহু পুরোনো সংস্কৃতি।

বিচ্ছেদের উৎসবে আগে ছিল নাচ, গান আর ভোজ। এখন সেলফি প্রজন্মে এসে যুক্ত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। আলপনা আঁকা কেক। মেয়েরা এখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্ব ভরে আনন্দের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুন: বিচ্ছেদের কত দিন পরে নতুন সম্পর্কে জড়াবেন!

অনেক দেশের সংস্কৃতিতে বিবাহবিচ্ছেদকে লজ্জাজনক হিসেবে দেখা হয়। তবে পশ্চিম আফ্রিকার সুন্দর দেশ মৌরিতানিয়ায় এটি কেবল স্বাভাবিকই নয়, নারীদের কাছে আনন্দের উপলক্ষ! কারণ, শিগগিরই তার আবার বিয়ে হবে। বহু শতাব্দী ধরেই সেখানে নারীরা আরেক নারীর বিবাহ বিচ্ছেদে উৎসব করে।

মৌরিতানিয়ার ২০১৮ সালের এক সরকারি রিপোর্টে দেখা যায়, এক তৃতীয়াংশ বিয়ে ডিভোর্সের পরিণতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী আবার বিয়ে করেছেন। আর ২৫ শতাংশ বিয়ে করেনি।

মৌরিতানিয়া প্রায় শতভাগ মুসলিম দেশ। এখানে ঘন ঘন বিবাহবিচ্ছেদ হয়। অনেকে ৫ থেকে ১০ বার বিয়ে করে। কেউ কেউ ২০ বারেরও বেশি!

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দেশটিতে বিবাহবিচ্ছেদের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। তবে মৌরিতানিয়ায় এ প্রসঙ্গে খুব বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। এর আংশিক কারণ হচ্ছে, এখানে বিবাহবিচ্ছেদ প্রায়শই মৌখিক হয়, নথিভুক্ত নয়।

দেশটিতে বিবাহবিচ্ছেদ এতটা সাধারণ কেন—সে প্রসঙ্গে দেশটির সমাজবিজ্ঞানী নেজওয়া এল কেত্তাব বলেন, মৌরিতানীয় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মৌর সম্প্রদায় তাদের বাবার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে শক্তিশালী মাতৃতান্ত্রিক প্রবণতা পেয়েছে। দেশটির যাযাবর সম্প্রদায় নারীদের মর্যাদার কথা ছড়িয়ে দিয়েছে বহুদিকে। অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় মৌরিতানিয়ার নারীরা বেশ স্বাধীন।

তিনি আরো বলেন, দেশটিতে বিয়েকে পেশা হিসেবেও নেয়া যায়।

আরও পড়ুন: যুগের পরিবর্তনে আধুনিক সম্পর্কের দৃষ্টি ভঙ্গিতেই কি বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ?

এখানে বিশেষ পরিস্থিতিতে নারীরাও বিবাহ বিচ্ছেদের পদক্ষেপ নিতে পারেন। অনেক নারী আছেন যারা কখনোই বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবেন না। এরপরও বিচ্ছেদ যদি ঘটেই যায়, তাহলে নারীদের সমাজে সমস্যায় পড়তে হয় না। কারণে এখানে এমন নারীদের কেউ নিন্দা করে না, বরং সমর্থন জানায়। সমাজই পরিস্থিতিকে সহজ করে তোলে।

আরও পড়ুন: দাম্পত্যে বয়সের ব্যবধান কতটা ঝুঁকির?

উল্লেখ্য, মৌরিতানিয়া হলো যাযাবর, উট আর আকাশ ভরা তারা ও উজ্জ্বল চাঁদের দেশ। কখনো কখনো ১০ লাখ কবির দেশও বলায় একে। হয়তো এ কারণেই এখানে বিবাহবিচ্ছেদও কাব্যিক!


বিবাহবিচ্ছেদে   উৎসব   নারী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন