নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ এএম, ০৮ জুলাই, ২০২০
দেশে প্রাণঘাতী করোনা সংকটের চার মাস পূর্ণ হল। দীর্ঘ এই চার মাসে এখনো পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জন। আর এখন পর্যন্ত মরণ ব্যাধী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেণ ২ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যুর এই তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রের সিনিয়র সিটিজেন, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, র্যাব, পুলিশ, চিকিৎসক, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ আরও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু মন খারাপের এই তালিকার পাশে রয়েছে করোনা জয়ের গল্পও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে, প্রাণঘাতী করোনা এখনো পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ১০২ জন। সুস্থতার এই তালিকা যেন খুব দীর্ঘ হয়ে উঠুক। করোনাকে জয় করে সবাই সুস্থ হয়ে ফিরে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক
গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক করোনা ভাইরাস জয় করে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু।
বীর বাহাদুর উশৈসিং
টানা ১৯ দিনের লড়াই শেষে করোনা জয় করে বাসায় ফিরলেন মন্ত্রী উশৈসিং। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে হেয়ার রোডের বাসায় ফিরে যান তিনি।
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন
করোনাকে জয় করলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ১৮ দিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল (৭ জুলাই) তার পুনরায় নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের ফল নেগেটিভ এসেছে। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সুস্থ ও ভালো আছেন।
সাবেক হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার
দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত সাংসদ শহিদুজ্জামান সরকার করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শহিদুজ্জামান সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রানা দাশগুপ্ত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত করোনাভাইরাসের চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। তার স্ত্রীও সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই প্রবীণ আইনজীবী। গতকাল মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) সস্ত্রীক সুস্থ হওয়ার খবর জানিয়েছেন তিনি।
আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, ১৩ জুন জ্বর এসেছিল। গলা ব্যথার পর ১৫ জুন টেস্ট করা হয়। ১৭ জুন রাতে জানানো হলো স্ত্রীসহ করোনা পজিটিভ। পরদিন মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে বিভিন্ন টেস্ট করানো হলো। এর মধ্যে খবর এলো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আমাদের ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। তখন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অক্সিজেনসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৪ দিন পর জানানো হলো করোনা নেগেটিভ। তারপরেও তিনদিন অবজারভেশনে রাখা হলো। সর্বশেষ ২ জুলাই অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রামে নিজ বাসায় ফিরেছেন বলে জানান রানা দাশগুপ্ত।
এমপি এবাদুল করিম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) থেকে নির্বাচিত এমপি মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবু্লের করোনার নমুনা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বারও নেগেটিভ এসেছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে সুস্থ আছেন। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। একইসাথে দেশের বৃহৎ ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস এর কর্ণধার। গত ১৯ মে তার নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়।
মুনতাসীর মামুন
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে জয় করে বাসায় ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে টানা ১৬ দিন পর বাসায় ফিরেন তিনি।
স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর
সরকারের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তার করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। গত ২২ জুন করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর গত ১০ জুন থেকে সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল
নিজ বাসায় চিকিৎসা নিয়ে করোনা জয় করলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। গত ২২ মে তার শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা শুরু করেন। বর্তমানে পরীক্ষা শেষে তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। জানা যায়, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তিনি মনোবল হারাননি। মনের শক্তি দিয়ে তিনি এখন করোনা মুক্ত।
সুজেয় শ্যাম
টানা ১১ দিন চিকিৎসার পর করোনা জয় করে বাসায় ফিরেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম। দুবার করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ হওয়ার পর বাসায় ফেরেন তিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম
করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি এখন তার দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি সুস্থ হয়ে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান ও সিলগালা। ২৪ জুন তিনি করোনামুক্ত হন। সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। গত ৬ জুন রাতে ফেসবুকে করোনা আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি লেখেন- ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ। আলহামদুলিল্লাহ, শারীরিকভাবে ভালো আছি। সবার নিকট দোয়া ও ক্ষমার দরখাস্ত রইল।তার স্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে ভর্তি হলেও বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন সারোয়ার আলম।
গানবাংলা’র নির্বাহী তাপস ও মুন্নী
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন গানবাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত সংগীত শিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস। এছাড়া টেলিভিশনটির চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুসংবাদ হলো তারা দুজনই এখন করোনা মুক্ত হয়েছেন।
কোচ আশিকুর রহমান
করোনাকে জয় করলেন সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ আশিকুর রহমান। গত ১২ মে আশিকের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ১৮ মে ও ২৬ মে আবার করোনা পরীক্ষা করা হয়। পর পর দুইবার করোনা পরীক্ষায় আশিকের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এরপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
এছাড়া তথ্য সচিব কামরুন নাহার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাও সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানান তার ছোট বোন। করোনায় আক্রান্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী এবং ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন। তার কোন অসুস্থতা নেই।
তাছাড়া, এখনো পর্যন্ত ৭৮ হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি করোনাকে জয় করেছেন। খুব দ্রুত বাড়তে থাকুক করোনা জয়ের এই তালিকা। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক আক্রান্তদের সবাই।
মন্তব্য করুন
সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার একমাস পর দেশে পৌঁছালো বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। দীর্ঘ যাত্রা শেষে সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে জাহাজটি।
মঙ্গলবার(১৪ মে) সব প্রক্রিয়া শেষ করে জাহাজটির ২৩ নাবিকের ঘরে ফেরার কথা রয়েছে।
কুতুবদিয়ায় চুনাপাথরের কিছু চালান খালাস করে জাহাজটি ১৫ মে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে। সেখানে বাকি মালামাল খালাস করার পর বন্দর জেটিতে আসবে এমভি আব্দুল্লাহ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, 'এমভি আবদুল্লাহ বর্তমানে কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে। জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত নাবিকদের লাইটার জাহাজে মঙ্গলবার সরাসরি সদরঘাট কেএসআরএম জেটিতে নিয়ে আসা হবে। সেখানেই তাদের বরণ করা হবে। নাবিকদের জেটিতে বরণ করার জন্য কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। নাবিকদের স্বজনদের কেউ কেউ এসময় জেটিতে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা গেছে। তারা নাবিকদের বরণ করে নেবেন।
গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এই জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসাবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল।
এর ৩২ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা। এর পরই সেটি সোমালিয়া উপকূল থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। টানা এক সপ্তাহের সমুদ্রযাত্রা শেষে ২১ এপ্রিল বিকেলে জাহাজটি আল হামরিয়াহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।
মন্তব্য করুন
বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তিনি।
খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। আর্টস স্কুল ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তাঁর মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের স্মৃতি ধারণ করে ময়মনসিংহ শহরে ব্রহ্মপুত্রের নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। ৭০ টি চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ এপ্রিল এর শুভসূচনা হয়৷ বর্তমানে এ সংগ্রহশালায় ৬২ চিত্রকর্ম ও ৬৯ টি স্মৃতিময় নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ, নদের পাড়ে উদ্যান ও পাশেই চিত্রকর্মের শৈল্পিক সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন।
ত্রিশের দশকে পাশ্চাত্য ধারায় আঁকা নিসর্গের জল রং চিত্র, চল্লিশের দশকে প্রকাশবাদী বাস্তবতার ধারায় আঁকা দুর্ভিক্ষের স্কেচ, পঞ্চাশের দশকে আধুনিক বাঙালি ঢং এ কাগজে টেম্পারা মাধ্যমে আঁকা বিভিন্ন চিত্র এবং বাস্তবধর্মী আঙ্গিকে আঁকা জল রং চিত্র, ষাটের দশকে আঁকা নবান্ন ও সত্তর দশকে আঁকা মনপুরা-৭০ জয়নুল আবেদীনের মেধা ও মননের অসাধারণ সৃষ্টি।
এ সংগ্রহশালায় আপনি দেখতে পাবেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ। সেই শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ ও শম্ভুগঞ্জ ঘাটের ছবি এঁকেছেন জয়নুল আবেদীন। এছাড়া বাস্তুহারা, মহিষের বাচ্চা, কংকালসার, কাজী নজরুল ইসলাম, সাপুড়ে মেয়ে, জীবন সংগ্রাম, চিন্তা, মনপুরা-৭০, স্নান শেষে, কলসী কাঁখে, প্রতীক্ষা (ঘাটে), মা ও শিশু-১, ২, ৩, রমনী-১,২, তিন রমণী, বাস্তুহারা, দুটি মুখ, দুটি গরু, পত্রহীন বৃক্ষ, মেক্সিকান রমণী, মেষ পালিকা, গাঁদার পিঠে, অপেরা হাউজ, মেক্সিকো, প্রতিকৃতি (মোস্তফা), মেক্সিকান, জাপানি মেয়ের মুখ, প্রতিকৃতি (কায়রো), আলফাত্তা, স্কেচ (জর্ডান-১,২), মুখ, দুর্ভিক্ষ-৫, ৪, ৩, ২, ১ প্রভৃতি শিল্পকর্ম আপনার মননে নতুন ভাবনার পুলক জাগাবে। চিত্রকর্মের বাইরে রয়েছে শিল্পাচার্যের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের প্রদর্শনী।
বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বনহামসে তার স্কেচ বিক্রয় হয়েছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ, ১৯৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের তরফ থেকে 'শিল্পার্চায' উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জাতীয় অধ্যাপক সম্মান লাভ করেন।
ঢাকার পাশে ময়মনসিংহ শহরে গেলে আপনি নিঃসন্দেহে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গড়ে উঠা শিল্পাচার্যের সংগ্রহশালায় বেড়িয়ে আসতে পারেন। তুলির আঁচড়ে জীবনের রং বদলের ভাবনা জাগবে হৃদয়ে।
ব্রহ্মপুত্র নয়নাভিরাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন
মন্তব্য করুন
বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা তিনি। বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ সমর্থক। রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে ছিলেন স্পষ্টভাষী। বাস্তববাদী লেখনিতে তার নামটিই যেন সবার আগে নিতে হয়। আজ সেই বাস্তববাদী লেখক শওকত ওসমানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
শওকত ওসমান নামেই সবার কাছে পরিচিত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। একাধারে তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, রম্যরচনা, স্মৃতিকথা, অনুবাদ এবং শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে ঔপন্যাসিক হিসেবেই তার পরিচয়টা বেশি পরিচিত।
শওকত ওসমান ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করলেও পরবর্তীকালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও অর্থনীতি বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন শওকত ওসমান। আইএ পাস করার পর তিনি কিছুদিন কলকাতা করপোরেশন এবং বাংলা সরকারের তথ্য বিভাগে চাকরি করেন। এমএ পাস করার পর ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে লেকচারার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্সে যোগ দেন এবং ১৯৫৮ সাল থেকে ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে স্বেচ্ছা অবসরে যান।
চাকরি জীবনের প্রথমদিকে কিছুকাল তিনি 'কৃষক' পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর তিনি চলে আসেন পূর্ববঙ্গে। তার রচনাসমূহের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য উপন্যাস হলো- 'জননী', 'ক্রীতদাসের হাসি', 'জাহান্নাম হইতে বিদায়', 'দুই সৈনিক', 'নেকড়ে অরণ্য'। গল্পগ্রন্থ 'জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প', 'ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী', 'মনিব ও তাহার কুকর'; প্রবন্ধগ্রন্থ 'সংস্কৃতির চড়াই-উতরাই', 'আমলার মামলা', 'পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা'। শিশুতোষ গ্রন্থ- 'ক্ষুদে সোশালিস্ট', 'ওটেন সাহেবের বাংলো', 'পঞ্চসঙ্গী'; রম্যরচনা 'নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত' প্রভৃতি।
তার স্মৃতিকথামূলক রচনাবলি হলো- 'কালরাত্রি খন্ডচিত্র', 'মুজিবনগর', 'সোদরের খোঁজে স্বদেশের সন্ধানে', 'মৌলবাদের আগুন নিয়ে খেলা', 'স্বজন সংগ্রামে' ইত্যাদি। অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য- 'বাগদাদের কবি', 'টাইম মেশিন', 'স্পেনের ছোটগল্প', 'পাঁচটি কাহিনি' (লিও টলস্টয়), 'পাঁচটি নাটক' (মলিয়ার), ইত্যাদি। শওকত ওসমানের রচনাসমূহ, মননশীলতা ও প্রগতি চেতনায় এক অনন্য সাহিত্য সম্ভার।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শওকত ওসমানের লেখায় যেমন উঠে এসেছে তৎকালীন সমাজ বাস্তবতা, অনাচার-অবিচার, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, প্রতিবাদের ভাষ্য, ঠিক তেমনি এসেছে জীবনবোধ, সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অনন্ত অনুপ্রেরণা। জীবনের ছোট ছোট সংঘর্ষ থেকে যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে, তিনি তাঁর লেখায় তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন ‘ঝাড়ুদার’ বলে। সমাজের ঝাড়ুদার। সমাজের সব জঞ্জাল, অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর আধুনিক আর বাস্তবধর্মী লেখনী সমাজের কথা বলত। তিনি নির্দ্বিধায় বলতেন সত্য আর সুন্দরের কথা।
বাংলার চিরায়ত সমাজের চালচিত্র, সমকালীন রাজনৈতিক পটভূমি, মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি তার রচনার অনুষঙ্গ হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে শওকত ওসমান ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আন্দোলনের সমর্থক। দেশের যে কোনো সংকটকালীন সময়ে তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী।
শওকত ওসমান বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আকাদেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ শওকত ওসমানকে বলতেন, অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ। আমাদের কথাসাহিত্যের ইতিহাসের একটি পরিচিত নাম শওকত ওসমান। দেশভাগের পরেই নয় পূর্বে থেকেই বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের কাল শুরু এবং শওকত ওসমান ছিলেন শুরু থেকেই।
সেই বিবেচনায় বলা যায়, ইতিহাস পরম্পরায় এই সুদীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থনীতিক ও সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রের ঘটনাবর্তের এক নির্মম সাক্ষী ও অংশীদার ছিলেন তিনি।
মন্তব্য করুন
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এদিন সকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, সফরে ডোনাল্ড লু ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন। তবে মজার ব্যাপার হল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর ডোনাল্ড লুর সফর ছিল বেশ আলোচনায়। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করা বিএনপি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। ভোট হয়ে যাওয়ার চার মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার ঢাকায় আসছেন। তবে লু’র সফরকে এবার পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি। দলটির মহাসচিব বলছেন, কে আসলো আর কে গেলো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ।
গত বছর লু’র ঢাকা সফর ছিল আলোচনার শীর্ষে। তার এবং ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নানা পদক্ষেপ ও দৌড়াদৌড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ডোনাল্ড লু যখন আবার ঢাকায় পা রাখতে যাচ্ছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর এই সফর নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে বিএনপির মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সরকারের সূত্রগুলো বলছে, নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর লু’র প্রথম সফর হবে এটা। তার আসার সেটাই উদ্দেশ্য। নির্বাচনের আগে যে চিত্র ছিল এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। স্থিতিশীল একটি সরকার। সরকার রেগুলার কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।সব দেশ এখন বাংলাদেশের সঙ্গে এনগেজড হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা সফরের প্রথম দিন রাতে ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১৫ মে) তিনি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। ৩ দিনের এ সফরে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে তার।
মন্তব্য করুন
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে। শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?
রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..
সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।
সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।
মেয়েরা কেন এগিয়ে
মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..
সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।
প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।
সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।
পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।
এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।
সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।
যা করা উচিৎ
সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।
প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:
এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।
মন্তব্য করুন
বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তিনি। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। আর্টস স্কুল ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না।
বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা তিনি। বাঙালি সংস্কৃতির একনিষ্ঠ সমর্থক। রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে ছিলেন স্পষ্টভাষী। বাস্তববাদী লেখনিতে তার নামটিই যেন সবার আগে নিতে হয়। আজ সেই বাস্তববাদী লেখক শওকত ওসমানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এদিন সকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, সফরে ডোনাল্ড লু ব্যবসা-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ দুই দেশের অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন।
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পারি দেন বিদেশে। শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে পাসের হার বেড়েছে। গেল পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?