নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৩ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
খিচুড়ি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাতম চলছে। যার ছোঁয়া দেশের মূল ধারার মিডিয়া পেরিয়ে দেশের বাইরেও পাড়ি দিয়েছে। খিচুড়ি নিয়ে প্রশাসনের ইমেজের চরম একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা। শিশুদের স্কুলে কীভাবে খিচুড়ি বা মিড ডে মিল দেওয়া হবে তাঁর মহড়া চলছে অনেক দিন ধরেই। খিচুড়ি ভারতীয় শব্দ খিচড়ি থেকে এসেছে এবং খিচড়ি এসেছে সংস্কৃত শব্দ খিচ্চা থেকে।
খিচুড়ির ইতিহাস পরে বলছি তাঁর আগে জেনে নিই খিচুড়ি কেন আলোচনায়। সরকারী সূত্রে জানা যায় যে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের ইমারজেন্সি প্রোগ্রামের আওতায় ২০০১ সালে যশোর জেলায় অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করে। পরবর্তীতে যশোর জেলার অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হওয়ায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচিকে তাদের নিয়মিত কান্ট্রি প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র তত্ত্বাবধানে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরামর্শক দ্বারা সম্পাদিত সমীক্ষা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যেসকল উপজেলাতে ফিডিং কর্মসূচি চালু ছিল, সে সকল উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থী ভর্তির হার, উপস্থিতির হার, প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপনীর হার, নন ফিডিং উপজেলার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশী ছিল। এ ছাড়া ফিডিং উপজেলায় ড্রপ আউটের হারও নন ফিডিং উপজেলার তুলনায় কম ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষাকে সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার বুনিয়াদ হিসেবে বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত সমীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রথমবারের মত অপেক্ষাকৃত দারিদ্র পীড়িত উপজেলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্কুল ফিডিং প্রকল্প গ্রহণ করে এবং জুলাই ২০১০ সাল থেকে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এ প্রকল্পে একদিকে যেমন কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেছে, অন্যদিকে তেমনি একই প্রকল্পের অধীনে নিজস্ব অর্থায়নে ফিডিং কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করে।
এই ধরণের প্রকল্প শুরুর পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়লে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবনের লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপি’র সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মিড-ডে মিল বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। এই পাইলট প্রকল্প ফলপ্রসূ হওয়ার পর জাতীয় মিড-ডে মিল নীতিমালা-২০১৯ এর আওতায় দেশের ১৬টি উপজেলায় দুপুরের রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। তাঁর ধারাবাহিকতায় আগামী বছর থেকে সারা দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু করবে সরকার। সপ্তাহের তিন দিন রান্না করার খাবার এবং তিন দিন উন্নত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বিস্কুট দেওয়া হবে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, অবিভক্ত ভারতে খিচুড়ির জন্ম। তাই খিচুড়িকে বলা হয়ে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশের খাবার। এই উপমহাদেশে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেলেও এটি মূলত মিসরীয় খাবার `কুশারি` থেকে আগত। মিসরীয় কুশারি বহুকাল আগেই বিশ্বের অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণত ওই সময় মিসর বা আশপাশের অঞ্চলে কুশারি নামের এই খাবারটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নানা ধরনের ডাল ব্যবহার করে তৈরি কুশারি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বেশ সমাদৃত ছিল। পরবর্তী সময়ে সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটি কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয়, খিচুড়ি এংলো-ইন্ডিয়ান খাবার `কিজেরি`র একটি পরিবর্তিত রূপ।
১২০০-১৮০০ সালের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে বাংলায় খিচুড়ির আবির্ভাব। হালে ডালে গরিবের আমিষ বলা হলেও প্রথমদিকে ডাল ছিল উচ্চশ্রেণীর খাদ্য। ‘খিচুড়ির চার ইয়ার – ঘি পাঁপড় দহি আচার’ কথাটি চালু থাকলেও বাঙালি মানেই খিচুড়ি পাঁপড়। তবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রন্ধন পটীয়সীরা বলেছেন “দই দিয়ে খিচুড়ি খাইতে মন্দ লাগে না। মনসামঙ্গল কাব্যে স্বয়ং শিব যে খাবারটি খাবার আবদার পার্বতীর কাছে জানিয়েছিলেন, তা হল খিচুড়ি।
গ্রীক দূত সেলুকাস উল্লেখ করেছেন ভারতীয় উপমহাদেশে চালের সাথে ডাল মেশানো খাবার খুবই জনপ্রিয় ছিলো। মরোক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা কিশরির কথা উল্লেখ করেছেন যা চাল এবং মুগ ডাল দিয়ে প্রস্তুত করা হতো। ১৫ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে ঘুরতে আসা রাশিয়ান পর্যটক আফনাসিই নিকতিন খিচুড়ির কথা তার লেখায় বর্ণনা করেছেন। চাণক্যের লেখায় মৌর্যযুগের চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে চাল, ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রিক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিসের লেখাতেও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজসভার রান্নাঘরে খিচুড়ির কথা পাওয়া যায়। সপ্তদশ শতকে ফরাসি পরিব্রাজক তাভেরনিয়ের লিখেছেন, সে সময় ভারতের প্রায় সব বাড়িতেই খিচুড়ি খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। আকবরের মন্ত্রী ও ঐতিহাসিক আবুল ফজল রাজকীয় রান্নাঘরে বিভিন্ন ধরনের খিচু়ড়ি রান্নার কথা লিখেছেন। আইন-ই-আকবরিতে বিভিন্ন প্রকার খিচুড়ির প্রস্তুতপ্রণালী পাওয়া যায়। সেখানে আকবর এবং বীরবলের খিচুরি রান্নার একটি গল্প উল্লেখ করা হয়েছে। মুঘল রান্নাঘরে জাহাঙ্গীরের প্রিয় বিশেষ ধরনের খিচু়ড়ি তৈরি করা হতো পেস্তা, কিসমিস দিয়ে। সেই খিচুড়িকে জাহাঙ্গীর নাম দিয়েছিলেন ‘লাজিজান’। সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রিয় ‘আলমগিরি খিচড়ি’র কথাও জানা যায়। এই খিচড়িতে চাল, ডালের সঙ্গে মেশানো হত বিভিন্ন প্রকার মাছ ও ডিম।
রাজকীয় খাবার হিসেবে হায়দরাবাদের নিজামের রান্নাঘরেও খিচুড়ি জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই খিচুড়ির ভাঁজে ভাজে থাকতো সুস্বাদু মাংসের কিমা। ১৯ শতকের ভিক্টোরিয়ান যুগে দেশে ফেরত ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের হাত ধরে তা ইংল্যান্ডে পৌঁছায়। এই খিচুড়ি জনপ্রিয় ইংলিশ ব্রেকফাস্ট ‘কেদেগিরি` হয়ে ওঠে।
উনিশ শতকের মধ্যভাগে নিম্নবিত্ত মিশরীয়দের মধ্যে কুশারি নামে যে রান্নাটি জনপ্রিয় হয় তা খিচুড়িরই ভিন্নরূপ বলা যেতে পারে। এটি তৈরি হতো তুলশীমালা চাল, ডাল, চানা, ভিনিগার, টমেটো সস, পিঁয়াজ, আদা, রসুন ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে। পরে এই রান্নাটি তাদের সৈন্যশিবিরেও স্থান পায়।
কোন দেশের মানুষের আচরণ কী হবে তা নির্ভর করে তাঁর পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির উপর। যেমন জাপানের রাজা যদি কোন নির্দেশ বা অনুরোধ করে তাহ তা জাপানের প্রায় সব জনগণ তা মেনে চলেন। একই ভাবে মেনে চলে ইংল্যান্ডের জনগণ। এটা তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি। একইভাবে তাঁদের পারিবারিক বা সামাজিক সংস্কৃতি উন্নত বলেই তাঁদের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি এতো উন্নত। স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কুলের ছেলে মেয়েরা কী ধরণের আচরণ করে তাঁর উপর গত ১০ বছর স্কুলের শিক্ষক, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য, প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অফিসার-কর্মীরা জেনে গেছেন, তারা দক্ষতাও অর্জন করেছে। উনারা বিদেশে খিচুড়ি তৈরি বা তাঁর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কী শিখবেন? ১০ সন্তানের বাবা বা দাদার কী সন্তান বা নাতিদের কাছে সংসার চালানো আর সন্তানের জন্ম দান, মানুষ করা, ইত্যাদি নিয়ে কোন শিক্ষা নেওয়ার দরকার আছে? সরকারী কর্মকর্তাদের যে ব্যাখ্যা এখন দিচ্ছেন, তা গা বাঁচানো একটা জগা খিচুড়ি উত্তর বলে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চলতি মাসেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অবসরে যাচ্ছেন। আর তাদের অবসরের পর শূন্য সচিব পদে বেশ কয়েকটি শূন্যপদ হচ্ছে। আর এই শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রথমবারের মত ১৫তম ব্যাচের অভিষেক হচ্ছে।
অবশ্য ১৫তম ব্যাচের খাইরুল ইসলাম ইতোমধ্যে সচিব হয়েছেন। তবে তিনি অবসরে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে তাকে সচিব পদমর্যাদা দেওয়া হয়। এখন তিনি বিডার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খায়রুল ইসলামের সচিব পদোন্নতিটা ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় বলেই অনেকে মনে করেন। এখন নিয়মিতভাবে ১৫তম ব্যাচ থেকে সচিব পদে পদায়ন শুরু হতে পারে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
সচিব পদে যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে আগামী ১৮মে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ অবসরে যাচ্ছেন। তপন কান্তি ঘোষের মেয়াদ গত বছর ১৮মে শেষ হয়েছিল। তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আগামী ১৬মে তিনি শেষ কর্মদিবস পালন করবেন। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া, ৩১মে অবসরে যাচ্ছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে যে, না তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জনাব মুস্তাফিজুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২৫মে এবং তার চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে না বলেই একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের এই পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম হবে কি না তা বোঝা যাবে প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই।
এছাড়াও, বহুল আলোচিত আর্থিক খাতের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ অবসরে যাচ্ছেন চলতি মাসের ২০মে এবং তারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আর হচ্ছে না বলেই জানা গেছে। আর্থিক খাতের নতুন সচিব কে হবেন তা নিয়ে বিভিন্নমুখী আলোচনা চলছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, চলতি মাসে এই চারজন গুরুত্বপূর্ণ সচিবের অবসর ছাড়াও সামনের দিনগুলোতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচিবের পদ খালি হচ্ছে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকারের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ১২জুন। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে প্রশাসনের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল এর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ১৫জুন। হাসানুজ্জামান কল্লোল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন যে, তিনি শেষ পর্যন্ত চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাবেন না।
তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ৫ জুলাই। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন কিনা তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা আছে। তবে শেষপর্যন্ত যদি তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না হয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নাম আছে। তার মধ্যে রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল এবং শিল্পমন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কে হবেন এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে নিবেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এখন বাংলাদেশ সফর করছেন। সফরের প্রথমেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। এরপর তার বিভিন্ন রকমের কর্মসূচী আছে। বাংলাদেশ সফরে তিনি যাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেই তালিকায় সালমান এফ রহমান ছাড়াও রয়েছেন জলবায়ু ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এই দুইজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।
অনেকেই মনে করছেন যে, গত বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকেন সেজন্য যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে এই দুইজন ব্যক্তি শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে সালমান এফ রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি। একই সাথে বাংলাদেশের র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের উপর একধরনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা শুরু থেকেই লক্ষ্য করা গিয়েছিল বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একধরনের আগ্রহ ছিল প্রকাশ্য। বাংলাদেশে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় এবং সকল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রীতিমত চাপ প্রয়োগ করছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এই ভিসা নীতির আওতায় যারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হবেন তাদেরকে আনা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আস্তে আস্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পাল্টাতে থাকে এবং ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নমনীয় একটি অবস্থান গ্রহণ করে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আফরিন হকের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সাথেও তিনি বৈঠক করেন।
সালমান এফ রহমান ছাড়াও সাবের হোসেন চৌধুরীও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নির্বাচন নিয়ে মার্কিন অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর সাবের হোসেন চৌধুরীর পরীবাগের বাস ভবনে গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। আর এই সমস্ত ব্যক্তিরা আলাদাভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। আর এই কারণেই কি ডোনাল্ড লু তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন?
ডোনাল্ড লু সালমান এফ রহমান সাবের হোসেন চৌধুরী
মন্তব্য করুন
চীন এতদিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে তাদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রেখেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও নেটওয়ার্ক বিস্তার করার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে।
গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীকদের ৯ সদস্যের একটি দল চীনে গেছেন। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারসহ শীর্ষ নেতারা রয়েছে। বামদলগুলো বিভিন্ন সময়ে চীনের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং তাদের এই সফরের ব্যাপারে রাজনৈতিক কোন বাক পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই। কিন্তু এই সময় ১৪ দলের শরীকদেরকে চীনে নিয়ে যাওয়া রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব বহন করে বলেই অনেকে মনে করছেন।
আগামী ২৫ মে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের ৫০ সদস্যের একটি দল চীন সফরে যাবে। জানা গেছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে তারা যাচ্ছেন। এ দলের নেতৃত্ব দিবেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। ২৫ জুন আওয়ামী লীগের আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের দল চীন সফর করবে এবং এ দলটির নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহকে। ১০ সদস্যের এ দলে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা থাকবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এই চীন সফর রাজনীতির অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, চীন এখন বিএনপির সঙ্গেও এক ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির বিভিন্ন চীনপন্থি নেতাদের সঙ্গে তারা নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে। এতদিন ধরে চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বলয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল এবং এখন অর্থনৈতিক বলয়ে মোটামুটি প্রভাব বিস্তার শেষ করেছে। এখন চীন রাজনৈতিক বলয়েও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
চীন শুধু বাংলাদেশে নয়, এই কৌশল মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালেও গ্রহণ করেছিল। যেখানে তারা প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে দেশটির উপর একধরনের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে নির্ভরশীল করে তোলে। অর্থনৈতিক নির্ভরতার পর তারা আস্তে আস্তে রাজনীতিমুখী হয় এবং রাজনৈতিক বিষয়ে তারা একধরনের প্রভাব বলয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে মালদ্বীপে চীন অর্থনৈতিক আধিপত্যের মাধ্যমে এখন রাজনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত করেছে। ঠিক একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে কিনা এনিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
চীন বাংলাদেশের অন্যতম ঋণদাতা এবং বাংলাদেশ এখন ক্রমশ চীনের ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের উপরও চীনের প্রভাব বাড়ছে। যদিও বর্তমান সরকার এখন চীনের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ গ্রহণ এবং চীনা প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারের ভিতর একটি অংশের চীনের সঙ্গে ব্যবসা বানিজ্য করার আগ্রহ বেড়েছে। এটির অন্যতম কারণ হলো চীনের কাছ থেকে সহজেই কমিশন পাওয়া যায়, চীনের প্রকল্পগুলোতে উপরি আয়ের সুযোগ বেশি- ইত্যাদি নানা বাস্তবতায় চীন নির্ভরতা আমাদের অর্থনীতিতে বেড়েছে এবং তারই সূত্র ধরে এখন চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশ রাজনীতি
মন্তব্য করুন
রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শ্রমিক নেতা ও জলবায়ুকর্মী। মূলত নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এখন বাংলাদেশ সফর করছেন। সফরের প্রথমেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। এরপর তার বিভিন্ন রকমের কর্মসূচী আছে। বাংলাদেশ সফরে তিনি যাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেই তালিকায় সালমান এফ রহমান ছাড়াও রয়েছেন জলবায়ু ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এই দুইজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।
চীন এতদিন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে তাদের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রেখেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও নেটওয়ার্ক বিস্তার করার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে।