ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের যত ইতিহাস

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ২৬ মে, ২০২২


Thumbnail ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের যত ইতিহাস

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা ইসলামাবাদ অভিমুখে ‘আজাদি মার্চের’ দিকে নজর এখন দেশটির সকলের। ইতিহাসের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে রাজধানী অভিমুখে এমন লংমার্চ নতুন কোনো ঘটনা নয় দেশটির রাজনীতিতে। শহরটি গত কয়েক দশক ধরে বেশ কয়েকটি বড় বড় রাজনৈতিক আন্দোলন দেখেছে। 

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান বড় শক্তি হয়ে উঠার আগে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রয়াত বেনজির ভুট্টো এবং নওয়াজ শরিফ উভয়েই যখন বিরোধী ছিলেন তখন তারা দেশটির ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বড় বড় লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। 

তবে এবারের লংমার্চটি কিছুটা ভিন্নতা নিয়ে এসেছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ ইমরান খান নিজে। 

ক্রিকেট বিশ্বকাপে একবারই বিশ্বজয়ের মালা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো পাকিস্তানের। আর সেটি এসেছিলো ইমরান খানের সৌজন্যই। সেই থেকে তিনি পাকিস্তানের মানুষের কাছে এক অন্য উচ্চতায় অবস্থান করা একজন। জনপ্রিয়তার সেই রেশকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময়ের সংগ্রামের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ঠিকই বসেছিলেন, কিন্তু দেশটির অলিখিত এক অভিশাপের মতো পূর্ণ মেয়াদ পার হবার আগেই অনাস্থা ভোটে গদি ছাড়তে হয় তাকে। 



বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে এবং দেশকে বাঁচানোর কথা বলে দেশটিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই বলে আসছিলেন তিনি। যদিও বর্তমান সরকার বার বার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় গড়িমসি করছিলো, আর তাই জনগণকে সাথে নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের কথা বলে রাজধানী অভিমুখে লংমার্চের ডাক দেন ইমরান খান। 

যদিও এবার ইমরান খানের বিপক্ষে রয়েছে পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরনো ও শক্তিশালী দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) জোটবদ্ধভাবে। তাদের গড়া নতুন সরকার পিটিআইকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ইমরান ঠিকই বিশ্বকাপের মঞ্চের মতো শক্তহাতেই সামলে নিচ্ছে এই লড়াই। 

এবার দেখে নেওয়া যাক ইসলামাবাদ অভিমুখে বিখ্যাত কিছু লংমার্চ ও অবস্থান ধর্মঘটের ঘটনাপ্রবাহ... 

১৯৮০

ইসলামাবাদে প্রথম বড় বিক্ষোভ হয় ৪ ও ৫ জুলাই ১৯৮০ সালে। সেসময় দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হক কর্তৃক জাকাত ও উশর অধ্যাদেশ জারির ফলে শিয়া সম্প্রদায় এর প্রতিবাদে রাজধানী অভিমুখে মিছিল করে। 

শিয়া নেতা মুফতি জাফর হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা ফেডারেল সচিবালয় ঘেরাও করে, এরফলে কার্যত দেশটির আমলাতান্ত্রিক কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তখনই সরকার বাধ্য হয়ে বিক্ষোভকারীদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নেয়। 

১৯৮৯

পরের বিক্ষোভটিই অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালের ১৭ই আগস্ট। বেনজির ভুট্রুর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম মেয়াদে। নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সবগুলো বিরোধী দল রাজধানীর ফয়সাল মসজিদে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্দেশ্য যাত্রা করে। বিক্ষোভটি ছিলো অনেকটা আজকের দিনের মতই। যখন নতুন একটি সরকার দেশটির ক্ষমতায় মাত্রই অধিষ্ঠিত। এটি ছিলো সরকারের জন্য প্রথম বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা। 

যদিও পরবর্তীতে শাসকদল বিরোধীদের ফয়সাল মসজিদে প্রবেশে অনুমতি প্রদান করে। সেখানে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন ও রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন যে এটি করার মাধ্যমে, মিছিলকারীরা যা চেয়েছিল তা পেয়েছে।

১৯৯২ 
 
এবারের লংমার্চটি হয় বেনজির ভুট্টোর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৬ নভেম্বর। তখন বেনজির ছিলেন পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দলের নেতা। ১৯৯০ সালের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে একটি লং মার্চের ঘোষণা দেন বেনজির। এই আন্দোলন এতটাই তীব্র ছিলো যে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে প্রথম সরকারকে ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হন দেশটির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খান। যদিও পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৬ মে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে নওয়াজের সরকারকে আবারো দেশটির ক্ষমতায় পুনর্বহাল করা হয়েছিল। 

১৯৯৩ 

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় পুনর্বহাল হলেও ঠিক পরের বছর ১৬ জুলাই বেনজির ভুট্টো আবার রাজধানী অভিমুখে লংমার্চ করেন। তখন পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো যে রাজধানী সাথে সারা দেশের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। সেই সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াহেদ কাকার চাপে রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খান এবং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে পাকিস্তানের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। 

২০০৭

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে এবার একজোট হয় দেশটির আইনজীবীরা। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে যখন দেশটির প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরীকে মোশাররফ বরখাস্ত করেন তখন বিচার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আইনজীবীদের এই আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন একসময় এক দীর্ঘ লংমার্চে পরিণত হয়। 

এসময়য় এই আন্দোলন বিচারপতি চৌধুরী এবং তার কর্মীদের নেতৃত্বে আইনজীবী নেতা আইতজাজ আহসান, মুনির এ. মালিক এবং আলী আহমেদ কুর্দ সহ সারা দেশে এই পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচারণা চালান। 

এই আন্দলনা শুরু হওয়ার পর মোশাররফ ২০০৭ সালের নভেম্বরে দেশে জরুরু অবস্থা জারি করেন। এসময় তিনি অনেক বিচারককে আটক করেন। তাদের শপথ পুনরায় গ্রহণ করা হয়। 

এটি আইনজীবীদের বিক্ষোভের দ্বিতীয় ধাপকে উস্কে দিয়েছিলো। পরবর্তীকালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির শাসনামলে রাজধানীতে আবারো আইনজীবীদের লংমার্চ সংগঠিত হয়। নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং উচ্চতর বিচার বিভাগের অন্যান্য সমস্ত বিচারকদের পুনর্বহাল করার ঘোষণা দিয়ে গভীর রাতে বক্তৃতা দেওয়ার পরে গুজরানওয়ালায় মার্চটি বন্ধ হয়। 

২০১৩-১৪ 
 
মামা কাদিরের নেতৃত্বে, প্রায় ৩০ জন মিছিলকারীর ‘ভয়েস অফ বেলুচ মিসিং পার্সন’ একটি দল যারা কিনা পায়ে হেটে কোয়েটা থেকে করাচি হয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য যাত্রা করে। মিছিলকারী দলের ভেতর বেশ কয়েকজন মহিলা ও শিশু সদস্য সংযুক্ত ছিলো। তারা মোট ২০০০ কিলোমিটার হেটে গান্ধির সল্ট মার্চের রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন। যদিও তাদের এই যাত্রায় যথেষ্ট শক্ত কারণ ছিলো কিন্তু তাদের এই আন্দোলন ও দাবি মেনে নেয়নি সরকার। 



২০১৩ 

পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) প্রধান ডঃ তাহিরুল কাদরি ১৪ জানুয়ারী ২০১৩ সালে লাহোর থেকে ইসলামাবাদের অভিমুখে যাত্রা করেন এবং ডি-চকের কাছে জিন্নাহ এভিনিউতে চার দিনের বেশি সময় ধরে ক্যাম্প করে অবস্থান করেন। সেসময় সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সফল আলোচনার পর সেই অবস্থান কার্যক্রম শেষ হয়। 

২০১৪ 

পিটিআইয়ের সর্বশেষ সরকার বিরোধী বড় প্রতিবাদ মিছিল ও রাজধানীতে অবস্থান কার্যক্রম হয় ২০১৪ সালে। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ এবং ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের অডিট দাবি করে দলটি রাজধানীতে ১২০ দিন অবস্থান করে। সেসময় পিটিআইকে সমর্থন করেন পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক (পিএটি) প্রধান ডঃ তাহিরুল কাদরি। পিটিআইয়ের সমর্থনে সেসময় তিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীতে অবস্থান করেন। 

পিটিআই এবং পিএটি ১৫ আগস্ট কাশ্মীর হাইওয়েতে তাদের অবস্থান শুরু করে এবং ১৯ আগস্ট রাজধানীর রেড জোনে প্রবেশ করেন। ১২৬ দিনের বিরতিহীন প্রতিবাদের পর, ইমরান খান ১৭ ডিসেম্বর পেশোয়ার সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের বাইরে অবস্থান প্রত্যাহার করেন। পেশোয়ারের সেই ভয়াবহ হামলায় ১৪০ জনেরও বেশি স্কুলছাত্রী নিহত হয়। 

২০১৭ 

খাদিম হুসাইন রিজভীর নেতৃত্বে ২০১৭ সালে, তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) এর হাজার হাজার সমর্থক ২০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডিকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছিল। সেসময় তারা ফৈজাবাদ ইন্টারচেঞ্জ ও শহর দুটির মাঝে প্রধান সংযোগ সড়ক অবরোধ করে রাখে। 

২০১৯

২০১৯ সালে পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল ১৩ দিনের অবস্থানের ধর্মঘট পালন করে। দলটির লংমার্চ ২৭ অক্টোবর করাচি থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর ইসলামাবাদে প্রবেশ করে। 

সরকারের কঠোর অবস্থান ও প্রধান দুই বিরোধী দল পিএমএল-এন এবং পিপিপির কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান অবস্থান প্রত্যাহার করেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের সময় তিনি প্ল্যান-বির কথা বলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহে তাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। 

২০২০ 

মহানবীর ব্যাঙ্গাত্তক কার্টুন আকাকে কেন্দ্র করে প্যারিসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং ফরাসি পণ্য বয়কটের দাবিতে টিএলপি ১৫ নভেম্বর লিয়াকত বাগ রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইসলামাবাদের ফৈজাবাদ পর্যন্ত 'তাহাফুজ নমুস-ই-রিসালাত' নামে লংমার্চ শুরু করে। তখন প্রশাসনের সাথে টিএলপির সদস্যদের সংঘর্ষে লিয়াকত বাগ একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। 



১৬ নভেম্বর, টিএলপি ঘোষণা করে, সরকার তাদের চারটি দাবি মেনে নিয়েছে। এরপর দলটি ফৈজাবাদ থেকে তাদের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

২০২১ 

বেলুচিস্তানে জোরপূর্বক গুম বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা রাজধানীতে এক সপ্তাহব্যাপী অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে ক্যাম্প স্থাপন করলেও তাদের এই ধর্মঘট সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে বিক্ষোভকারীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি ডি-চক অভিমুখে তাদের মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাদের সাথে দেখা করবেন বলে আশ্বাস পাওয়ার পর বিক্ষোভকারিরা ২২ ফেব্রুয়ারি তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। 

সামি বেলুচ নামে এক বিক্ষোভকারি সেসময় জানান, "এই সরকারের কাছ থেকে আমাদের কোন বড় আশা নেই, তবে তারা যেভাবে আমাদের আশ্বস্ত করেছে, আমরাও তাদের একটি সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,"

২০২২ 

ফেব্রুয়ারি মাসে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি ‘আওয়ামী মার্চ’ নামে ইসলামাবাদ অভিমুখে একটি লংমার্চের ঘোষণা দেন। যেটি দেশটির ৩৪টি শহর ঘুরে রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করবে। 

২৮শে ফেব্রুয়ারি, করাচির ক্লিফটনের বিলাওয়াল চৌরঙ্গী থেকে রওনা হয় অনেক শ্রমিক। মিছিল চলাকালীন, বিলাওয়াল প্রাক্তন পিটিআই সরকার এবং ইমরান খানকে দেশের দুর্দশার জন্য দায়ী করে কটাক্ষ করেন। 

১০ দিনের লংমার্চ শেষ পর্যন্ত 8 মার্চ ইসলামাবাদে সংসদ ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সূত্র: ডন 

লংমার্চ   পাকিস্তান   ইমরান খান   রাজনীতি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারতের নির্বাচনে ভোটের হার কেন এত কম?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে চলছে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ হচ্ছে না। কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির নেতারা।   

দেশটিতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য। অথচ অধিকাংশ ভোটারদেরই কোনো আগ্রহ নেই নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু কেন নির্বাচন নিয়ে দিন দিন এত অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন ভারতের ভোটাররা? বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশেই কেন ভোট নিয়ে এত অনীহা জনগণের মাঝে?

টানা ৭৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক শাসনে থাকা দেশটিতে এবারের নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল মাত্র ৬৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার ছিল ৬৩ শতাংশ। যা আগের বছরের নির্বাচন গুলোর তুলনায় অনেক কম। 

নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, অসময়ের গরম আবহাওয়া এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হচ্ছে। অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ভোটারদের কেন্দ্রে টেনে আনার মতো শক্তিশালী কোনো ইস্যু নেই মোদির কাছে। তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভোটাররা আত্মতুষ্টি বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে কেন্দ্রে আসছেন না। ফলে ভোটার সংখ্যা কম। 

দ্বিতীয় ধাপে দেশটির ১৩টি রাজ্যের মোট ৮৮টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর উত্তরবঙ্গের তিনটি আসন দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটের ভোটের হার দেখা গেছে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বালুরঘাটে ভোটদানের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ, দার্জিলিংয়ে ৭৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং রায়গঞ্জে ৭৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালে বালুরঘাটে ভোট পড়েছিল ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, দার্জিলিংয়ে ৭৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং রায়গঞ্জে ৭৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশের মতো, যা প্রথম দফার ভোটের চেয়েও ৬ শতাংশ কম। বিহারেও ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে আরও কম, সাড়ে ৫৪ শতাংশের মতো। মধ্যপ্রদেশে সামান্য বেশি, সাড়ে ৫৭ শতাংশ। ফলে কম ভোটের এই হার সকল মহলকে কিছু হলেও উদ্বিগ্ন করছে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের দিখৌলী নামের একটি গ্রামে ভোট পড়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ভোটদানে উৎসাহ নেই বেশির ভাগ গ্রামের মানুষের। অনেকেই আবার কৃষিকাজে ব্যস্ত।

ভারতের বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, নরেন্দ্র মোদি টানা ১০ বছর ধরে ভারত শাসন করছেন। এবারের নির্বাচনে আবারও তিনিই জয়লাভ করবেন এবং তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করবেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনের ব্যাপারে জনগণের একটি বড় অংশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি এবার ভোটারদের কেন্দ্রে টেনে আনার মতো শক্তিশালী কোনো ইস্যুও সামনে আনতে পারেননি এনডিএ বা ইন্ডিয়া জোটের কেউই। তাছাড়া এবারের লোকসভা নির্বাচনে আবহাওয়া একটা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তীব্র গরমের কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে বের হচ্ছেন না। ফলে সব কিছু মিলিয়ে এবার উল্লেখযোগ্য হারে নির্বাচনে ভোটের হার কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভারতের নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা।

ভারতের নির্বাচন   নরেন্দ্র মোদি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ভারত সফর স্থগিতের পর চীনে গেলেন ইলন মাস্ক

প্রকাশ: ০৭:০৪ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্ক ভারতে তার নির্ধারিত সফর স্থগিত করেন এবং এই সফর স্থগিতের কয়েকদিন পরই হঠাৎ করে চীন সফরে গেছেন তিনি। 

রোববার(২৮ এপ্রিল) টেসলার একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে অনেকটা আকস্মিকভাবেই রোববার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন তিনি। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চীন সফরের বিষয়ে অবগত দুই ব্যক্তি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।  

২১ এপ্রিল ভারত সফরে যাবার কথা ছিল ইলন মাস্কের। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার বৈঠক ও ভারতে টেসলার বিনিয়োগ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করার কথা ছিল।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে এক্সে দেওয়া বার্তায় টেসলার এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত টেসলায় ব্যাপক কাজ জমে যাওয়ায় ভারত সফর পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে আমি চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত মুখিয়ে আছি।' 

টেসলার সিইওর ভারত সফর স্থগিতের এক সপ্তাহ পর চীন সফরের তথ্য এলো। চীনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে টেসলার স্বচালিত (এফএসডি) বৈদ্যুতিক গাড়ির যাত্রা শুরুর বিষয়ে আলোচনার জন্য বেইজিংয়ে চীনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করছেন। স্বচালিত ড্রাইভিং প্রযুক্তির উন্নতির জন্য অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণে চীনে সংগৃহীত ডাটা বিদেশে স্থানান্তর করার অনুমতির বিষয়েও চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় মাস্ক বলেছেন, চীনে শিগগিরই ব্যবহারকারীদের জন্য এফএসডির সরবরাহ শুরু করবে টেসলা। রয়টার্স বলছে, ২০২১ সাল থেকে চীনা নিয়ন্ত্রকদের শর্ত অনুযায়ী সাংহাইতে টেসলার চীনা বহরের সংগৃহীত সব ডাটা সংরক্ষণ করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা স্থানান্তর করেনি।


ভারত   সফর   স্থগিত   চীন   ইলন মাস্ক  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গ্রেফতার আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের সর্বাত্মক চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ: ০৫:২৭ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। আর সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে সর্বাত্মক কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। 

বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে যাচ্ছে আইসিসি।

নিউজ সাইট ওয়ালায় বিশ্লেষক বেন কাসপিট লিখেছেন, নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে হেগের বিশ্ব আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আশঙ্কায় ‘অস্বাভাবিক চাপে’ রয়েছেন। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য ইসরায়েলি নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অর্থ হল- ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক সুনামে বড় ধরনের আঘাত।

কাসপিট লিখেছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রতিরোধে নেতানিহুয়া ‘বিরতিহীনভাবে টেলিফোনে চেষ্টা করে’ যাচ্ছেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সাথে তিনি সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎসের বিশ্লেষক অ্যামোস হারেল লিখেছেন, ইসরায়েলি সরকার এই ধারণা নিয়ে কাজ করছে যে আইসিসির প্রসিকিউটর করির খান চলতি সপ্তাহেই নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং আইডিএফ প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।

হারেল জানিয়ছেন, আমেরিকা ইতোমধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকানোর জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, আইসিসির রোম চুক্তিতে ১২৪টি দেশ সই করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাতে স্বাক্ষর করেনি। যুদ্ধের ব্যাপারে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সরকারি বিবৃতিতে দাবি বলা হয়েছে, আইসিসির আসন্ন সিদ্ধান্ত ‘বিপজ্জনক নজির’ সৃষ্টি করতে পারে।


গ্রেফতার   নেতানিয়াহু   যুক্তরাষ্ট্র  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গরমে ট্রাফিক পুলিশকে স্বস্তিতে রাখতে ‘এসি হেলমেট’

প্রকাশ: ০৪:৫২ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রচণ্ড গরমে টানা রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের। সড়কে দায়িত্বরত পুলিশদের কিছুটা শীতল ও স্বস্তিতে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের লখনৌর ট্রাফিক বিভাগ। ‘ঠান্ডা উদ্যোগ’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বেশকিছু ‘এসি হেলমেট’ উন্মোচন করা হয়েছে। লখনৌতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক পর্বের অংশ হিসেবে চারটি এসি হেলমেট চালু করা হয়। 

সোমবার (২২ এপ্রিল) হজরতগঞ্জের অটল চক মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কর্মীদের এসব হেলমেট দেয়া হয়। 

এই হেলমেটগুলোতে একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ঢালসহ মাথায় শীতলতা নিশ্চিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসি ভেন্ট রয়েছে। চোখকে সূর্যের প্রখর আলো ও উত্তাপ থেকে রক্ষা করতে এটি গগলস হিসেবে কাজ করে। হেলমেটটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কোমরে বাঁধা একটি বড় ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে এলে উপরে থাকা একটি লাল আলো সতর্ক বার্তা দেবে।

এ বিষয়ে লাখনৌ পুলিশের এডিসিপি অজয় কুমার সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘এই প্রকল্প সফল হলে হায়দরাবাদভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে পাঁচশ এমন এসি হেলমেট প্রস্তুতের দায়িত্ব দেয়া হবে। এই হেলমেটের ওজন সাধারণ হেলমেটের প্রায় অর্ধেক এবং আমাদের ট্র্যাফিক পুলিশ এটি ব্যবহার ও পরিধানে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন।’


ট্রাফিক   পুলিশ   প্রকল্প  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান

প্রকাশ: ০৪:১৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের পর এবার পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে না পারা, হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধার করতে না পারা, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়াসহ একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে পারেন সামরিক বাহিনীর প্রধান।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে ইসরায়েলজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি।

ইসরায়েলের সেনাপ্রধান   হামাস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন