দীর্ঘ ২০ বছর! ২০০১ সাল থেকে যাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের পরাশক্তি যুদ্ধ ঘোষণা করে সেই তালেবানরাই আবারো পুরো বীর দর্পে ২০২১ সালে এসে নিজ ভূমির দখল নিয়ে নিলো। অনেকটা লজ্জায় এখন কত দ্রুত দেশ ত্যাগ করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত মার্কিনী পরাশক্তি।
১৫ আগস্ট কাবুলের পরিবেশটা আর আট-দশ দিনের মতই হতে পারতো যদি না বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গড়ে তোলা আফগান সামরিক বাহিনী বিনা বাঁধায় তালেবান যোদ্ধাদের হাতে রাজধানীর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পলায়ন না করতো। কোন রক্তপাত ছাড়াই বিনা যুদ্ধে যখন রাজধানীর দখল নিচ্ছিলো তালেবান ঠিক তখন হেলিকপ্টার আর গাড়ি ভর্তি করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, যা কিনা দেশটির সাধারণ মানুষের মাঝে তালেবানের প্রতি ভীতি আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানরা সরকার পরিচালনা করে আফগানিস্তানে। আফগান ইতিহাসে অন্যতম ভয়ানক একটি অধ্যায় ছিলো এই পাঁচ বছর। শরিয়া আইনের কথা বলে তালেবান অত্যাচারের শিকার হয় হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে নারীদের প্রতি তালেবানের অত্যাচার শুধু যে স্থানীয় নারীদের জন্যই আতঙ্কের ছিলো তা নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও এক আতঙ্কের নাম। তালেবানরা এই পাঁচ বছর দেশটিতে নারীদের শিক্ষা, ঘরের বাহিরে বের হওয়া তো দূরের কথা তাদেরকে ঘরের ভিতর পর্যন্ত বোরখা পরে থাকতে বাধ্য করত। ছেলেদের ক্ষেত্রে দাঁড়ি না রাখলে ছিলো কঠোরতম শাস্তির বিধান। গান শোনা কিংবা গান শেখা, ছবি দেখা, বিভিন্ন বিনোদন ছিলো একেবারেই নিষিদ্ধ।
ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তাদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিলো মাদক ব্যবসা। এমনকি ক্ষমতা ছাড়ার পর মার্কিন বাহিনীর সাথে যুদ্ধে অর্থের চালানে অন্যতম যোগান আসতো এই মাদক থেকেই। যদিও মার্কিন বাহিনী পপি (কোকেন বানানোর ফুল) চাষিদের বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে এই খাত থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু দিন শেষে তালেবানের ভয়ে অনেকেই পপি উৎপাদন থেকে সরে আসতে পারেনি। যদিও এখন ক্ষমতা গ্রহণের পর তারা পপির উৎপাদন বন্ধের কথা বললেও কতটা আদৌ বন্ধ হবে কিনা তা সময়-ই বলে দিবে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির না পাওয়ার পিছনে:
১. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া কিংবা দেরি হওয়ার পেছনে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অন্তরায় হিসেবে ধরা দিবে তার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নারী শিক্ষা।
২. সমন্বিত সরকার ব্যবস্থা গঠন না করতে পারলে।
৩. মাদক ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন অব্যাহত থাকলে।
৪. বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী গুলোকে প্রশ্রয় এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া।
৫. সাবেক সরকারের বিভিন্ন আমলা কিংবা সেনা সদস্য, সরকারী লোক ও পশ্চিমাদের সহযোগিতাকারি দো’ভাষীদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত থাকলে।
এই বিষয় গুলো তালেবানকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে ফেলেছে। যদিও তারা বারবার বলে আসছে যে, তারা আর পুরনো তালেবান নয়। তবুও তাদের আচরণের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে সমগ্র বিশ্ব।
তালেবানকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে দেশটি সবচেয়ে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে তা হচ্ছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব এবং পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারত বারবার পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আসলেও দেশটি কোন সময় এই বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেনি। তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী দখলে নেওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান-ই সবার আগে তালেবান ও আফগানিস্তানের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের জনগণ আজ দাসত্বের শিকল ভেঙ্গেছে। তার এমন মন্তব্যর পর তালেবানের প্রতি পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর পরোক্ষ সমর্থনের বিষয়টি সবার কাছে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরেই তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল ও তালেবান বিরোধী একটি জোট পাকিস্তানে এসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেহমুদ কোরেশীর সাথে দেখা করেছে, যাতে আফগানিস্তানে একটি সমন্বিত সরকার ব্যবস্থা গঠনে পাকিস্তানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।
এছাড়া তালেবানের সাথে সাবেক আফগান সরকারের মীমাংসার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় যে আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিলো সেখানেও তালেবানের উপর পাকিস্তানের প্রভাবের কথা সুস্পষ্টভাবে উঠে আসে।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী যদিও তালেবানের বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কিন্তু তার সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় তালেবানকে স্বীকৃতির বিষয়ে দেশটি তার আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাবে। এটি তালেবানের জন্য এক বিশাল ধাক্কা বলা চলে। কারণ, ১৯৯৬ সালে যে তিনটি দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলো তার একটি ছিলো পাকিস্তান এবং দেশটি সবার আগে তালেবানকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন বলেই মনে হচ্ছে।
তাছাড়া তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুরোপুরি ভাবে গ্রহণের পর মাত্র তিনটি দেশ- রাশিয়া, পাকিস্তান ও চীন দেশটিতে তাদের দূতাবাস চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। পাকিস্তানের মতো বাকি দুটো দেশ চীন ও রাশিয়াও এখন পর্যন্ত তালেবানকে সম্পূর্ণ স্বীকৃতির বিষয়ে এখনো একমত হতে পারেনি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া এখনও তালেবান গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি বা এই গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসেনি। তালেবান আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে কতটুকু সক্ষম তা দেখার পরই কেবল তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এছাড়া তালেবানের প্রতিনিধি দল আফগান ক্ষমতা দখলের কিছুদিন আগে চীন ভ্রমণে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। সেখানে চীনের পূর্ণ সমর্থন আদায়ে তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয় উইঘুরদেরকে তালেবানের পক্ষ থেকে কোন রকমের সমর্থন জানানো হবে না।
তাছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তালেবানদের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনি কোন রকমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানে আগ্রহ নয় তারা।
কিভাবে তালেবানের পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়া সম্ভব:
তালেবানই শাসনের ভয়াবহ পাঁচ বছরের কথা এত সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এই কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের মিষ্টি কথায় এবার এত তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করবে না, এটা খুব স্বাভাবিক। তালেবানকে নিজেদের কিছু বিষয় দিয়ে খুব দ্রুত প্রমাণ করতে হবে যে তারা আর আগের মত অবস্থায় নেই। তারা এখন অনেক বেশি শৃঙ্খল এবং দেশ পরিচালনায় যোগ্য। তবে যে বিষয়গুলোকে সবার আগে পরিষ্কার করতে হবে তা হল-
১. নারীদের প্রতি নমনীয়তা। তাদের সঠিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং পুরুষের সাথে শরিয়া মোতাবেক-ই কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
২. আরেকটি বেশ ভয়াবহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠী গুলোকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে না দেওয়া।
৩. মাদক ব্যবসায় লাগাম টেনে ধরা এবং
৪. একটি সমন্বিত সরকার ব্যবস্থা গঠন করা।
এই বিষয়গুলোর প্রতি তালেবানদের জোরের উপর নির্ভর করছে তালেবানের পক্ষে কত দ্রুত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব। দেশটির ৩ কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর মাঝে থাকা পশতুন, তাজিক, হাজারা, উজবেক, আইমাক, তুর্কমেন, বালুচ, পাশাই, নুরস্তিনি, গুজ্জর, আরব, ব্রাহুই, কিজিলবাশ, পামিরি, কিরগিজ, সাদাত মত জনগোষ্ঠী নিয়ে যদি তালেবান একটি সমন্বিত সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে সক্ষম হয় তবে ধরেই নেওয়া যায় দেশটিতে চলে আসা এত দিনের যুদ্ধ অবস্থার কিছুটা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা হবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তালেবানকে ক্ষমতায় বসাতে দেশটি বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও এখন তাদের উপর দেশটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্যও বেশ কষ্ট পোহাতে হবে তা আর বলে না দিলেও চলবে। কারণ আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার সাথে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতাও অনেকাংশে নির্ভরশীল।
বেজিন-সাদ্দাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সামরিক বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াদো হেখট বলেন, তালেবানকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশ হতে পারে চীন ও পাকিস্তান। কারণ আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের সীমান্ত রয়েছে এবং সরাসরি প্রভাবিত হবে।
হেখট আরও বলেন, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমি মনে করি বিষয়টি তালেবানের আচরণের ওপর নির্ভর করছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় ও অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পার্থক্য রয়েছে। তালেবান যদি স্থিতিশীল শাসন জারি করতে পারে তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে অনাগ্রহী দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পথে হাঁটতে পারে।
তালেবান যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান পাকিস্তান
মন্তব্য করুন
ভারত ও জাপানকে 'জেনোফোবিক' আখ্যা দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জেনোফোবিক বলতে অন্য দেশের মানুষ বা অভিবাসীদের প্রতি ভীতি বা নেতিবাচক মনোভাবকে বোঝায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানায় বলে তাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। এদিকে চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয় বলে দাবি করেন বাইডেন।
মূলত চীন, রাশিয়ার সঙ্গে একই আসনে বসিয়ে ভারত ও জাপানকে জেনোফোবিক আখ্যা দেন জো বাইডেন।
বাইডেন বলেন, আমাদের অর্থনীতি কীভাবে এগিয়ে চলেছে। কারণ আমরা অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানাই। চীনের অর্থনীতির হাল কেন এত খারাপ। জাপানে এত সমস্যা কেন। কেন রাশিয়া ও ভারতেরও এই হাল? কারণ তারা সবাই জেনোফোবিক। তারা অভিবাসীদের চায় না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসন নীতি একটি বড় ইস্যু। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে যেখানে অভিবাসনবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সেখানে ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসনপন্থি।
বাইডেনের সমালোচনামূলক এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন। সে সময় যক্তরাষ্ট্র-জাপান জোটকে 'অলঙ্ঘনীয়' বলে অভিহিত করেছিলেন বাইডেন।
তাছাড়া মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও ভারত বর্তমানে দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজ জানায়, নিজের মন্তব্যের মাধ্যমে বাইডেন কোনো দেশের অপরাধের কথা বলেননি।
বাইডেনের এই মন্তব্যের সমালোচনা করছেন অনেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের সবেক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব এলব্রিজ কোলবি বলছেন, জাপান ও ভারত আমাদের দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের কথা বলা উচিত।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন অভিবাসী নীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই বাইডেন এসব কথা বলেছেন। কোনো দেশকে তিনি অবমূল্যায়ন করেননি।
মন্তব্য করুন
আফ্রিকার দেশ নাইজারের একটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।
শুক্রবার (৩ মে) মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মেলা-মেশা করছেন না রুশ সেনারা। তবে নাইজারের রাজধানী নিয়ামে ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এয়ারবেস ১০১ এর একটি পৃথক হ্যাঙ্গার ব্যবহার করছেন তারা।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, নাইজারের কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে ৬০ জনের মতো রুশ সেনা নাইজারে থাকবেন। তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি তিনি।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে আল-কায়েদা ও আইএসআইএল প্রভাবিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয়ে নাইজারের মরুভূমির শহর আগাদেজে এই বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। রাজধানী নিয়ামে থেকে প্রায় ৯২০ কিলোমিটার দূরের এ বিমানঘাঁটিটি মনুষ্যবাহী এবং মনুষ্যবিহীন নজরদারি ফ্লাইট এবং অন্যান্য অপারেশনের জন্য এতদিন ব্যবহার করে আসছিল মার্কিন সেনারা।
২০২৩ সালের ২৬ জুলাই এক অভ্যুত্থানে নাইজারের পশ্চিমাপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। তারপর একের পর এক পশ্চিমবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে জান্তা সরকার। সামরিক সরকারের সঙ্গে জনগণ যোগ দিলে সেপ্টম্বরে নাইজার থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে মার্কিন মিত্র ও নাইজারের সাবেক উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল এবং নাইজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলি মহামান লামিন জেইনের মধ্যকার আলোচনার পর নাইজার থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেয় ওয়াশিংটন। নাইজারে এক হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছে। এসব সেনাকে জার্মানি পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করছে বাইডেন প্রশাসন।
মন্তব্য করুন
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
শহরের আল-জুহুর আশপাশে আঘাত হানা হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াফা নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহ শহরের পশ্চিমে তাল আল সুলতানপাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মধ্য গাজার বুরেজ ক্যাম্প লক্ষ্য করে বোমা হামলায় আরও ৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চললেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ নগরীতে অভিযান চালানো হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলার মাঝে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫৯৬ জনে। এ ছাড়া ইসরাইলি বর্বর আক্রমণে আরও ৭৭ হাজার ৮১৬ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৫১ জন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
মন্তব্য করুন
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন এক নারী। নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মচারী বলে দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই নারী হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানান। যদিও এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত।
এদিকে এই মুহূর্তে কলকতায় অবস্থান করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাত তিনি রাজভবনেই কাটিয়েছেন। মোদী কলকাতায় আসার আগেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ওই নারী।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারী হেয়ার স্ট্রিট থানায় এসেছে। লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও রয়েছেন থানায়। রয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনো দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে।
তথাগত আরও বলেন, এই ধরনের অভিযোগ অতীতে উঠেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ফলে আদালতে বিষয়টি গেলে কী হবে, তা আমার জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা তো বোঝা সম্ভব নয়।
ওই নারীর অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সাগরিকা ঘোষ এরই মধ্যে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভয়াবহ! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় যাচ্ছেন। রাজভবনে তার রাত্রিবাস করার কথা।
তবে গোটা ঘটনার নেপথ্যে চক্রান্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তথাগত। তিনি বলেন, আমি আনন্দ বোসকে অনেক দিন ধরে চিনি। দক্ষ আইএএস অফিসার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের পিছনে কোনো চক্রান্ত আছে বলেই মনে হয়। বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্দেশখালিকাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেও এ রকম অভিযোগ তোলা হয়ে থাকতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপাল যৌন হয়রানি
মন্তব্য করুন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক
রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ১১২টি দেশ এই রেজ্যুলেশনটিতে কো-স্পন্সর
করেছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের
স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের পক্ষে রেজ্যুলেশনটি
উত্থাপন করেন।
স্থায়ী মিশন বলছে, এ বছর আলোচ্য রেজ্যুলেশনটি একটি বিশেষ তাৎপর্য
বহন করে। কেননা এ বছরে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি ২৫তম বর্ষে পদার্পণ
করেছে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে সরকার পরিচালনার সময় ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের
মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি গৃহীত হয়।
এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশনটি জাতিসংঘ
সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করে আসছে, যা শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতিকে উন্নীত করার জন্য
৮টি বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে ২০১২ সাল থেকে ‘শান্তির
সংস্কৃতি’ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরামের আয়োজন করে আসছে।
প্রস্তাবটি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বিভিন্ন
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে শান্তির সংস্কৃতির অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজ বিশ্ব ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব এবং মানবিক মর্যাদা অবজ্ঞার মুখোমুখি। এই
ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও সহিংসতা উত্তরণে মানবমনে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার ভাবকে পুনরুজ্জীবিত
করতে হবে, সমতা ও সব মানুষের সমমর্যাদার চেতনাকে সমুন্নত করতে হবে এবং সর্বোপরি যুদ্ধের
চেয়ে শান্তিকে অনেক বেশি লাভজনক করে তুলতে হবে।
এবারের রেজ্যুলেশনটিতে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচির
২৫তম বার্ষিকী যথাযথভাবে পালন ও উদযাপনের জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে দিনব্যাপী একটি
উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম আহ্বান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া এ রেজ্যুলেশনে সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক
ও আঞ্চলিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়াসহ
অন্যান্য অংশীজনদের শিক্ষা ও জনসচেতনতা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে যথাযথভাবে
এই বার্ষিকীটি পালনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রবর্তনের বাংলাদেশের উদ্যোগটি
আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য, বর্ণগত অসহিষ্ণুতা এবং পরাধীনতা আমাদের
একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। এ কারণেই আমরা শান্তির প্রসারকে আমাদের
পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক নীতিতে পরিণত করেছি।
রেজ্যুলেশনটির বিবেচনার পূর্বে শান্তির সংস্কৃতির উপর সাধারণ পরিষদে
একটি সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বহুসংখ্যক সদস্য রাষ্ট্র বক্তব্য প্রদান করে ।
এ সময় তারা শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের প্রতিশ্রুতির
কথা পুনর্ব্যক্ত করে। প্রতিনিধি দলগুলো জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত
করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
১১২টি দেশ এ বছর বাংলাদেশের এই রেজুল্যুশনটিকে কো-স্পন্সর করেছে,
যা ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটির প্রতি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অব্যাহত
সমর্থনের সাক্ষ্য বহন করে।
জাতিসংঘ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন
মন্তব্য করুন
ভারত ও জাপানকে 'জেনোফোবিক' আখ্যা দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জেনোফোবিক বলতে অন্য দেশের মানুষ বা অভিবাসীদের প্রতি ভীতি বা নেতিবাচক মনোভাবকে বোঝায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানায় বলে তাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। এদিকে চীন, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয় বলে দাবি করেন বাইডেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ১১২টি দেশ এই রেজ্যুলেশনটিতে কো-স্পন্সর করেছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের পক্ষে রেজ্যুলেশনটি উত্থাপন করেন।