মুখ
ফসকে কথা বেরিয়ে যাওয়া
এক ধরনের ব্যাধি। মনোবিজ্ঞানে বলে—দুটি কারণে
‘স্লিপ অব টাং’ রোগে
মানুষ আক্রান্ত হয়। প্রথমত বেসামাল
হলে। দ্বিতীয়ত প্রচণ্ড দুঃখে থাকলে। ‘বেসামাল’ একজন মানুষ নানা
কারণেই হতে পারে। বেশি
অর্থকড়ি পেলে, যোগ্যতা ছাড়াই ক্ষমতাবান হলে কিংবা অপ্রত্যাশিতভাবে
কিছু পেলে একজন মানুষ
বেসামাল হয়ে যান। আবার
সব হারিয়েও কেউ কেউ অপ্রকৃতিস্থ
হয়ে বেফাঁস কথাবার্তা বলেন। কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের
মন্ত্রী এবং নেতাদের মধ্যে
মুখ ফসকে বেফাঁস কথা
বলার প্রবণতা বেড়েছে। এসব ‘স্লিপ অব
টাং’ কি নিষ্পাপ ভুল
নাকি মনের গোপন অভিপ্রায়ের
প্রকাশ তা নিয়ে গবেষণা
হতেই পারে। কিন্তু নেতা-মন্ত্রীদের বেফাঁস
মন্তব্য আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মধ্যে
ফেলেছে।
আইনমন্ত্রী
আনিসুল হকের কথাই ধরা
যাক। গত শনিবার (৩
জুন) এক অনুষ্ঠানে গিয়ে
তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা কেমন হবে, সে
সম্পর্কে সাংবাদিকদের জ্ঞান বিতরণ করছিলেন আইনমন্ত্রী। একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘সংসদীয়
গণতন্ত্রের ভিত্তিতে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী যখন
মনে করবেন নির্বাচনকালীন তিনি একটি ছোট
সরকার করতে চান, এ
সময়ে তিনি পদত্যাগ করবেন
এবং তারপর তিনি তার সরকার
গঠন করবেন।’ এ বক্তব্যের কিছুক্ষণ
পরই আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র
তথ্য অফিসার আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ‘শব্দ চয়নে’ ভুল
বলে একটি বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তিনি লেখেন—‘সাংবাদিকদের
উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে
মাননীয় মন্ত্রী শব্দ চয়নে ভুল
করেন।’ আইন মন্ত্রণালয়ের এ
ব্যাখ্যার পর ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ’
প্রসঙ্গটি আর এগোয়নি। কিন্তু
এ নিয়ে আমার মনে
এবং মগজে নানা প্রশ্ন।
আইনমন্ত্রী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি আইনজীবীও বটে।
সংবিধানে বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, আইনের বিধিবিধান তার মুখস্থ থাকার
কথা। প্রয়াত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ
হাইকোর্টে একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর
নাম ভুলে যেতে পারি,
কিন্তু আইন ভুলে যাব
না।’ আমাদের সংবিধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে
হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে
লেখা আছে। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী,
একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব
গ্রহণ না করা পর্যন্ত
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো সুযোগ নেই।
সংবিধানে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলেও কিছু নেই।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। এরপর সুপ্রিম
কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধনী
করে ৭২-এর সংবিধানে
ফিরে গেছে। এখন বাংলাদেশে নির্বাচন
হয় ‘ওয়েস্ট মিনিস্টর ডেমোক্রেসির’ আদলে। এখানে তপশিল ঘোষণার পর সরকার ‘অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারে’ আপনাআপনি রূপান্তরিত হয়। নির্বাচনী আইনের
বিধিনিষেধের কারণে সেই সরকার শুধু
রুটিন দায়িত্ব পালন করে। নির্বাচন
আচরণবিধি মন্ত্রীদের চলাফেরাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সীমিত করে। সরকার কোনো
নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয় না। কারণ
তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশে
২০১৪ ও ২০১৮ সালে
এভাবেই নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সমন্বয়ে
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে নির্বাচন বর্জন করে। শুধু নির্বাচনকালীন
সরকার কেন? প্রধানমন্ত্রী যে
কোনো সময় কোনো সংসদ
সদস্য বা বাইরের কাউকে
মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। সংবিধান
এ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতার স্বার্থে এবং অবাধ, সুষ্ঠু
নির্বাচনের তাগিদ থেকেই প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে এরকম
উদারতা দেখিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও
আলাদা করে কোনো নির্বাচনকালীন
সরকার গঠিত হয়নি। আগামী
নির্বাচনের আগে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা
বড় করবেন না ছোট করবেন,
কাকে রাখবেন; তা তার একক
সাংবিধানিক ক্ষমতা। সংবিধানের ৫৬(১) অনুচ্ছেদ
এ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে। এটা আইনমন্ত্রী বা
অন্য কারও এখতিয়ারভুক্ত বিষয়
নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের
আগে কীরকম মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, এরই
মধ্যে তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘সংসদে
প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রতিনিধি নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।’ এ
নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলেই
ফেলেছেন, তারপর হঠাৎ করে অসময়ে
একই বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে কথা বলতে হবে
কেন? সবচেয়ে বড় কথা, ‘প্রধানমন্ত্রীর
পদত্যাগে’র মতো এত
গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মন্তব্য
আইনমন্ত্রীর ‘মুখ ফসকে’ বেরিয়ে
যাওয়াটা অবিশ্বাস্য এবং উদ্বেগজনক বটে।
আইনমন্ত্রী বেফাঁস মন্তব্য এটাই যদি প্রথম
হতো, তাহলে এ নিয়ে এত
কথা লেখতাম না। এর আগে
খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়েও মন্তব্য
করে তিনি আওয়ামী লীগে
সমালোচিত হয়েছেন। সে সময় অন্তত
তিনটি অনুষ্ঠানে ‘বেগম জিয়ার রাজনীতি
করতে বাধা নেই’ বলে
মন্তব্য করেছিলেন। অথচ খালেদা জিয়া
একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। তার দণ্ড রহিত
হয়নি। শুধু চিকিৎসার সুযোগ
করে দেওয়ার জন্যই তাকে কারাগার থেকে
‘ফিরোজা’য় থাকার অনুমতি
দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী কী
চেয়েছিলেন, তা এখনো রহস্যময়।
বারবার রাজনীতির জল ঘোলা কেন
করতে চান, পৈতৃক সূত্রে
মন্ত্রী হওয়া সৌভাগ্যবান এই
ব্যক্তি? আলাদিনের চেরাগের মতো অলৌকিক প্রাপ্তিতে
তিনি কি বেসামাল? তিনি
কি রাজনীতিতে কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের
মিশনে বারবার বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন? বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবনার দাবি রাখে। কারণ
এক-এগারোর সময় আনিসুল হক
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ প্রিয়ভাজন ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনি
পরামর্শদাতা হিসেবে তার সপ্রতিভ উপস্থিতি
আমরা ভুলে যাইনি। সে
সময় দুদক বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া
বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনীতিবিদদের
চরিত্র হনন করা হতো
এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। সেখানে আনিসুল হকের কোনো ভূমিকা
ছিল না, তা হলফ
করে কে বলতে পারবে?
আনিসুল হকের জীবনের সেরা
অর্জন তিনি অ্যাডভোকেট সিরাজুল
হকের মতো একজন কিংবদন্তি
আইনজীবীর পুত্র। বাংলাদেশের আইন পেশায় অ্যাডভোকেট
হক অমর নাম। বঙ্গবন্ধু
হত্যা মামলায় সিরাজুল হক রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান
কৌশলী হিসেবে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। সেই
আইনি লড়াইয়ে অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের অনুজ্জ্বল উপস্থিতি
ছিল শুধু এ কারণে
যে, তিনি সিরাজুল হকের
পুত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা আপিল বিভাগে চূড়ান্ত
নিষ্পত্তির জন্য আসার পর
আটকে যায়। ২০০১ সালে
বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে
বিচারের পথ বন্ধ করে
দেয়। অতৃপ্তি নিয়েই ২০০২ সালের অক্টোবরে
অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক চিরবিদায় নেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ
আবার ক্ষমতায় এলে আনিসুল হক
চূড়ান্ত পর্যায়ের বিচার শেষ করেন। তখন
এটা ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।
তার অবদান এটুকুই। এ অবদানের স্বীকৃতি
হিসেবেই তিনি আইনমন্ত্রী। কিন্তু
রাজনীতির জটিল হিসেবে তিনি
কি কারও মুখপাত্র? তার
বক্তব্যের পর এ প্রশ্ন
উঠছে। অনেক কিছু পেয়ে
তিনি কি বেসামাল? না
হলে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক
একজন মন্ত্রী বা নেতার ‘প্রধানমন্ত্রীর
পদত্যাগ’ বিষয়ে ‘স্লিপ অব টাং’ হয়
কীভাবে? আইনমন্ত্রীর ‘থুক্কু’ বলা রেশ কাটতে
না কাটতেই বেফাঁস বক্তব্যে ঝড় তুললেন আওয়ামী
লীগের হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন
আমু। গত ৬ জুন
১৪ দলের এক জনসভায়
হঠাৎ করেই এ প্রবীণ
নেতা ‘জাতিসংঘ তত্ত্ব’ হাজির করলেন। তিনি বললেন, ‘সুষ্ঠু
নির্বাচনের বাধা কোথায়? জাতিসংঘের
মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে তার সুরাহা
করা যেতে পারে।’ আমির
হোসেন আমু আওয়ামী লীগের
হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা নন।
পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তিল তিল করে
জাতীয় রাজনীতিতে তার উত্থান ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং কৌশলে তিনি
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা রাজনীতিবিদ হিসেবে
স্বীকৃত। এক-এগারোর আগপর্যন্ত
আমু দলের সভাপতি শেখ
হাসিনার অন্যতম ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত রাজনীতিবিদ
হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
গ্রহণে তার ভূমিকাই ছিল
মুখ্য। কিন্তু ‘ক্ষণিকের বিভ্রম’ আমির হোসেন আমুর
মতো একজন ব্যক্তিত্বকে রাজনীতির
মূলধারা থেকে ছিটকে দেয়।
নায়ক থেকে খলনায়কে রূপান্তরিত
হন। সেনাসমর্থিত এক-এগারো সরকারের
সময় আমির হোসেন আমুর
সহধর্মিণী ছিলেন অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর
নিয়ে গিয়েছিলেন আমু। কিন্তু বিভ্রম
মানুষের সব বোধবুদ্ধি এবং
যুক্তিকে লোপ করে দেয়।
এ প্রবীণ নেতার ক্ষেত্রেও তা হয়েছিল। অসুস্থ
স্ত্রীকে সিঙ্গাপুরে রেখেই তিনি ঢাকায় আসেন।
হয়ে যান ‘সংস্কারপন্থি’।
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করেন। শেখানো বুলির মতো ‘সংস্কার প্রস্তাব’
পাঠ করেন। শেখ হাসিনার অন্যতম
বিশ্বস্ত নেতার এ আচরণ ছিল
দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রায় অবিশ্বাস্য।
শেষ পর্যন্ত এক-এগারো সফল
হয়নি। শেখ হাসিনা তার
নিজস্ব ক্যারিশমায় সব বাধা অতিক্রম
করে জেল থেকে মুক্ত
হন। ২০০৮-এর নির্বাচনে
বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো
প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও শপথ নেন। এক-এগারোর ঝড় শেখ হাসিনাকে
আরও ক্ষমতাবান এবং শক্তিশালী করেছে।
দলে দিয়েছে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। আর আমির হোসেন
আমু রাজনীতিতে হয়ে পড়েন অপাঙক্তেয়,
কক্ষ্যচুত। এক-এগারোর পর
তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর
অলংকারে পরিণত হন। ২০১৮-এর
নির্বাচনের পর তিনি আরও
নিষ্প্রভ। এমনকি মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর তাকে ১৪
দলের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি আলো
ছড়াতে পারেননি। রাজনীতির সাইডলাইনে বসে থাকা এ
বর্ষীয়ান নেতা কীভাবে জাতিসংঘের
মধ্যস্থায় সংলাপের কথা বললেন, তা
নিয়ে রাজনীতিতে শুরু হলো হৈচৈ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ
পরদিন আমুর প্রস্তাব নাকচ
করে দিলেন। কিন্তু ভুলের ফাঁদে পা দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘সংলাপের বিকল্প নেই’ বলে রাজনীতির
গুঞ্জনকে আরও উসকে দিলেন।
কিন্তু ৭ জুন বিকেলে
পরিস্থিতি পাল্টে গেল। উল্টো পথে
হাঁটলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী
লীগ সভাপতির উপস্থিতিতে ৭ জুনের আলোচনা
সভায় তিনি বলেন, ‘আলোচনার
জন্য কাউকে বলা হয়নি।’ তিনি
বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের
বাড়ির দাওয়াত নয় যে, দাওয়াত
করে এনে খাওয়াব।’ ৭
জুনের বক্তব্য যে আমু আওয়ামী
লীগ সভাপতির নির্দেশে দিয়েছেন, এ নিয়ে আমার
কোনো সন্দেহ নেই। আমুর মতো
নেতাও যে এখন আওয়ামী
লীগে গুরুত্বহীন, তা তার পরস্পরবিরোধী
বক্তব্যেই প্রমাণিত হলো। কিন্তু ৬
জুনের বক্তব্য আমু কার ইঙ্গিতে
দিয়েছিলেন? এটি কোটি টাকার
প্রশ্ন। আইনমন্ত্রীর মতো আমু রাজনীতিতে
হঠাৎ আগন্তুক নন। তাই তার
জাতিসংঘ ফর্মুলা রাজনীতিতে নতুন মোড়ের সংকেত
দেয়। তিনি কি না
পাওয়ার বেদনার কারণে এ বেফাঁস মন্তব্য
করেছেন? নাকি এক-এগারোর
সংস্কার প্রস্তাবের মতোই এটি কারও
শেখানো বুলি তিনি বাজারজাত
করলেন? একটি নীল-নকশার
গোপন বাক্স খুলে ফেললেন অজান্তেই?
আমির
হোসেন আমু এবং অ্যাডভোকেট
আনিসুল হক দুজনই তাদের
‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য থেকে সরে এসেছেন।
কিন্তু দুটি মন্তব্যই ছিল
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে।
দুটি বক্তব্যই আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থানের বিপরীত।
কাছাকাছি সময়ে দুজন নির্বাচন
নিয়ে দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে
কেন ‘স্লিপ অব টাং’ করে
বসলেন? রাজনীতিতে দুজনের বিকাশ আকাশ আর পাতাল।
কিন্তু দুজনই এক-এগারোর সময়
পাদপ্রদীপে ছিলেন। দুজনই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছেন। দুজনই নানাভাবে বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করেছেন। বিষয়গুলো
ভাবনার টেবিলে রাখাটা জরুরি।
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা টালমাটাল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা নিয়েছিলেন যে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা কোন মন্ত্রী-এমপিই মানেননি। ইদানিং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদককে দেখে মনে হয় অসহায়। তিনি বারবার চিৎকার করছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত মানার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, আবেদন-নিবেদন করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না।
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।