১৬ জুলাই, ২০০৭। ঢাকার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি
নেমেছিল। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সূর্য ওঠার আগেই ‘সুধা
সদন’ ঘিরে ফেলে যৌথ
বাহিনী। আওয়ামী লীগ সভাপতি জেগেই
ছিলেন। তিনি জানতেন তাকে
গ্রেপ্তার করা হবে। যৌথ
বাহিনীর লোকজন যখন সুধা সদনের
ভেতরে প্রবেশ করেন, তখন শেখ হাসিনা
শান্ত, দৃঢ়, উদ্বেগহীন। সশস্ত্র
কর্মকর্তাদের একটু অপেক্ষা করতে
বলে তিনি ফজরের নামাজ
আদায় করেন। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে
অনুরোধ করে বলেন, কয়েকটি
ফোন করতে হবে। টেলিফোনে
কথা বলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট
সাহারা খাতুন, বেগম মতিয়া চৌধুরী
এবং সে সময় তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে যৌথ বাহিনী
পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি বেরিয়ে আসেন
সুধা সদন থেকে। একটি
মাইক্রোবাসে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে নিয়ে
যাওয়া হয় পুরান ঢাকার
কোর্টপাড়ায়।। সেখানে তাকে টানাহ্যাঁচড়া করা
হয়। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী,
একজন বিরোধী দলের নেতা, সবচেয়ে
বড় কথা, বাংলাদেশের জাতির
পিতার কন্যার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক এবং অসম্মানজনক আচরণ
করেন যৌথ বাহিনীর কিছু
অতিউৎসাহী কর্মকর্তা। আদালতপাড়ায় সাজানো আনুষ্ঠানিকতার পর একটি উদ্ভট
চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে
যাওয়া হয় সংসদ ভবন
এলাকায়। সেখানে বসবাস অযোগ্য প্রায় একটি বাড়িকে সাবজেল
ঘোষণা করে তাকে রাখা
হয়। এটি ছিল রাজনীতি
থেকে শেখ হাসিনাকে মাইনাস
করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ। ২০০৭ সালে এক
অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ২০০৬ সালের
২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপি-জামায়াত
জোটের শেষ দিন। ক্ষমতা
পাকাপোক্ত এবং চিরস্থায়ী করতে
বিএনপি ২০০১ সাল থেকেই
নানা তৎপরতা শুরু করেছিল। ক্ষমতায়
এসেই বিএনপি-জামায়াত জোট নিজেদের অনুগত
এবং একান্ত বাধ্যগত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার
গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। একদা
বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক বিচারপতি কে এম হাসানকে
প্রধান বিচারপতি করা হয়। সে
সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা
ছিল, তাতে বলা হয়েছিল
যে, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান।
সেই হিসেব মাথায় রেখে বিএনপি সংবিধান
সংশোধন করে। প্রধান বিচারপতির
চাকরির বয়সসীমা এমনভাবে বাড়ানো হয় যেন, বিচারপতি
কে এম হাসানই তত্ত্বাবধায়ক
সরকারপ্রধান হন। এ সংবিধান
সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যায় যে,
কে এম হাসানই হবেন
পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। এটুকু করেই বিএনপি ক্ষান্ত
হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে কিছু ভাঁড়ের আড্ডাখানায়
পরিণত করে বিএনপি। অযোগ্য,
অথর্ব, অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিএনপি
পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সব
আয়োজন সম্পন্ন করে। দেড় কোটি
ভুয়া ভোটার ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়। হাওয়া
ভবনে প্রস্তুতকৃত এ তালিকার কথা
শুধু বিএনপিই জানত। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এসব জাল
ভোট দেওয়া হলে, বিএনপিকে ভোটে
হারানো হতো অসম্ভব ব্যাপার।
মাঠ প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ প্রশাসনে
বিএনপিপন্থিদের বসানো হয়। তিন স্তরে
বিএনপিপন্থি প্রশাসন ক্যাডারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যাতে
আর যাই হোক, বিএনপিপন্থি
ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা
নির্বাচনের দায়িত্ব না পায়। পুলিশ
প্রশাসনকে বিএনপির ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়। সেনাবাহিনী
যেন বিএনপির বাধ্যগত থাকে, সে জন্য সাতজনকে
ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করা হয় মইন
উ আহমেদকে। বেগম জিয়ার বিশ্বস্ত,
মাই ম্যান। কিন্তু সব আয়োজন ভেস্তে
যায় আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনে। ২০০৬ সালের ২৯
অক্টোবর তীব্র গণআন্দোলনের মুখে বিচারপতি কে
এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানান। সংবিধান অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে কে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবেন, তার অনেক ধাপ
ছিল। যেমন দ্বিতীয় অবসরপ্রাপ্ত
প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ
বিচারপতি ইত্যাদি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার শেষ বিকল্প ছিলেন
রাষ্ট্রপতি। অন্য কাউকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারপ্রধান হিসেবে পাওয়া না গেলেই শুধু
রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবেন, এমন ব্যবস্থা ছিল
সংবিধানে। কিন্তু বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখার জন্য অন্য সাংবিধানিক
ধাপগুলো যথাযথ অনুসরণ না করেই তৎকালীন
রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে প্ররোচিত করে। বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার গৃহপালিত, বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক জিয়ার ‘গৃহভৃত্য’তুল্য ড. ইয়াজউদ্দিন বিএনপির
নির্দেশে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাকে ‘পর্যবেক্ষণ’
করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইয়াজউদ্দিন আসলে
সীমাহীন অযোগ্যতার পরিচয় দেন। হাওয়া ভবনের
সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত
কিছুই করতেন না মি. ইয়েসউদ্দিন।
বিএনপি যেভাবে সাজানো একটি নির্বাচন চেয়েছিল,
তেমনি একটি পাতানো নির্বাচনের
পথে হাঁটতে থাকেন ড. ইয়েসউদ্দিন ওরফে
ইয়াজউদ্দিন। কিন্তু ২০০৭ সালের ২২
জানুয়ারি সেই নির্বাচন শেষ
পর্যন্ত হয়নি। ২০০৭ সালের ১১
জানুয়ারি এক সংকটময় পরিস্থিতিতে
ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এক-এগারোর
সরকার ক্ষমতা দখল করে। তীব্র
গোলযোগ, রাজনৈতিক সহিংসতায় অতিষ্ঠ জনগণ সেনাসমর্থিত ড.
ফখরুদ্দীনের সরকারকে স্বাগত জানায়। সবাই আশা করেছিল,
এক-এগারো সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে। কিন্তু গণতন্ত্রকামী মানুষের ভুল ভাঙতে সময়
লাগেনি। দ্রুতই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, এক-এগারো আসলে
একটি ক্যু। আর এ অভ্যুত্থানে
সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছিল সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং
তাদের বিদেশি প্রভুরা। এক-এগারো ছিল
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নিপুণ বাস্তবায়ন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ
পশ্চিমারা তাদের পছন্দের একটি সুশীল শাসনব্যবস্থা
দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের
নেতৃত্বে এক-এগারো সরকারের
প্রধান এজেন্ডা ছিল বিরাজনীতিকরণ। যুক্তরাষ্ট্র
চেয়েছিল তাদের অনুগত রাজনীতিমুক্ত একটি সরকার। এ
জন্য রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের মিশনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল।
ড. ফখরুদ্দীনের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়।
ঢালাওভাবে রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করা হতে থাকে।
নির্বিচারে চলে তাদের চরিত্র
হনন। দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে শুরু হয়
গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার। অচিরেই মইন উ আহমেদ
এবং ড. ফখরুদ্দীন আহমদ
বুঝতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি সুশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা শেখ হাসিনা।
এক-এগারোর সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী
লীগ সভাপতি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করতে থাকেন।
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এটি সুশীল সরকারের
পছন্দ হয়নি। এ জন্য তারা
শেখ হাসিনাকেই মাইনাস করার উদ্যোগ শুরু
করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার
কন্যাকে দেখার জন্য ১৫ মার্চ
যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা সফরে
যান। তার বিদেশ সফরকালে
ড. ফখরুদ্দীন সরকার এক নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক
সিদ্ধান্ত নেয়। শেখ হাসিনা
দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়
সরকার। নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েই বঙ্গবন্ধুকন্যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে আসেন।
২৩ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরার
সিদ্ধান্ত জানান। দেশে ফেরার জন্য
হিথ্রো বিমানবন্দরে যান। কিন্তু বাংলাদেশ
সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে বোডিং পাস
দিতে অস্বীকৃতি জানায় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস। শেখ হাসিনা এর
তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি
বঙ্গবন্ধুর কন্যা। অন্যায় করিনি। সরকার যদি আমার বিচার
করতে চায় তাহলে দেশে
নিয়ে বিচার করুক। কিন্তু দেশে যেতে দেওয়া
হবে না, এটা অসাংবিধানিক।
মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’
দেশ-বিদেশে তৎকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত ব্যাপক
সমালোচিত হয়। অবশেষে পিছু
হটে সুশীল সরকার। তারা শেখ হাসিনার
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। বীরদর্পে স্বদেশ
প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।
তখনই তিনি জানতেন, সুশীলরা
তাকে ছাড়বে না। গ্রেপ্তার, কিংবা
হত্যার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করেই দেশে ফেরেন
আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ
সময় বিরাজনীতিকরণ ফর্মুলার বাস্তবায়নকারী সুশীল নিয়ন্ত্রিত এক-এগারো সরকারও
বুঝতে পারে, তাদের লক্ষ্য অর্জনের প্রধান বাধা শেখ হাসিনা।
এ জন্য তারা নতুন
করে তাদের পরিকল্পনা সাজায়। বানোয়াট, উদ্ভট এবং অবাস্তব চাঁদাবাজির
মামলায় গ্রেপ্তার করে শেখ হাসিনাকে।
১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের
প্রধান লক্ষ্য ছিল তাকে রাজনীতি
থেকে মাইনাস করা। কারণ শেখ
হাসিনাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে
পারলেই দীর্ঘমেয়াদি সুশীল শাসন প্রতিষ্ঠা করা
সম্ভব। এ জন্য ওই
সরকার শুধু শেখ হাসিনাকে
গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হয়নি,
আওয়ামী লীগেও বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করে। দলের শীর্ষ
এবং গুরুত্বপূর্ণ চার নেতা প্রায়
অভিন্ন সুরে ‘সংস্কার প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। যার মূল বক্তব্য
ছিল, শেখ হাসিনা আর
আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকতে পারবেন না। কিন্তু তৃণমূলের
নেতাকর্মীদের বিপুল প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দলে
তারা ‘খলনায়কে’ পরিণত হন। তৃণমূলের ভালোবাসা
ও সমর্থনে, নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতায় সেদিন
শেখ হাসিনা প্রতিকূলতাকে জয় করেছিলেন। মাইনাস
ফর্মুলা বাস্তবায়িত হয়নি, বরং অনির্বাচিত সরকার
একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে
আনেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৭ সালে যে
মাইনাস ফর্মুলাকে পরাস্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা, সেই
ফর্মুলা আবার নতুন করে
সামনে এসেছে। গত ১২ জুলাই
বিএনপিসহ কিছু সাইনবোর্ডসর্বস্ব দল
‘এক দফা’ ঘোষণা করেছে।
সমাবেশ করে তারা বলেছে,
শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। একটি
রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া
হলে এ ধরনের রাজনৈতিক
দাবি উত্থাপন করতে পারে! বিএনপি
যদি বলত আওয়ামী লীগ
সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না, তাহলে
এর একটি মর্মার্থ থাকত।
রাজনৈতিক দর্শন থাকত। কিন্তু ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দলের
অবস্থান শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার এক প্রকাশ্য
দলিল। বিএনপি আগে বলছিল নির্দলীয়
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংসদে
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা
পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন
তারা বলছে, সবার আগে শেখ
হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তার
মানে কী? বিএনপি কি
একটি অসাংবিধানিক সরকার গঠন করতে চায়।
আরেকটি এক-এগারো আনতে
চায়। বিএনপি এমন এক সময়ে
একদফা ঘোষণা করে, যখন যুক্তরাষ্ট্র
এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকা অবস্থান করেছিল।
১১ জুলাই ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার
সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে
একটি প্রতিনিধিদল। আর ৯ জুলাই
থেকে ১৫ দিনের সফরে
এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তাদের উপস্থিতিতে
একদফা ঘোষণা করে বিএনপি কী
বার্তা দিল? তারা আনুষ্ঠানিকভাবে
জানিয়ে দিল যে, সুশীল
সমাজ আবিষ্কৃত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশীর্বাদপুষ্ট ‘মাইনাস ফর্মুলা’ বিএনপি সমর্থন করে। বিএনপির ‘একদফা’
আসলে এক-এগারোর মাইনাস
ফর্মুলারই পুনরুচ্চারণ। ২০০৬ সালে মার্কিন
পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ড. মুহাম্মদ
ইউনূস। মূলত ড. ইউনূসের
নেতৃত্বে একটি সুশীল সরকার
ক্ষমতায় বসানোর জন্য তখন থেকেই
প্রক্রিয়া শুরু করেছিল পশ্চিমা
দেশগুলো। ড. ইউনূসকে দিয়ে
একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু
সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। এরপর
সংলাপ-সংলাপ খেলার আড়ালে দুই দলকে অনড়
এবং সহিংসতায় উসকে দেয় পশ্চিমারা।
তাদের নিপুণ পরিকল্পনায় এক-এগারো সরকার
ক্ষমতায় আসে। দুই বছরের
চেষ্টায় তারা সুশীল রাজত্ব
প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। কিন্তু মাইনাস
ফর্মুলা এবং বিরাজনীতিকরণের মডেল
থেকে সুশীল এবং পশ্চিমারা সরে
আসেনি। এ জন্য মৃত
প্রায় বিএনপিকে জাগিয়ে তুলতে সব চেষ্টা করছে
তারা। বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে দেশে
একটি অস্থির এবং সহিংস রাজনৈতিক
পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি করা
হচ্ছে অনিশ্চয়তা। আবার একটি সংলাপ
নাটক মঞ্চায়নের চেষ্টা চলছে। ২০০৬ সালের মতোই
কূটনৈতিকপাড়া সরব। বাংলাদেশের গণতন্ত্র
নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের ঘুম
হারাম। কিন্তু ২০০৭ সালের এক-এগারোর অভিজ্ঞতা থেকে সুশীল, পশ্চিমারা
ভালো করেই জানে শেখ
হাসিনাই তাদের লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র বাধা। সে জন্যই বিএনপিকে
দিয়ে কি এক দফা
ঘোষণা করা হলো? বর্তমানে
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখেশুনে আমার মনে হয়,
বিএনপি আসলে পুতুল নাচের
পুতুল। পশ্চিমা দেশগুলো তাদের আদর-আপ্যায়ন করছে
আসলে একটি অনির্বাচিত সরকার
ক্ষমতায় আনতে। আর এ প্রক্রিয়ায়
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি
যে জড়িত, তা একটু খোঁজখবর
নিলেই জানা যায়। আবার
সেই মাইনাস ফর্মুলা। এবারও লড়াইটা শেখ হাসিনার একার।
ঘরে বাইরে বিশ্বাসঘাতক এবং ষড়যন্ত্রকারী। শেখ
হাসিনা কি পারবেন আবারও
জয়ী হতে?
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা টালমাটাল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা নিয়েছিলেন যে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা কোন মন্ত্রী-এমপিই মানেননি। ইদানিং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদককে দেখে মনে হয় অসহায়। তিনি বারবার চিৎকার করছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত মানার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, আবেদন-নিবেদন করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না।
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।