২০০৪
সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড
হামলার ঘটনা আমাদের এক
কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। জীবন
ও মৃত্যুর দূরত্ব কতটুকু। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ
সভাপতি। ২১ আগস্টের ওই
বিকেলই শেখ হাসিনার জন্য
অলৌকিকতায় ভরা দিন ছিল
না। বারবার বিভিন্ন সময়ে তিনি মৃত্যুর
দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি যদি
’৭৫-এর ৩০ জুলাই
তার ছোট বোন এবং
দুই সন্তান নিয়ে জার্মানিতে স্বামীর
কাছে না যেতেন, তাহলে
কী ভয়ংকর পরিস্থিতি হতো কল্পনা করলেও
গা শিউরে ওঠে। শেখ হাসিনা
তার প্রিয় শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
উপাচার্য প্রয়াত ড. আবদুল মতিন
চৌধুরীকে নিয়ে এক হৃদয়স্পর্শী
লেখা লিখেছেন। ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে
লেখা ওই নিবন্ধটি প্রকাশিত
হয়। ড. আবদুল মতিন
চৌধুরী, ‘আমার স্মৃতিতে ভাস্কর
যে নাম’ শিরোনামে এই
লেখায় ১৫ আগস্টে দেশে
থাকা না থাকা নিয়ে
তার দ্বিধার কথা লিখেছেন। জার্মানিতে
যাওয়ার আগে জুলাইয়ের শেষদিকে
শেখ হাসিনা তৎকালীন উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। শেখ
হাসিনা যখন তাকে বিদেশ
যাওয়ার কথা বলেন, তখন
উপাচার্য তাকে নিষেধ করেন।
অন্তত ১৫ আগস্ট ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনটা করে যাওয়ার অনুরোধ
করেন। সাক্ষাৎ শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন
বিদায় নেবেন, তখনো উপাচার্য তাকে
১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে বলেন।
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়েই বাসায়
ফিরলাম এবং ফিরে এসেই
মাকে স্যারের অনুরোধের কথাটা বললাম। কয়েকদিন আগে থেকেই আমার
ছেলে জয়ের খুর জ্বর
এসেছিল। সুতরাং থেকে যেতেই মনস্থ
করে ফেললাম। কিন্তু সন্ধ্যায় ড. ওয়াজেদের ফোন
এলো জার্মানি থেকে। আমি ওয়াজেদকে স্যারের
নিষেধ এবং ১৫ তারিখে
থেকে যাওয়ার ব্যাপারে আমার ইচ্ছার কথা
জানালাম। ...উত্তরে আমার স্বামী জানালেন
যে, তিনি ইতিমধ্যেই ছুটি
নিয়ে ফেলেছেন এবং বাজার করে
ফেলেছেন। অগত্যা আমি যাওয়াই স্থির
করলাম।’ শেষ পর্যন্ত গেলেন,
এটা কি কাকতালীয় নাকি
সৃষ্টিকর্তার লিখন?
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট
যিনি সবকিছু হারালেন, তিনি তো মৃত্যুর
মধ্যেই বসবাস করেন। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫
আগস্ট যেমন ইচ্ছার বিরুদ্ধেই
তিনি দেশ ছেড়ে চলে
গিয়ে বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য
বেঁচে ছিলেন, ঠিক তেমনি বারবার
মৃত্যুর দুয়ার থেকে তিনি ফিরে
এসেছেন। প্রতিটি ঘটনা অবিশ্বাস্য। ১৯৮১
সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর
শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময়ে হত্যার চেষ্টা
করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ২৪
জানুয়ারি চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে আটদলীয় জোটের সমাবেশ ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর
থেকে মিছিল করে জনসভাস্থলে যাওয়ার
পথে শেখ হাসিনার ট্রাক
মিছিলে সশস্ত্র হামলা করে স্বৈরাচারের পেটোয়া
বাহিনী। আওয়ামী লীগের কর্মীরা মানববর্ম রচনা করে সেদিন
তাদের প্রিয় নেতাকে রক্ষা করেন। এর পরের বছর
১৯৮৯ এর ১১ আগস্ট
রাতে ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসী কাজল ও কবিরের
নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে হত্যার
উদ্দেশ্যে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী
বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে
গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা
চালায়। ১৯৯১-এর ১১
সেপ্টেম্বর গ্রিন রোডে পরিবার পরিকল্পনা
কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান শেখ হাসিনা।
গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে
সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সভাপতিকে লক্ষ্য
করে বিএনপির কর্মীরা গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণ
ঘটায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান
শেখ হাসিনা। ১৯৯৫-এর ৭
ডিসেম্বর শেখ রাসেল স্কয়ারের
কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়
শেখ হাসিনার ওপর গুলিবর্ষণ করা
হয়। শেখ হাসিনাকে আরেকবার
হত্যার চেষ্টা চালানো হয় ১৯৯৬-এর
৭ মার্চ সন্ধ্যায়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার
পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস
থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও
বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ
ঘটনায় ২০ জন আহত
হন। ২০০০ সালের ২০
জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফুর রহমান
ডিগ্রি কলেজ মাঠের এক
সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। শেখ
হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কলেজের পাশে ৭৬ কেজি
ও তিন দিন পর
২৩ জুলাই হেলিপ্যাডের কাছে ৪০ কেজি
ওজনের দুটি শক্তিশালী বোমা
পুঁতে রাখা হয়। সেনাবাহিনীর
বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা এ দুটি বোমা
উদ্ধার করে। পরের বছরও
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। ২০০১ সালের
২৯ মে খুলনার রূপসা
সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে
যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জঙ্গিরা
সেখানে বোমা পুঁতে রাখে,
যা গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে। ২০০১ সালের
২৫ সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা নির্বাচনী
প্রচারণার উদ্দেশ্যে সিলেট গেলে তাকে হত্যার
চেষ্টা করে হুজি। কিন্তু
শেখ হাসিনার জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ
দূরে রাত ৮টার দিকে
একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে
ঘটনাস্থলেই দুই জঙ্গি নিহত
হওয়ায় এ ষড়যন্ত্র সফল
হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন
করার পরের বছরই তৎকালীন
বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর
একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলা করা হয়। প্রথমবার
হামলা করা হয় ২০০২
সালের ৪ মার্চ। সেদিন
নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে
হামলা চালানো হয়। এরপর ২০০২
সালেরই ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার
ওপর হামলা চালায়। শেখ হাসিনার ওপর
হামলা চালানো হয় ২০০২ সালের
৩০ আগস্ট। কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা
স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন
শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যশোরে ফিরে
যাওয়ার পথে বিএনপি অফিসের
সামনে রাস্তার ওপর একটি যাত্রীবাহী
বাস আড়াআড়ি ফেলে রেখে বিএনপি
ও যুবদলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার গাড়িবহরে
হামলা চালায়। হামলায় জেলা আওয়ামী লীগ
সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান,
সাংবাদিকসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মী
আহত হন। ২০০৪ সালের
২ এপ্রিল গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে
গুলিবর্ষণ করে বিএনপি-জামায়াত।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ
হাসিনাকে হত্যার সবচেয়ে ঘৃণ্য এবং বর্বরতার ঘটনা
ঘটে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড
হামলায় মারা যান ২৪
জন। স্প্লিন্টারের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন
এখনো শতাধিক নেতাকর্মী। ২০১১ সালে শেখ
হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের
সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রুরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী
চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে। কিন্তু
আততায়ীদের দল গাড়ি করে
কলকাতা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায়
নিহত হলে ভেস্তে যায়
হত্যার পরিকল্পনা। ২০১৪ সালে প্রশিক্ষিত
নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে হত্যার
পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী
ও ১৫০ জন যুবককে
বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই
ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। পরের
বছর ২০১৫-এর ৭
মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কারওয়ান বাজারে
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর
চেষ্টা করে জঙ্গি দল
জেএমবি। ২০১৭ সালের ১৫
আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২-এ শেখ
হাসিনাকে লক্ষ্য করে আগস্টের মিছিলে
জঙ্গিগোষ্ঠী আত্মঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা
চালায়। যদিও পুলিশি বাধায়
তা আর সফল হয়নি।
এতবার হত্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার
বিশ্বের আর কোনো রাজনৈতিক
নেতা হয়েছেন কি না, আমার
জানা নেই। এই তো
গেল শারীরিকভাবে হত্যার চেষ্টা। শেখ হাসিনা সম্ভবত
বিশ্বে একমাত্র রাজনীতিবিদ, যাকে শুধু শারীরিকভাবে
নয়, রাজনৈতিকভাবেও বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং
হচ্ছে। কদিন আগে বিএনপির
পক্ষ থেকে ‘একদফা’ ঘোষণা করা হয়েছে। একদফায়
বলা হয়েছে—‘শেখ হাসিনার অধীনে
কোনো নির্বাচন নয়।’ তাদের একমাত্র
টার্গেট শেখ হাসিনা। বিএনপি
এখন ঘোষণা দিয়েই শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে
হত্যা করতে চায়। একজন
নেতা বা রাজনীতিবিদকে রাজনৈতিকভাবে
পরাস্ত করা গণতান্ত্রিক রীতি।
কিন্তু তাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যার
চেষ্টা গর্হিত অগণতান্ত্রিক পন্থা। ১৯৮১ সাল থেকেই
শেখ হাসিনা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটছেন। কখনো ঘরের, কখনো
বাইরের শত্রুরা তার রাজনৈতিক হত্যার
সব চেষ্টা করেছেন। ১৯৮১-তে দেশে
ফেরার পর আওয়ামী লীগেই
তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
যারা রাজনীতি করেছেন, ’৭৫-এ যারা
ন্যূনতম প্রতিবাদ করেননি, বিশ্বাসঘাতকতা করে খুনি মোশতাকের
মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন, আওয়ামী
লীগের সেই ‘চাচা’রাই
তরুণ শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ
হয়ে ওঠেন। কিন্তু তৃণমূলের ভালোবাসা এবং শক্তিতে ‘চাচা’দের ষড়যন্ত্র সফল
হয়নি। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি অংশ ‘বাকশালে’র জন্ম দিয়ে
রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে চিরতরে
বিদায় করতে চেয়েছিলেন। ১৯৯১
সালের নির্বাচনে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে যায় আওয়ামী
লীগ। সে সময় আওয়ামী
লীগের নেতারা শেখ হাসিনার প্রধান
সমালোচকে পরিণত হয়ে যান। আওয়ামী
লীগের নেতাদের মুখে এরকম কথা
শুনেছি—‘শেখ হাসিনা নেতৃত্বে
থাকলে আওয়ামী লীগের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
এ উপলব্ধি থেকেই ড. কামাল হোসেন
ছেড়ে যান আওয়ামী লীগ।
অভিমানে দুঃখে সে সময় শেখ
হাসিনাও দলীয় প্রধানের পদ
থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু
তৃণমূলের কোটি নিঃস্বার্থ কর্মীর
আবেগ আর ভালোবাসার কাছে
তিনি পরাস্ত হন। ২০০৭ সালে
এক-এগারোর সময় আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে
আসে ‘শেখ হাসিনা মাইনাস
ফর্মুলা’। শেখ হাসিনার
রাজনীতি বন্ধ করে দাও।
শারীরিকভাবে হত্যা করতে ব্যর্থরা একজোট
হয় রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যার
মিশনে। একদিকে ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের সরকার তার বিরুদ্ধে দায়ের
করে মিথ্যা এবং হাস্যকর মামলা,
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের চার হেভিওয়েট নেতা
সংস্কার প্রস্তাবের নামে শেখ হাসিনার
বিরুদ্ধে জারি করেন রাজনৈতিক
মৃত্যু পরোয়ানা। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক
দক্ষতা, বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা এবং তৃণমূলের শক্তি
তাকে বাঁচায়। আবার বিজয়ী হন।
এখন আবার চলছে কিলিং
মিশন। এবার অবশ্য শুধু
রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, রাজনৈতিক এবং
শারীরিক দুরকমের হত্যারই নীল-নকশা প্রস্তুত।
কিন্তু শেখ হাসিনার পক্ষে
এখন শুধু আওয়ামী লীগের
তৃণমূল নয়, সাধারণ মানুষও
তার পক্ষে। বাংলাদেশের নিরীহ সাধারণ মানুষ এখন জানে, বিশ্বাস
করে শেখ হাসিনার কোনো
বিকল্প নেই।
গ্রামের
তরুণ জানে, শেখ হাসিনা আছেন
বলেই সে অনেক বড়
স্বপ্ন দেখতে পারে। একজন বিধবা মানুষের
কাছে শেখ হাসিনাই দেবতা।
কারণ তার জন্যই তিনি
বিধবা ভাতা পান। একজন
প্রসূতি মা বোঝেন, শেখ
হাসিনার জন্যই তার বাড়ির কাছে
কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে, যেখানে তিনি নির্বিঘ্নে বিনামূল্যে
চিকিৎসা পান। ঘরহীন একজন
মানুষ যখন ঘর পান
তখন শেখ হাসিনাই তার
কাছে সবচেয়ে আপন। একদা মজুরিবঞ্চিত
গার্মেন্টসকর্মী কিংবা চা শ্রমিকদের একমাত্র
নেতা তো শেখ হাসিনাই।
গত ১৫ বছরে অসাধারণ
দক্ষতায় তিনি তৃণমূলের ক্ষমতায়ন
করেছেন। এ দেশের প্রান্তিক
মানুষের কাছে শেখ হাসিনাই
একমাত্র নেতা। এ দেশের কোটি
মানুষের কণ্ঠস্বর তিনি। একমাত্র ভরসা। মৃত্যু সে তো অমোঘ
নিয়তি। প্রতিটি মানুষই একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের
কাজ দিয়ে অমরত্ব লাভ
করেন। আজীবন বেঁচে থাকেন শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। মৃত্যুর মধ্যে বসবাস করে, শক্তিশালী প্রতিপক্ষের
সঙ্গে লড়াই করতে করতে
শেখ হাসিনা ক্লান্ত হননি, বরং লাভ করেছেন
অমরত্ব। অতীতে যারা শেখ হাসিনাকে
হত্যার চেষ্টা করেছেন, তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে
নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আর এখন তিনি
বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে গেছেন, যেখানে
তিনি নিজেই পেয়েছেন ‘অমরত্ব’। সাধারণ মানুষকে
হত্যা করা যায়। সাধারণ
রাজনীতিবিদকেও রাজনীতি থেকে বিদায় করা
সম্ভব। কিন্তু যিনি ‘অমর’ তাকে হত্যা
করবে কে?
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল
: poriprekkhit@yahoo.com
২০০৪ সাল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা টালমাটাল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা নিয়েছিলেন যে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা কোন মন্ত্রী-এমপিই মানেননি। ইদানিং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদককে দেখে মনে হয় অসহায়। তিনি বারবার চিৎকার করছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত মানার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, আবেদন-নিবেদন করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না।
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।