আজ
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনার আত্ম স্মৃতিচারণ মূলক এই লেখাটি
বাংলা ইনসাইডার প্রকাশ করলো-
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া
গ্রামখানি একসময় মধুমতি নদীর তীরে ছিল। বর্তমানে মধুমতি বেশ দূরে সরে গেছে। তারই শাখা
হিসেবে পরিচিত বাইগার নদী এখন টুঙ্গীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে
বয়ে চলেছে। রোদ ছড়ালে বা জ্যোৎস্না ঝরলে সে নদীর পানি রুপোর মতো ঝিকমিক করে।
নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান-পাট-আখ
ক্ষেত, সারিসারি খেজুর, তাল- নারকেল আমলকি গাছ, বাঁশ-কলাগাছের ঝাড়, বুনো লতা-পাতার
জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা লম্বা সতেজ ডগা। শালিক-চড়ুই পাখিদের কল-কাকলি, ক্লান্ত
দুপুরে ঘুঘুর ডাক। সব মিলিয়ে ভীষণরকম ভালোলাগার একটুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি
রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এ টুঙ্গীপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায়
ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল-সাধারণ জীবনের মাধুর্যের মধ্য
দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি।
আমাদের বসতি প্রায় দু'শ বছরের
বেশি হবে। সিপাহী বিপ্লবের আগে তৈরি করা দালান-কোঠা এখনও রয়েছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা
সেখানে বসবাস করেন। তবে বেশিরভাগ ভেঙে পড়েছে, সেখানে এখন সাপের আখড়া। নীলকর সাহেবদের
সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক গোলমাল হতো। মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। ইংরেজ সাহেবদের
সঙ্গেও গণ্ডগোল লেগেই থাকত। একবার এক মামলায় এক ইংরেজ সাহেবকে হারিয়ে জরিমানা পর্যন্ত
করা হয়েছিল। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে সে ভাঙা দালান এখনও বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাবাহিনী ঐ দালানের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
আমার দাদা-দাদিকে সামনের রাস্তায় বসিয়ে রেখে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।
আমাদের গ্রামে ঢাকা থেকে স্টিমারে
যেতে সময় লাগত সতেরো ঘন্টা। রাস্তা- ঘাট ছিলই না। নৌকা ও পায়ে হাঁটা পথ একমাত্র ভরসা
ছিল। তারপরও সে গ্রাম আমার কাছে বিরাট আকর্ষণীয় ছিল। এখন অবশ্য গাড়িতে যাওয়া যায়।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্পীডবোটেও যাওয়া যায়। গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গীপাড়া নৌকায়
যেতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে।
আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো
কেটেছে গ্রাম-বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল
আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে, তাল-
তমালের ঝোপে বৈচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি-বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে,
বর্ষায় ভিজে খেলা করে।
আমার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতেন। বেশির ভাগ সময় তাঁকে তখন জেলে আটকে রাখা হতো। আমি ও আমার ছোট ভাই কামাল মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থাকতাম। আমার জন্মের সময় বাবা কলকাতায় পড়তেন, রাজনীতি করতেন। খবর পেয়েও দেখতে আসেন বেশ পরে।
আমার বাবা যখনই সময় ও সুযোগ
পেতেন একবার বাড়ি এলে আমরা কিছুতেই তাঁকে ছেড়ে নড়তাম না। বাবার কোলে বসে গল্প শোনা,
তার সঙ্গে খাওয়া, আমার শৈশবে যতটুকু পেয়েছি তা মনে হতো অনেকখানি।
বাবাকে একবার গোপালগঞ্জ থানায়
আনা হলে দাদার সঙ্গে আমি ও কামাল দেখতে যাই। কামালের তো জন্মই হয়েছে বাবা যখন ঢাকায়
জেলে। ও বাবাকে খুব কাছ থেকে তখনও দেখেনি। আমার কাছেই বাবার গল্প শুনত মুগ্ধ হয়ে।
গোপালগঞ্জ জেলখানার কাছে পুকুর পাড়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, বাবাকে নিয়ে যাবে কোর্টে
তখনই আমরা দেখব। কামাল কাছ ঘেঁষে বলল : হাচুপা, তোমার আব্বাকে আব্বা বলতে দেবে। আমার
শৈশবের হৃদয়ের গভীরে কামালের এ অনুভূতিটুকু আজও অম্লান হয়ে আছে। বাবাকে আমাদের শৈশবে-কৈশোরে
খুব কমই কাছে পেয়েছি। শৈশবে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলাম বলে দাদা-দাদি, আত্মীয়- স্বজন,
গ্রামের মানুষের অশেষ স্নেহ-মমতা পেয়েছি।
আমাদের পরিবারের জন্য মৌলভী,
পণ্ডিত ও মাস্টার বাড়িতেই থাকতেন। আমরা বাড়ির সব ছেলেমেয়ে সকাল-সন্ধ্যা তাঁদের কাছে
লেখাপড়া শিখতাম। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলেও কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলাম। আমার কৈশোরকাল
থেকে শহরে বাস করলেও গ্রামের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ১৯৫২ সালে আমার দাদার সঙ্গে
আমাদের বাড়ির নিজস্ব নৌকায় চড়ে প্রথম ঢাকা শহরে আসি। আমার স্নেহময়ী দাদা-দাদি আত্মীয়-স্বজন
বেশিরভাগ গ্রামে বাস করতেন। স্কুলে ছুটি হলে বা অন্যান্য উৎসবে বছরে প্রায় তিন-চারবার
গ্রামে চড়ে যেতাম। আজও আমার গ্রামের প্রকৃতি, শৈশব আমাকে ভীষণভাবে পিছু টানে।
আমার শৈশবের দিনগুলো ভীষণরকম
স্মৃতিময়। আজ সেসব দিনের কথা যেন স্মৃতির দুখিন দুয়ার খোলা পেয়ে বারবার ভেসে আসছে। একটি
ঘটনার কথা উল্লেখ না করে পারছি না। আমার বাবার এক চাচাতো বোন, আমার চেয়ে বয়সে তিন-চার
বছর বড় হবে। সে ফুফুর সঙ্গে বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছি। খালের ওপর ছিল বাঁশের
সাঁকো। সে সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে হবে। প্রথমদিন কি দারুণ ভয় পেয়েছিলাম। আমার হাত-পা
কাঁপছিল। ফুফুই আমাকে সাহস দিয়ে হাত ধরে সাঁকো পার করিয়ে দিয়েছিল। এরপর আর কখনো
ভয় করেনি। বরং সবার আগে আমিই থাকতাম।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সমবয়সী
ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নদীর ধারে বেড়ানো, শীতের দিনে নদীর উষ্ণ পানিতে পা ভেজানো আমার
কাছে ভীষণরকম লোভনীয় ছিল। নদীর পানিতে জোড়া নারকেল ভাসিয়ে অথবা কলাগাছ ফেলে সাঁতার
কাটা, গামছা বিছিয়ে টেংরা পুঁটি খল্লা মাছ ধরা। বর্ষাকালে খালে অনেক কচুরিপানা ভেসে
আসত। সে কচুরিপানা টেনে তুললে তার শেকড় থেকে বেরিয়ে আসত কই ও বাইন মাছ। একবার একটি
সাপ দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম।
বৈশাখে কাঁচা আম পেড়ে কুচি
কুচি করে কেটে সর্ষেবাটা ও কাঁচা মরিচ মাখিয়ে, তারপর কলাপাতা কোনাকুনি করে সে আম মাথা
পুরে, তার রস টেনে খাওয়ার মজা ও স্বাদ আমাকে এখনও আপ্লুত করে রাখে। কলাপাতায় এ আম
মাথা পুরে যে না খেয়েছে, কিছুতেই এর স্বাদ বুঝবে না। আর কলাপাতায় এ আম মাথা পুরলে
তার ঘ্রাণই হতো অন্যরকম। এভাবে আম খাওয়া নিয়ে কত মারামারি করেছি। ডাল ঝাঁকিয়ে বরই
পেড়ে কাড়াকাড়ি করে খেতাম। গ্রামের বড় তালাবের (পুকুর) পাড়ে ছিল বিরাট এক বরই গাছ।
ঝাঁকুনির ফলে লালের আভা লাগা সব থেকে টলটলে বরইটি পুকুরের গভীর পানিতে গিয়ে পড়ত এবং
কারও পক্ষে কিছুতেই সেটি যখন তুলে আনা সম্ভব হতো না তখন সে বরইটির জন্য মন জুড়ে থাকা
দুঃখটুকু এখনও ভুলতে পারলাম কই?
পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে আমরা
ছোট ডিঙ্গি নৌকা চড়ে ঘুরে বেড়াতাম। আমার দাদার একটি বড় নৌকা ছিল, যার ভেতরে দুটো
ঘর ছিল, জানালাও ছিল বড় বড়। নৌকার পেছনে হাল, সামনে দুই দাঁড় ছিল। নৌকার জানালায়
বসে নীল আকাশ আর দূরের ঘন সবুজ গাছপালা ঘেরা গ্রাম দেখতে আমার বড় ভালো লাগতো। ১৯৭১-এর
মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নৌকা ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। শৈশবের ফেলে আসা সে গ্রাম আমার কাছে
এখনও যেন সুভাষিত ছবির মতো।
আমার বাবার জন্মস্থানও টুঙ্গীপাড়ায়।
তিনি এখন ঐ গ্রামের মাটিতেই ছায়াশীতল পরিবেশে ঘুমিয়ে আছেন। তার পাশেই আমার দাদা-দাদির
কবর। যারা আমার জীবনকে অফুরন্ত স্নেহমমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলেন, আজ আমার গ্রামের মাটিতেই
তারা মিশে আছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে আমার মা, বাবা, ভাই ও আত্মীয়-পরিজন
অনেককে হারাই। দেশ ও জাতি হারায় তাদের বেঁচে থাকার সকল সম্ভবনা, আশা-আকাঙ্খার স্বাধীন
সত্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকের দল বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা থেকে সরিয়ে
সে মহাপুরুষকে নিভৃতে পল্লীর মাটিতেই কবর দিয়েছে। ইতিহাসের পাতা থেকে তাঁকে মুছে ফেলার
ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে – কিন্তু পেরেছে কী?
বাবার কাছাকাছি বেশি সময় কাটাতাম।
তাঁর জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আলোচনা করার সুযোগও পেতাম। তাঁর একটি কথা আজ খুব বেশি
করে মনে পড়ে। তিনি প্রায়ই বলতেন, 'শেষ জীবনে আমি গ্রামে থাকবো। তুই আমাকে দেখবি।
আমি তোর কাছেই থাকব।' কথাগুলো আমার কানে এখনও বাজে। গ্রামের নিঝুম পরিবেশে বাবার মাজারের
এ পিছুটান আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আমাকে বারবার আমার গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে
যায়।
আমি এখন নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে
জড়িয়ে নিয়েছি। দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পেরে আমি গর্বিত। আমার জীবনের
শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গীপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে নদীর ধারে একটি
ঘর তৈরি করার। আমার বাবা-মার কথা স্মৃতিকথামূলকভাবে লেখার ইচ্ছে আছে। আমার বাবা রাজনীতিবিদ
মুজিবকে সবাই জানতেন। কিন্তু ব্যক্তি মুজিব যে কতো বিরাট হৃদয়ের ছিলেন, সেসব কথা আমি
লিখতে চাই।
গ্রামকে তো আমি আমার শৈশবের গ্রামের মতো করেই ফিরে পেতে চাই। কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। এখন সময় দ্রুত বদলাচ্ছে। যান্ত্রিকতার স্পর্শে গ্রামের সরল সাধারণ জীবনেও ব্যস্ততা বেড়েছে, চমক জেগেছে। মানুষও ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এ শতাব্দীতে বাস করে বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর গ্রামীণ জীবনের মানোন্নয়ন ও শ্রমের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।
আমার শত ব্যস্ততা থাকলেও এবং
একটু সময় পেলেই আমি গ্রামে চলে যাই । কেন যে মনে হয় আমার শৈশবের গ্রামকে যদি ফিরে
পেতাম! গ্রামের মেঠোপথটি যখন দূরে কোথাও হারিয়ে যায় আমার গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করে,
‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে......।’
(শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র
১।। পৃষ্টা: ২৫-২৮)
মন্তব্য করুন
একমাত্র সন্তান বৈমানিক অসিম জাওয়াদকে হারিয়ে শোকে কাতর চিকিৎসক বাবা আমান উল্লাহ। সন্তানের লাশ সামনে রেখে তিনি জানান, জীবনের ঝুঁকি জেনেও একমাত্র সন্তানকে তারা বিমান বাহিনীতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের রেখে সন্তান এভাবে চলে যাবে- সেটা কখনো ভাবতে পারেননি। শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন ।
ড. আমান উল্লাহ বলেন, আমি তো ডাক্তার, আমি জানি কতটা জীবন ঝুঁকি আছে এ দায়িত্বে। ওর মাও নিষেধ করেছিল। কিন্তু আমি ওর পছন্দকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, ঝুঁকি জেনেও বিমান বাহিনীতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ভাবিনি যে, আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। ও শুধু আমাদের ছেড়ে যায়নি। ওর ছোট্ট বাচ্চাগুলোকেও ছেড়ে গেল। আমি জানি না, ওর মতো করে বাচ্চাগুলোকে পালন করতে পারব কিনা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পরই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
কর্ণফুলী নদীতে ভূপাতিত হওয়ার আগেই বিমানে থাকা বৈমানিক উইং কমান্ডার সোহান ও বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ প্যারাসুট দিয়ে নদীতে নামলেও দুজন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে পতেঙ্গা বিএনএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বিমান বিধ্বস্তর ঘটনায় বৈমানিক অসীম জাওয়াদ বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শুক্রবার (১০ মে) বেলা আড়াইটার দিকে মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার হাজারও মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে পাইলট আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ জেলা শহরের সেওতা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মন্তব্য করুন
রাজধানী
উত্তরার একটি বেসরকারি কলেজ
পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোছা.
সামিয়া। তিনি ডেটিং অ্যাপস ট্যানট্যানে তারই কাছের এক বান্ধবীকে বিক্রি করে ফায়দা তুলেছেন।
সেখানে
মাহি নামের একটি অ্যাকাউন্টে ব্যবহার
করেছেন তার বান্ধবীর ছবি। আর সেই ডেটিং অ্যাপসের অ্যাকাউন্ট থেকে রুম ডেট
করার নামে বহু মানুষের
কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন
লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগী
ওই শিক্ষার্থী জানান, সামিয়া এসব অ্যাপসে নিজের
ছবি ব্যবহার করে বহু মানুষের
কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
রুম ডেটের কথা বলে ২০০
টাকা থেকে শুরু করে
৫০ হাজার; এমনকি সুযোগ বুঝে লাখ টাকাও
নিয়েছে কারও কারও কাছ
থেকে। ভুয়া জন্মদিনের কথা
বলে নিয়েছে দামি উপহার। এমনকি
বাসার জন্য মাছ, মাংসসহ
বাজারও নিয়েছে।
নিজের
ছবিতে যখন আর কাজ
হচ্ছিল না, তখন বান্ধবীর
ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু
করে সামিয়া। রুম ডেটের জন্য
বিকাশে টাকা নেওয়ার পর
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ব্লক করে দেন।
অভিযুক্ত সামিয়ার এসব অপকর্মের এবং
বিভিন্ন পুরুষের কাছ থেকে টাকা
লেনদেনের অডিও ও মেসেজের
তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসছে।
বান্ধবীর
দ্বারা এমন হেনস্তার শিকার
হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন সেই শিক্ষার্থী। বান্ধবীর
নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কাছের বান্ধবীর এমন আচরণে মানসিকভাবে
ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমি
রাস্তাঘাটে বের হতে পারছি
না। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। তার দ্বারা যেন
অন্য কেউ আর প্রতারিত
না হয়। আমি এই ঘটনার বিচার
চাই। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী থানায়
অভিযোগ করার পরই নিজের
ফেসবুক আইডি, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভ করে দিয়েছে সামিয়া।
এ
বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ
ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক
বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণির নারী
প্রতারক চক্র পুরুষদের নানাভাবে
প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
এসব ক্ষেত্রে পুরুষদের সচেতন হতে হবে। এ
বিষয়ে ঢাকা মহানগর
পুলিশের উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক পার্থ প্রতিম ব্রহ্মচারী গণমাধ্যমকে জানান,
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী একটি
জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
যমুনা নদীর বুকে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে
সেতু। সেতুটির সব কটি স্প্যান বসানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুটির গত এপ্রিল থেকেই ৪
দশমিক ৮ কিলোমিটারের পুরোটাই দৃশ্যমান। তবে এখনো শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ
বলছে, আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন
হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর
রহমান বলেন, ‘৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে সেতুর পুরো ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার
সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ
হয়েছে। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। বাকি কাজের মধ্যে এখন সেতুর ওপর
ডুয়েল গেজ রেললাইন বসানোর কাজ চলছে’।
আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ রেললাইন
বসানোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও
লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের
স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। আশা করছেন,
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সেতুটি
উদ্বোধন করা সম্ভব হবে’।
সেতুটির ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে সেতুর পুরো ৪ দশমিক
৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ
কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
সেতুটির প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ
অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের
২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু
হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে
জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট
ভেঞ্চার।
ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি
জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে
ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল,
অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬
দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ
কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন
স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক
প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন
চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই
শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু
সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে
২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে এই
সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। নির্মাণ শেষে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে’।
যমুনা নদী দৃশ্যমান সেতু বঙ্গবন্ধু রেলসেতু
মন্তব্য করুন
চুয়াডাঙ্গার
আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে প্রেমিক যুগলের
গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধর
ও চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। এ
ঘটনার মামলায় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৭ মে) স্থানীয়
সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের
স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১
এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে
চেয়ারম্যান লালের বরখাস্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
স্থানীয়
সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের
স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা ১
এ সংক্রান্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
‘যেহেতু খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসীর আহমেদ মল্লিক লালের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আলমডাঙ্গা থানার মামলা নং-১ (জি.আর ১৫৫/২০২৩),
তারিখ: ১২/১০/২০২৩-এর অভিযোগে বিজ্ঞ
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত, চুয়াডাঙ্গা
আমলে নেওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯- এর
৩৪(১) ধারা অনুযায়ী
জেলা প্রশাসক, চুয়াডাঙ্গা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন;
যেহেতু, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসীর আহমেদ মল্লিক লালের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন
পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার
মনে করে।‘
মন্তব্য করুন
পিটার ডি হাস মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নির্বাচন আওয়ামী লীগ ডেভিড স্লেটন মিল
মন্তব্য করুন
যমুনা নদীর বুকে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। সেতুটির সব কটি স্প্যান বসানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুটির গত এপ্রিল থেকেই ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের পুরোটাই দৃশ্যমান। তবে এখনো শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন হতে পারে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বদলির আদেশ হয়েছে। তাকে সরিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বার্তা দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ডেভিড স্লেটন মিলকে বাংলাদেশে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা যায়। ডেভিড স্লেটন মিলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে এমন এক সময় যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং দৃঢ় অবস্থান অনেকটাই টলটলয়মান।