নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৫ পিএম, ১৭ অগাস্ট, ২০১৮
মাত্র ৪ দিন পরেই ঈদুল আজহা। এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানি পশু কেনাতেই মনোযোগ থাকে সামর্থবানদের। ঈদুল আজহায় নতুন পোশাকের চেয়ে মানুষের আরও বেশি আগ্রহ থাকে ফ্রিজে। বিশেষত যাদের ঘরে পণ্যটি নেই। এছাড়াও যাদের ঘরে ফ্রিজ আছে, ঈদে কোরবানির মাংসের কথা মাথায় রেখে অনেকের কাছেই কোরবানির পশুর পর দ্বিতীয় চাহিদায় থাকে ডিপ ফ্রিজ।
প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসতেই রাজধানীসহ সারাদেশে ফ্রিজ কেনার ধুম পড়েছে। এমন ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন অফার ছেড়েছে কোম্পানিগুলোও।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ওয়ালটন, সিঙ্গার, যমুনা, র্যাংগস, মারসেল, এলজি ও বাটারফ্লাইসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ইলেট্রনিক্স শো-রুমে ক্রেতাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে বিশেষ অফার।
ঈদ উপলক্ষে এবার ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে নতুন গাড়ি, মোটর সাইকেলসহ ফ্রিজ, টিভি ও এসি জেতার সুযোগ রেখেছে দেশীয় এই ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ক্রেতাদের থাকছে জন্য ৩০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার। এবার পণ্য কিনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে পুরষ্কার বিজয়ের সুযোগ রেখেছে দেশীয় এ প্রতিষ্ঠান।
সিঙ্গারের প্রতিটি পণ্যের (ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী), উপর সব্বোর্চ ২০% ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদকে ঘিরে ডিপ ফ্রিজ ও নরমাল ফ্রিজেরই চাহিদা বেশি। ঈদে সিঙ্গারের বিভিন্ন মডেলের ফ্রিজের উপর থাকছে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়। এছাড়াও স্ক্রাচ কার্ডে সিঙ্গারের ফ্রিজের উপর রয়েছে আনন্দ অফার। সর্বনিম্ন ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০% পর্যন্ত ফ্রি অফার রয়েছে। সেইসঙ্গে ৬ মাসের মধ্যে নগদ মূল্য পরিশোধে ক্রেতাদের জন্য ০% ইন্টারেস্টের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঈদুল আজহায় বাটারফ্লাই-এর সকল শোরুম ও অথোরাইজড ডিলার পয়েন্টে ফ্রিজ ক্রেতাদের জন্য থাকছে বিশাল ছাড়। এলজি ও বাটারফ্লাই-এর ফ্রিজ কিনলে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০% পর্যন্ত ফ্রি অফার রয়েছে। এছাড়াও স্ক্রাচ কার্ডে থাকছে ফ্রিজ, টিভি ও এসি জেতার সুযোগ।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে যমুনা তাদের ফ্রিজের উপর রেখেছে ছাড় ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট মডেলের ফ্রিজের উপর তারা রেখেছে ১৪% পর্যন্ত ছাড়। সেই সঙ্গে পণ্য কিনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ফ্রিজ, টিভি ও এসি জেতার সুযোগ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রেতাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে র্যাংগস কিছু নির্দিষ্ট মডেলের ফ্রিজের উপর ৩০% পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে। সেইসঙ্গে ক্রেতাদের জন্য থাকছে স্ক্রাচ কার্ড ঘষে গাড়ি, টিভি, ওয়াশিং মেশিনসহ আরও অনেক পুরস্কার জেতার সুযোগ।
এছাড়াও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রান্সকম ডিজিটালে হিটাচি, স্যামসাং, ওয়ার্লপুল এবং ট্রান্সটেক ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটরের ওপর চলছে ‘সুপারডুপার এক্সচেঞ্জ অফার’। এই সুবিধায় ক্রেতা পুরোনো যেকোনো ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। ফ্রিজের আকার ও কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে পুরোনো ফ্রিজের নির্দিষ্ট মূল্য ধরা হবে।
একজন ক্রেতা যদি ২৫০ লিটার হিটাচি ফ্রিজ কিনতে চান, যার বর্তমান দাম ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা, এতে তিনি নগদ ছাড় পাবেন ২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যদি ১০০ থেকে ১৯৫ লিটারের কোনো পুরোনো সচল ফ্রিজ বিনিময় করেন, সে জন্য আরও ৭ হাজার টাকা ছাড় পাবেন।
একইভাবে স্যামসাং, ওয়ার্লপুল ও ট্রান্সটেকের ক্ষেত্রেও ব্র্যান্ড, দাম ও মডেলভেদে ফ্রিজ বিনিময় করা যাবে।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, খুব অল্প
সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে বৈদেশিক মুদ্রার
বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবস্থা প্রণয়নে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ
এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার (৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ফিসক্যাল অ্যান্ড মনিটারি
পলিসিস ইন দ্য ইভলভিং ইকোনোমিক অর্ডার: রিস্ক, ভালনারেবিলিটিস অ্যান্ড সলিউশন ‘শীর্ষক
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ এবং বাংলা দৈনিক ‘বণিক
বার্তা’র যৌথ আয়োজনে ‘ফার্স্ট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স, ঢাকা’
শীর্ষক এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রলিং পেগ হলো বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি, যেখানে একটি
নির্দিষ্ট বিনিময় হারের সঙ্গে একটি মুদ্রাকে হারের একটি ব্যান্ডের মধ্যে ওঠানামা করার
অনুমতি দেওয়া হয়। পদ্ধতিটি সম্পূর্ণরূপে স্থির বিনিময় শাসনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর
পাশাপাশি ভাসমান বিনিময় হার শাসনের নমনীয়তা ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ফজলে কবির,
সাবেক অর্থ সচিব ড. এম তারেক ও মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সৎ ব্যবসায়ীদের স্বস্তি এবং ব্যাংক ও অধিক
সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছু বিষয় শক্তভাবে
নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যাতে তারা স্বাধীন নীতি প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়নে প্রভাব বিস্তার
করতে না পারে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নীতির
অগ্রাধিকারের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি গত ৫০ বছর ধরে একটি ফাঁদে পড়েছে। সেখান থেকে
শিক্ষা নিয়ে আইএমএফের পরামর্শ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সতর্ক হতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থায়ন
নিশ্চিত করা এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষিঋণের প্রবাহ বাড়ানোর নীতির ওপর গুরুত্ব
দিতে হবে।
সাবেক অর্থ সচিব মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে বিভিন্ন
খাতের বিশেষ করে আর্থিক খাতের তথ্যের মান উন্নত করতে হবে।
তিনি সরকারের সমস্ত অফিস ও বিভাগকে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়
হ্রাস করার পরামর্শ দেন, কারণ ছোট ব্যয়গুলো সামগ্রিকভাবে একটি বড় পরিমাণে দাঁড়ায়
এবং শেষ পর্যন্ত এটি আর্থিক হিসাবের ঘাটতি সৃষ্টি করে।
তিনি মুদ্রাবাজারে উচ্চক্ষমতার মুদ্রা সরবরাহ হ্রাস করার পরামর্শ
দেন, যা মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তোলে।
মন্তব্য করুন
ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক
মন্তব্য করুন
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার আনুষ্ঠানিক
প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। বিশেষ করে দুর্বল
ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ মন্দ ঋণ বা খারাপ সম্পদ কোন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করা হবে, তা
কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মন্দ
ঋণের চাপে ভালো ব্যাংকও নুয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন
বলেন, ‘তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে সাধারণ আমানতকারীসহ
অনেক ব্যাংকের পরিচালকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারণ ভালো ব্যাংক যেগুলো আছে, সেগুলো
তো নিয়মকানুন মেনে, কমপ্লায়েন্স মেনে, নানা ধরনের প্রতিকূলতা পার করে ভালো হয়েছে। ফলে
তারা কেন একটি দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে?’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বরে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন
(পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ
ব্যাংক। পরে বিষয়টি স্পষ্ট করে গত ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাটি।
এর পরই একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গত মার্চে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের
ডেকে ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা না হলে আগামী বছরের
মার্চে ব্যাংকগুলোর ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
যদিও এখন পর্যন্ত একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অনেক বিষয়ই স্পষ্ট করেনি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর যেসব ঋণ মন্দ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে
আছে, সেগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা করা হয়নি।
এ ক্ষেত্রে ঋণ বা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলা হলেও এখন
পর্যন্ত সে বিষয়ে আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগের শুরুতেই গত ১৪ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের
সঙ্গে একীভূত হওয়ার ঘোষণা দেয় এক্সিম ব্যাংক। এ দুটি ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক
তুলনামূলক ভালো হলেও বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি আর সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসেছিল
পদ্মা ব্যাংক।
তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের
পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। এরই মধ্যেই খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি
টাকা, যা মোট ঋণের ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর বাইরেও ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ
অবলোপনের খাতায় যুক্ত আছে। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা
আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৬০৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৯৩৭ কোটি
টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৪৭
শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ ১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির কোনো
মূলধন ঘাটতি নেই। এর বাইরেও ব্যাংক দুটির বিপুল পরিমাণ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, ব্যাংক দুটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন থেকে যদি আর না-ও
বাড়ে, তাহলেও একীভূত হওয়ার পর এক্সিম ব্যাংকে খেলাপির হার দাঁড়াবে মোট ঋণের ৬ দশমিক
৪৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যাংকের খেলাপি ৫ শতাংশের নিচে থাকার কথা।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা বলছে, খারাপ ব্যাংকের দায় বিক্রি
করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ধরনের কোনো নীতিমালা জারি হয়নি। এমনকি মন্দ সম্পদ কম
দামে বিক্রির পর বাকি দায় কীভাবে সমন্বয় করা হবে তারও কোনো স্পষ্ট বর্ণনা নেই কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের নীতিমালায়। শুধু তাই নয়, এক্সিম ব্যাংকের মূলধনে বর্তমানে কোনো ধরনের ঘাটতি
নেই। অথচ, সমন্বয় না করা হলে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকটি
৬০৭ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এক্ষেত্রে মূলধন হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ কেন্দ্রীয়
ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, পদ্মা
ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করেছে তার বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেওয়া হয়নি। এমনকি বিতরণ করা
ঋণের বেশিরভাগই আর ফিরে না আসায় তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। পরে ২০২২ সালের মার্চে
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা এসএলআর থেকে
অব্যাহতি দেয়। বর্তমানেও ওই সুবিধা বহাল রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্যোগে পড়তে
পারে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের চেয়ে কয়েক
গুণ বড় ন্যাশনাল ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আকৃতিতে বিশাল, কিন্তু আর্থিকভাবে ভেঙে
পড়া একটি প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ইউসিবি নিজেই ভেঙে পড়ে
কি না—তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, তালিকাভুক্ত
ইউসিবির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার
৪৭৬ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির সঙ্গে একীভূত হতে যাওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন
৫ হাজার কোটি টাকা আর পরিশোধিত মূলধন ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক ৪২ হাজার ৭৭১
কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ১১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। আর মোট খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৩৬৮
কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। একীভূত হলে ইউসিবির ৪৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকার সঙ্গে
মিলে মোট ঋণ হবে ৯২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউসিবির খেলাপি আড়াই হাজার কোটি
টাকা হলেও তখন দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ইউসিবির খেলাপি ঋণের হার ৫
দশমিক ০১ শতাংশ। একীভূত হওয়ার পর এ হার দাঁড়াবে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ইউসিবির কোনো প্রভিশন ঘাটতি না থাকলেও ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি
১১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এর বাইরেও প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক
থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ন্যাশনাল
ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকটির ২ হাজার ২৪ কোটি
টাকার মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। সব মিলিয়ে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আর্থিক হিসেবে দুর্বল
ব্যাংকের তালিকায় ঢুকে যাবে ইউসিবি।
যদিও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালকরাই ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার
বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এরই মধ্যে বোর্ড সভা করে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন তারা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘ন্যাশনাল
ব্যাংক একটি সুসংগঠিত ব্যাংক। ব্যাংকের প্রায় ৩০০ শাখা-উপশাখার মধ্যে হাতেগোনা ১১ থেকে
১২টি শাখা ছাড়া সব মুনাফা করছে। এখন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে খেলাপি আদায় বেড়ে গেছে।
সামনে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগির খেলাপি সন্তোষজনক পর্যায়ে চলে
আসবে। যদি না আসে, তখন একীভূত করা যেতে পারে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ
ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল)। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিডিবিএলের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ
২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৯৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪২ দশমিক
৪৬ শতাংশ। এর বাইরেও ব্যাংকটি অবলোপন বা গোপন করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি।
আর সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর
মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
প্রভিশন ঘাটতি না থাকলেও সোনালী ব্যাংকের ডেফারেল সুবিধা নেওয়া আছে ৩ হাজার ৭২০ কোটি
টাকা। এ ছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৬১১ কোটি
টাকা।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ বেসরকারি খাতের সিটি
ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বেসিক ব্যাংককে যুক্ত করা। এরই মধ্যে বেসিক ব্যাংক এ প্রক্রিয়ায়
না যেতে সরকারের উচ্চমহলে চিঠি দিলেও প্রক্রিয়া থেকে সরে আসা ব্যাংকটির জন্য কঠিন।
সে ক্ষেত্রে সিটির সঙ্গেই একীভূত হতে পারে বেসিক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের
মোট ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, যা
মোট ঋণের ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন
ঘাটতি ৫ হাজার ১৯৫ টাকার সঙ্গে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঘাটতি কম দেখানো আছে ৪ হাজার ৭৮৫
কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়াবে ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকটির
মন্দ ঋণের কোনো নিরাপত্তা নেই।
শুধু তাই নয়, সরকারি এই ব্যাংক ২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন
করেছে। আর মূলধন ঘাটতি আছে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বর্তমানে সিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৩ দশমিক
৫২ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি নেই, নেই মূলধন ঘাটতিও। অথচ বেসিক ব্যাংকের দায়িত্ব
নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত
ব্যাংক কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে রাকাবের বিতরণ করা ঋণ
৭ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ঋণ ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ
১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া রাকাবের মূলধন ঘাটতি
২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
বলেন, ‘জোর করে একটা ব্যাংককে অন্য একটা ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দিলে তো ব্যাংক খাতের
মূল সমস্যার সমাধান হবে না। খেলাপি ঋণে জর্জরিত পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে
মার্জ করা হচ্ছে। যেসব পরিচালকের কারণে পদ্মা ব্যাংকের আজকের এ পরিণতি তাদের কোনো শাস্তির
আওতায় না এনে পাঁচ বছর পর নাকি তারা আবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে। এটা কোনো
কথা হলো? প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি না মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক
জোরপূর্বকভাবে তড়িঘড়ি করে মার্জ করে দিচ্ছে। এতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানত
তুলে নিচ্ছেন। পুরো ব্যাংক খাতে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’
দুর্বল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজুস
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলছে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ মন্দ ঋণ বা খারাপ সম্পদ কোন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করা হবে, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের চাপে ভালো ব্যাংকও নুয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের মৌসুম ধরা হয় দুই ঈদে। ঈদকে সামনে রেখে এ সময় প্রবাসীরা দেশে থাকা তাদের আত্নীয় স্বজনদের কাছে টাকা পাঠায়। তবে গেলো ঈদের মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমেছে। এ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯০ কোটি ৮০ মার্কিন ডলার। এ মাসের প্রথম ১৯ দিনে এসেছিল ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে পরের ১০ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৬২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। প্রতিদিন গড়ে ছয় কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।