রাজনীতিবিদদেরকে আবার ড্রাইভিং সিটে আনা হচ্ছে। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, রাজনীতিবিদরাই তাদের কর্মকাণ্ড দিয়েই ড্রাইভিং সিটে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে যে, সরকার এখন আমলাদের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে এনে রাজনীতিবিদদের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ক্ষমতার বাইরে থাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং কার্যক্রমে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সেই সমস্ত পরামর্শগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি সরকারের একটি বড় রাজনৈতিক পক্ষপাত বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার চাপে থাকার ফলে আমলাদের নয়, রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব বেড়েছে বলেই অনেকে মনে করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে আমলাদের পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন এবং রাজনীতিবিদরা সেই সংকট মোচনে সফল হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি আমলাদের দিয়ে সমাধান করা হয়নি, ক্ষমতার বাইরে থাকা কয়েকজন রাজনীতিবিদ এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারা ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে যেয়ে অনশন ভাঙ্গিয়েছেন। একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে খেলার মাঠ নিয়ে ঘটনাতেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে যে, এখানে আমলারা যেকোনো অবস্থায় মাঠ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকার পক্ষে ছিল এবং তারা এ মাঠে থানা নির্মাণে বদ্ধপরিকর ছিল। আমলাদের এই চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন ঘটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি দুদিন আগেই বলেছিলেন যে, এখানে কোন মাঠ কখনোই ছিলো না, এটা থানার জন্য নির্ধারিত এবং থানা হবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার পরপরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, কয়েকজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে এই পরামর্শ দিয়েছেন এবং এই পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে বেগম মতিয়া চৌধুরীর একটি বড় ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এই পুরো বিষয়টি যখন প্রধানমন্ত্রী জেনেছেন তখন তিনি থানা নয়, খেলার মাঠের পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন। এখানেও আমলাদের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিজয় সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক জেলা পরিষদগুলো আমলাদের কর্তৃত্বে নেয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল। পৌরসভায় ইতিমধ্যে নিবার্হী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেই ধারায় জেলা পরিষদগুলোকে বিলুপ্ত করে সেখানে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন আমলারা এবং নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে বাদ দিয়ে সেখানে আমলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বরং রাজনীতিবিদদের কারণেই জেলা পরিষদগুলোতে আগের চেয়ারম্যানদেরকেই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কোন্দল এড়াতেই প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সেই প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেন। ফলে এটি আমলাদের ওপর রাজনীতিবিদদের আরেকটি বড় ধরনের বিজয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। আগামী দিনগুলোতে সরকারকে বিরোধী দলের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদেরকেই ড্রাইভিং সিটে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে এখন সরকার কাজ করছে বলে অনেকে মনে করেন এবং সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই এখন রাজনীতিবিদদেরকে ড্রাইভিং সিটে দেখা যাচ্ছে। আর সামনের দিনগুলোতে সরকার পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা এবং কর্তৃত্ব আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।