বিএনপির টোপে পা দেয়নি জাতীয় পার্টি । শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে। জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে এজন্য দলটিকে এক’শ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তারেক জিয়ার পরিকল্পনা ছিল জাতীয় পার্টি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না আসে, তাহলে এই নির্বাচন ২০১৪ সালের মতোই অর্থহীন একটি নির্বাচনে পরিণত হবে। এবং তখন আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ আসবে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
২০১৪ সালেও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বিএনপি। সেই সময় বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় পার্টিকে টোপ দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারও জাতীয় পার্টি টার্গেট ছিল বিএনপির।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে একাধিক সূত্র থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং তাদেরকে এই আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয়েছিল বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দুজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই ধরনের বক্তব্যকে অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন যে, জাতীয় পার্টি কারও প্রলোভনে নয়, বরং নিজেদের হিসাব নিকাশ থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না বলেও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
তারা বলছে যে, যেকোনও একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার নিজস্ব, আমরা সময় নিয়েছি, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ করেছি, অবশেষে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছি। তবে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছেন যে, চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে অনাগ্রহী এবং তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি না, এ নিয়েও খোদ জাতীয় পার্টির কারও কারও মধ্যে সন্দেহ সংশয় রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, তারেক জিয়ার টোপের পর জাতীয় পার্টির বিভিন্ন মহলে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ ছিল নির্বাচনমুখী। তারা মনে করছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না যায়, তাহলে এই দল অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে এবং এটি হবে বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। তাছাড়া, জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছিলেন রওশন এরশাদ। জিএম কাদের আগেই কাজ সেরেছেন। তিনি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং যারা নির্বাচনের পক্ষে তাদেরকে একত্রিত করেছেন। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না যেত, তাহলে পরে জিএম কাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে বিভক্ত হতেন। জিএম কাদের বুঝতে পেরেছেন যে, দলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ নন।
অধিকাংশ বিএনপির নেতাই নির্বাচনের বিপক্ষে। এরকম অবস্থায় জিএম কাদেরসহ সিংহভাগ নেতাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিনি এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে সংশয়াচ্ছন্ন। এখনও তিনি দেখবেন যে, নির্বাচন শেষ পর্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার কতটুকু তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে- ইত্যাদি। আর এসবের প্রেক্ষিতেই এখন পর্যন্ত এ জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে কী অবস্থায় থাকে তা নিয়ে এখনও কারও কারও সন্দেহ রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে, তারা নির্বাচনে যাবেন, এককভাবে নির্বাচন করবেন এবং তারেকের ফাঁদে পা দেওয়া হবে না।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাপা জিএম কাদের তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।