নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৭ জুলাই, ২০১৮
চলতি বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন পরবর্তী সরকারই পালন করবে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ তম বার্ষিকী)। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীও পালন করবে নির্বাচিত সরকার। শুধু এ কারণগুলোতেই নয়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ সিংহভাগ সিনিয়র নেতাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটতে পারে। কারণ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেই এই নেতাদের সর্বশেষ নির্বাচন হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, এই নির্বাচনই হচ্ছে তাঁর শেষ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এরপর আমি আর নির্বাচন করবো না।’ শেখ হাসিনা অনেক বক্তৃতায় শেষ নির্বাচন হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও নতুন মুখ আসতে পারে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জন্যও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই শেষ নির্বাচন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নিজেকে ফিট দাবি করলেও বয়স বিবেচনায় অনেকেই এরশাদকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য বিবেচনায় রাখেন না।
দুর্নীতির দায়ে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও এই নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য এটিই হতে পারে শেষ নির্বাচন। বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না বলেই আশঙ্কা অনেকের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী শেখ হাসিনা-এরশাদ-খালেদা যে রাজনৈতিক যুগ ছিল তাঁর পরিসমাপ্তি ঘটবে। আর শুধু তিন দলের কর্ণধাররাই নন, অনেক সিনিয়র নেতাদের জন্যই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে শেষ নির্বাচন।
বয়স ও শারীরিক কারণে আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতার জন্যই একাদশ জাতীয় সংসদের পর আর কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নাও হতে পারে। এমন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আছেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এদের মতো আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতার জন্যই ২০১৮ সালের নির্বাচনই শেষ নির্বাচন বলে মনে করা হচ্ছে।
একই ভাবে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার জন্যও চলতি বছরের নির্বাচনই হতে পারে শেষ নির্বাচন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ তো এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে নিজের শেষ নির্বাচন বলে দিয়েছেন। গত ঈদের ছুটিতে কোম্পানিগঞ্জে গিয়ে মওদুদ আহমেদ বলেছেন, এবারই হবে আমার শেষ নির্বাচন। বয়স ও অন্যান্য কারণে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের জন্যও এটি হতে পারে শেষ নির্বাচন। বয়স বিবেচনাতেই সাবেক এই স্পিকার পরবর্তী কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মনে করা হয়। অবশ্য বিএনপি নেতাদের ক্ষেত্রে এটিই শেষ নির্বাচন হতে পারে যদি তাঁরা এই নির্বাচনে অংশ নেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে অনেকের জন্য শেষ নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে না।
শুধু শীর্ষ দলগুলোই নয়, ২০১৮ নির্বাচন শেষ নির্বাচন হবে আরও অনেক দলের অনেক সিনিয়র নেতাদের জন্য, যাঁরা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দেশের রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে রাজনীতি করেছেন তাদের অনেকের ক্যারিয়ার শেষ হবে এবারই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষ বলেই যাঁদের খ্যাতি, মহিরুহ বলা হয় যাঁদের, তাঁদের রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তত পাঁচবার সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিল তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছিল। একই সাথে বলা হয়েছিল যে, সারাদেশে যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হচ্ছে না।