নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮
পৃথিবীর সবদেশের নির্বাচনেই মূল ধারার গনমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত মার্কিন নির্বাচনে সেদেশের গনমাধ্যমের প্রকাশ্য অবস্থান আমাদের সবারই জানা। সেখানে সিএনএন আনুষ্ঠানিকভাবে হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন জানিয়েছিল। অন্যদিকে ফক্স নিউজ আনুষ্ঠানিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়। গণমাধ্যমের এই প্রকাশ্য অবস্থান পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই দেখা যায়। ভারতেরও মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনের সময় কার পক্ষে তারা সংবাদ পরিবেশন করবে, আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান গ্রহন করে। এতে একটি সুবিধা হয়, পাঠক এবং দর্শকদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পাঠক ও দর্শক সংবাদমাধ্যমটির অবস্থান বুঝেই তথ্য এবং সংবাদ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর অন্যতম হলো ট্রান্সকম নিয়ন্ত্রিত প্রথম আলো ও ডেইলী স্টার। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা হিসেবে যাদের নাম রয়েছে। দুটি পত্রিকাই এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। দুটি পত্রিকাই নানাভাবে আওয়ামী লীগের সমলোচনা করছে এবং ঐক্যফ্রন্টের পক্ষপাতে সংবাদ পরিবেশন করতে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের আরেকটি বড় গণমাধ্যম পরিবার হলো ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। যাদের নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালেরকন্ঠ, ডেইলী সান, নিউজ ২৪, বাংলা নিউজ ২৪ এবং ক্যাপিটাল রেডিও। এই গণমাধ্যম গ্রুপটি কিছুটা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভুতিশীল হলেও , নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, উভয় দলেরই সংবাদ তারা সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করছে। যেখানে উভয় দলের সমলোচনাও চলে আসছে।
বাংলাদেশের অরেকটি বড় গণমাধ্যমে হলো যুগান্তর। এই পত্রিকার মালিকানা যমুনা গ্রুপের। এই গ্রুপের রয়েছে যমুনা টেলিভিশনও। পত্রিকাটি জাতীয় পার্টির সমর্থক হলেও সরকার বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। সরকারের কঠিন সমলোচনা এই যমুনা গ্রুপের পত্রিকা ও টেলিভিশন থেকে উঠে আসছে।
দৈনিক ইত্তেফাক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মালিকানাধীন পত্রিকা। একটা সময়ের প্রভাবশালী এ পত্রিকার প্রভাব বর্তমান সময়ে অনেকটা কমে গেছে। ইত্তেফাক এবার প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং আওয়ামী লীগের পক্ষের গনমাধ্যমে হিসেবেই কাজ করছে।
জনকন্ঠ আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তারা একমাত্র গণমাধ্যম যারা আওয়ামী লীগের প্রতি সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের মালিকানাধীন পত্রিকা নয়া দিগন্ত। এটি জামাত- বিএনপি নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা। এই পত্রিকাটি বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে সমর্থন দিচ্ছে।
হামীম গ্রুপের রয়েছে সংবাদপত্র সমকাল ও টেলিভিশন, চ্যানেল ২৪। আওয়ামী লীগের মালিকানাধীন হলেও নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করে। আওয়ামী লীগের অনেক বিষয়েই তাদের সমলোচনা করতেও দেখা যায়।
প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়াও ইলেকট্রিক মিডিয়া এবার নির্বাচনে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবাদ চ্যানেলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টেলিভিশন। সংবাদ ভিত্তিক এ চ্যানেলটি আওয়ামী লীগ মালিকানাধীন হলেও নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করে। আওয়ামী লীগের অনেক বিষয়েই তারা সমলোচনা করছে। তবে স্বাভাবিক জনগনের কাছে এটা আওয়ামী মনোভাবের টেলিভিশন হিসেবেই পরিচিত।
৭১ টেলিভিশনও আওয়ামী লীগের মালিকানাধীন একটি চ্যানেল। এই চ্যানেলটি আওয়ামী লীগের পক্ষেই নির্বাচনে অবস্থান নিয়েছে বলে বাংলা ইনসাইডারের পর্যবেক্ষনে উঠে এসেছে।
সংবাদ ভিত্তিক আরেকটি টেলিভিশন ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। আওয়ামী লীগের মালিকানাধীন হলেও এই টেলিভিশন নিরপেক্ষভাবেই সংবাদ পরিবেশন করছে। বিভিন্ন খবরে তারা আওয়ামী লীগের সমলোচনাও করছে।
সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল ছাড়াও প্রধান প্রধান যেসব বিনোদন ভিত্তিক চ্যানেল রয়েছে। সেগুলোর খবর এবং টকশোতেও পক্ষপাত সুস্পষ্টভাবে ধরা পরেছে। চ্যানেল আই দীর্ঘদিন আওয়ামী মনোভাবাপূর্ণ নিজেদের প্রকাশ করলেও নির্বাচনের আগে এটি এখন বিএনপির দিকে ঝুকে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সমলোচনা এবং বিএনপির খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হচ্ছে।
এনটিভি বিএনপির মালিকানাধীন চ্যানেল। খবর এবং টকশোতে সুস্পষ্টভাবে তারা বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এবার নির্বাচনে অত্যান্ত প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করবে। তবে এই গণমাধ্যমগুলোর অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে পাঠক এবং দর্শক কতটা প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।