নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ২০ জানুয়ারী, ২০২১
টানা বারো বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। সরকার পরিচালনাতেও বড় ধরনের কোন চাপ নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কিন্তু দলের ভেতর নানা সমস্যা ক্রমশ: দৃশ্যমান হচ্ছে দলটির। দলটি যেন এখন নিজেরাই নিজেদের সংগে যুদ্ধ করছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভিন্ন নেতাদের লাগামহীন ভাবে পরস্পরকে আক্রমণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমপিদের অবস্থান, ছোট খাট বিষয়ে দলের সভাপতির দিকে তাকিয়ে থাকার প্রবণতা দলটি ক্রমশ: সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে না পারলে, ভবিষ্যতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দলটি সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পরবে। আওয়ামী লীগে বর্তমানে যে সংকট গুলো দৃশ্যমান, তার মধ্যে রয়েছে :
১. আওয়ামী লীগ বনাম এম.পি লীগ: আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, প্রতিটি জেলাতেই এখন দুটি আওয়ামী লীগ। একটি ত্যাগী এবং পরীক্ষিতদের নিয়ে আওয়ামী লীগ। অন্যটি, এমপিদের তল্পিবাহক, স্তাবক এবং সুবিধাভোগীদের আওয়ামী লীগ। এই দুই আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে দলটি। বেশীর ভাগ জেলায় দিবস ভিত্তিক কর্মসূচী হচ্ছে দুটি। একটির আয়োজন করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অন্যটির আয়োজক এমপির লোকজন।
২. নৌকাকে হারাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ: পৌরসভা নির্বাচন গুলোতে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষই আওয়ামী লীগ। যেসব পৌরসভায় এমপির পছন্দের ব্যক্তি মনোনয়ন পাননি, সেখানে এমপি ও তার কর্মী বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছেন। অনেক স্থানেই এমপি তার পছন্দের ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র দাড় করিয়ে দিয়েছেন। দলের কেন্দ্র থেকে বার বার বলা হচ্ছে, দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধাচারণকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু তারপরও যেন এই সংকট থেকে বেরুতে পারছে না আওয়ামী লীগ।
৩. প্রকাশ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি: আগেও আওয়ামী লীগের নেতারা একে অন্যকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখতেন। কিন্তু এবার নিক্সন চৌধুরী আর কাদের মির্জার বিরোধ শালীনতার সব সীমাকে অতিক্রম করেছে। এক নেতা আরেক নেতাকে ‘পাগল’ কিংবা নেশা আসক্ত বলাটা কতটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার সম্মত সে প্রশ্ন উঠেছে।
৪. দলে চেইন অব কমান্ড নেই: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সংকট হলো দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পরেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মানছে না স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাও দলীয় ফোরামের বাইরে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন।
৫. সভাপতির দিকেই তাকিয়ে সবাই: কেউ কোন দায়িত্ব নিচ্ছেনা। বক্তৃতা বিবৃতির বাইরে দলের সাংগঠনিক কাজ করছে,হাতে গোনা ক’জন। সব সিদ্ধান্তের জন্য সবাই তাকিয়ে থাকেন আওয়ামী লীগ সভাপতির দিকে। তার উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরী হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।