২০০৭ সাল। জাতিসংঘে বাংলাদেশস্থ আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা লক একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই চিঠিটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং এই চিঠির প্রেক্ষিতেই সেনাবাহিনীর তৎকালীন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নির্বাচন বিরোধী একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে, যার প্রেক্ষাপটে এক-এগারো এসেছিল।
পরবর্তীতে দেখা যায়, রেনাটা লক'র যে চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছিল এবং যে চিঠি নিয়ে এক-এগারো’র সরকার আসার পথ তৈরি হয়েছিল, সেই চিঠিটি আসলে জাল করা এবং বিকৃত করা চিঠি। বান কি মুন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখার পক্ষে এবং সংঘাত, সহিংসতা পরিহার করার জন্য একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে সেনাবাহিনীর বিষয়টিকে জালিয়াতি করে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং যার ফলে এক-এগারো আনা হয়েছিল। বাংলাদেশে এখন যখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা- তখন বাংলাদেশ একটি গুজবের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ সমস্ত গুজব কেউ কেউ ইদানিং বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। এরকম একটি গুজব হচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হয়- তাহলে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করতে পারে। আর এই রকম গুজবটি নতুন ভিসা নীতির পর ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।
কিন্তু এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছে, কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য শান্তি মিশন গঠন করেছিল। শান্তি মিশন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখন সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী শান্তি মিশনের বিভিন্ন দেশে ৮১ হাজার ৮শ’ ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা ৭ হাজার ২শ’ ৩৭ জন। বিশ্বে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণকারী দেশ। আর ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ যে শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করছে, শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি সদস্যরা সবচেয়ে চৌকষ এবং ভালো কর্মী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এই জন্য বাংলাদেশ একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষা মিশনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো দেশকে নিষিদ্ধ করতে পারে না। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নজির নেই। এমনকি যে নাইজেরিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- এখন বাংলাদেশের মতো ভিসানীতি আরোপ করেছে, সেই নাইজেরিয়ার সেনা এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও শান্তিরক্ষা মিশনে আছে।
শান্তিরক্ষা মিশনে কোন কোন দেশের সদস্যরা অংশগ্রহণ করতে পারে?
শান্তিরক্ষা মিশনের চার্টারে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত যে কোন দেশ এটিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এই শান্তিরক্ষা মিশনের কোন দেশে সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সাধারণ পরিষদে অথবা নিরাপত্তা পরিষদে। অনেক সময় সাধারণ পরিষদে যদি শান্তিরক্ষা মিশনের কোনো দেশে শান্তিরক্ষা মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, সেটা নিরাপত্তা পরিষদে চূড়ান্তভাবে আলোচনা হয় এবং নিরাপত্তা পরিষদে যদি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়, তাহলে শান্তিরক্ষা মিশন সেখানে যায়। আবার কোন দেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশনের বাহিনী নেওয়া হবে, সেটিও নির্ধারিত হয় নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে।
নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য। তাদের ভেটো পাওয়ার রয়েছে। তাদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া এবং চীন অন্যতম। আর এখন পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কোনো দেশের অংশগ্রহণ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে কখনো আলোচনা হয়নি বা এ নিয়ে কখনোই কোন দেশের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি জাতিসংঘের প্রচলিত নীতির সঙ্গে সংঘর্ষিক। কারণ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত একটি দেশকে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্তর্ভুক্তি থেকে বারিত করে না, করতে পারে না। এটি জাতিসংঘের সার্বজনীন নীতির পরিপন্থী। তাই যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, কোনো দেশেরই শান্তিরক্ষা মিশনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে না। এই এখতিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নাই। এরকম যদি কোনো প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র আনেও সেটি নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হতে হবে এবং নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে যদি গৃহীত হয়, তাহলেই সে রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু বৈশ্বিক বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনলে রাশিয়া এবং চীন যে চুপচাপ বসে থাকবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি স্রেফ গুজব এবং আতঙ্ক ছড়ানোর অপকৌশল। এ রকম অনেক গুজবই এখন ছড়ানো হচ্ছে, যেন সরকারকে কোণঠাসা করা হয়। জনমনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং আতঙ্ক তৈরি করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর কোনো আইনগত বা নিয়মতান্ত্রিক ভিত্তি নেই।
যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা মিশন বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ডা. সামন্ত লাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
ঢাকা-৪ ড. আওলাদ হোসেন জাতীয় সংসদ
মন্তব্য করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। তবে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
বুধবার (৮ মে) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সূত্রে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার শঙ্কা থাকে। এছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বাড়তে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহ ব্যয় বাড়ায় রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারেন।’
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশ দিয়েছি যাতে প্রত্যেকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। এতে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বাড়ে। যা আমদানি ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়ে প্রভাব পড়ে। এতে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনেশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও ঘনীভূত ও দীর্ঘায়িত হলে তা বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ
মন্তব্য করুন
ভোটের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, দিনাজপুরের হাকিমপুরে চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কামাল হোসেন ২২ হাজার ২৫১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ টেলিফোন প্রতীকে ১৯ হাজার ৩৭৮ ভোট পেয়েছেন।
সারা জীবন চাকরি করছেন। চাকরি করলেও তিনি একজন ভিশনারি সরকারি চাকুরে ছিলেন। একটা লক্ষ্যে সারা জীবন নিজেকে নিবেদিত করেছেন। একটা লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। মানবসেবাই তাঁর ব্রত। বাংলাদেশে দগ্ধ মানুষের জন্য তিনি একজন ত্রাতা এবং দগ্ধ মানুষের চিকিৎসার জন্য তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে সমাদৃত। একজন মানবিক চিকিৎসকের প্রতিরূপ তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। তবে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’